Header Ads

ক্লাসমেট

.অন্য দশটা রিলেশনের মতো তিথি
আর আমার রিলেশন যেমন ঘরে উঠেনি
তেমনি চলছেও না। হুট করেই হয়ে
গিয়েছিল। রিলেশনের এতোদিন পরও
মনে হচ্ছে যে আসলে আমাদের মাঝে
কোনো রিলেশনই নেই। যা হচ্ছে তা
টাইম পাসের অভিনয়।দরকার পড়লে একটু
কথাবলা, একটু ঘুরা। দরকার না পড়লেই
ভুলে যাওয়া। আসলে এটা রিলেশন নয়
বন্ধুত্বেই রয়ে গেল।
.
তিথি ছিল আমার ক্লাসমেট। আমার
ভিন্নরকমের স্বভাব আছে, অন্যদের মতো
সুন্দরকে মুগ্ধচোখে দেখি না, পাম
দেইনা, কথা বলার চান্স নেইনা।
সবাইকে সমান চোখে দেখি। একজন
সুন্দরী মেয়ে চাইবে তার আশেপাশে
থাকা সবাই তার রূপে মুগ্ধ হোক। আমি
এরকম করিনা। স্পষ্ট করে বললে এড়িয়ে
চলি।
তিথি ক্লাসে সবচে' সুন্দর নয় আবার
সবচে' বিশ্রীও নয়। একরকম দেখতে।
ক্লাসে অন্য সুন্দরী মেয়েদের রূপের
আভিজাত্যে আড়ালেই পড়ে যায়।
হয়তো ভাবে," আমি দেখতে এতো সুন্দর
নয় তাই সবাই এড়িয়ে চলে,
স্বাভাবিক। "
কিন্তু তিথির ওই ভাবনাটির সাথে
নতুন আশ্চর্য প্রশ্ন, " তাহলে ছেলেটি
কেন আমাকে ফলো করে! অন্যদের মতো
এড়িয়ে যায়না কেন! " এইটি ঢোকে
তাহলে ঘটনা অন্যরকম মোড় নেয়।
.
একদিন ক্লাস শেষে বের হবো তখন
তিথি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমার পাশে
দাঁড়ালো। আমি অবাক হলাম আমরা
একে অপরে কোনোকথা না বলেই
পাশাপাশি হাঁটছি। কলেজ গেইট
পর্যন্ত এসেও কোনোকথা হয়নি। কলেজ
থেকে বের হয়ে মনে হলো তিথি কিছু
বলবে। আমি বললাম..
- কিছু বলবেন?
.
ক্লাসমেট হলেও কোনোদিন কথা
বলিনি তিথির সাথে। ক্লাসের অন্য
ছেলে- মেয়েরা একে অপরকে তুই
ডাকা শুরু করলেও আমি আপনি, তুমিতে
রয়েছি। খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনো
মেয়ের সাথে কথা বলিনা।
.
- আমাকে ফলো করো কেন?
তিথির কথায় শুনে বেশ অস্বস্তিকর
অবস্থায় পড়লাম। তোমাকে আমার ভাল
লাগে, সত্যি আমি তোমাকে
ভালবেসে ফেলেছি। প্রথম প্রথম
তোমাকে নিয়ে ভাবতাম না। এখন
প্রত্যেকদিন তোমাকে নিয়ে ভাবি,
না চাইলেও ভাবি। তুমি খুব সুন্দর না
হলেও তোমার মাঝে আলাদা এক
মায়া আছে, যে মায়ার লোভে আমি
পড়েছি। পড়েছি না মরেছি। এখন তুমি
আমাকে বাঁচাও।
.
খুব ইচ্ছে করছিলো এসব বলতাম। কিন্তু হুট
করে এসব বলার সাহস নাই। যার সাথে
কিনা একদিনও কথাই হয়নি। আমি
বললাম..
- আচ্ছা আর ফলো করবো না। আমি যাই
তাহলে?
তিথির সাথে একটুখানি হেঁটে মনে
হয়েছিল আমি তিথির সাথে হাঁটার
যোগ্য না। মানায় না একসাথে হাঁটা।
আমার উত্তরে তিথি সম্ভবত খুশি হয়নি।
হ্যাঁ, না কিছুই বলেনি। কেমন
অদ্ভুতচোখে তাকিয়ে আছে। তখন মনে
হয়েছিল আমি জেলপলাতক আসামী।
দাঁড়িয়ে আছি প্রধানমন্ত্রীর সামনে।
আমি কিছু না বলেই ব্যাক হয়ে হাঁটা
দিলাম। ইচ্ছা করলে আরো অনেকটা পথ
একসাথে যাওয়া যেতো।
.
এর কয়েকদিন পর, ক্লাসে বসেছিলাম
তখন তিথি এসে বলে, ও'কে কেন ফলো
করিনা। এখন থেকে যেন রোজ ফলো
করি।
আমি তিথির কথায় হেসে আচ্ছা
বললাম। প্রাইভেট পড়া পর একসাথেই
ক্লাসে আসতাম, ক্লাস শেষে
একসাথেই ফিরতাম। ফোনেও কথা
হতো।
তিথিকে একদিন বলি আমার
ভালোলাগে ও'কে। তখন তিথিও বলে
আমাকে ভালো লাগে তার।.
.
তখন থেকেই তিথির সাথে আলাদারকম
সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে সম্পর্ক হওয়ার পর
প্রথমে না বুঝলে পরে বুঝলাম আমাদের
মাঝে যেন অদ্ভুত অদৃশ্য দূরত্ব আছে।
ভালবাসা কম, টেক কেয়ার কম। প্রথমেই
বলেছিলাম, দরকার পড়লে একটু কথা
বলা, ঘুরা। এইরকমই ছিল।
.
আমি একটু চাপা স্বভাবের থাকায় সব
বলিনা। একটু একটু বলি। বাকি কথা
মনের মাঝেই রেখে দেই। এভাবে
তিথির উপর চরম বিরক্ত হয়ে যখন বলি,"
তুমি আমাকে কি ভালবাসো না?
আমাকে সময়ই দেও না।"
তিথি একটু হেসে ওইদিন আমার হাত
ধরে সারাদিন ঘুরতো। আমার মন ভাল
হয়ে যেতো। কিন্তু পরেরদিন থেকে
যা-তাই। আবার শুরু হয়ে যেত ও'র
ব্যস্ততা। পড়াশোনা, বাসায় কাজ,
এইসেই। তারপরও সময় করে একটু আবেগ
দিয়ে কথা বললে মন ভাল হতো, সেটা
করেনা। কেমন গা ছাড়া ভাব থাকে
কথা বলায়, আচার -আচরণে।
.
আজকে সকালে তিথির উপর প্রচণ্ড
বিরক্ত হয়ে যাই। প্রাইভেট পড়া শেষে
যখন বের হবো দেখি সাথের একটা
ফ্রেন্ডের সাথে তাড়াহুড়া করে
রিক্সায় উঠতে উঠতে বলে," রিয়াজ
ক্লাস মিস হয়ে যাবে, চল,চল।"
আমি একটু পিছনে ছিলাম। তিথি
একদিন বলছে কেউ যেন কোনোভাবেই
না বুঝে আমরা প্রেম করি। তাই
ক্লাসমেটের মতই থাকতাম। তাই বলে
এই নয় যে একসাথে চলাফেরা করা
যাবে না, কথা বলা যাবে না।
রিয়াজের সাথেই কেন যেতে হবে।
একটু অপেক্ষা করলে তো আরেকটা
রিক্সা আসবে। অন্যমেয়ের সাথে তো
গেলেই হয়।
.
রাগের আরো কারণ আছে। এমনিতেই
তিথি খুব একটা ফোনে কথাবলে না।
দুই তিনদিন ধরে একবারেই কথা বলছে
না। যা কলেজে আসলে একটু কথা হয়।
.
আমার মনে হচ্ছে এখন তিথি আসলে
ভালবাসতেই জানে না। টাইম পাস!
নাহ। টাইম পাসো করছে না। টাইমে
পাসে সময় ব্যয় হয়। তিথির এমন
অনুভূতিহীন জড়তা আমাকে খুব পীড়া
দেয়। ব্রেকআপের কথা কোনোভাবেই
চিন্তা করতে পারি না আমি। অনেক
ভালবেসে ফেলেছি।
.
- এই একটু সময় হবে?
ক্লাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতক্ষণ
বাস্তবে ছিলাম ততক্ষণ মনে হয় নি
তিথি একবার হলেও আমার দিকে
তাকিয়ে ছিল। এখন ক্লাস শেষে মনে
পড়লো আসার। নিশ্চিত জানি কিছু
কিনতে যাবে মার্কেটের একদম
ভিতরে, তাই আমার সময় জানতে
চাওয়া হচ্ছে। আমার একটা দোষ আছে।
শত রেগে থাকলেও তিথি কিছু বললে
না করতে পারি না।তাই "হুম সময় হবে"
বলে দিলাম। তবে মুখ কালো করে
রইলাম। আমার মন খারাপ সেদিকে
কোন খেয়ালই নেই তিথির। কিছু কাপড়
কিনলো। তারপর বের হবার সময় ব্যাগ
গুছাতে গুছাতে বলল..
- উফ! তুমি কিছু নিবে? মনেই নেই।
.
মনে থাকবে কেন? মন থাকার কথা নয়।
ভালবাসা বুঝো মেয়ে? ভালবাসা
হলো আবেগের মাধ্যমে দু টা আত্মার
বন্ধন। ভালবাসা থাকলে ভুলতে না।
রিয়াজ, মিশা সওদাগর এদের সাথে
রিক্সায় কিভাবে বসতে হয় সেটা
মনে মনে ভাবো।আমাকে নিয়ে
ভাবতে হবে না।
খুব ইচ্ছে করছিল এগুলা বলতে।
সংকোচের কারণে এসব না বলে
বললাম..
- আরে কি যে বলো না তুমি। আমার
অনেকগুলা শার্ট, প্যান্ট আছে। চলো
সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।
- হুম। আজ ফোন দিয়ো না। বিজি
থাকবো। গেস্ট আসবে।
- আচ্ছা।
.
রাত হলো। তিথির পোস্ট পড়ছিলাম।
পোস্ট এবং পোস্টের কমেন্ট দেখে
অনেক রাগ হলো। পোস্ট ছিল এরকম, "
সিঙ্গেল লাইফ সত্যি কষ্টের!"।
ক্লাসের বন্ধুরা কমেন্টগুলো মাথা
খারাপ করার মতো। সবচে ' বিরক্তিকর
কমেন্টটা ছিল," সখি, আমি আছিতো,
লাভ ইউ বেবি। " কমেন্টটা রিয়াজের
ছিল। যার জন্য আজ রাগছিলাম সকালে
তার কমেন্টটাই এখন আবার রাগালো।
আমার মাথায় ভুত চাপলো। তিথিকে
ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
দিয়ে চ্যাট অফ করে লগ আউট করলাম।
.
ঘুম থেকে উঠে রাতের কাজটার কথা
মনে পড়ে গেল। পাবলিক কমেন্ট পড়তে
ঢুকলাম আইডিতে। কমেন্ট প্রথম
কয়েকটায় শুভকামনা পেলেও
শেষেরগুলায় ছিল "কে সেই ব্যক্তি? "!
তিথি ট্যাগ রিমুভ দিয়ে দিয়েছে। মন
আবার খারাপ হয়ে গেল। আবার
আগেরমতো রিলেশনশিপ ডিভোর্সড
দিয়ে আইডি ডিএক্টিভ করে দিলাম।
.
তিথির একটাও ফোন পেলাম না।
ম্যাসেজ ও না। খুব রেগেছে।তবে
ক্লাসের ফ্রেন্ডদের অনেকগুলা ফোন
এসেছে। আমার কেমন অস্বস্তি লাগছে।
এটা ঠিক হয়নি সম্ভবত। তিথি বলেছিল
আগেই কাউকে না জানাতে, ফেসবুকে
তো নয়ই। অনেক রিলেটিভস এড আছে।
নিশ্চয় গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রচুর
মিথ্যে অজুহাত দিতে হয়েছে তাকে।
দিলে দিক। আমি আর এরকম ফালতু প্রেম
করতে পারছিনা। না আছে চাওয়া-
পাওয়ার দাম, না আছে একটু ভালবাসা,
না আছে আবেগ। কয়েকদিন কলেজে
না গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
একদিন যেতে না যেতেই তিথি ফোন
দিলো দেখা করতে হবে। আমার একটু ভয়
হলো। আমি নিশ্চিত ইচ্ছেমত গালি
দিবে। সম্ভবত রেগে কথা বলাটার ধরণ
এরকম হবে, " না শুভ্র তোমাকে নিয়ে
আর পারছিনা। বলছি কাউকে না
জানাতে। তুমি কিনা এফবিতে দিয়ে
দিলে স্ট্যাটাস! আমাকে কতো
কৈফিয়ত দিতে হয়েছে তুমি জানো? "
.
আমি তিথির কথাশুনে মাথা নিচু করে
সরি বলবো কানে হাত ধরার ভাব
নিয়ে। অতঃপর তিথি কিছুক্ষণ
অন্যদিকে মুখ কালো করে রেখে হঠাৎ
আমার দিকে চেয়ে হেসে দিবে।
আমিও হেসে কান থেকে হাত
নামিয়ে ফেলবো। তিথি হাসি
থামিয়ে হুংকার দৃষ্টিতে তাকালে
আবার সরি বলে হাসতে হাসতে কান
ধরবো।
.
এরকম মনে মনে ভেবে তিথির সাথে
দেখা করতে গেলাম। তিথি বসে
মোবাইল টিপছে। আমি কাছে যেতেই
বলল..
- বসো।
আমি বসলাম। একটু ভয় ভয় চোখে তিথির
দিকে তাকালাম। তিথি আমার
দিকে চাওয়াতে মাথা নিচু করে
ফেললাম। তিথির মুখ থেকে হার্ড কথা
শুনার জন্য আমি প্রস্তুতি নিলাম।
- কেমন আছো?
.
এটা সম্ভবত খুন করার আগে আসামিকে
ভাল খাবার খাওয়ায়ে দেওয়া।
বললাম..
- হুম। তুমি?
- ভাল নেই।
- কেন?
- আবেগের বশে ভুল করেছি।কিভাবে
যে বলি!
- মানে?
- আমি কিছু বলবো তোমাকে।
- বলো।
- দেখো শুভ্র প্রথমত আমি তোমার
সাথে সম্পর্ক করবো না, তুমি কেন
আরো কারো সাথেই
পারিবারিকভাবে বিয়ার আগে
প্রেমে জড়াবো না। গতপরশু তোমার
রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস মামা দেখে
ফেলেন। তারপর আমাকে অনেক বুঝান।
আমি ভেবে দেখলাম মামা যা বললেন
সব ঠিক বলেছেন। আমিও আবেগের বশে
অনেক দূরে চলে এসে গেছিলাম না
বুঝেই। দেখো নাই তোমাকে ঠিকমতো
টাইম দিতে পারি না! তুমি এসব নিয়ে
মন খারাপ করো। আমার পরিবার একটু
ইন্ট্রোভার্ট টাইপের। আমিও।
দ্বিতীয়ত, আমি তোমাকে সত্যি
ভালবেসেছিলাম। আমি ভাল বন্ধু হয়ে
থাকতে চাই।রাখবে না? এই তুমি কি
কষ্ট পাচ্ছো? সরি।প্লীজ ভুল বুঝো না।
- ওহ। আগে বললেই হতো।
- আগে বললে মানে?
- স্ট্যাটাস যে দিয়েছিলাম ফ্রেন্ডরা
তো..!
- আচ্ছা ওটা ভেবো না।আমি সবাইকে
বুঝিয়ে বলে দিব। খুশি?
- হুম।
- ভাল বন্ধু হিসাবে রাখবে তো?
- আচ্ছা।
.
তিথির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে
বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে এসে
খেয়ে শুইতে না শুইতেই বৃষ্টি আসলো।
জানালার পাশে মাথা রেখে বৃষ্টি
দেখতে দেখতে হঠাৎ করে অনুভব হলো
তিথি আর আমার নেই। একটু আগ পর্যন্ত ও
মনে হয়েছিল তিথি আমারি আছে।
আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমি
আর তিথিকে বলতে পারবো না তিথি
আমি তোমাকে ভালবাসি! ভীষণ
ভালবাসি! সারাজীবন পাশে থেকো!
.
আমি তিথির সাথে স্বাভাবিক
থাকার চেষ্টা করলাম। বাইরে থেকে
বুঝতে দেই এটা স্বাভাবিক ঘটনা। এরকম
হয়। বন্ধু তো আছিই। কিন্তু ভিতর থেকে
বাস্তব অনুভূতিগুলো আড়ালেই প্রকাশ
করতে হয়।
.
তিথি আমার সাথে ফ্রেন্ডের মতো
চলতে শুরু করলো। আমার কেমন বিরক্ত
লাগতো তিথির সামনে যেতে।
যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম।
তবুও ক্লাসমেট হিসাবে বাধ্য হয়ে
মাঝেমাঝে সামনে যেতে হয়।
.
এভাবে কয়েকদিন চলে গেল। আমার
এড়িয়ে চলা সম্ভবত তিথি টের
পেয়েছিল। তাই আমার সাথে কথা
বলার সময় কিংবা কথা না বলার সময়
অন্যরকমভাবে তাকাতো। এমনিতেই
তিথির সাথে মিশতে বিরক্ত আসতো।
তার উপর অদ্ভুত তাকানো বড্ড
অস্বস্তিকর লাগতো।
ইদানীং তিথির আচরণেও বেশ
পরিবর্তন দেখছি। কথা কম বলে।দূরে
দূরে থাকে। তবে অদ্ভুতভাবে তাকায়।
ইতিমধ্যে তিথির ওভাবে তাকানো
নিয়ে আমি ভেবে দেখলাম এটার
মানে এই হতে পারে যে, তিথি
ব্যাপারটা নিজে সহজভাবে
নিয়েছে।কিন্তু আমি নেইনি। তাই
রিলেশন ব্রেক করার পর আর স্বাভাবিক
হইনি তিথির সাথে। এইরকম অবস্থায়
আমাকে কি বলে বুঝানো যায় বা কি
করলে বুঝানো যায় সেটা তিথি
বুঝতে পারছে না। এইসব ভেবে
নিজেকেই দোষে তিথি দূরে দূরে
থাকছে। যদি এরকমটা হয় তাহলে
তিথির অনুশোচনা আমাকে আনন্দ
দিচ্ছে। আমার ভালবাসার কি দাম
ছিল না যে ওভাবে হুট করেই ব্রেক
দিতে হবে যা মন চায়। আর এখন যদি
তিথি নিউলি রিলেশন করতে চায়,
নিজের ভুল স্বীকার করতে চায়। আমি
সুযোগ দিতে চাইনা। আমার
ফিলিংসেরও দাম আছে!
.
এইরকমভাবে চলছিল। কিন্তু আজ সকালে
একটু বেশি হয়ে গেছে আমাদের নীরব
লড়াই। কলেজ ফ্রেন্ডদের নিয়ে চ্যাট
গ্রুপ আছে। ওখান থেকে আমাকে রিমুভ
দিয়ে দিল তিথি। তিথি খুলেছিল
তাই একটু ক্ষমতা দেখায়। অবশ্য গতকাল
রাতে আমি তিথিকে ব্লক দিয়ে
দিছিলাম। এফবিতে আসলেই তিথির
আইডিতে বারবার ঢুকতে ইচ্ছা করে।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা।
তাই ব্লক দিয়ে দিলাম। গ্রুপে বারবার
বলছিল ও আমাকে যে ব্লক দিছে
তাকে রিমুভ দিয়ে দিবো। আমি
চুপচাপ দেখছিলাম। তারপরই রিমুভড!
.
কলেজ এসে অন্য খবর শুনলাম। সবাই
মিলে পিকনিকে যাবে। কনফার্ম
লিস্ট আসলো। কনফার্ম করবো কি না
ভাবছি তখন মেয়েদের সিরিয়ালে
তিথির নাম কনফার্মড দেখে লিস্ট
পিছনের ডেস্কে দিয়ে দিলাম। যাব
না। তিথির দিকে তাকালাম।
মোবাইল নিয়ে পাশের ফ্রেন্ডের
সাথে ছবি উঠতে ব্যস্ত।
.
রাতে পড়া শেষে এফবিতে এসে লগ ইন
করে দেখলাম গ্রুপে এড হয়ে গেছি।
সম্ভবত সাথের কেউ এড দিছে। কিছুক্ষণ
ম্যাসেজ দেখে তারপর সবার সাথে
আড্ডায় লাগলাম। যেই তিথি আসলো
আমি চুপ হয়ে গেলাম। তিথির আর সবার
ম্যাসেজ চুপ করে দেখতে লাগলাম।
তিথি খোঁচা দিয়ে কথা বলতে লাগল।
কিছুক্ষণ দেখার পর ব্লকের টপিক তিথি
আনতেই আমি তিথিকে আনব্লক দিয়ে
দিলাম। সবাই শুনলে প্রবলেম হবে।
.
তারপর দুদিন প্রাইভেট আর কলেজ বন্ধ
থাকায় এফবিতেই সময় কাটলো। তিথি
একটিভ থাকলে গ্রুপে যেতাম না
তেমন একটা। তিথি চলে গেলেই কথার
ফুলকি ছুটাতাম।আবার তিথি আসলে চুপ
হয়ে যেতাম।
.
কয়েকদিন চলে গেল। এখন আর তিথির
সাথে এখন একদম কথা হয়না। ভয়ংকর দূরত্ব
তৈরি হলো। মাঝে কয়েকদিন
প্রাইভেট, ক্লাসে যাইনি কিন্তু
তিথি একবার বলেনি কেন আসিনি। এই
দূরত্ব সৃষ্টি হওয়াটা এখন আমার ভাল
লাগছে না। বুঝলাম আমি তিথিকে
আগেরমতই ভালবাসি।
তিথির ভুলের জন্য রেগে দূরে
থাকলেও চোখেচোখে ঠিকই
এতোদিন রেখেছিলাম। এই কয়দিন না
দেখায় এফবিতেও না পাওয়ায় আমার
মাঝে কেমন হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
আমার আইডি ডিএক্টিভ ছিল। আজ অন
করেছি।
.
ক্লাসে বসে এসব ভেবে তারপর
তিথির দিকে তাকিয়ে দেখলাম
অংক করছে। খুব ইচ্ছা করছে তিথির
সাথে কথা বলি, একটু ঘুরি। ইচ্ছাটা
মনে রেখেই উঠে ক্লাস থেকে চলে
আসলাম। মনের মাঝে একটাই কথা
তিথি আমার সাথে এখন কথাও বলে
না। ব্রেক দিল, কথা বলে না। এবার
একদম পার্ফেক্ট হয়ে গেল তিথির
পারফর্মেন্স।
.
রাতে গ্রুপে চ্যাটে চুপচাপ ম্যাসেজ
দেখছি আর গল্প লিখছিলাম। নায়কের
বার্থডে লিখতে যেয়ে মনে হলো
আগামীকাল তো আমার বার্থডে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১.৫০
পিএম। হঠাৎ করেই নার্ভাসনেস
লাগলো। তিথি তো জমিয়ে আড্ডা
দিচ্ছে। আমাকে কি উইশ করবে?
টাইমলাইনে পোস্ট অপশন অন করে ১২.০৫
পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম থেকে উঠে সবার করা উইশগুলো
পড়তে ইচ্ছা হল।কিন্তু ঢুকলাম না। যদি
তিথি উইশ করে না তাহলে তো মন
খারাপ হবে। প্রাইভেট পড়ার জন্য বের
হলাম।
- ক্যারি অন।
প্রাইভেটে পাশে থাকা অনিক বলল।
আমি বললাম
- কি?
- তিথিতো দারুণ উইশ করল। দেখছস না?
আমি এফবিতে আগ্রহ নিয়ে ঢুকলাম।
তিথির উইশটা খুঁজে বের করলাম। উইশটা
এরকম ছিল।
" Happy birthday dear. Many many happy returns
of the day."
sob somoy valo thako. Sobaik valo rakho. onek
onek shuvo kamona. ami ekjon well wisher
hisabe kamona kori tomar agoto dingulo jeno
valo kate. ekta kotha, manusk khoma korte
shikho,bujhte shikho,valobaste shikho. however, I
love u lot as a friend.
.
উইশটি দেখে খুব ভাল লাগলো।
উপদেশগুলো ভাল লাগলো, কিন্তু এজ এ
ফ্রেন্ড যুক্ত না হলে ভাল লাগতো
বেশি। ভালবাসতে আমি জানি,তুমি
জানো না তিথি।
উইশটা ডিলিট দিয়ে মোবাইল পকেটে
ঢুকিয়ে অনিককে সাতপাঁচ বুঝাতে
বুঝাতে তিথির দিকে তাকালে
দেখি তিথি আমাদের দিকে চেয়ে
আছে। আমি একটু ঢুক গিললাম।
.
ক্লাস শেষে সবাই একসাথে বের হলে
তিথি আমার সামনে থেকে হাঁটছে।
একটু পর আমার পাশ থেকে হাঁটা শুরু
করলো। কিছুক্ষণ পর বলল..
- আজ কি কি করবে?
অনেকদিন পর তিথি আমার সাথে কথা
বলায় একটু ভালা লাগা কাজ করলো।
বললাম..
- সাধারণভাবেই কাটাবো। আসলে
তোমাদের উইশেই আমার জন্মদিন।
- হুম।
.
কলেজ থেকে বের হতে তিথি
রিকশায় উঠায় বাই বললাম। কিন্তু
তিথি আমাকে রিকশায় উঠতে
ডাকলো। দ্বিতীয়বার ডাকলো।তারপর
উঠলাম। তবে তিথির পাশে বসতে খুব
অস্বস্তি লাগছে। বার বার মনে হচ্ছে
এটা আমার চেনা তিথি নয়।যার
শরীরের গন্ধ আমার চেনা। বারবার
সংকোচ বোধে দূরত্ব রেখে বসছি,
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর দূরত্ব থাকছে না।
বারবার গা লেগে যাচ্ছে। কেমন
অপরাধ বোধ হচ্ছে।
.
একটা খোলামেলা জায়গা পেয়ে
তিথি রিকশা থামালো।নামতে
পেরে স্বস্তি লাগলো।
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর তিথি
বলল..
- আমি আসলে প্রথমে বুঝতে পারি নি
ভালবাসা কিরকম হয়। তাই হয়তো
ঠিকমতো ভালবাসতে পারি নি
তোমাকে।তারপর তোমার ফেসবুকে
রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর
মামা সেটা দেখে খুব বকেছিলেন।
আমি ভয় পেয়ে সম্পর্ক বাদ দিয়ে
দিলেও ইচ্ছা ছিল খুব ভাল বন্ধু আমরা
থাকবো।কারণ তোমাকে আমি
প্রত্যেকদিন চাই, প্রতি মুহুর্তে চাই।এরকম
মনে হয়। কিন্তু আমি বুঝি নি তখন
তোমার দিকটা। নিজের মতো
ভেবেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
.
তিথি একসাথে কথাগুলো বলল। বলে
মাথা নিচু করে রইলো। আমি শুধু আচ্ছা
বলে চুপ হলাম।তিথি বলল..
- ভালবাসতে শিখে গেছি। কেউ
বাধা দিলেও ভয় পাবো না আর।
বলে অন্যদিকে মুখ নিয়ে রাখলো।
- বুঝিনি।
- না বুঝার কিছু বলিনি।আচ্ছা থাক।
চলো বাড়ি যাই।
.
রাতে ফেসবুক ঢুকে তিথির ম্যাসেজ
পেলাম," আমি তোমাকে চাই।"
তিথির বিকালের কথাবলার ধরণ আর এই
ম্যাসেজের ধরণ দেখে আমি বিভ্রান্ত
হয়ে যাচ্ছি।আসলে তিথি কি চায়।
আবার ভালবাসবে আমাকে!
সিন করে রেখে দিলাম। গ্রুপ থেকে
লেফট নিলাম। সাথে সাথে তিথি এড
দিল। ইনবক্সে আবার ম্যাসেজ দিলো, "
সরি বলেছি তো বিকালেই। আবার
বলছি সরি সরি। ক্ষমা করে এক হওয়া
যায়না?
- না যায়না।
এইটুকু বলে লগ আউট মেরে দিলাম। ভাল
লাগে না এইসব ন্যাকামি।
.
ক্লাসে বসে মোবাইল টিপছিলাম।
হঠাৎ করে এক ফ্রেন্ড এসে বলল টাকা
দিতে। কিসের টাকা বলতেই বলে
পিকনিকের! আমি বলি, "আমিতো নাম
দেই নি!"
তিথি এসে বলে," আমি দিয়েছি। তুমি
যাবে।"
আমি, "ওহ" বলে টাকা দেই। তিথি একটু
হেসে নিজের জায়গায় চলে যায়। একটু
রাগ উঠলো।
.
বাসায় এসে ফেসবুকে ঢুকতেই
নোটিফিকেশন বক্সে ঝড়! দেখলাম
তিথি রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস
দিয়েছে আমাকে ট্যাগ করে! আমার
এবার বেশ অস্বস্তি লাগছে। তিথিকে
ফোন দিয়ে বললাম..
- এটা কি হলো?
- কেন ভাল লাগে নি?
- তোমার প্রাইভেসিতে প্রবলেম
হবেতো!
- তোমার হবে?
- না।
- সেখানেই ফুল স্টপ থাকো।
- ওকে।
- হুম।
.
ইচ্ছা করছিলো কয়েকটা ঝাড়ি দেই।
বলার ইচ্ছা, " বিশ্বাস যখন একবার
ভাঙ্গে তখন আর ঘরে উঠে না বা উঠতে
সময় নেয়। একবার ভালবাসতে পারো
নি আবার যে পারবে তার কি
গ্যারান্টি! আমিতো খেলনা নয়!
কিন্তু কেন যেন তিথিকে সেসব কিছু
কখনো বলতে পারি না।
.
আমার খুব লজ্জা লাগছে কলেজে
যেতে। সবাই পচাবে। যাব কি যাব না
করছি। তিথি ফোন দিয়ে বলে..
- কলেজে আসো?
- আজ আসবো না।
- বলছি আসতে!
- আচ্ছা।
.
রাগ নিয়ে কলেজ গিয়ে ক্লাসে
বসতেই ফ্রেন্ডরা অন্যভাবে
তাকাচ্ছে। বেশ অস্বস্তি লাগছে।
তিথির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একদম
স্বাভাবিক সে। সবার প্রশ্নের উত্তর
তিথি যথেষ্ট ঘুচিয়ে দিচ্ছে। আমাকে
প্রশ্ন করলে উত্তর দিব না ভেবে
তিথির দিকে তাকাতে তিথির
রক্তচক্ষু দেখে উত্তর দিলাম।
- থ্যাংক্স।
ক্লাস শেষে তিথির সাথে ফিরছি।
তিথি থ্যাংক্স বলায় অবাক চোখে
তাকিয়ে বললাম..
- কেন?
- অবশেষে মানলে!
- মানি নি তো। মন থেকে মানি নি।
প্যারাকে নিতে চাই না আর।
- আমি প্যারা?
.
উফ! প্যারা নিতে চাই না বলতে বলে
দিয়েছি প্যারাকে নিতে চাই না।
তিথি আগে আগে চলে গেল।
.
বাসায় এসে খেয়ে এফবিতে ঢুকলাম।
তিথিকে "সরি" বলে ম্যাসেজ সেন্ড
করলাম। সিন করে রিপ্লাই দিলো না।
কিন্তু গ্রুপে ঠিকই কথা বলছে। আবার
ম্যাসেজ দিবো দেখি তিথির আইডি
ডিএক্টিভ। ফোন দিয়ে মোবাইল অফ
পেলাম। সারাদিন অস্বস্তিকর অবস্থায়
কাটলো।
.
পরের দু'দিন প্রাইভেটে গিয়ে
তিথিকে না পেয়ে আর কলেজে যাই
নি। তিথির বাসা চিনি।কিন্তু কেন
যাব বুঝতে পারলাম না। গেলেও
ফ্যামিলির কেউ যখন বলবে কে? কেন?
তখন কি উত্তর দিব! এসব ভাবতে ভাবতে
সঠিক উত্তর না পেয়েই তিথিদের
বাসায় চলে আসলাম। তিথিদের
বাসায় শুধু তিথি আর ওর মা এখন।
তিথির বাবা,ভাই দোকানে আর
স্কুলে।
তিথির মা'কে তিথির সাথে দরকার,
আমি ও'র ফ্রেন্, বলে তিথির রুমে
আসলাম। এসে দেখি বই ঘুচাচ্ছে
ব্যাগে। তারমানে আজ কলেজ যাবে।
.
আমাকে দেখে স্বাভাবিক থাকলো।
বই ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হল।
আমাকে, "আস" বলে বের হল।আমি
সাথে সাথে বের হলাম। তিথির
সাথে চুপচাপ হাঁটছি। কিছুক্ষণ পর, "সরি"
বললাম। আরো পরে তিথি বলল..
- আমি আগেরমতো প্যারা নই শুভ্র।
বাসতে শিখেছি।
- হুম। ভুলে বলেছি। সরি
- এ কয়দিন খুব ভাল ছিলে তাই না?
জ্বালাই নি তোমাকে।
- ভাল থাকলে আসতাম না তোমার
বাসায়।
- এতোদিন পর এসে খুব খুঁজ নেওয়া হয়ে
গেল,তাইনা?
- আসলে ভয় পাচ্ছিলাম তোমাদের
বাসায় যেতে।
- হুম। আমাকে কি আরেকবার সুযোগ
দেওয়া যাবে?
- যাবে। একশোবার। কেন নয়?
তিথি আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো।
রিকশা পেয়ে দাঁড় করিয়ে তিথি
উঠে আমাকে ডাকলো। আমি উঠে একটু
সরে বসলাম।
কিছুক্ষণ চলার পর তিথি বলে
- আজও কি সরে বসবে?
আমি ইতস্তত করে আরেকটু পাশে যেয়ে
বসলাম।
- দূরত্ব রয়ে গেল তো।
আমি আরেকটু গিয়ে হাসলাম। তিথি
আমার হাতটা ধরলো। আমার শরীর
কেঁপে উঠলো। তিথি রিকশাচালককে
কলেজ রোডে না যেয়ে পার্কের
দিকে যেতে বলল।
আমি হ্যাঁ না কিছু বলতে পারলাম না।
তিথি আমার হাত জড়িয়ে ধরে
থাকাটা দেখে আবারো কেমন
কেমন লাগলো।
এই মেয়ে এবার সত্যি ভালবাসতে
শিখে গেছে। আগেরমতো আর
অবহেলা করে না। আমিতো এমন
দিনটাই চাই। এভাবে কেউ আমাকে
ভালবাসুক। আমার কেয়ার করুক।
এইরকমটাই চেয়েছিলাম। আগে যদি
তিথি বুঝতো তাহলে হয়তো এতোকিছু
হতো না।
তবে একটু মান, অভিমান, ভুল বুঝাবুঝির
পর যে ভালবাসা গড়ে উঠে সেটা
অনেক মজবুত হয়। আমাদেরটাও এইরকম
হবে, আমি জানি।
তিথির কাধে মাথা রেখে রিকশার
পথ চলে দেখতে লাগলাম....
লেখকঃকামরুল হোসেন

No comments

Powered by Blogger.