লক্ষ্য
,.
লিমন আর মিলন খুব ভাল বন্ধু। তাদের বন্ধুত্ব এর কথা সারা এলাকার মানুষ জানে। তারা দুজন দুজনের খুব ভাল বন্ধু। দুজন একসাথেই চাকুরী করতো। সে সুবাদেই দুজনের পরিচয়। এবং তারা দুজন পরিবার নিয়ে দুজনের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। লিমনের স্ত্রী এবং দুই মেয়ে একটি ক্লাস ৭ম এ পড়ে এবং অন্যটির ৪বছর। অন্যদিকে মিলনের স্ত্রী এবং একটিই ছেলে। যার বয়স ৪বছর।
.
লিমন:: বন্ধু তোমার ছেলের নাম কি??
মিলন:: লাবিদ। আর তোমার মেয়েদের??
লিমন:: বড়টার নাম মনি আর ছোটটা মুক্তা।
মিলন:: আমাদের লাবিদ আর মুক্তা তো সমান সমানি। কত সালে মুক্তা মার জন্ম?
লিমন:: ১৯৯৮ এ। লাবিদের??
মিলন:: লাবিদেরও তো। কোন মাস?
লিমন:: সেপ্টেম্বর।
মিলন:: ও আমাদের মুক্তার জুন মাসে।
.
এভাবেই চলছিল তাদের বন্ধুত্ব। খুবই ভাল কাটছিল তাদের বন্ধু জীবন। তারা যখন একজনের বাড়িতে অন্যজন বেড়াতে যেত। তখন লাবিদ আর মুক্তা একসাথেই খেলতো।
.
কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর। এখন লাবিদ আর মুক্তা ক্লাস ৫ম এ পড়ে। একদিন মিলনের বাসায় লিমন বেড়াতে এসেছে সবাইকে নিয়ে।
লাবিদ আর মুক্তা একসাথে বসে খেলছে। মনি মোবাইল এ ফেসবুকিং করছে। লাবিদ আর মুক্তার মায়েরা একসাথে রান্না করছিল আর তাদের বাবারা টিভি দেখছিল।
.
মুক্তা::এই লাবিদ তুই বড় হয়ে কি হবি রে?
লাবিদ:: নায়ক হবো।
মুক্তা:: তারপর আমাকেও ছেড়ে দিবি!!
লাবিদ:: কেন ছাড়ব কেন?? তখনো সময় বের করে দুজন মিলে খেলবো।
মুক্তা:: সব নায়করাই তো বউদের ছেড়ে দেয়। তুইও দিবি (মন খারাপ করে)
লাবিদ:: তুই কি আমার বউ নাকি!! যা খেলমু না...
.
(লাবিদ ঊঠে চলে গেল)
.
তারপর এভাবেই চলে গেল অনেকদিন। লাবিদ আর মুক্তা বড় হয়ে উঠলো। তারা দুজন প্রাইমারি এবং হাই-স্কুল একসাথেই পড়েছে। এবং তারা দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েই আছে। দুজন দুজনকে সব শেয়ার করে। এবং এবার দুজন একসাথেই কলেজে ভর্তি হয়েছে।
.
তারা দুজন মিলে একসাথে কলেজে যেত।কলেজে তাদের কোনো বন্ধু ছিল না।তারা দুজনেই দুস্টামি করতো,মজা করতো,খাওয়া দাওয়া করতো। একসাথে যাওয়া আসা করতো।আড্ডা দিত। তাদের মধ্যে কোনো ছেলে মেয়ের বিবাধ ছিল না। তারা এভাবে বেশ সুন্দরই দিন কাটাচ্ছিল।
.
একদিন তারা দুজন কলেজের পরে পার্কে বসে দুজন খুব কাছাকাছি বসে কানে হেডফোন দিয়ে মুভি দেখছিল। এটি লাবিদের বাবা মিলন দেখে। তারপর লাবিদ বাসায় ফিরার পর।
.
মিলন:: লাবিদ বাবা তুই তো বড় হয়েছিস!
লাবিদ:: হ্যা বাবা,,কেন এইটা বললা??
মিলন:: তুই সবই বুঝিস।এমন কিছু করিস না,,যেটা সম্ভব না।
লাবিদ:: কি হইসে বাবা??
.
(মিলন চলে গেল)
.
লাবিদ:: মা কি হইসে বল তো!
লাবিদের মা:: পার্কে বসে এসব করিস!! ছি!! কত দিন ধরে চলছে এসব??
লাবিদ:: ঐওওওও এই ব্যাপার। আমি আর মুক্তা তো মুভি দেখতাছিলাম।
লাবিদের মা:: এসব বাদ দে!! ভুলে যা অই মেয়েকে। এগুলা কখনো সম্ভব না।
.
(লাবিদের মা চলে গেল)
.
কিছুক্ষন পরে লাবিদ মুক্তাকে ফোন করলো...
.
(লাবিদ সব বললো)
লাবিদ:: বাবা-মা এগুলা কি বললো বুঝলাম না রে!!
মুক্তা:: (অট্ট হাসি)
লাবিদ:: কি রে হাসছিস কেন!!
মুক্তা:: আরে আবুল হায়াত। আংকেল আন্টি ভাবছে আমরা প্রেম করতাছি।
লাবিদ:: (ফিলিং ডিফারেন্ট)
মুক্তা:: তোর মত বলদরে কোনো মেয়েই সামলাইতে পারবে না।
লাবিদ:: তুই তো পারিস!!
মুক্তা:: হম। সবই তো আমার তোরে বুঝাইতে হয়।
লাবিদ:: মুক্তা বিশ্বাস করবি!! একটু আগে ২ সেকেন্ডের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম। অন্য এক জগতে। তোকে ১ সেকেন্ডের জন্য বন্ধুর বাহিরে অন্য কিছু ভেবেছি কল্পনায়। এটা কেন হইলো??
.
মুক্তা:: (স্তব্দ ভেংগে) লাবিদ ফাজলামি করিস না।
লাবিদ:: সত্যি মুক্তা। বলনা এমন কেন হইলো!!
মুক্তা:: আমার জরুরি কাজ আছে রে"! রাখি..
(ফোন কেটে দিল)
.
তারপর সারাদিন ফেসবুকে লাবিদ মেসেজ করছে নো রিপলে। ফোন দিচ্ছে লাবিদ। কিন্তু কেটে দিচ্ছে কিংবা ধরছে না।
.
পরদিন কলেজে,,
লাবিদ:: অই বলনা এমন কেন হইসিল??
মুক্তা:: অন্য কাউরে জিজ্ঞাস করিস।
লাবিদ:: তুই ছাড়া আমার তো আর কেউ নাই!
মুক্তা:: (মাথা উচু করে লাবিদের চোখের দিকে তাকালো) তুই জানিস!! তুই আমার প্রেমে পড়েছিস।
.
লাবিদ:: সত্যি"!!! আচ্ছা তাহলে আজ থেকে তুই আমার গফ আর আমি তোর বফ!!
.
মুক্তা:: (ভয়ের মুখটা ক্ষনিকে হাসিতে ভরে গেল)
লাবিদ:: হাসছিস কেন??
মুক্তা::আচ্ছা আমি তোরে ভালবাসি কি না একবারও জানতে চাইছস??
লাবিদ:: ও হ্যা। বল!!
মুক্তা:: দেখ এই সম্পর্ক জিবনেও কেউ মেনে নিবে না।
লাবিদ:: তুই বল ভালবাসিস না। আর আমাকে দেখবি না। কথাই বলবো না।
মুক্তা:: তোর সাথে কথা না বললে আমি তো ১ দিনেই মরে যাব।
লাবিদ:: তাহলে বল!!
মুক্তা:: জানি না তোরে ভালবাসি কি না!! কিন্তু তুই ছাড়া লাইফটা কল্পনা করতে পারি না। আমার প্রান ভোমরা হয়ত তোর কাছেই আছে। তাই এত টান।
লাবিদ:: তাহলে তো হইলোই।
মুক্তা:: এত সহজ না। অনেক কষ্ট আছে আমাদের কপালে।
লাবিদ:: শোন আমাদের লক্ষ্য হইলো এই সম্পর্ক বাস্তবায়িত করা। যা হয়ে যাক এই হাত ছাড়বি না। হয় সফল হবো নয়তো মরবো।
মুক্তা::তুই ছাড়া আমারো কেউ নাই। তাই তুই যেদিকে আমিও সেদিক। জোর করে রাজি করাইলি। এখন চল প্রথম ডেটিং এ আমারে চটপটি খাওয়াবি।
লাবিদ:: চল জানু।
.
এভাবেই শুরু হইলো তাদের অন্যরকম ভালবাসা। তারা সেই আগে যেভাবে দিন কাটাইতো ঠিক সেভাবেই মজা,মাস্তি করে দিন কাটাচ্ছিল।
.
এদিকে লাবিদের বাবা মিলন আবার একদিন তাদের দুজনকে একসাথে রিকশায় দেখে ফেলে। এবং সরাসরি মিলন লিমনের কাছে গিয়ে বিচার দেয় এবং সেদিন লিমন আর মিলনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। মিলন বলে "মেয়েকে লেলিয়ে না দিয়ে,,বিয়ে দাও।বুড়ি মেয়েকে আমার বাচ্চা ছেলেটার কাছে লেলিয়ে দিয়েছো""
.
লিমন বলে "তোমার ছেলেকে তুমি সামলাও"
.
তারপর মিলন চলে আসে। এবং কিছুক্ষন পর মুক্তা বাসায় আসলে। মুক্তার আব্বু লিমন মুক্তাকে চেয়ার দিয়ে মারে। অনেক মারে,,তবুও মুক্তা বলে "লাবিদকে ভুলানো এত্ত সহজ না""
.
অন্যদিকে লাবিদকে তার বাবা মারে।
.
তারপরের দিন কলেজে লাবিদ আর মুক্তার দেখা হয়। লাবিদ মুক্তাকে দেখেই কেদে দিয়েছে আর জড়িয়ে ধরেছে।
.
মুক্তা:: এই পাগল কাদিস কেন??
লাবিদ:: আমার জন্য তুই এত্ত মার খেয়েছিস
মুক্তা:: তোর জন্যই তো খাব। আর কেউ আছে নাকি আমার।
লাবিদ:: তোর খুব ব্যাথা লেগেছে না?
মুক্তা:: তুই জড়িয়ে ধরেছিস। আমার সব ব্যাথা চলে গেছে।
.
তারপর থেকে তারা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতো।কিন্তু তবুও মুক্তার বাবা টের পাচ্ছিল এবং সে এই জন্য মুক্তাকে বলে "তুই যদি আজকের পর লাবিদের সাথে দেখা করিস,তাহলে আমি সাথে সাথে সুইসাইড করবো""
.
কিছুক্ষন পর,,
মুক্তা:: বাবা বলেছে তোর সাথে দেখা করলে সুইসাইড করবে।
লাবিদ:: হাত ছেড়ে দিবি??
মুক্তা:: তোর মতো এত্ত বিশ্বস্ত হাত আর কই পাবো?
লাবিদ:: (কেদে) আমি জানতাম রে পাগলী।
মুক্তা:: আমাদের লক্ষ্য একটাই। যা কিছু হোক আমি আছি তোর বুকের মাঝে।
.
তারপর কিছুদিন পর মুক্তার বাবা আবার টের পায় এবং সুইসাইড করতে যায় কিন্তু তাকে হসপিটালে নিয়ে বাঁচানো হয়।
তবুও মুক্তা লাবিদের হাত ছাড়ে নি।
তারপর একদিন লাবিদকে জোর করে তার বাবা বিদেশে পাঠাতে চায়।এবং সেদিনই মুক্তাকে জোর করে বিয়ে ঠিক করে।
.
লাবিদ এবং মুক্তা সেদিনই পালিয়ে যায়। এবং তারা একরাত বাহিরেই কাটায়। রাস্তার পাশে ফুটপাতে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে এক রাত।
তারপরদিন সকালে তাদের খুজে বের করে ফেলে মিলন আর লিমন। যখনি মিলন আর লিমন তাদের সামনে।তখন লাবিদ মুক্তার গলায় ছুড়ি ধরে এবং মুক্তা লাবিদের গলায় ছুড়ি ধরে।
.
লাবিদ:: আত্মহত্যা মহাপাপ। তাই আমি ওকে আর ও আমাকে মেরে ফেলবে। আমাদের দুজনের দুজন ছাড়া কেউ নেই।
মুক্তা:: আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া লাইফ কল্পনা করতে পারি না।
.
মিলন:: এটা অসম্ভব।
লিমন:: ফিরে আয়। এসব ভুলে যা।
.
(লাবিদ মুক্তার হাতে একটা আচর দিল এবং টপটপিয়ে রক্ত পড়ছে,, মুক্তা লাবিদের হাতে আচর দিল,,লাবিদ মুক্তার পায়ে,পিঠে,ঘাড়ে আচর কাটছে অন্যদিকে মুক্তাও লাবিদের শরিরে কাটছে। দুজনের সারাশরির রক্তে মেখে গেছে,জামা-কাপর রক্তে ভিজে গেছে।)
.
লিমন:: (কেদে) আমি আর কিছু বলতে চাই না। মিলন যদি আমার মেয়েকে মেনে নেয় তাহলে আমি আর কিছুই বলবো না।
.
মিলন:: আমার ছেলেকে এই মেয়ের চাইতে বেশি কেউ ভালবাসতে পারবে না। আমি আমার পুত্রবধূ হিসেবে মুক্তাকেই মেনে নিলাম।
.
(তারপর তাদের মেনে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়া হইলো)
বিয়ের দিন রাতে,,,
মুক্তা:: লাবিদ তোর মনে আছে,,ছোট বেলায় আমি তোর বউ হওয়ার কথা বলছিলাম বলে তুই খেলিস নাই।
লাবিদ:: হম আমার মনে আছে। কিন্তু এখন তুমিই আমার বউ।
মুক্তা:: তুমি!!
লাবিদ::হম এখন থেকে তুমিও তুমি বলবা।
মুক্তা:: পারিব না।
লাবিদ:: ঠিক আছে। তুমি বলার ব্যবস্থা করতেছি।................................... (লাইট অফ)
.
তারপর একদিন লাবিদের বন্ধু তার ঘটনা শুনে বলেছিল "তুই কেমনে এত্ত ধৈর্য ধরলি!!আমি হইলে পারতাম না""
.
লাবিদ "আমাদের লক্ষ্য ঠিক করাই ছিল"
No comments