ভালোবাসা কিন্তু না
.
লেখক:: "আলিফ খান" (মেন্টাল)
.
তাহমি আর পিয়ালের গল্প। তারা দুজনই ক্লাস ১০ এ পড়ে। দুজন দুই স্কুলেই পড়ে। তাদের পরিচয় কোচিং এর মাধ্যমে। দুজন একসাথেই রফিক স্যারের কোচিং এ পড়ে। বিভিন্নভাবে পড়াশুনার মাধ্যমে তাদের মাঝে বেশ ভাল সম্পর্ক হইল। তারা একটা জোট ছিল। যারা সবসময় একসাথেই পড়াশুনা নিয়ে কথা বলতো। তাদের এই গ্রুপে ছিল তাহমি,পিয়াল,রিয়া,হাসান সহ আর ২জন ছিল। তারা সবাই সবার খুব ভালো বন্ধু। এভাবেই তারা একসাথে দিন কাটাচ্ছিল। একসাথে কোচিং এ যাওয়া আসা। বিভিন্ন দরকারে একজন আরেকজনকে আম্মুর ফোন দিয়ে ফোন করা। একসাথে মজা করা। এভাবেই তাদের ফ্রেন্ডশিপটা আগাচ্ছিল। কিন্তু এসব করতে করতেই পিয়াল ভিতরে ভিতরে তাহমির প্রতি উইক হয়ে পড়ে। কিন্তু সেটা কাউকে বলে না।
তখন তাদের এস.এস.সি পরিক্ষার আর ২দিন বাকি। এমন একদিন রাত ঠিক ১টায় পিয়াল হাসানকে ফোন করেছে।
.
পিয়াল:: মাম্মা আমি তো শেষ
হাসান:: হম রে মাম্মা।বইরে তো চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা।
পিয়াল:: রাখ তোর বই। আমি তো অন্য কাউকে চিনতে চাই।
(হাসান বুঝে গেসে সামথিং রং)
হাসান:: পিয়াললল। মাম্মা তুমার কি হইসে?
পিয়াল:: দোস্ত মন বসে না পড়ার টেবিলে।
হাসান:: এই সময় মনটা কেডা চুরি করলো? হালার চোর আর টাইম পায় না।
পিয়াল:: না কাক্কু এখন না। বহুত আগেই তো সে সব নিয়ে গেসে।
হাসান:: হারামির নাতি আর তুই আমারে এত্ত দিনে কইতাছস?
পিয়াল:: রাগিস না। কালকে তোরে সিংগারা খাওয়ামুনে।
হাসান::হম ৬টা আর সসও লইবি। এখন বল নাইকা কেঠা?
পিয়াল:: তাহমি।
(হঠাত করে হাসানের মনে পরলো তাদের ২দিন পর পরিক্ষা)
হাসান:: পিয়াল্লা আমগো না ২দিন পর পরিক্ষা। আর তুই এগুলা নিয়ে পইরা আসস।আমারেও ডুবাইতাছস। পড়।
(এই বলে ফোন কেটে দিল)
.
তারপর তাদের পরিক্ষা শুরু হইলো।এই পরিক্ষার ফাকেই পিয়ালের এই কথা,এই কান,সেই কান হতে হতে তাহমির কানেও গেলো কিন্তু তাহমি এটাই কানেই তুলল না।
.
তারা পরিক্ষা দিতে লাগলো। পিয়াল লুকিয়ে লুকিয়ে তাহমিকে দেখতো।
.
এখন তাহমির সামনে পিয়াল আসলে তাহমি এড়িয়ে যেতো। দরকার ছাড়া পিয়ালের সাথে কথা বলতো না।
.
একসময় তাদের পরিক্ষা শেষ হইল।
এখন তাদের রেগুলার দেখা খুব কমই হইতো। তারা বিভিন্ন সময় প্লানিং করতো। যেকোনো একজনের বাসায় সবাই মিলে একত্র হয়ে আড্ডা দিত। প্রায় ২-৩ দিন পর পর এমনটাই করতো তারা। তাদের প্রায় সব বন্ধুরাই পিয়াল এবং তাহমির ব্যাপারটা জেনে গিয়েছিল। তাই তারা বিভিন্ন সময় দুস্টামি করে মজা নিত তাদের থেকে। এভাবেই চলছিল তাদের বন্ধের দিন গুলি।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন তাদের সবার প্লানিং ছিল আজ তারা আড্ডা দিবে "নিহা" দের বাসায়। নিহাদের বাসা খালি। আজ শুধু তারা সবাই মিলে আড্ডা দিবে,খাওয়া দাওয়া করবে,মজা করবে।
.
অন্যদিকে এটার বাহিরেও পিয়াল প্লানিং করছিল তার সব বন্ধুদের নিয়ে যে "আজ সে তাহমিকে প্রপোজ করবে"
সব প্লানিং হয়ে গেলো।
তখন বাজে দুপুর ২টা সবাই নিহাদের বাসায় চলে এসেছে। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই বসে আছে।
.
হাসান:: অই আয় সবাই খেলি।
মিরাজ:: অসভ্য শালা।
নিহা:: আরে বেচারা বলতে চাইসে সবাই মিলে কিছু একটা গেইম খেলি।
তাহমি:: কিন্তু রুমের মধ্যে কি খেলা যায়?
হাসান: একজনকে চো্খ বেধে দিব। সে বাকিদের খুজবে।
রিয়া:: গুড আইডিয়া।
তাহমি:: কিসের গুড। এইটা খেলা হইল?
হাসান:: অই সবাই খেলবো আর তুইও খেলবি।
রিয়া:: কি পিয়াল সাহেব কিছু বলেন না কেন?
পিয়াল:: তোরা যেদিকে আমিও সেদিকে।
হাসান:: ব্যাস তাইলে তো হইল।
.
তারপর সবাই মিলে অনেকটা চোরামি করেই তাহমিকে চোর বানায়। এবং চোখ বেধে দাড় করিয়ে দেয়।
একটু পরেই।
নিহা বলে "তাহমি চোখের বাধন খোল"
তাহমি চোখের বাধন খুলে দেখে।
""পুরা রুম অন্ধকার,জানালা খুলে দেয়া হয়েছে এবং হালকা বাতাস এসে খুব সুন্দরভাবে তাহমির চুল উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কেউ একজন কৃত্তিম লাইট জালিয়ে ধরেছে তাহমির পিছন থেকে এবং সামনে থেকে দুজন মোমবাতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ব্যাকগ্রাউন্ড এ বাজছে সুন্দর রোমান্টিক গান। এবং তাহমির সামনেই দাড়িয়ে আছে "পিয়াল"...
হাতে গোলাপ"'
পিয়াল এক পা ভেংগে বসে যেই বলতে যাবে!! এমন সময়।
তাহমি:: থাম পিয়াল।
পিয়াল:: আমি একটা কথা বলতে চাই।
তাহমি:: তুই কি বলবি আমি জানি। অইটা কখনোই সম্ভব না।
পিয়াল:: আমার কোন যোগ্যতা নেই?
তাহমি:: সময়টাই আমাদের বাধা। তোর সময় অনুযায়ী সব যোগ্যতাই আছে। একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে তুই পারফেক্ট কিন্তু আমার জন্য এখন জব এ পারফেক্ট ছেলে চাইবে বাবা-মা। অবশ্যই তুই একদিন অনেক ভাল জব করবি কিন্তু ততদিন আমার বাবা-মা অপেক্ষা করবে না।
পিয়াল:: পরেরটা পরেই ভাবা যাবে।
তাহমি:: আমি আর এই ব্যাপারে কথা শুনতে চাই না।
পিয়াল:: এখন তো সবাই রিলেশন করে। পরে তো ভালই হয়।
তাহমি:: ৯৫% খারাপ। স্বামীর ঘর নষ্ট করে এবং নিজের জিবনও করে। আমি তাদের মত জেনে বুঝে আগুনে পা দিব না। আজকের পর আর এই ব্যাপারে আমার সামনে কিছু বলবি না। বন্ধুত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করিস।
(এই বলে তাহমি চলে গেলো)
তারপর থেকে পিয়াল অন্তত বন্ধুত রাখার জন্য আর কখনো সেই কথা বলে নি।
তারপর তাদের সবার রেজাল্ট দিল এবং সবাই খুব ভাল রেজাল্ট নিয়ে পাস করলো এবং সবাই মিলে একই কলেজে এডমিশন নিল। ২-১ জন বাদ গেলেও প্রায় সবাই একই কলেজে এডমিট হয়েছে। তাহমি এবং পিয়ালও রয়েছে।
তারপর তারা কলেজে ক্লাস করতো।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেত,ফেসবুকে গ্রুপ চেট করতো। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গেলে পিয়াল নিহা কিংবা রিয়ার সাথে সিংগেল সেল-ফি নিলে সেটা তাহমির সহ্য হইতো না। কিংবা কলেজে বিভিন্ন ছেলে তাহমিকে ডিস্টার্ব করলে পিয়াল তাদের সাথে মারামারি লেগে যেত। কিন্তু তাহমি এসে উল্টা পিয়ালকে ধমকাতো "তোকে কি আমি কিছু করতে বলেছি,নিজের লিমিটে থাক"
এদিকে পিয়াল মিডিয়ার দিকে একটু ঝুকে পড়ে। ছোটখাটো অভিনয় করে।
সেজন্য কলেজের মেয়েরা প্রায় পিয়ালের জন্য পাগল।
একদিন তারা সবাই বসে আছে। কিন্তু পিয়াল এখনো আসে নাই। কিছুক্ষন পর আসলো।
পিয়াল:: সরি দোস্তরা একটু লেট হয়ে গেল।
নিহা:: সুপারস্টার যে এখানে এসেছে এটাইত অনেক।
হাসান:: মাম্মা মেয়েরা তো এখন তোকে পটানোর জন্য আমারে বাও দিতাসে।
তাহমি:: (রেগে) এসব ফালতু কথা বাদ দিবি। ভাল কিছু থাকলে বল।
রিয়া:: কেন রে তাহমি?? জ্বলে নাকি??
নিহা:: জ্বলেরে অন্তর জ্বলে।
তাহমি:: (আরো রেগে) থাপ্পর দিয়ে সব দাত ফেলে দিব তোদের।
(এই বলে উঠে চলে গেলো)
.
এভাবেই চলছিল তাদের কলেজ লাইফ। এভাবে অনেকবারই তারা প্রমান পেয়েছিল যে তাহমিও পিয়ালকে ভিতরে ভিতরে ভালবাসে।
.
এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন সকালে সবাই কলেজে এসেছে। কিন্তু তাহমি আসে নাই।
গতকাল রাতে তাহমি ফেসবুকেও ছিল না। "ওর তারাতারি ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে তাই হয়ত আসে নাই"
নিহা তাহমিকে ফোন দিল কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। বন্ধ বলছে।
সবাই ক্লাসে চলে গেলো।
তারপর কলেজ ছুটির পর আবার দিল এখনো বন্ধ। তাই নিহা আর রিয়া সোজা চলে গেলো তাহমির বাড়িতে।
তাহমির বাড়িতে গিয়ে দেখে। তাহমি সারি পরে বসে আছে। তাহমির আম্মু রান্না করছে।
নিহা আর রিয়া তাহমির পাশে গিয়ে বসলো।
.
নিহা:: কি রে কি হইসে?
রিয়া:: হাতে আংটি কিসের??
তাহমি:: (চোখ দিয়ে জল পড়ছে) গতকাল আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
(নিহা আর রিয়া বসা থেকে উঠে গিয়েছে)
নিহা:: মানেহ?? তাহমি আমার দিকে তাকা।
তাহমি:: বড় আপুকে দেখতে এসেছিল। আমাকে তাদের পছন্দ হয়ে যায়। তারপর তারা বিয়ে না করে যাবেই না বলে বায়না ধরে।
রিয়া:: তারপর।
তাহমি:: তারপর কাজি ডেকে কবুল বলায়। আর সামনের মাসে তাদের বাসায় নিয়ে যাবে।
নিহা:: তুই কিচ্ছু বললি না??
তাহমি:: ছেলের নিজের ব্যবসা। মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম। আমার কিছুই বলার নাই
।
তারপর নিহা এবং রিয়া এসে সবাইকে বলে ঘটনা। সবাই তাহমির সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু পিয়াল সেদিনই সেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে।
.
তারপর কেটে গেছে আজ প্রায় ১৩ বছর।
পিয়াল এখন টেলিভিশন এর অনেক বড় তারকা। নাটক করে নিয়মিত।
একদিন শোনা গেল "গ্রামের রফিক স্যার মারা গেছেন"
পিয়াল খবরটা কিভাবে যেন পেল।
এবং সব কিছু ছেড়ে ছুটে গেল গ্রামে। রফিক স্যারকে দেখতে। সেখানে গিয়ে তার সেই পুরান বন্ধু নিহা,রিয়া,হাসানদের সাথে দেখা।
নিহার কোলে একটা এবং হাতে একটা ছেলে। রিয়ার মেয়ে একদমই ছোট। আর হাসানের এখনো কিছুই হয় নাই কিন্তু বিয়ে করেছে স্কুলের একটা মেয়েকেই।
পিয়াল মনে মনে একজনকে খুজছে।
এদিকে নিহা এবং রিয়ারা বলছে "পিয়াল তোর সব নাটক আমরা দেখি"
.
হঠাত করেই পিয়ালের পিছন থেকে "কেমন আছো পিয়াল?"
পিয়াল পিছনে ফিরে "কে"
""এই তো পিয়ালের তাহমি। অনেক মোটা হয়ে গেছে,সেই মায়াবী চেহারাটা আর নেই কিন্তু চোখ গুলা আগের মতই আছে, কোলে একটা ৮-৯ বছরের ছেলে""
পিয়াল:: তাহমি ভাল আছো?
তাহমি:: হ্যা আলহামদুলিল্লাহ।
পিয়াল:: এইটা তুমার ছেলে??
তাহমি:: হ্যা।
পিয়াল:: কি নাম তুমার আব্বু?
ছেলেটি;: আমি প্রতিক। তুমি পিয়াল আংকেল।
আমি তুমাকে চিনি। আমি আর আম্মু তুমার নাটক ১০০বার করে দেখি। আম্মু তো সারাদিন তুমার নাটকই মোবাইলে দেখে।
পিয়াল:: অহ তাই??
তাহমি:: নাহ ও বাড়িয়ে বলছে।
পিয়াল:: বাচ্চারা বাড়িয়ে বলে না আর মিথ্যাও বলে না।
তাহমি:: আমি তোমাকে খুব তারাতারি সিনেমায় দেখতে চাই। সেই সিনেমা আমি আমার স্বামী আর ছেলেকে নিয়ে হলে গিয়ে দেখবো।
পিয়াল:: সেই সিনেমায় একটা সংলাপ থাকবে "শুধুমাত্র আই লাভ ইউ বলার মধ্যেই ভালবাসা প্রকাশ পায় না,,কিছু কিছু ভালবাসা এইটা ছাড়াও জনম জনম চলতে থাকে""
(এই বলে পিয়াল নিজের গাড়িতে উঠে চলে গেলো)
আর তাহমির চোখ দিয়ে দুইফোটা জল বেয়ে পড়লো।
No comments