বাংলাদেশের কিছু অদ্ভুত জায়গা
বাংলাদেশের কিছু অদ্ভুতুড়ে জায়গা দেশে-বিদেশে অনেক যায়গাতেই ঘুরলেন। কিন্তু দেশের ভিতরেই এমন কিছু অদ্ভুতুড়ে জায়গা আছে, আপনি হয়তো সেটার খবরই রাখেন না। আসুন জানি বাংলাদেশের কিছু অদ্ভুতুড়ে জায়গা সম্পর্কে-
গানস অফ বরিশালঃ গুগলে সার্চ দিলেই পাবেন। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, বরিশাল গানস বা গানস অব বরিশাল বলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা বিকট কিছু শব্দকে বোঝায়। এ ধরনের অব্যাখ্যেয় শব্দগুলোকে একত্রে বলা হয় মিস্টপুফার্স। বরিশালের মত ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে।
১৮৭০-এর দিকে প্রথম বারের মত বরিশাল গানসের কথা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটি শোনা যেত বলে নথিপত্রগুলোতে উল্লেখ করা হয়। ১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বরিশাল,নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর প্রভৃতি স্থানে বরিশাল গানস শোনা গেছে। টি. ডি. লাতুশ ১৮৯০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বরিশাল গানস কেবল গাঙ্গেয় বদ্বীপ নয়, ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপেও শোনা গেছে। যে সব বিকট শব্দ শোনা যেত তার সাথে ঢেউয়ের শব্দের চেয়ে কামানের গোলা দাগার শব্দের সাথে বেশি মিল ছিল। কখনও কখনও একটা শব্দ শোনা যেত, আবার কখনও দুই বা তিনটি শব্দ একসাথে শোনা যেত। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে শব্দগুলো বেশি শোনা যেত। অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শব্দগুলো শোনা যেত বেশি। প্রথম দিকে ব্রিটিশদের ধারণা ছিল শব্দগুলো জলদস্যুদের কামান দাগার আওয়াজ, কিন্তু বহু খোঁজাখুঁজি করেও কোন জলদস্যু জাহাজ বা ঘাঁটির খোঁজ পাওয়া যায় নি।
কবি সুফিয়া কামাল তাঁর আত্ন জীবনীতে লিখেছেন, তাঁর শৈশবে এধরনের রহস্যময় বিস্ফোরনের আওয়াজের কথা তিনি মুরুব্বীদের কাছে শুনেছেন। তাঁর কথায়, ১৯৫০ এর পরে উনি কখনো এই শব্দ আর কেউ শুনেছে তা শোনেননি। কেন বা কি কারনে এই আওয়াজ হতো কিংবা এখনই বা কেন হয় না তা নিয়ে অনেক মতামত থাকলেও কোনোটাই এখনো প্রমান করা যায়নি।
চিকনকালা গ্রাম: মায়ানমার সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের অন্যতম উচু আর সবচাইতে দুর্গম গ্রামগুলোর একটা। মুরং বা ম্রো-রা চমতকার উপভোগ্য মানুষ।এ অঞ্চলটা একদমই যেন পৃথিবীর বাইরে। মুরং গ্রামটা বাংলাদেশ-বার্মা নো ম্যানস ল্যান্ডে। জিপিএস এর হিসাবমত প্রায় ২৭০০ ফুট উপরে। গ্রামের লোকেদের ধারনা এই জঙ্গলে অতৃপ্ত অপদেবতার বাস। প্রতিবছরেই হঠাতই একদিন কোন জানান না দিয়ে বনের ভেতরে বিচিত্র একটা ধুপধাপ আওয়াজ আসে। এই আওয়াজ শুনলে গ্রামের শিশু বৃদ্ধ সবাই আতঙ্কে জমে যায়। পিশাচের ঘুম ভেঙ্গেছে। বনের ভেতরে থাকা কাঠুরে বা শিকারীরদল উর্ধশ্বাসে জান হাতে নিয়ে ছুটে বন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিবছরেই এক দুজন পিছনে রয়ে যায়। তারা আর কোনদিন গ্রামে ফিরে আসে না। ক-দিন পরে হয়তো জঙ্গলে তাদের মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। সারা শরীরে কোন আঘাতে চিহ্ন নেই। কিন্তু লাশের চেহারা দেখে মনে হয় সাংঘাতিক ক্লান্ত আর ভয়ঙ্কর কোন কিছু দেখে দারুন আতঙ্কে অস্থির। কি দেখে ভয় পেয়েছে আর কিভাবে কোন ক্ষতচিহ্ন ছাড়া মারা গেছে সেই রহস্য এখনো চিকনকালার লোকেরা ভেদ করতে পারে নি।
সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড: অনেক আগে আগে ব্রিটিশরা সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামটি দেয়। এর কারণ হলো সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড যেখানে শুরু সেখানে হঠাৎ করেই পানির গভীরতা বেড়ে গেছে , ব্রিটিশদের ধারণা ছিলো সমুদ্রের এই খাদের কোন তল নাই এজন্য বলেছিলো সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড । আসলে বঙ্গোপসাগরের তলায় একটি গভীর উপত্যকা বা মেরিন ভ্যালি। একে আন্ডার ওয়াটার ক্যানিয়নও বলা হয়। সোয়াচ অভ নো গ্রাউন্ড এ প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। জেলেরা ফিশিংবোট আর মাছধরার ট্রলার করে সোয়াচ অভ নো গ্রাউন্ড এ মাছ ধরতে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের সেরা চিংড়ির ঘের তো ওই সোয়াচ অভ নো গ্রাউন্ড এই। জেলেরা ওখানে গিয়ে দেখে যে পানির রং কেমন আলাদা। জেলেরা ঠিকই জানে যে জায়গাটা অনেক গভীর। কিন্তু এর তলায় যে একটি গভীর উপত্যকা রয়েছে তা তাদের জানার কথা না । এখানে বেশ কয়েক প্রজাতির ডলফিন, এমনকি তিমিও দেখা যায় মাঝে মাঝে। সুন্দরবন এর দুবলার চর/সোনারচর থেকে প্রায় ৩০-৪০ কি.মি দূরে অবস্থিত। গভীরতা সম্পর্কে উইকিপিডিয়া কিংবা আর কেউ সঠিক কোন তথ্য দিতে পারে নাই এখনো। সবচে’ গ্রহনযোগ্য হিসাবমতে সোয়াচ অভ নো গ্রাউন্ড এর সর্বমোট এলাকা প্রায় ৩,৮০০ বর্গকিলোমিটার। গভীরতা ১০ মিটার থেকে ১০০ মিটার। তবে এর ৭০% এর গভীরতা ৪০ মিটার- এর বেশি। এর তলায় রয়েছে কাদা মোশানো বালি। এর ঘনত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার! কথিত আছে, এইখানেই ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে একটা ২১২ টনি ব্রিটিশ গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমান ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় । কি?? যাবেন নাকি খুঁজতে???
No comments