Header Ads

ব্রেক আপ

আজকের দিন টা আমার জন্য খুব খারাপ। কোন কিছুই আমার জন্য ভাল হচ্ছে না। সকাল থেকে খুব প্যারার মধ্যে আছি। সকাল বেলা এমনিতেই ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছি। তাই সকাল বেলা ভার্সিটি যায়ে অগণতি বাশ খাইছি ক্লাসে লেট করে যাওয়ার জন্য। লেট হতো না যদি না গত কাল রাতে নিপার সাথে ৪ টা পর্যন্ত ঝগড়া চলত। আমি অনেক শুনেছি অনেক কপোত কপোতী রাত ৩ বা ৪ টার দিকে প্রেম আলাপ করে কিন্তু আমিই মনে হয় একমাত্র পাবলিক যে রাত ৪ টা পর্যন্ত ঝগড়া করেছি। ঝগড়া করার মূল কারন হলো আমি নাকি গত কয়েক দিন যাবত নিপাকে অবহেলা করছি। অন্য মেয়েদের দিকে নাকি নজর দিচ্ছি, নিপা নাকি আমার কাছে পুরাতন হয়ে গেছে তাই আমি নাকি ওকে আর আগের মত ভালবাসি না। (নিপার ভাষ্যমতে)
.
কিন্তু আমার কাছে এই কথা গুলা যুক্তিহীন মনে হয়। যাই হোক সারা রাত ঝগড়া করার পর সকালে ভার্সিটি যায়ে বাশ খাবার পর আবার নিপা ডেকে অন্য প্রকার বাশ দিলো। মানে নিপা সকাল বেলা আমার সাথে ব্রেক আপ করে চলে গেলো। আমার সাথে নাকি সে আর থাকতে পারবে না। আমি নাকি তাকে আর ভালোবাসি না। আমার অবহেলা তার সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে।
.
নিপা যখন এই কথা গুলা বলছিলো তখন আমি মনে করেছিলাম হয়ত অনেক রেগে আছে তাই উল্টাপাল্টা বলছে। আমি তাই আর বেশি কথা বলিনি তখন। নিপা যখন চলে গেলো খুব খারাপ লাগছিল কিন্তু আমি তেমন চিন্তিত ছিলাম না কারন এর আগেও আমার সাথে এইরকম হইছে। এর আগেও নিপা আমার সাথে ব্রেক আপ করেছে কিন্তু বেশিক্ষন ব্রেক আপ আওয়ার চলে নি। হ্যা আমার মতে সেই সময় টুকু আমার ব্রেক আপ আওয়ার যেই সময়ে নিপা আমার ওপর খুব রেগে থাকে। আমি কল দিলে প্রথম বার ধরে না কিন্তু পরের বার ধরে আমাকে বকাবকি শুরু করে। তার বকাবকি গুলো শুনতে আমার ভালই লাগে কারন সেগুলা বকাবকি না সেগুলো হলো আমার জন্য তার অভিমানী ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো। ক্লাস করতে একদম ভাল লাগছে না। কি বিরক্তিকর ক্লাস। লেকচার দিচ্ছে নাকি বাশ গুলিয়ে খাওয়াচ্ছে তাই বুঝি না। মনটা আরো বেশি খারাপ লাগছে নিপা এখনও ফোন দিচ্ছে না কেন। ধুর ছাই এত রাগ করে কেন মেয়েটা। অবশ্য আমারও দোষ আছে, নিজের অজান্তেই এই কয়েক দিনে নিপাকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমার উচিৎ হয় নি। কিন্তু কি আর করা, নিজেকে তো চেঞ্জ করতে পারছি না। যাই হোক ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিপার ডিপার্টমেন্ট এর সামনে চলে গেলাম। নিপাকে কয়েক বার ফোন দিলাম কিন্তু ধরছে না। ফোন দিতে দিতে এক পর্যায়ে ফোন কেটে দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে দিলো। কি আর করা তাই দাড়িয়ে আছি। মনে তো হচ্ছে যায়ে নিপাকে ক্লাস রুম থেকে হাতটা ধরে নিয়ে আসি কিন্তু সেটা আমার দ্বারা সম্ভব না।
.
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর নিপা বের হলো। আমি দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু নিপাকে ডাকলাম না শুধু নিপার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নিপাও আমাকে দেখলো। আমি জানি নিপা এখন আমার কাছে এসেই বলবে "তুমি এখানে কেন? তোমার তো এখানে থাকার কথা না। তুমি অন্য কোন সুন্দরীর সামনে যায়ে দাঁড়িয়ে থাকো।" বড্ড অভিমানী মেয়েটা। তার এই অভিমানটাই আমার সব চাইতে বেশি ভাল লাগে। ভাল লাগে আমার প্রতি তার এত ভালোবাসা। এত কেয়ার। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিপার দিকে তাকিয়ে এইসবই ভাবছিলাম। কিন্তু এ কি!!!!! নিপা আমার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমার দিকে একটা বার মুখ তুকে তাকালোও না। এমন ভাবে আমার সামনে দিয়ে গেলো যেন আমি কেউ না। আমাকে সে চিনেই না। আমি এইসব দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এ কি করে সম্ভব!!! আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম চুপ চাপ। নিপা চলে যাচ্ছে, একবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছেও না!! তাই আমিই ডাক দিলাম,
.
--এই নিপা
--(কোন উত্তর নাই, আমার দিকে তাকালোও না, এক মনে হেটে চলে যাচ্ছে, তাই আমি তার সামনে গেলাম)
--কি ব্যাপার! ডাকতেছি না আমি? শুনতে পাচ্ছো না নাকি??
--আপনি ডাকলেই আমাকে শুনতে হবে??
--আপনি!! এতটুকু সময়ের মধ্যেই এত পর করে দিলে?? কি ব্যাপার অনেক রেগে আছো?
--আপনি তো আমার কখনও কাছের কেউ ছিলেন না, পর করব কিভাবে?
--অনেক রেগে আছো তাই না?? আচ্ছা ঠিক আছে সরি।
--আমি আপনার ওপর রেগে থাকবো কেন?? আপনি আমার কে??
--আমি তোমার কেউ নই?? আচ্ছা বললাম তো সরি। মাফ করে দাও না প্লিয।
--দেখেন রাস্তার মধ্যে এইসব আজাইড়া ঢং করবেন না। আর রাস্তা ছাড়েন। আপনার সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নাই।
--সরি বাবা সরি। এবারের মত তো মাফ করে দাও। আর আমি ঢং করতে যাবো কেন??
--রাস্তা ছাড়েন। আর আমাকে বিরক্ত করার একদম চেষ্টা করবেন না।
-- আমি তোমাকে বিরক্ত করছি!!! কি বলতেছ এইসব। আচ্ছা যাও অনেক সরি। আর এইরকম ভুল হবে না।
.
নিপা আর কোন কথা না বলে আমার সামনে থেকে চলে গেলো। আমি আটকানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হলো না। আজ নিপাকে বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে। এ কি আমার নিপা যাকে আমি মন প্রান দিয়ে ভালবাসি। নিজেকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। কি ভাবে সম্ভব এগুলা। অনেক বড় ভুল করেছি নিপাকে কষ্ট দিয়ে। যে করেই হোক নিপার রাগ ভাংগাতে হবে। আর কখনও নিপাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
.
আমি পিছন পিছন নিপার বাসা পর্যন্ত গেলাম কিন্তু তাতে কোন লাভ হলো না। নিপা রিকসা থেকে নেমে সোজা বাসায় ঢুকলো, আমি পিছন থেকে ডেকেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নি। কি আর করা নিপার সাথে তো কথা বলার আর সুযোগই পেলাম না আর আমার এত সাহস নেই যে নিপার বাসায় ঢুকে নিপার সাথে কথা বলব। নিপার বাবা কে তো আমি জমের মত ভয় পাই। একবার তো বলেই দিয়েছিলাম নিপার সামনে, তোমার বাবাকে আমার জমের মত লাগে।আর এই কথা বলে যে আমি কি বিপদে পড়েছিলাম। নিপার ঝাড়ি খেতে খেতে সেই দিন পুরাটাই গেছে। প্রচুর রেগে গেছিলো আমার ওপর। ওর বাবা নাকি খুব ভাল। যাই হোক পরে অবশ্য ভালই পাম পট্টি মেরেছিলাম নিপাকে যে তার বাবা খুব ভাল। অবশ্য এই পাম গুলা মেরে খুব একটা লাভ না হলেও হয়েছিল লাভ, তাও তো না হওয়ার চাইতে ভাল। যাই হোক সেই জমের ইতিহাস আর মনে করতে চাই না। এইসব ভাবছিলাম নিপার বাসার সামনে দাড়িয়ে। নিপার বাসা ২য় তলায়। নিপার বারান্দা রাস্তার দিকে মানে আমি যেখানে দাড়িয়ে আছি তার সোজাসুজি। মনে অবশ্য একটু আশা নিয়েই দাড়িয়ে ছিলাম যে নিপা একবার হলেও বারান্দায় আসবে এসে আমাকে দেখবে। হয়ত আমাকে বকাবকি করবে। কিন্তু না, আমার ধারনা ভুল সে আসলো না একটি বারের জন্য বারান্দায়। আমি শুধু বোকার মত কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।
.
এরপর বিকালে গিয়েও অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম নিপার বাসার সামনে। নিপাকে যে কতবার ফোন আর ম্যাসেজ দিয়েছি তা আমার সঠিক মনে নাই। আমার পক্ষে সেটার হিসাব রাখা সম্ভব হয় নি। আসলে আমার এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে আমার কোন প্রকার হিসাবই মিলছে না এখন। নিপার বান্ধবিদের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয় নি। এই ভাবে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পরও নিপার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি আমার। নিজেকে প্রায় পাগল পাগল লাগছিলো আমার। কোন কিছুই ভাল লাগছিল না।আমি যেন এক নাম না জানা অসুখে অসুস্থ। বাবা মা অনেকবার জিজ্ঞাস করেছে আমার কিছু হয়েছে কি না। কিন্তু আমি তাদের কোন প্রকার উত্তর দিতে পারিনি। আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম নিপা আমার জীবনের কতটা অংশ জুড়ে আছে। আমি নিপাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না।
.
পরের দিন সকাল সকাল ক্যাম্পাস যাওয়া বাদ দিয়ে নিপার বাসার সামনের দোকানটাতে গেছি। প্রায় কয়েক কাপ চাও খেয়েছি আর বসে বসে নিপার জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। নিপাকে বারান্দায় দেখলাম না আবার নিপা ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যেও বের হয় নি। সকাল গড়িয়ে প্রায় দুপুর হয়ে গেল আমি বার বার এদিক, ওদিক পাইচারী করছি আর দোকানে ঢুকে কিছু না কিছু খাচ্ছি, দোকানদার আর আশে পাশের মানুষ তো সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করে দিছে। আমি কি করব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। নিপা গেল কই। ইচ্ছা তো হচ্ছিল নিপার বাসায় ঢুকে টেনে বের করে আনি তারপর ইচ্ছামত বকা দেই কিন্তু তা আর আমার দ্বারা সম্ভব না। আর ক্যাম্পাস যাওতা হলো না। বাসায় চলে আসলাম। বিকেলে গিয়েও কোন লাভ হয় নি। নিপার দেখা আমি পাই নি। ওর বান্ধবি বা ক্লাস মেট কারো কাছে ওর কোন খবর নাই। মেয়েটা হঠাত করে গেল টা কই। আমার মনে হয় নিপার বান্ধবি জানে নিপা কই আছে কিন্তু ইচ্ছা করেই আমাকে বলছে না। আমি তার কাছে একটু ছ্যাছড়ামি করাতে সে আমাকে অপমান করল, ভালই অপমান। তবুও আমার কিছু মনে হয় নি। আমার শুধু নিপাকে ফিরে পেলেই হলো, যে যাই বলুক আর করুক।
.
এইভাবেই চলে গেল পাঁচটা দিন। নিপার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। এই পাঁচটা দিন আমার কাছে পাঁচ বছরের মত লেগেছে। আমার জীবন এতটা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না। হয়ত বা এত কষ্টে আমার দিন কখনো কাটেইনি। আর কাটবেই বা কেন! এত দিন তো নিপা ছিল। আর নিপা থাকার আগে এত কষ্ট হওয়ার মত হয়ত বা কোন কারন ছিল না। মনে মনে এই কয় দিন খালি একটাই চাওয়া নিপা যেন ফিরে আসে। আমি শুধু নিপাকে ফিরে পেতে চাই সে যে কোন মূল্যেই হোক না কেন।
.
আমি এই কয় দিন নিয়মিত সকাল বিকাল নিপার বাসার সামনে যাই, নিপার বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু যথেষ্ট সতর্কতার সাথে কিন্তু তারপরও অনেক মানুষের কাছে আমার কইফিওত দিতে হয়েছে এই কয় দিনে। আর দোকানদার তো আমাকে খুব ভাল ভাবে চিনে গেছে। তার দোকানে আমি অনেক টাকা খরচ করি দেখে সে আর কিছু বলে না। সবাই টাকা চিনে শুধু আমার নিপা ছাড়া, আমার যা মনে হয় আর কি। এই রকম মেয়ে আমার মত ছেলের কপালে থাকা উচিৎ না কারন আমি তো নিজেকে চিনি। কিন্তু কি আর করা রিলেশন যখন একবার হয়ে গেছে তখন আমার তো আর কিছু করার নাই, নিপাই আমার সব।
.
ছয় নম্বর দিনে যখন নিপার বাসার সামনে গেলাম তখন নিজেকেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। আমার মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। কারন দেখলাম নিপা বারান্দায় এসে কাপড় শুকাতে দিচ্ছে।তার মানে নিপা এখন ভার্সিটি যাবে। ইয়াহু তার মানে নিপার সাথে আজ কথা বলতে পারবো। নিপাকে আজ অনেকবার সরি বলব বলে অনেক প্ল্যান করলাম। আমি মনে করেছিলাম যে নিপা আমাকে দেখে একটু অবাক হবে কিন্তু এক কি নিপা আমার দিকে তাকিয়েও এমন ভাব করল যেন আমাকে চিনেই না। আমি তো পুরাই অবাক। যাই হোম নিপা একটু পর বের হলো। বের হয়েই একটা রিক্সা নিলো। আমিও রিক্সা নিয়ে ভার্সিটি এলাম নিপার পিছ পিছ। রিক্সা থেকে নেমেই নিপার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
.
--নিপা তুমি কই ছিলা এত দিন? আমার কথা তোমার একবারও মনে পড়েনি? আমি তো পাগল হয়ে গেছিমাম এই কয়েকদিনে। আমার কাছে এই পাঁচটা দিন পাঁচ বছরের মত কেটেছে। তুমি কিছু বলছ না কেন? (আমি কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে থামলাম)
--আপনার কথা শেষ? এখন রাস্তা ছাড়েন আমি ক্লাসে যাবো (নিপা)
--কি বলছ তুমি এই সব? এর দিনেও তোমার রাগ ভাংগেনি? আচ্ছা সরি সরি সরি। এবার তো প্লীয মাফ করে দাও। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
-- ফালতু কথা বাদ দিয়ে সামনে থেকে সরেন। আপনার ফালতু কথা শোনার টাইম নাই আমার।
-- নিপা শোন প্লীয, দাড়াও আমার কথা তো শোন, আমি সরি, এবারের মত তো মাফ করে দাও। আর একটা সুযোগ দাও প্লীয, আমি প্রমিস করছি একদম তোমার মনের মত হয়ে যাবো। প্লীয।
.
নিপা আমার কোন কথাই না শুনে হাটতে থাকলো আর আমি নিপার পিছ পিছ সরি বলতে বলতে ওর ক্লাস রুম পর্যন্ত গেলাম। এরপর ও ক্লাসে ঢুকে গেল আমি আমি বাইরে ক্লাস থেকে একটু সাইডে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
.
নিপা ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত একবারও বের হয় নি। আর আমি ওর ডিপার্টমেন্ট এর সামনে বসেই ছিলাম। নিপা যখন বের হলো তখন আমার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলো। তারপর আমার সামনে এসে আমাকে বলল,
-- তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন হ্যা? (নিপা)
-- তোমার জন্য। প্লীয আমাকে মাফ করে দাও (আমি)
-- ক্লাস করা বাদ দিয়ে কি এর ওর ডিপার্টমেন্ট এর সামনে বসে থাকার কাজ নিয়েছো নাকি?? যাও নিজের ডিপার্টমেন্ট এ যাও। আর এগুলা ঢং আমার সামনে করবা না।
-- আমাকে প্লীয মাফ করে দাও।
-- দেখো আমাকে প্লীয এভাবে বিরক্ত করো না। আমার সাথে কোন যোগাযোগ রাখার চেষ্টাও করো না। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লীয।
.
নিপা এই বলে চলে গেলো আমার সামনে দিয়ে। আমি কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম এই কথা শুনে যে নিপা আমার জন্য শান্তিতে নেই। নিপার অশান্তির কারন আমি। পরোক্ষনেই মনে হলো নিপা তো রাগের মাথায় কথাগুলো বলেছে। আমার বিশ্বাস নিপা আমাকে অনেক ভালবাসে আর এই কথা গুলা রাগ করে বলেছে। আমি আবার ছুটলাম নিপার পিছনে। নিপা সামনে রিক্সা নিয়ে বাসার পথে চলে গেলো। আমিও রিক্সা নিয়ে নিপার পিছ পিছ যেতে থাকলাম। রাস্তা থেকে নিপার জন্য কিছু ফুল কিনলাম। আমার টার্গেট ছিল নিপা বাসার সামনে রিক্সা থেকে নামার সাথে সাথেই আমি ফুল গুলো নিপাকে দিয়ে আবার সরি বলব। ফুলের জন্য হলেও যদি মাফ করে দেয়। কিন্তু সমস্যাটা হলো অন্য যায়গায়। নিপার বাসার সামনে আসার আগেই আমার রিক্সার চেইন পড়ে গেল। নিপা রিক্সা থেকে নেমে দ্রুত বাসার ভিতরে চলে গেল। আমি অবশ্য দোড় দিয়েছিলাম রিক্সা থেকে নেমে কিন্তু লাভ হয় নি।
.
কি আর করা, মনে মনে একটা প্রতজ্ঞা করলাম যে আজ এই ফুল গুলো নিপাকে দিয়ে তবেই এখান থেকে যাবো নয়ত যাবো না। তাই ফুল গুলো নিয়ে নিপার বারান্দা বরাবর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু সমস্যা হলো অন্যখানে, আকাশের অবস্থা ভাল নেই। আমার মনের সাথে তাল মিলিয়ে বোধ হয় আকাশও কাঁদতে চাইছে, তারও হয়ত কোন নিপার জন্য আমার মতই মন খারাপ। যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে। আসলে কপাল পোড়া হলে যা হয় আর কি, ঝাড়ের বাশ সব ঘাড়ে আসে। এইসব ভাবতে ভাবতে দুই এক ফোটা পানিও পড়ল আমার শরীরে। আমার মাথায় তখন অন্য একটা বুদ্ধি এল। এই বুদ্ধির জন্য আমার নিজেকেই মনে হচ্ছে আমি নিউটন অথবা আইনস্টাইন হয়ে গেছি। বুদ্ধিটা হলো একটু পর তো নির্ঘাত বৃষ্টি হবে আর আমি তাতে ভিজে ফুল গুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। কপালে যদি ভাল থাকে তবে নিপা আমাকে দেখবে আর তার সব রাগ শেষ হয়ে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। দাঁড়িয়ে থাকলাম বৃষ্টির জন্য।
.
হ্যা কিছুক্ষনের জন্য কাংক্ষিত বৃষ্টি শুরু হলো আর আমি তার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকলাম। ফুলগুলো হাতেই ছিল। সেগুলোও ভিজে গেছে। আমার চাইতে মনে হয় ফুল গুলোই বেশি কষ্টে আছে। আমার কষ্টের জন্য বেচারী ফুলগুলোকে ভিজতে হচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে পকেটে পলিথিনের ব্যাগে ভরা মোবাইলটা বেজে উঠলো। সামনের দোকানের ছাউনীর নিচে এসে ফোনের দিকে তাকালাম। একি আমি সত্যি দেখছি, নিপা কল দিয়েছে এইটা দেখে আমি কিছুক্ষনের জন্য আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারলাম যে বৃষ্টিতে ভিজা বোকামী হয়ে গেছে কারন নিপা একবারও বারান্দায় আসেনি এখন পর্যন্ত আর তাই আমাকে ভিজতে দেখেওনি। খালি খালি ভিজলাম। যাই হোক ফোন রিসিভ করলাম,
.
-- ওই তুমি বৃষ্টিতে ভিজতেছ কেন??(নিপা)
-- মানে? কই? আমি তো দোকানের ছাউনীর নিচে। (আমি)
-- একদম মিথ্যা বলবা না। আমি জানালা দিয়ে সব দেখছি, খুব প্রেম জেগেছে আমার জন্য হ্যা??? এত ঢং কিসের? তুমি কি মনে করেছ প্রতিদিন আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকলেই আমি তোমাকে মাফ করে দিবো?? তোমাকে আমি কখনও মাফ করব না। যাও রিক্সা নিয়ে বাসায় যাও নয়ত খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
-- আচ্ছা তুমি কই? আর সত্যিই প্রতিদিন আমাকে দেখো? যাক বাবা এত মেহেনত বেকার যায় নি। আর প্লীয এবারের মত মাফ করে দাও। আরেকটা সুযোগ দাও।
--তোমাকে আর কোন সুযোগ দিয়ে আমি আবার কোন ভুল করতে চাই না। তুমি চুপ চাপ বাসায় যাও। এত ঢং করে লাভ নাই। তোমার না বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে? তাহলে এত ঢং করছ কেন?? যাও চুপ চাপ বাসায় গিয়ে ঠিকমত মাথা মুছো।
-- দেখো আমি এত কিছু জানি না। আমাকে যদি মাফ না করো তাহলে আমি তোমার বাড়ির সামনে এইভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে ভিজবো, জ্বর আসলে আসুক।
-- দেখো একদম পাগলামো করো না। আমার কিন্তু খুব রাগ উঠছে। চুপ চাপ বাসায় যাও।
-- না আমি যাবো না। ফোন রাখলাম, যতক্ষন মাফ করে এই ফুল গুলা না নিবা ততক্ষন আমি বৃষ্টিতে ভিজবো।
.
এই বলে ফোন রেখে দিয়ে আবার নিপার বারান্দা বরাবর দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকলাম। সাথে সাথেই নিপা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। আমি তো সেই খুশি, সব সময় একটা দুঃখ ছিল যে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারি না জ্বর আসে। আজ আর সেই দুঃখ নাই কারন আজ সেটাই আমার সব চাইতে বড় হাতিয়ার। নিপা বারান্দায় এসে বেশ রাগের সুরে জোরে জোরে বলতে লাগলো,
.
-- তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? তোমার না জ্বর আসে? যাও বাসায় যাও এত ঢং করো না তো। (নিপা)
-- ঢং না। মাফ করে ফুল গুলো নিবা তারপর যাবো। (আমি)
-- তুমি চুপ চাপ বাসায় যায়ে মাথা মুছো, জ্বর আসবে তো!
-- আসলে আসুক। আমি কিছুর পরয়া করি না। আমি শুধু তোমাকে চাই। মাফ করে দিয়ে ফুল গুলো নিলেই চলে যাবো।
-- আচ্ছা ফুল গুলো ছুড়ে দাও আর তাড়াতাড়ি বাসায় যাও।
-- শুধু ফুল নিলে হবে না আমাকে মাফ করে সুযোগ দিত হবে।
-- দেখো এত ঢং করো না। তোমার আর কোন সুযোগ নাই। আমি আবার একই ভুল করব।
.
এই কথা বলার সাথে সাথে নিপার মা বারান্দায় এসে নিপাকে জিজ্ঞাস করল কি করছিস মা? আর আমি দে দোড়। আগে পিছে কোন দেখাদেখি নাই। আমি এমন দোড় দিলাম যে একবারে দোড়ে অনেক দুর এসে রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম অবশ্য দোড়ানোর সময় একবার রাস্তায় হওয়া গর্তে হোচট খেয়ে পড়ে গেছিলাম। অনেক পানি জমে ছিল সেখানে। বাসায় এসে হলো আরেক ঝামেলা, ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখি পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ফোন জড়ানো নাই। খালি ফোন পকেটে। তার মানে নিপার সাথে কথা শেষ হওয়ার পর ফোনটা আর পলিথিনের প্যাকেটে জড়াইনি। ফল যা হওয়ার তাই হলো। ফোন পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
.
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় একটু শুলাম ঘুমানোর জন্য কিন্তু মাথাটা ভারি হয়ে আছে আর ব্যাথা করছে। বুঝতে আর বাকি রইল না আমার জ্বর আসবে। এর আগেও এইরকম হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজার পর খুব একটা বেশি সময় লাগে না জ্বর বাবার আগমন ঘটতে। ভিজার সাথে সাথে মাথা ব্যাথা শুরু হয়। ফল যা হওয়ার তাই হলো, বিকাল গড়াতে গড়াতে আমি জ্বরে বিছানায় গড়াগড়ি শুরু করলাম। এমন সময় ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলছে আমার ফোন বন্ধ কেন, নিপা তাকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছিল, আমার কি হয়েছে তাই জানতে চাচ্ছিল ফোন বন্ধ কেন এই সবই আর কি। বন্ধুকে দুঃখের কথা জানালাম যে জ্বরে গড়াগড়ি করছি আর ফোন ঘুরতে গেছে শশুর বাড়ি।
.
সন্ধ্যা হতে হতে আমার দুই ফ্রেন্ড আর নিপা আমার বাসায় আসলো। এই দুই ফ্রেন্ড প্রায় আমার বাসায় আসে কিন্তু নিপা খুব কম এসেছে তাও আমার ফ্রেন্ড পরিচয়ে। বাড়িতেও জানে নিপা আমার ফ্রেন্ড আর ওই দুইজনকে তো বাড়ির সবাই ভাল করেই চিনে। আমি জানতাম আমার এই দুই ফ্রেন্ড আমাকে দেখতে আসবে কিন্তু নিপার আসা দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। মেয়েটা পারেও বটে, এই অভিমান আবার এই সব ঠিক। আমার তো এদিকে জ্বরে খুব খারাপ অবস্থা। ফ্রেন্ডরা আমার সাথে অনেক কথা বলছে, আম্মা নাস্তা দিয়ে গেছে তা খাচ্ছে আর নিপা চুপ চাপ বসে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোন কথাও বলছে না আর কিছু খাচ্ছেও না। চোখ দিয়ে অল্প অল্প করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার ফ্রেন্ডরা একটু সাইডে গেলে নিপা একদম আমার মাথার কাছে এসে বসে কান্না জড়িত সুরে বলতে লাগলো,
-- তোমাকে কে বলেছিলো এভাবে ভিজতে ( নিপা)
-- আসলে তুমি অনেক রাগ করে ছিলে তাই (আমি)
-- রাগ করে থাকলেই এভাবে ভিজে নিজের ক্ষতি করতে হবে?
-- ক্ষতি কি, এইত একটু জ্বর খালি।
-- এইটা একটু জ্বর? গরমে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। (কপালে হাত দিয়ে)
-- এখন তো অনন্ত মাফ করে আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও
-- তুমি কি জানো তুমি কত বড় গাধা।
-- আমি এত কিছু জানি না। তুমি মাফ করে দাও তাহলেই হবে।
-- মাফ তো করব না কখনই। তুমি আমার সাথে এত কিছু করলা, নিজের ক্ষতিও করলা, তোমাকে কি মাফ করা যায়?? তোমাকে এগুলোর জন্য শাস্তি দেওয়া হবে খালি সুস্থ হয়ে উঠো।
-- সব শাস্তি মেনে নিতে রাজি, আমাকে আবার সুযোগ দিবা তো?? আগের মত আবার ভালবাসবা তো?
-- চুপ গাধা। খালি সুস্থ হয়ে উঠো তোমার খবর করে ছাড়বো। শাস্তির একটু ছাড় হবে না।
.
অতঃপর আমি শাস্তি পাবার জন্য মানুষিক প্রস্তুতি নিতে থাকলাম কিন্তু নিপা আমার একটা প্রশ্নের এখনও উত্তর দিলো না, আমাকে কি আরেকবার সুযোগ দিবে? আগের মত ভালোবাসে আমার পাশে থাকবে

No comments

Powered by Blogger.