Header Ads

জীবনের পাসওয়ার্ড

কলেজ থেকে বাহির হয়ে জান্নাত কে
বললাম
দোস্ত তোর ফোনটা একটু দে
তো।
---ক্যান? ফোন ক্যান?
---বাড়িতে ফোন করবো।
---তোর ফোন নাই? তোরটা দিয়ে
কর।
---আরে হারামি আমার ফোনে
টাকা থাকলে কি তোর ফোন
চাইতাম?
---ফকিন্নি।
---ফকিন্নি তো তুই। দুই টাকার জন্য!
কিপ্টামি করছিস। আচ্চা যা
ফোনে যত টাকা খরচ হবে আমি
দিয়ে দেব। এই নে অগ্রীম দুই টাকা।
---আমারে ভিক্ষুক মনে হয় তোর? এই
নে বিশ টাকা তোর ফোনে
রিচার্জ করে তারপর কথা বল।
---আজোব মেয়ে তো তুই। দুই টাকার
জন্য নিজের ফোন দিলি না, আবার
এখন বিশ টাকা দিচ্ছিস রিচার্জ
করতে।
---ঐ আমি টাকার জন্য না করি নাই।
ফোনে আমার কিছু পার্সোনাল
জিনিস আছে সে জন্যে না করছি।
---তোর বাসা থেকে টয়লেট সব
আমার জানা। আর ফোনে কি এমন
পার্সোনাল জিনিস যেটা আমি
দেখতে পারবোনা।
---আছে।
---কচু আছে। তুই টাকার জন্য না
করছিস।
---ঐ কুত্তা! আমি গরীব হইতে পারি
কিন্তু ছোটলোক না। এই নে ফোন যত
খুশি কথা বল। তবে অন্য কোথাও
যাবি না।
---যাবো না মানে? অবশ্যই যাবো।
---ঐ বিলাই আমার ফোন দে।
---আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না।
পাসওয়ার্ডটা তো বল আগে। না
হলে আমি লক খুলবো কীভাবে?
--abir.. jannat
---(............)
---কিরে হা করে তাকিয়ে আছিস
ক্যান? তোর নাম দিছি বলে? আমার
নামই দিছিলাম। কিন্তু আমার
পিচ্চি মামাতো ভাইটা আগের
পাসওয়ার্ডটা জেনে
গিয়েছিলো। সারাক্ষন গেম
নিয়ে বসে থাকতো। তাই কাল
রাতেই তোর নাম দিছি।
---তাই নাকি?
---তো তুই কি ভেবেছিলি?
---না কিছু না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে
ফোনের লকটা খুলতেই দেখলাম
ওয়ালপেপারে আমার আর
জান্নাত একটা ছবি দেয়া। অন্য
কেউ হলে হয়তো অনেক কিছুই মনে
করতো। কিন্তু আমি কিছু মনে
করিনি। কারন আমি জানি এই
ছবিটাতে ওকে সুন্দর দেখাচ্ছিলো
বলে এটা ওয়াল পেপারে দেয়া।
আমি সেখানে কাবাব মে
হাড্ডি। অনেকটা ছবির মধ্যে
গাছপালা যেমন থাকে তেমনই
মূল্যহীন।
সাত পাচ না ভেবে আমি আম্মাকে
কল দিলাম। কিন্তু আম্মার
নাম্বারটা শ্বাশুড়ি নামে সেভ
করা। হয়তো মজা করে দিছে।
অপরিচিত নাম্বার থেকে কল
দেয়ায়, পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু
করলাম। কথা বলতে বলতে আমি
এতক্ষনে রাস্তায় এসে পড়েছি।
আমার ডান পাশে জান্নাত ও
হাটছে। নুর মিয়া কলেজ ক্যাম্পাস। আমার হোস্টেল
ওখানেই। জান্নাত হোস্টেলে
থাকে। কিন্তু আজকে নাকি
ওখানে কি কাজ আছে তাই আমার
সাথে যাচ্ছে।
হঠাৎই আমাকে খুব জোড়ে একটা
ধাক্কা দিলো জান্নাত। আমি
সামলাতে না পেরে পাশের একটা
ময়লা স্তুপের উপড় গিয়ে পড়লাম। খুব
রাগ উঠলো জান্নাত এর উপর।
মেয়েটা কখন যে কি করে বসে
সেটার ঠিক নেই। আরে এই মাঝ
রাস্তায় ইয়ার্কি করার জায়গা।
উঠে ওকে একটা ঝাড়ি দিতে
যাবো তখনই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো।
উপুড় হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে
জান্নাত । মাথার নিচ থেকে রক্ত
গড়িয়ে যাচ্ছে। সাই করে একটা
কিছু চলে গেলো পাশ দিয়ে। তার
মানে, আমি যখন আম্মার সাথে কথা
বলতে বলতে আনমনে রাস্তা দিয়ে
হাটছিলাম তখন হঠাতই সামনের দিক
থেকে একটা গাড়ি আসে। কিন্তু
আমি খেয়াল করিনি। জান্নাত
আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
দিলেও, নিজে সরে আসার মতো
যথেষ্ট সময় পায়নি। তাছাড়া ও ডান
পাশে ছিলো। কিন্তু ইচ্ছা করলেই ও
আরো একটু ডান পাশে সরে গিয়ে
নিজেকে বাচাতে পারতো। কারন
ডান পাশে তখন কোন গাড়ি
ছিলোনা। কিন্তু তা না করে
মেয়েটা আমাকে বাচাতে
আমাকে ধাক্কা দিলো। কিন্তু
নিজে সরে যাবার আর সময় পেলো
না। আমাকে বাচিয়ে নিজেই
রাস্তায় পড়ে আছে।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে
পড়লো। কি করবো কিছুই মাথায়
আসছিলো না। আমি শুধু ওর মাথাটা
কোলে নিয়ে...
---জান্নাত , এই জান্নাত ওঠ। এই জান্নাত
ওঠনা। কিরে
কথা বলছিস না কেন? এই জান্নাত .........
বলে চিৎকার করছিলাম। ওর
মায়াবী শ্যামলা মুখটা রক্তে একদম
লাল হয়ে গেছে। ওর ঘন কালো
মেঘের মতো চুলগুলো রক্তে ভিজে
গিয়ে চ্যাট চ্যাটে হয়ে গেছে। ওর
চোখজোড়াও রক্তে মেখে গেছে।
ওকে নিয়ে যে হাসপাতালে
যেতে হবে সেই কথাটাই আমি
ভুলে গেছিলাম। আমার শুধু বার বার
মনে হতে লাগলো.........
আমার জন্য। শুধু আমাকে বাচাতে
গিয়ে জান্নাত আজ এই অবস্থা। আমার
জন্যই আমাকে যে বেস্ট ফ্রেন্ড
বলতো সেই মেয়েটা আজ মরতে
বসেছে।
তারপর আশে পাশে যারা ছিলো
তারা সবাই আমাকে আর জান্নাতকে
নিয়ে হাসপাতালে যায়। জান্নাত কে
নিয়ে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে
যাওয়া হয়। ডাক্তার বলে অনেক রক্ত
লাগবে। কিন্তু আমি জানতাম
আমার আর জান্নাতএর রক্তের গ্রুপ ম্যাচ
করে
না। অবশেষে ব্লাড ব্যাংক থেকে
রক্ত পাওয়া গেলো। জান্নাতের চিকিৎসা
শুরু হলো.........
আনুমানিক রাত ১০টা।
ডাক্তার বাবুকে বেডে দিয়ে
গেছে। আমি ওর বেডের পাশে
নির্জীব অবস্থায় বসে আছি। বাকী
যারা এসেছিলো সবাই চলে
গেছে। ওর মামার বাসাতেও খবর
দেয়া হয়েছে। কেউ আসেনি। কেউ
আসবেও না আমি জানি। কারন ওর
মামী বাপ মা মরা জান্নাতকে কে উনার
পরিবারের বোঝা মনে করেন। আর
জান্নাতের মামাও এখন ডাকায় আছেন।
আমার ক্লাসমেটগুলোও এইমাত্র চলে
গেছে। কিন্তু আমি যাইনি। কি
করে যাবো আমার জন্যই তো আজ ওর
এই অবস্থা। বার বার বুক ফেটে
কান্না আসছে। চিৎকার করে বলতে
ইচ্ছে করছে......
---জান্নাত , জান্নাতরে কেন করলি তুই
এমনটা?
কেন আমার জন্য নিজেকে বিপদে
ফেললি।
কিন্তু বলতে পারছিনা। ডাক্তার
শব্দ করতে নিষেধ করেছে। শব্দ করলে
নাকি আমাকে রুম থেকে বের করে
দেবে। কিন্তু এই অবস্থায় জান্নাত কে
রেখে আমি কেমন করে যাই। তাই চুপ
করেই বসে আছি।
হঠাৎই আমার প্যান্টের বা পকেটটা
কেপে উঠলো। মনে হয় কোন
মেসেজ এসেছে ফোনে। আমি
ফোনটা বের করে দেখলাম এটা জান্নাতের
ফোন। আমার ফোনটা তো আমার
ব্যাগে।
ফোনের লকটা ওপেন করতেই জান্নাতের
হাসি মাখা মুখটা ভেসে উঠলো।
ওর মায়াবী মুখটা দেখে আবারো
বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।
কিন্তু না কাদা যাবে না। আমি
নিজেকে সামলে নিয়ে জান্নাতের
ফোনটা দেখতে লাগলাম।
নীলা বলছিলো ওর ফোনে
পার্সোনাল জিনিস আছে। তাই
আমি ওর গ্যালারী চেক করতে
লাগলাম। পুরো গ্যালারী মোট
৪৩৪টা ছবি তার মধ্যে ২৯৬টাই
আমার
ছবি। বাকীগুলো আমার আর জান্নাতের
দুজনের ছবি। কি আশ্চর্য পুরো
গ্যালারীতে আর কারো ছবিই নেই।
এবার আমার একটু খটকা লাগলো।
আমি ওর ফাইলগুলোও চেক করলাম
সেখকানেও ওর আর আমার ছবি
ছাড়া আর কারো ছবি নেই।
প্রত্যেকটা ফোল্ডারেই পাসওয়ার্ড
দেয়া। আর সবক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড
একই ......পারিনি। ওর মনের
কথাগুলো বুঝতে পারিনি।
যেখানে আমার প্রায় সব সুবিধা-
অসুবিধাই ও আমার চোখ দেখে বুঝে
যেত। এই প্রথম আমার নিজের ঘৃণা
হচ্ছে। প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে নিজের
উপড়।
অজান্তেই আমার হাত চলে গেলো
ওর মাথায়। আমি ওর মাথাটায় হাত
বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ইচ্ছে
করছে ওর কপালে আলতো করে একটা
চুমু দিয়ে বলি......
---এত্ত ভালোবাসিস আমায়?
কোনদিন বলিসনি কেন? আমি
আসলেই খুব খারাপ তাইনা? আমি খুব
খারাপ।
কিন্তু ও জেগে যাবে তাই করতে
পারছিনা। কিন্তু তবুও ও জেগে
গেলো। খেয়াল করলাম ওর চোখের
কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে
পড়ছে। পানির ফোটাগুলো গাল
বেয়ে কানের দিকে যাচ্ছে। আমি
আস্তে করে সেগুলো মুছে দিয়ে
বললাম......
---কিরে কাদছিস কেন?
---তুই ঠিক আছিস আবির?
---হুম আছি। কিন্তু তুই কাদছিস
কেন?
যন্ত্রনা হচ্ছে?
---নারে। আসলে আব্বা আম্মা
মারা যাওয়ার পর এভাবে কেউ
মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়নি তো।
জানিস? আমার যখন অসুখ হতো তখন
খুব
ইচ্ছে করতো কেউ আমার মাথা হাত
বুলিয়ে দিক। কিন্তু জানিস আবির?
মামীকে অসুখের কথা বললেই মামী
বলতো সবই নাকি আমার ভঙ্গি,
কাজে ফাকি দেয়ার ধান্ধা।
আরো নানান কথা শোনাত। তাই
এখন আর অসুখ হলে আমি কাউকে বলি
না। নিজের মধ্যেই পুষে রাখি
কষ্টটাকে।
কথা গুলো ও এমন করুন গলায় বললো
যে, আমি আর চোখের পানি আটকে
রাখতে পারিনি। খেয়াল করলাম
আমার চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে
গেছে।
---কিরে এবার তুই কাদছিস কেন
হারামি? আমাকে নিষেধ করে এখন
তুইই কাদছিস।
---না কাদবো না। আর তোকেও
কাদতে দেবোনা। এখন থেকে
তোর যখন অসুখ হবে আমায় বলবি
আমি
তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো।
সবসময় মনে থাকে যেন।
---সবসময় তুই হাত বুলিয়ে দিবি?
তোর বউ তোকে আস্ত রাখবে?
বলেই হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু
মাথায় আর থুতনিতে টানা
ব্যান্ডেজ থাকায় হাসিটা পূর্নতা
পেলো না। তবুও ওর এই অপূর্ন
হাসিটাই আমার কাছে এখন
পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান সম্পদ
বলে মনে হচ্ছে। আমি ওর চোখ দুটো
আবারো মুছে দিয়ে বললাম......
---আমার বউ হবি জান্নাত? ছোট্ট,
মিষ্টি,
আর দুষ্টু বউ। যে আমার খেয়াল
রাখবে। আমার পরিবারের সবার
খেয়াল রাখবে। কেউ কোন ভুল
করলে শাসন করবে। আবার বিপদে
আপদে ছায়ার মতো আমার পাশে
থাকবে।
---কি বলছিস এসব? তোর মাথা
খারাপ হইছে নাকি?
---আমার মাথা ঠিকই আছে। তোর
মাথা নষ্ট হইছে। না হইলে আমাকে
পছন্দ করিস ভালোবাসিস এই কথাটা
এতদিন আমার কাছ থেকে গোপন
করতি না।
---পছন্দ করি মানে? কি বলছিস তুই?
---দেখ ন্যাকামো আমার একদম
পছন্দ
না। আমি তোর সব মেসেজ, অনলি
মি দেয়া পোস্ট আর গ্যালারীর সব
ছবি দেখেছি। আমাকে আর তুই
ফাকি দিতে পারবি না।
---অ্যাহ! তার মানে আমার সব শেষ?
এমন একটা ভঙ্গি করে ও বেডে শুয়ে
পড়লো যেন আসলেই সব কিছু শেষ
হয়ে গেছে ওর।
---আচ্ছা তুই এমন ক্যানরে? এত্ত
ভালো ক্যান তুই? নিজের কথাগুলো
মোবাইলে রেখে দিতে পারিস।
আর আমাকে বলতে পারিস না। তুই
আবার আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বলিস।
কি ভাবিস নিজেকে? সব ত্যাগ
করে মহান হতে চাস তুই? আমার
জীবন বাচিয়ে বিখ্যাত হত চাস তুই?
---আসলে জান্নাত। আমি চাইনি
আমার জন্য তোর কোন ক্ষতি হোক।
আমার মতো চালচুলোহীন, এতীম,
অনাথ মেয়ের সাথে জড়িয়ে তুই
কেন নিজের জিবনটা নষ্ট করবি? তুই
ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তোর ভবিষ্যত
উজ্জ্বল হবে। তুই দেশের সুনাম করবি,
তোরা বাবা-মায়ের সুনাম করবি,
বিখ্যাত হবি। তখন আমিও বলবো
ব্যাংকার আবির আমার
ক্লাসমেট ছিলো।
---আরে ধ্যাত! দরকার নাই আমার
বিখ্যাত হওয়ার। কিছুই লাগবে না
আমার। আমার শুধু তোকে চাই। শুধু
তোকে।
---কিন্তু আমার পরিচয়? আমার
সমাজ?
আমি যে এতীম।
---চুপ কর। আমি কখনো তোকে এই
ব্যাপারে কিছু বলেছি? আরেকবার
যদি নিজেকে এতীম বলিস তাহলে
আমিই তোকে মেরে রাস্তায়
ফেলে দিয়ে আসবো।
---বাব্বাহ! একদিন মাত্র
মোবাইলের পাসওয়ার্ড পাইছস
তাতেই এত সাহস। বাকী দিন তো
বাকীই রইলো এখনও।
---ঠিকই বলেছিস। তখন যদি
পাসওয়ার্ডটা না জানতাম তাহলে
জিবনে অনেক কিছুই অজানা
থাকতো। অনেক দামী জিনিস
হারাতাম।
---আচ্ছা যা। এখন শুধু মোবাইলের
পাসওয়ার্ড নয় জিবনের
পাসওয়ার্ডটাও তোকে দিয়ে
দিলাম।
---তুই না দিলে আমিই হ্যাক করে
নিয়ে নিতাম।
---তাই?
---হুম তাই।
---তাই?
---হুম তাই।
আমার মাথাটা টেনে ওর মুখের
কাছে নিয়ে নাকে নাক ঘষে
বললো জান্নাত
---পারলে হ্যাক করে দেখা, কেমন
পারিস।
---ওকে চ্যালেঞ্জ এক্সেপটেড।
অতঃপর শুরু আরও একটা ভালবাসার
গল্প।

No comments

Powered by Blogger.