রোমান্টিক গল্প
ও আমাকে এতটা যে ভালোবাসে সেটা আগে কখনো বুঝিনি। তবে কিছুটা টের পেলাম ও আমাকে জড়িয়ে ধরাতে। অবশ্য আন্টি, আংকেল কে সামনে রেখেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। ও'র আজকে এইচএসসি রেজাল্ট পাবলিশড হয়েছে। ও "গোল্ডেন এ প্লাস" পেয়েছে। সেই আনন্দেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছে। এ কান্না সুখের, এ কান্না আনন্দের, এ কান্না প্রাপ্তির। আমি কিছু পর টের পেলাম, আমারও গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছে; আমিও কাঁদছি। আমাকে জড়িয়ে ধরার অন্য কারণ আছে, ও'র প্রায় সবকিছুতেই আমার সহযোগিতার হাত রয়েছে। ও'র পড়ালেখার সবকিছুর দেখপাল যেন আমাকেই করতে হতো। এই সাজেসন্স ম্যানেজ করা, পড়া টুকে দেয়া, নোট করে দেয়া, অংক বুঝিয়ে দেয়া। সবকিছু আমাকে দিয়ে করাতে কিংবা আমার থেকে নিতেই ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। যদিও আমি ও'র থেকে দুই ক্লাস উপরে পড়ি। আমি একেবারে খুব ভালো ছাত্র নই, মোটামুটি বলা চলে। তারপরও আমি যা বুঝি তা-ই যেন ও'কে বুঝাতে হবে। আমি ও'র জন্য বাধ্য। ও'র নাম নিধি, আর আমি ধ্রুব। নিধি'দের বাসা আর আমাদের বাসা পাশাপাশি ছিলো, এই পাঁচ মিনিট হেঁটে যেতে পথের দূরত্ব। তাই খুব সহজেই ওদের বাড়ি যাওয়া যেতো। অবশ্য আমার যাওয়া লাগতো; আন্টি'কে ও বলেছে, আমাকে দিনের একঘণ্টা সময় করে ও'কে ও'র পড়া আমার বুঝিয়েই দিতে হবে, নাহয় সে পড়া বুঝবে না।
.
নিধি'র সাথে আমার আরেকদিক থেকে সম্পর্ক আছে, ভাই-বোনের সম্পর্ক। নিধি আমার ফুফাতো বোন। ছোট থেকেই আমরা এক বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। একসাথে খেয়েছি, চলেছি। যেন ও আমার একেবারে আপন বোন এবং আমি ও'র একেবারে আপন ভাইয়ের মতোই, এমন সম্পর্ক। তবে বছর চার-পাঁচেক হলো আমার বাবা, চাচা, ফুফুরা সবাই আলাদা করে ঘর তুলে থাকা শুরু করেছে। সেই থেকে আমরা সবাই আলাদা, তবুও কাছাকাছি; কেউই খুব দূরে গিয়ে ঘর তোলেনি।
.
একদিন নিধি'কে আমি অংক ধরিয়ে দিচ্ছি, এ সময়ে ও অংক দেখা রেখে সেই কতক্ষণ থেকে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো। চোখে কোনো পলক ফেলছিলো না। যেন হুতুমপেঁচা'র মতো তাকিয়েই থাকলো। আমি এদিকে তো অংক করিয়ে বুঝাচ্ছি, কিন্তু কাকে বুঝাচ্ছি! যাকে বুঝাচ্ছি তার তো এদিকে কোনো মনোযোগই নেই, সব মনোযোগ আমার দিকে। আমি প্রথমে এটা খেয়াল করতে পারিনি, পরে খেয়াল করতে পারছিলাম। আমি ধমক দেয়াতে তবে আবার ও'র মনোযোগ ফিরছিলো। সেদিন আমি খুব রাগ করে ও'কে বকেছিলাম, "আর তোকে পড়াবোই না, পড়ার দিকে তোর কোনো মনোযোগই থাকে না। মনোযোগ থাকে এদিক সেদিক।" পরেরদিন এসে শুনি, আমি যাওয়ার পর থেকে ও যে কান্না শুরু করেছিলো সে কান্না থামাতে নাকি আন্টি'র অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিলো। এমনকি ও বলেছিলো, আমি যদি ও'কে আর না পড়াই তাহলে নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। তারপর থেকে ও'র প্রতি আমি তেমন রাগ দেখাতে পারিনি। যেন আমি ও'র আদেশে বাধ্য চাকর।
.
রেজাল্ট দিবসের কিছুদিন বাদে নিধি'র বিয়ে। নিধি'র সেই ছোটকাল থেকে এক কথা, আমাকে ছাড়া ও অন্য কাউকে ও'র স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারবে না। একথা নাকি ও'র আম্মুকে অনেক আগেই বলেছে। কিন্তু আন্টি আমাকে সে বিষয়ে আজ জানালো। আমার থেকে নিধি'র পরিবার মতামত চাচ্ছে। কিন্তু আমি এই খুশির দিনে কিছু বলতে নারাজ। আমি তাদের বলেছি, "কিছুদিন পরে আপনাদের এই বিষয়ে আমার মতামত জানাবো।"
.
একসপ্তাহ পরে আমি আন্টি এবং আংকেল কে নিয়ে নিধি'দের বাসায় বসলাম। নিধি'কে বলছি আমাদের বাসায় যেতে। কারণ, নিধি বাসায় থাকলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে। আন্টি, আংকেলের সাথে অনেক কথা হলো। তারা আমার মতামত শুনে আর কোনো কথা বলেনি; শুধু তারা এটুকু বলেছিলো, "বাবা, তুমি আরেকবার ভেবে দেখো।" কিন্তু আমি তো অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আত্মীয়ের মধ্যে আরেক আত্মীয় বাঁধবো না। নিধি যে করে হোক আমার মতামত কিছুটা জেনে ফেলেছে, কিন্তু কোনো দুর্ঘটনার পথে এখনও পর্যন্ত যায়নি। ও আমাকে ফোন করে শুধু এটুকু বলেছে, "আপনি আমার বিয়েতে থাকবেন না।"
.
আজ পহেলা ভাদ্র নিধি'র বিয়ে। নিধি কণে সেজে বসে আছে। নিধি'র হবু স্বামী একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। দেশের বড় এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। আমি নিধি'র বিয়ের সবকিছু সামলে নিচ্ছি। আন্টি'র অনুরোধে নিধি'র বিয়েতে থাকতে হচ্ছে। কারণ, বড় ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে। তাছাড়া আমিই এই বংশের বড় ছেলে। সে হিসেবে জোর করে হলেও থাকতে হচ্ছে।
.
নিধি'র বিয়ের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ফেলা হচ্ছে। সবাই মিষ্টিমুখে ব্যস্ত। আর আমি অশ্রু মুছে রুমাল ভিজাচ্ছি। জানিনা, আমি কেনো কাঁদছি। নিধি এখন কেমন আছে সে খবর এখন পর্যন্ত আমার নেয়া হয়নি। ও হয়তো আমাকে মনে মনে অভিশাপ দিচ্ছে। জগতের সকল অপবাদের বুলিই হয়তো আমার উপরেই ও ঝেরেছে। ও কেমন করে যেন দেখে ফেলেছে আমি ও'র বিয়ে অনুষ্ঠানে আছি। কিন্তু দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়ায় যায়নি, কারণ ও'র এখন বিদায়ের পালা। নববধূ সেজে নিধি শ্বশুর বাড়ি যেতে প্রস্তুত; শ্বশুর বাড়ি যেতে রওনা দিয়েছে। সবার কাছ থেকে নিধি কেঁদে কেঁদে বিদায় নিচ্ছে। এবার আমার কাছ থেকে বিদায় নেবার পালা। ও আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে এসে শুধু একথাই বলেছে, "ভাইয়া, খুব ভালো থাকবেন। ভাইয়া, আপনি সেই ভাইয়াই রয়ে গেলেন!"
.
লিখায়: Md Saiful Islam
এরকম আরো দারুণ সব গল্প পেতে ঘুরে আসুন আমাদের সাইট থেকে....
.
নিধি'র সাথে আমার আরেকদিক থেকে সম্পর্ক আছে, ভাই-বোনের সম্পর্ক। নিধি আমার ফুফাতো বোন। ছোট থেকেই আমরা এক বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। একসাথে খেয়েছি, চলেছি। যেন ও আমার একেবারে আপন বোন এবং আমি ও'র একেবারে আপন ভাইয়ের মতোই, এমন সম্পর্ক। তবে বছর চার-পাঁচেক হলো আমার বাবা, চাচা, ফুফুরা সবাই আলাদা করে ঘর তুলে থাকা শুরু করেছে। সেই থেকে আমরা সবাই আলাদা, তবুও কাছাকাছি; কেউই খুব দূরে গিয়ে ঘর তোলেনি।
.
একদিন নিধি'কে আমি অংক ধরিয়ে দিচ্ছি, এ সময়ে ও অংক দেখা রেখে সেই কতক্ষণ থেকে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো। চোখে কোনো পলক ফেলছিলো না। যেন হুতুমপেঁচা'র মতো তাকিয়েই থাকলো। আমি এদিকে তো অংক করিয়ে বুঝাচ্ছি, কিন্তু কাকে বুঝাচ্ছি! যাকে বুঝাচ্ছি তার তো এদিকে কোনো মনোযোগই নেই, সব মনোযোগ আমার দিকে। আমি প্রথমে এটা খেয়াল করতে পারিনি, পরে খেয়াল করতে পারছিলাম। আমি ধমক দেয়াতে তবে আবার ও'র মনোযোগ ফিরছিলো। সেদিন আমি খুব রাগ করে ও'কে বকেছিলাম, "আর তোকে পড়াবোই না, পড়ার দিকে তোর কোনো মনোযোগই থাকে না। মনোযোগ থাকে এদিক সেদিক।" পরেরদিন এসে শুনি, আমি যাওয়ার পর থেকে ও যে কান্না শুরু করেছিলো সে কান্না থামাতে নাকি আন্টি'র অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিলো। এমনকি ও বলেছিলো, আমি যদি ও'কে আর না পড়াই তাহলে নাকি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। তারপর থেকে ও'র প্রতি আমি তেমন রাগ দেখাতে পারিনি। যেন আমি ও'র আদেশে বাধ্য চাকর।
.
রেজাল্ট দিবসের কিছুদিন বাদে নিধি'র বিয়ে। নিধি'র সেই ছোটকাল থেকে এক কথা, আমাকে ছাড়া ও অন্য কাউকে ও'র স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারবে না। একথা নাকি ও'র আম্মুকে অনেক আগেই বলেছে। কিন্তু আন্টি আমাকে সে বিষয়ে আজ জানালো। আমার থেকে নিধি'র পরিবার মতামত চাচ্ছে। কিন্তু আমি এই খুশির দিনে কিছু বলতে নারাজ। আমি তাদের বলেছি, "কিছুদিন পরে আপনাদের এই বিষয়ে আমার মতামত জানাবো।"
.
একসপ্তাহ পরে আমি আন্টি এবং আংকেল কে নিয়ে নিধি'দের বাসায় বসলাম। নিধি'কে বলছি আমাদের বাসায় যেতে। কারণ, নিধি বাসায় থাকলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে। আন্টি, আংকেলের সাথে অনেক কথা হলো। তারা আমার মতামত শুনে আর কোনো কথা বলেনি; শুধু তারা এটুকু বলেছিলো, "বাবা, তুমি আরেকবার ভেবে দেখো।" কিন্তু আমি তো অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আত্মীয়ের মধ্যে আরেক আত্মীয় বাঁধবো না। নিধি যে করে হোক আমার মতামত কিছুটা জেনে ফেলেছে, কিন্তু কোনো দুর্ঘটনার পথে এখনও পর্যন্ত যায়নি। ও আমাকে ফোন করে শুধু এটুকু বলেছে, "আপনি আমার বিয়েতে থাকবেন না।"
.
আজ পহেলা ভাদ্র নিধি'র বিয়ে। নিধি কণে সেজে বসে আছে। নিধি'র হবু স্বামী একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। দেশের বড় এক প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। আমি নিধি'র বিয়ের সবকিছু সামলে নিচ্ছি। আন্টি'র অনুরোধে নিধি'র বিয়েতে থাকতে হচ্ছে। কারণ, বড় ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে। তাছাড়া আমিই এই বংশের বড় ছেলে। সে হিসেবে জোর করে হলেও থাকতে হচ্ছে।
.
নিধি'র বিয়ের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ফেলা হচ্ছে। সবাই মিষ্টিমুখে ব্যস্ত। আর আমি অশ্রু মুছে রুমাল ভিজাচ্ছি। জানিনা, আমি কেনো কাঁদছি। নিধি এখন কেমন আছে সে খবর এখন পর্যন্ত আমার নেয়া হয়নি। ও হয়তো আমাকে মনে মনে অভিশাপ দিচ্ছে। জগতের সকল অপবাদের বুলিই হয়তো আমার উপরেই ও ঝেরেছে। ও কেমন করে যেন দেখে ফেলেছে আমি ও'র বিয়ে অনুষ্ঠানে আছি। কিন্তু দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়ায় যায়নি, কারণ ও'র এখন বিদায়ের পালা। নববধূ সেজে নিধি শ্বশুর বাড়ি যেতে প্রস্তুত; শ্বশুর বাড়ি যেতে রওনা দিয়েছে। সবার কাছ থেকে নিধি কেঁদে কেঁদে বিদায় নিচ্ছে। এবার আমার কাছ থেকে বিদায় নেবার পালা। ও আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে এসে শুধু একথাই বলেছে, "ভাইয়া, খুব ভালো থাকবেন। ভাইয়া, আপনি সেই ভাইয়াই রয়ে গেলেন!"
.
লিখায়: Md Saiful Islam
এরকম আরো দারুণ সব গল্প পেতে ঘুরে আসুন আমাদের সাইট থেকে....
No comments