Header Ads

বাস্তবতা

আমি আকাশ,
বাসের সবচেয়ে পিছনের সিটে বাস ছাড়ার
অপেক্ষা করছি।
সামনের সব সিট গুলই খালি।
তা আমার জন্য না।
ওগুলো খালি থাক সমেজের সভ্য মানুষের জন্য।
নিজেকে আজ বড় অসহ্য লাগছে।
অভিশপ্ত মনে হচ্ছে নিজেকে।
খেয়ে নাখেয়ে
রাত-জেগে,দিনে-ছুটে
সার্টিফিকেট অর্জন করলাম
কি লাভ হল।
প্রায় চল্লিশটা চাকরির ইন্টারভিউ দিলাম।
দুইটা চাকরি হতে হতে হল না।
মোটা একটা এমাউন্ট না দিলে চাকরি হবে না। তার
জন্যই
প্রায় চার মাস পর নিজের বাড়িতে গেছিলাম।
নিজের বাড়ি বললে ভূল হবে
মা" চলে যাওয়ার পর বাবা নতুন মা" নিয়ে আসে।
তার পর বাড়িতে আমার আর জায়গা হয়নি।
ছোট বোন টা আছে সেখানে।
নতুন ভাই আছে একজন।
ছয় বছর বয়স।
সে অবশ্য খুব পছন্দ করে আমাকে।
আমি বাড়িতে গেলেই
চোখ কুচকে জিজ্ঞেস করবে,
"এত দিন পর আমার কথা মনে পরলে?"
নতুন মা" যদি ওর মত ভাবতে পারত
তাহলে হয়ত আজ দিনটা অন্যরকম হত।
চাকরির জন্য কিছু টাকা দিতে বলেছিলাম বাবাকে।
ধার হিসেবে।
কিন্তু মা" শুনিয়ে দিয়েছে অনেক কথা।
সাথে দিয়ে দেয় এক বিরাট দায়িত্ব।
বোনের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে নাকি!
ওকে বিয়ে দিয়ে বোঝা নামাতে চায় তারা।
আর খুব শীঘ্র
বিয়ের আয়োজন করতে হবে
আমাকেই।
.
কি করব আমি এখন?
কিছু মাথায় আসছে না!
একটা চাকরি খুব বেশি দরকার।
"আত্মহত্যা" এখন একমাত্র পথ।
কি ভাবে মরলে একটু শান্তিতে মরা যায় ভাবছি।
.
গাড়ি ছেড়ে দিল। দূপুর বেলা তাই
লোকজন বেশি নাই।
সামনের দিকে কিছু মানুষ আছে।
এক মধ্যবয়সি লোক উঠেছে বেশ কিছু সবজি,পাকা
পেঁপে , কলা নিয়ে।
আমার কাছাকাছি একটা মহিলা বসেছে সাথে একটা
ছোট বাচ্চা।
বাচ্চাটি হাতে একটি পেয়ারা নিয়ে আছে।বলছে,এটা
বাবার জন্য, কাউকে দিব না "। আরোকিছু মধ্যবয়ষ্ক
লোকছিল।
গ্রাম থেকে প্রায় ষাট কি.মি.
দূরে শহর।
,
গাড়ি থামিয়ে মাঝেমধ্যে যাত্রী নিচ্ছে।
.
গাড়ি থামল গেট করা একটি বড় বাড়ির সামনে।সেখান
থেকে একটা মেয়ে উঠল সাথে তার বাবা মা
আরো কয়েকজন।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমি চোখ ফেরাতে
পারছিলাম না।
এক কথায় অপরুপা"
মেয়েটি যদি রাতে গাড়ীতে উঠত তাহলে আর
কোন বাতির প্রয়োজন হতো না।
.
মনে হচ্ছে, মেয়েটির বাবাকে অনেকেই
চিনেন।তিনি সবার সাথে কথা বলছেন।
গাড়ির প্রায় সবাই খুব স্মান দেখাচ্ছে।
তার কথা শুনে বুঝলাম
তার মেয়ের নাম "নীলা"
একপ্তাহ পর নীলার বিয়ে।
বিয়ের কেনাকাটার জন্যই তারা শহরে যাচ্ছে।
আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে নীলাকে
দেখা যাচ্ছে।
কেন যেন আমি তাকিয়ে আছি নীলার দিকে।
.
আমার গন্তব্যে যেতে ইচ্ছে করছে না আবার
বাড়ি ফিরতেও ইচ্ছে করছে না।
মনে মনে চাইছিলাম
জনম জনম গাড়ি চলতে থাকুক আর আমি নীলার
দিকে তাকিয়ে থাকি।
.
হঠাৎ গাড়ি আকাবাকা চলতে শুরু করল।
যাত্রীরা সবাই চেঁচামেচি শুরু করল।
বুঝলাম গাড়ির ব্রেকফেল হয়েছে।
গাড়িটি যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে যাচ্ছিল তখন
আমি দরজা দিয়ে লাফিয়ে বাইরে পরলাম।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
একটা গাছে ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে যাই।
.
কিছুক্ষণ পর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম।
উঠতে গিয়ে দেখি মাথায় আর হাতে মেন্ডেজ।
নীলার কথা মনে হতেই খুজতে বেরিয়ে যাই।
প্রথমেই চোখে পরল,
পেয়ারা হাতে সেই পিচ্চিটাকে
সে নিঃশ্বাস ছেরে দিয়েছে কিন্তু পেয়ারাটা হাতে
আছে এখনও।
তার মা পাথরের মত বসে আছে পাশে!
অনেক মানুষের ভিরে নীলাকে খুজে পাচ্ছি না।
পরে দেখলাম,অনেক মানুষ ভির করে আছে
নীলার বাবা-মায়ের লাশকে ঘিরে।
সম্ভবত নীলার ফুপু চিকৎকার করে কাঁদছেন আর
বলছে, কতবার বলেছি গাড়ি নিয়ে নাও।
না!
সে নাকি বাসে চরে আনন্দ পায়।"
এখন এ কি হয়ে গেল।
.
নীলাকে দেখছি না কোথাও!!
আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল........
অবষেশে নীলাকে দেখলাম!
বিড়বিড় করে কি যেন বলছে,!!
খুব মায়া লাগছে মেয়েটাকে দেখে,
কিছুক্ষণ আগেও সে কতো খুশী ছিল...
কিন্তু এখন??
.
একটা এ্যাসিডেন্ট বদলে দেয় মানুষের জীবন"।
শেষ করে দেয় হাজার সপ্ন।"
দূরে সরিয়ে দেয় সন্তান থেকে পরিবার আর
পরিবার থেকে সন্তানকে।"
লেখা: নীল সমুদ্র'

No comments

Powered by Blogger.