Header Ads

পরিবর্তন

-মেহেদী?
-হুম।
-ভালোবাসো আমাকে?
-নাহ্।
নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে টুপটুপ করে
কয়েকফোঁটা চোখের জল ফেললো
মেহেদী।কাজলে লেপ্টে যাওয়া চোখের
অশ্রু বা হাতের পিঠ দিয়ে মুছলো নিধি।ধরা গলায়
বললো,
-তাহলে কাঁদছো কেনো?
-চোখে কি যেন পড়েছে।
নিধি এক দৃষ্টিতে মেহেদীর চোখের দিকে
তাকিয়ে থেকে মন বুঝার চেষ্টা করছে।ঐ
চোখে আজ কিছু খেলা করছে,অদ্ভূত
কোনো খেলা।
-আমাকে ছাড়া সত্যিই থাকতে পারবে তো?
-পারবো।
-তুমি ভালো থাকবে?
-হয়তো পারবো,হয়তো পারবো না।
-অামাকে ছেঁড়ে যেতে চাও কোন অজুহাতে
বলবে শুনি?
-অজুহাত?
-সম্পর্ক ভাঙ্গার প্রধান অস্ত্র,জানতে না বুঝি?
-আজ তোমাকে নিয়ে ওরা খুব বাজে কথা
বলেছে,আমাকে অপমান করেছে।আমার ভালো
লাগে না এসব।
-ওরা কারা?
.
মেহেদী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,নিধির
কৌতূহলী চোখ মেহেদীর উপর।
-ওহ্,বুঝেছি।তোমার বন্ধুরা বুঝি?
-হুম।
-বলবে?কেনো এমন করলো তারা?
-তোমার ব্যাকডেডেট লাইফ-স্টাইল।
-ঠিক বুঝলাম না?
-তোমার-আমার একসাথে তোলা ছবি দেখতে
চেয়েছিলো রাকিব।আমি বলেছি নেই।সে
বললো কেন?আমি বলেছিলাম,একসাথে ছবি
তোলা তো দূরের কথা আজ অব্দি আমি তোমার
হাতটাও ধরি নি।
-তারপর?
-দু'জন বাদে কয়েকজন খুব পঁচালো তোমাকে
নিয়ে।আমাকেও এক তরফা অপমান করলো।
-তোমার বন্ধুদের কিছু বলবো না,এতে তোমায়
অপমান করা হবে।
-হুম।
-তবে কেনো ভালোবেসেছিলে আমায়?
-তোমার প্রতিটা বিষয় আমার ভালো লাগতো বলে।
-এখন লাগে না?
মেহেদী কোনো কথা বলছে না।
-আচ্ছা,আমাদের সম্পর্ক কি এতই দূর্বল যে
বন্ধুদের কিছু বাজে কথার কারণে ভেঙ্গে
যাবে?
-আমিও মুক্তি চাইছিলাম বেশ কিছুদিন ধরে।
-ওহ্।আমার পিছিয়ে পরা জীবনের জন্য আমাকে
ছেঁড়ে যাচ্ছো তাইতো?
-হুম।
-আচ্ছা,যাও তাহলে।
.
মেহেদী পেছনে ফিরে চলে আসছে।
বুকের ভেতরে উথাল-পাথাল হাওয়া বইছে।সিগারেট
খাওয়া কি আজ থেকে শুরু করবে?
-শুনো?
মেহেদী আবার পিছনে ফিরলো।
-বলো?
-সহজ সরল মেয়েটার জীবনে ভালোবাসা এনে
যে স্বপ্নগুলো দেখিয়ে ছিলে ওগুলো ফেরত
নিয়ে যাও।
-আমি পারবো না।
-কেনো পারবে না?কেনো দেখিয়েছিলে
স্বপ্নগুলো?
মেহেদী কোনো কথা না বলে হাঁটতে
লাগলো।নিধি ঠায় বসে পড়ে কাঁদছে।
.
বিছানায় অনেকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করছে নিধি।তিন
বছরের অভ্যাস একদিনের মধ্যে যাবার নয়।
মেহেদীর কন্ঠটা শুনার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে।
বেহায়া মনটাকে আটকে রাখতে না পেরে
নির্লজ্জ্বের মতো ফোনটা করে বসলো নিধি।
দু'বার বাজার পর ফোন ধরলো মেহেদী।
-হ্যালো?
নিজের মুখ হাতে চেপে ধরে কাঁদছে নিধি।হঠাৎ
ফোনটা কেঁটে গেলো।নিধি আবার ফোন
করলো।কিন্তু ফোনটা বন্ধ বলছে।ঘুম কি আসবে
নিধির?বালিশ জড়িয়ে ধরে এক নাগাড়ে কান্না করে
যাচ্ছে।আচ্ছা? পুরুষ মানুষ এমন কেনো?কারও মন
বুঝতে চায় না?
.
দুদিন যাবত ভার্সিটিতে যায় নি নিধি।মেহেদীও
কোনো খোঁজ নেয়নি।হঠাৎ নিধিকে
দেখলো,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে
অনেকটা।হয়তো খুব কেঁদেছে,মুখটা শুকিয়ে
আছে।তার মানে খাওয়ার খুব অনিয়ম করেছে।
মেহেদী দেখেও না দেখার ভান করে নিধিকে
পাশ কাঁটিয়ে চলে যাচ্ছে।নিধি পেছন থেকে
ডাকলো,
-শুনো?
-হুম।
-ভালো আছো?
-হুম,খুব।
-ভালোবাসি বলে বড্ড অবহেলা করছো,সামনে
আছি তো বুঝতে পারছো না।দেখে নিও,একদিন
তোমার অবহেলায় ঠিকি হারিয়ে যাবো।
-আমার কাজ আছে,আসছি আমি।
-একদিন কিন্তু আমার জন্য তোমাকে আফসুস
করতে হবে।
-দেখা যাবে।
.
মেহেদী চলে আসলো,নিধি কাঁদছে।আজকাল
চোখের পানি তেমন আসে না,কঠিন হয়ে
গেছে।অল্পতেই লাল হয়ে যায়।রাতে শুয়ে
শুয়ে চিন্তা করছে নিধি,কতবার কতভাবে ভালোবাসি
বলেছে মেহেদী তবু সে রাজি হয় নি।সে
জানতো, ভালোবাসার অপর নাম কষ্ট।কিন্তু একদিন
মেহেদী ব্লেড হাতে নিয়ে নিজের হাত কাঁটার
হুমকি দেয়,যার কারণে উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে
যায় নিধি।
.
নিধি এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো।নিজেকে বদলে
ফেলার সিদ্ধান্ত।জিন্স,টি-শার্ট,ঘুরাফেরা,ছবি
তোলা,আড্ডা,ট্রিট দেয়া,ছেলেদের সাথে
চলাফেরা।সব ধরনের পরিবর্তন আনলো নিজের
মধ্যে।নিজের হাসিটার মাঝেও খুব পরিবর্তন
আনলো।নিধি যে এত সুন্দরী তা আগে কেউ
খেয়াল করে নি।সাঁজলে অপরূপাদের কাতারে
পড়ে।প্রতিদিন ছেলেদের কাছ থেকে
প্রেমের অফার পায় নিধি।তার মধ্যে মেহেদীর
ও কিছু বন্ধু আছে।মেহেদী দূর থেকে
নিধিকে দেখে,মাঝে দু-একবার কথা বলতে
গিয়েছিল কিন্তু নিধি এড়িয়ে গেছে।এখন আর নিধি
তার খোঁজ নেয় না।তার জন্য একটুও সময় নেই
নিধির কাছে।তার না খাওয়া অব্দি নিধি ফোন করে
বলে না, "খেয়ে নাও,আমি না খেয়ে আছি।" তাকে
মধ্যরাত্রিরে ফোন করে পাগলের মতো বলে
না,"তোমায় খুব ভালবাসি গো।" আজকাল রাফি নামের
একজনের সাথে নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছে নিধি।
মাঝে মাঝে তাদের একসাথে ঘুরা,হাসি-ঠাট্টা করতে
দেখে মেহেদী।বুকের ভেতরটা শূণ্য শূণ্য
লাগে।
.
-শুনো?
-জ্বি কিছু বলবেন?
মেহেদী অবাক হয়ে গেছে।যে পরিচিত কন্ঠটা
তাকে তুমি ছাড়া কোনো কথা বলতো না আজ
তাকে আপনি করে বলছে।
-কেমন আছো?
-ভালো,আপনি?
-আমি ভালো নেই।
-কেনো?
মেহেদী হঠাৎ কোনো কথা না বলে নিধির দু'হাত
চেপে ধরলো।
-নিধি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ?
-হাত ছাঁড়ুন।
-আমার ভুল হয়ে গেছে,আমি আমার আগের
নিধিকে আবার ফিরে পেতে চাই,প্লিজ।
-আফসুস হচ্ছে খুব?তোমার আস্তে আস্তে
করতে থাকা অবহেলায় আমি হারিয়ে গেছি।
-আমি আবার আগের মতো তোমার মধ্যমণি হতে
চাই।
-হৃদয়ের গভীরে থাকা জায়গাটার যে অবহেলা
করে, জেনে শুনে তাকে ঐ জায়গাটা আবার
দেওয়া উচিত নয়।হাতটা ছাঁড়ুন?
.
মেহেদী নিধির হাত চেপে ধরে আছে,উপায় না
পেয়ে মেহেদীকে একটা থাপ্পড় দিলো নিধি।
মেহেদী অবাক হয়ে আছে,নিধি কাঁদছে।
-তুমি অনেক বদলে গেছো।
-বদলটা তুমি চেয়েছিলে,আমি তো এমন সং সাঁজতে
চাই নি।
-আমার জন্য এখন আর কষ্ট হয় না?
-আগে প্রচুর কষ্ট হতো,এখন কষ্টের সাথে
আপোস করে নিয়েছি।
.
নিধি চলে আসলো।মাথা ব্যথা করছে প্রচুর।সে কি
একটু ঘুমোবে?বাবার ঘরে ঘুমের ঔষধ
আছে,অনেকগুলো একসাথে মুখে পুড়ে
নিলো।নাহ্,এবার নিশ্চয়ই ঘুম আসবে।
.
হাসপাতালে নিধির বেডের পাশে বসে কাঁদছে
মেহেদী।জ্ঞান ফেরার পর নিধি খেয়াল করলো
তার ডান হাত মেহেদী দুই হাতের মধ্যে নিয়ে
নিজের মুখের কাছে ধরে আছে।
-কাপুরুষটা এখানে কি করছে?
-কাপুরুষ?
-নয়তো কি?কয়েকটা বাজে বন্ধুর হাত থেকে
যে নিজের ভালোবাসার সম্মান রক্ষা করতে পারে
না,সে কেমন পুরুষ মানুষ?
-সত্যি করে বলোতো আমাকে তুমি
ভালোবাসো না?
-নাহ্।
-তাহলে কাঁদছো কেনো?আর মরতেই বা
গিয়েছিলে কেনো?
-কান্না আসছে তাই কাঁদছি।মরতে যাই নি,সং সেঁজে
অভিনয় করতো করতে হাপিয়ে গিয়েছিলাম,বড়ো
একটা ঘুম ঘুমোতে চেয়েছিলাম।
-আমার জায়গাটা তো পূরণ করে
ফেলেছিলে,তোমার জায়গাটা তো কেউ পূরণ
করতে পারে নি।
-কোনোদিন আমাকে বুঝতে পেরেছো?না
বুঝতে চেয়েছো?খালাতো ভাইকে প্রেমিক
বানিয়ে দিলে?
-আমাকে ক্ষমা করা যায় না?
-আমি অার সং সাঁজতে চাই না।
-তুমি আগে যেমন নিধি ছিলে,আমার সেই নিধিই
চলবে।যে আমাকে খুব ভালোবাসবে,আমাকে
নিয়েই যার জীবন।
-হুম,বড্ড হাঁপিয়ে গেছি অভিনয় করতে করতে।
-ক্ষমা করেছো আমায়?
-হাতটা শক্ত করে ধরো,যেন শত আঘাতেও বাঁধনটা
না ছিঁড়ে।
.
মেহেদী অশ্রুসজল চোখে নিধির দিকে
তাকিয়ে একটু হাসলো।নিধি ও একটু হাসলো,প্রাণ
খোলা হাসি।
মেহেদী বলে উঠলো,
-সবকিছু আগের মতো হলেও এই হাসিটা যেন
আগের মতো না হয়।এই হাসিটাই আমার চাই,শুধুই
আমার।
.
নিধি কিছু বললো না।এক অদ্ভূত অনুভূতি আজ তাকে
গ্রাস করছে।স্বপ্নজয়ের তীব্র অনুভূতি।
.
.....সমাপ্ত.....
লেখক:  স্বপ্নবালক

No comments

Powered by Blogger.