অভিনয়
আচ্ছা তুমি এমন কেনো? -আমি কেমন হুম? --এই সব সময় কেমন ভাবুক হয়ে থাকো। কি ভাবো এতো বলোতো? --আমি কি ভাবি তা শুনলে তুমি কাঁন্না করবে। নীলা বিষন্ন মনে গভীর আগ্রহে জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা কি এমন হয়েছে যে আমি কান্না করবো! বলোনা প্লিজ। মেয়ে মানুষগুলো পৃথিবীতে ধৈর্যের পাহাড়ের উপত্যকায় থাকে। কিন্তু এই যে বলতে চাওয়া কথাটা থামিয়ে দিলে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ে। আমি তা সানন্দে উপভোগ করি। হোক না সেটা বিষন্নতা নিয়ে। --আচ্ছা বলোনা প্লিজ কি হয়েছে তোমার? -আমি এখন ভাবছি তোমাকে আগামীকাল কিভাবে ভালোবাসলে আজকের মতো আমার পাশে এতো আগ্রহ নিয়ে বসবে। আর কি উপহার দিলে তুমি আমাকে আগামীকাল হঠাৎ অবাক করে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলবে 'ভালোবাসি।' বর্তমানে এতোটুকুই ভাবছি। পাগলী মেয়েটা সত্যি সত্যি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে ভালোবাসি অনেক বেশি।♥♥ এ ভালোবাসায় গভীর তৃপ্তি। পাগলীটার বাহু দুটো ধরে সামনে নিলাম। চোখের কোণে মৃদু জল চলে এসেছে। চোখের জল মুছে আবার আলতো করে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম। কানের কাছে মুখটা নিয়ে আস্তে করে বললাম 'ভালোবাসি।' --হুম হইছে আর ঢং করতে হবেনা যহরের আযান দিছে যাও নামাজটা পড়ে আসো। --হুম যাচ্ছি। কিন্তু... --কি..? --তুমি নাহ রোমান্টিক মুহুর্ত গুলা বেশিক্ষণ স্থায়ী করতে দাওনা। --ওরে আমার রোমান্টিক আসো আসো আরেকটু কাছে আসো মাথার চুলগুলো একটু টেনে দেই। --হুম হইছে। চুল যে কয়টা আছে তোমার টানাটানিতে সে কয়টাও যাবে! --তখন ভালো হবে লোকে বলবে টাকওয়ালা। হিহি মজা লাগবে আমার। --মজা লাগবে নাহ্ ! আমাকে টাকওয়ালা বলবে না,বলবে তো তোমাকে যে তোমার জামাইটা টাকওয়ালা। এমন টাকওয়ালা জামাই বিয়ে কেনো করছো ! তখন খুব ভাল লাগবে আমার হিহি। --ওই চুপ করো।একদম চুপ। আমার টাকওয়ালাটাই সোনা। কে কি বলবে তাতে আমার কি যায়। যেটা আমার সেটা একান্তই আমার সম্পদ। বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে আমি আনন্দে আটখানা। --বউ শুনোতো একটু। --এখন পারবোনা দেখছো না ঘর পরিস্কার করছি। --আসো না আরেকবার জড়িয়ে ধরি। --আহারে শখ কতো। যাও যাও মসজিদে জামাত শেষ হয়ে যাবে তখন। --ধুরর! আমার বউটা একদম রোমান্টিক না! --হইছে! আমার ওত্ত রোমান্টিক হওয়ার লাগবে না। এখন যাও মসজিদে। , কি আর করার ওযু করে মসজিদে গিয়ে জামায়াত ধরলাম। নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরলাম। এসে দেখি বউ নামাজের জায়নামাজে দু-হাত তুলে বসে।মাথার ঘোমটা সামনে অনেকটাই টানা। খুব কাছের কেউ চোখ জোড়া দেখতে পাবেনা এমন। বিড়বিড় করে মৃদু কান্নার আওয়াজ। একটু ভড়কে গেলাম নিশ্চই নীলা আমার কাছে কষ্ট পেয়েছে ! তা-নাহলে এই চাপা কান্নার মানে কি ? এই মুহূর্তে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে ব্যপারখানা। আর নিজেকে বড্ড অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে। আমাদের ঘরের দরজাটা দক্ষিন পূর্ব কর্ণারে। তাই আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। একদম নীলার পেছনে খুব কাছেই বসে পড়লাম। কান খাড়া করে গভীর মনযোগ দিলাম বিড়বিড় করে বলা কথাগুলো শুনার জন্য। কাঁন্নার সাথে সে আওয়াজ স্পষ্ট নয়। অথ্যাৎ আমার মিশন ব্যর্থ। বউয়ের দুআ করা শেষ হতেই সামনে গিয়ে মাথাটা বউয়ের কোলে দিয়ে একদৃষ্টিতে মুখের দিকে তাঁকিয়ে রইলাম। বউ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বললো- --কখন আসলে? --এই একটু আগে। --চলো খেতে বসি। --হুম। কিন্তু একটা কথা...? --কি কথা? --তুমি এতোক্ষণ কি দোয়া করছিলে? --চলো আগে খেয়ে নেই।ক্ষুদা লেগেছে খুব। --নাহ আগে বলো। না বললে কিন্তু আমি খাবোনা। --পাগল একটা। --হুম পাগল। তাও বলো? --আল্লাহর কাছে শুকুরিয়া আদায় করছিলাম তোমার মতো একজন পুরুষ আমার ভাগ্যে স্বামী হিসেবে প্রেরণ করার জন্য। --আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু...? --আবার কিন্তু কেনো? --তুমি চাঁপা স্বরে এতোক্ষণ কাঁন্না করছিলে কেনো? --আসলে আমার না খুব ভয় হয়। তোমাকে নিয়ে আমি জান্নাতে থাকতে পারবো তো। আমার ভীষণ ভয় হয়। তাই কাঁন্না করছিলাম আর অসীম দয়ালু মহান আল্লাহকে অনুরোধ করছিলাম আমারা দুটো মানুষ যেনো জান্নাতে থাকতে পারি। তোমাকে যদি সেখানে আল্লাহ্ রাজা করেন,তিনি আমাকে যেনো অন্ততো দাসী বানিয়ে তোমার সেবা করার সুযোগ করে দেন। বউ জায়নামাজে বসে আমি তাঁর দুই উরুতে মাথা দিয়ে আধোঁশোয়া অবস্থায়। চোখের জলে বউয়ের আঁচল ভিঁজিয়ে ফেলেছি। দ্রুত উঠে বসলাম বউয়ের সামনে। বুকে টেনে নিয়ে বললাম আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে নিরাশ করেন না বরং সুসংবাদ দেন। আর তিনি নিশ্চয় সকল মর্যাদার অধিকারী যাকে ইচ্ছা দান করেন,আবার কেড়ে নেন। আল্লাহর কাছে আমি দুআ করি,তিনি যেনো জান্নাতেও তোমাকে আমার বুকের মাঝে রাখেন। --আমিন। চলো খেয়ে নেই। --হুম চলো। --আচ্ছা জামাই অনেকদিন হলো তুমি শুধু আমাকে খাইয়ে দাও।আজ না হয় একটু ব্যতিক্রম হোক। --আচ্ছা প্রিয়তমা তাই হোক। নীলা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে পরম আগ্রহে। এখন এই অবস্থায় আমি কি পৃথিবীর সব থেকে সুখি মানুষ নই? আমি মনে করি আমি সুখি। বাঁটিতে আমার হাতটা ধুয়ে নিয়ে নীলার মুখে খাবার তুলে দিলাম। আউউ! --কেনো কামড় দিলে হাতে? --ইশশ দেখি দেখি, ওমা জামাইটার আঙুলে দাঁগ বসে গেছে। আহারে খুব ব্যাথা পাইছো না? --কামড় দিছো ব্যাথা পাবোনা তো কি মজা পাবো! --আসলে খুশির সংবাদ এর আগে একটু ব্যাথা পাওয়া ভাল। এতে মুহূর্তটা আরেকটু গভীর ভাবে উপভোগ করা যায়। --রাখো তোমার খুশির সংবাদ! --তুমি আব্বু হতে চলেছো। --কিহ...? সত্যি...? --নাহ্ মিথ্যে! --ওই বলোনা প্লিজ প্লিজ সোনা বউ। -- হুম সত্যিইতো। --আচ্ছা আমার আঙুলটা আরো কয়েকবার কামড়ে দাও। একদম জোরে কামড়ে দাও। --ইহহ। আমার জামাইকে লাগবেনা। এটোঁ হাতেই গাল দুটো টেনে দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম বুকের খুব কাছে। --ঐ ছাড়ো ছাড়ো বাবুটা কষ্ট পাবে তো। --উহু পাবেনা। পৃথিবীটা আজ অন্য রকম মনে হচ্ছে। আমি বাবা হবো। সত্যি আমি বাবা হবো ভাবতেই যেনো কেমন অনুভূতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠছে। নীলাকে সব দিনের থেকে আজ বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে। ও মুচকি হেসে বললো --তুমি একাই আব্বু হবানা আমিও আম্মু হবো। --I love you..পাগলী। --ঐ আমি পাগলী না। Love you too... পাগলা। --তুমিতো বিয়ের শুরুতে পাগলী বলে ডাকলে বেশি খুশি হতে সুন্দরী। -- ঐ তখন আমি একা ছিলাম। আর এখন আমাদের বাবুটা আছে। --তো কি হয়েছে? --বাবুর সামনে পাগলী বললে তখন ও সত্যি সত্যি মনে করবে ওর আম্মু পাগলী! --হাহাহা পাগলী বউ আমার। আরো শক্ত করে বুকের কাছে টেনে নিলাম। ও বার বার এ ছাড়ো ছাড়ো করছে।আর আমি আরো শক্ত করে কাছে টেনে নিচ্ছি। ....♥আবির♥নীলা♥.... সত্যি চাইলেই দু-টো মানুষ সুখি হতে পারে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যদি তাঁদের সহায় হন। এমন সুখের হোক প্রত্যেকটা দাম্পত্য জীবন।♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
No comments