Header Ads

দুলাভাই

--আচ্ছা মিয়াদ আমি যদি তোমার দুলাভাই হই তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলো তো...??
--খুব খারাপ হবে ভাইয়া
.
চাচাতো ভাই এর মুখে এমন আশ্চর্যজনক উত্তর শুনে খানিকটা অবাকই হলাম।কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম কেন।
.
--খারাপ হবে কেন...???
--ভাইয়া তুমি আমাকে এমনি পড়ার জন্য অনেক বকাঝকা কর।পরে দুলাভাই হলে তো আরো বেশি বকা দিবা
.
ছেলেটার কথায় যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে।
.
--নাহ তখন আর বকা দিব না।তখন আদর করব
--নাহ ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোমতো চিনি।বিকেলে মাঠে খেলতে দেখলেই যেই বকা দাও আবার দুলাভাই হলে তো......
--থাক আর বলতে হবে না।অংক কর
.
মিয়াদকে থামিয়ে দিলাম।ছেলেটা মারাত্মক চালাক।পড়ে মাত্র ক্লাস সিক্সে।ব্যাপারটা বুঝতে হবে।কারণ বর্তমান যুগ।ছেলে-মেয়েরা অনেক আপডেট।
.
মিয়াদের বড় বোন লিয়া।এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।সম্পর্কে আমার ছোট চাচার মেয়ে।একই ফ্ল্যাটে থাকি আমরা।লিয়ারা থাকে দুই তলায় আর আমরা থাকি তিন তলায়।
লিয়া দেখায়-শোনায় মাশাল্লা অনেক সুন্দরী। ছোটবেলা থেকেই এই মেয়ে আমার সিরিয়াস লেভেলের ক্রাশ।
.
বিকেল বেলা মাঠের এক কোণায় বসে ছিলাম।সময় প্রায় ৫:১০।একটু পরেই মাগরিবের আজান দিবে।হঠাত পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল।পকেট থেকে বের করে দেখি লিয়ার ফোন।
.
--হ্যাঁ লিয়ানী বল
--তুমি আবার আমাকে লিয়ানী বলছ...???
--হ্যাঁ বললাম তো
--তোমাকে না মানা করছি এই নামে আমাকে ডাকবা না
--আমার তো বলতে বেশ ভালোই লাগে
--ঘোড়ার ডিম
--আচ্ছা কি জন্য ফোন দিছিস সেইটা বল
--বলছিলাম একটু ছাদে আসো না....!!
--একটু পরে তো আজান দিবে।এখন ছাদে কেন আসতাম...???
--আরে আগে আসোই না
--আচ্ছা তুই পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর।আমি আসছি
--আচ্ছা জলদি আসো
.
হঠাত এই সন্ধ্যাবেলা ছাদে যেতে বলল কেন বুঝলাম না।যদিও আমি ছাদে তেমন একটা যাই না।খুব কম যাই।মাসে দু একবার।এখন যেহেতু লিয়া যেতে বলেছে সেহেতু না গিয়ে আর উপায় নেই।শত হলেও সে আমার.......!!!
.
মিনিট বিশেক পর ছাদে গিয়ে পৌঁছালাম।
.
--কি হলো এইটা...??
--কি আবার হবে...??
--তুমি বললা যে পাঁচ মিনিট লাগবে তোমার আসতে
--হ্যাঁ বলছি তো
--তো কত মিনিট লাগল তোমার আসতে...??
--সেইটা তো দেখি নি
--বিশ মিনিট হয়ে গেছে
--ওহহ।হতেই পারে
--তুমি না.....!!
--আচ্ছা কি জন্য ডেকেছিস সেইটা বল
--বলব...??
--হ্যাঁ বল
--সত্যিই বলব...??
--আরে ভাই বল না
.
লিয়া কিছুটা সময় দম নিয়ে বলে উঠল
.
--ভাইয়া কাল আমার এক ফ্রেন্ড এর বার্থডে পার্টি।তুমি একটু আমার সাথে যাবে....??
.
কথাটা শুনে কিছুটা সময় চিন্তা করলাম।এই একটা সুযোগ।মিস করা যাবে না কিছুতেই।রাজী হয়ে যাই।
.
--আচ্ছা ঠিকাছে আমি যাব
--থ্যাংকস ভাইয়া।লাভিউ
--সত্যি...!!
--তোমার মাথা....!!
.
বলেই লিয়া নিচে নেমে গেল।যাই আমিও ঘরে চলে যাই।
.
পরেরদিন বিকেলে....
.
--ভাইয়া তুমি রেডি...??
--হ্যাঁ রেডি।
--আচ্ছা বাইরে আসো
.
বাইরে বের হয়ে খানিকটা চমকে গেলাম।কি অদ্ভুত ব্যাপার.....!! লিয়াও নীল কালারের ড্রেস পড়েছে আর আমিও।নীল শার্ট,নীল প্যান্ট,নীল লোফার....!! আমার সবকিছুই নীল কালারের....!!
.
--আসিফ ভাইয়া.....!!
--হ্যাঁ.....!!
--তুমি আর আমি......!!
--একই কালারের ড্রেস দুইজনের
--যে কেউ দেখলে বলবে আমরা কাপল
--আসলেই তো তাই
--মানে...??
--আমরা তো কাপলই
.
লিয়া কিছুই বলল না।শুধু আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ল।
.
বার্থডে অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেছে।ভাগ্যিস গাড়িটা সাথে করে নিয়ে গেছিলাম।নাহলে এত রাতে কিভাবে যে বাসায় আসতাম আল্লাহ জানে....!!!
.
গাড়ির ভিতরের দৃশ্যটা অনেকটা নাটকীয় ছিল। লিয়া তখন সম্পূর্ণ ঘুমে আচ্ছন্ন। লিয়ার মাথাটা ছিল আমার কাঁধে।সেই মুহূর্তটা যে আমার কাছে ঠিক কেমন ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
.
--লিয়া....লিয়া....
--হুম....(ঘুমের ঘোরে)
--বাসায় চলে আসছি।এইবার গাড়ি থেকে নেমে পড়
--আমার খুব ঘুম পেয়েছে।আমি এখানেই ঘুমাব
--নিজের রুমে গিয়ে শান্তিমত ঘুমা।এখন চল তো
.
কোনোরকমে লিয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দো-তলায় দিয়ে এসেছি।বেচারি ঘুমের ভিতরে মারাত্নকভাবে আচ্ছন্ন ছিল।
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমিও দিলাম এক ঘুম।
শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত।এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসটা হচ্ছে ঘুম।
.
সকালে ঘুম ভাঙল লিয়ার ডাকাডাকিতে।
.
--কিরে কি হয়েছে...?? এত সকাল সকাল ষাঁড়ের মত চিল্লাচিল্লি করছিস কেন....??
--আরে কি হয় নি সেটাই বলো
--আরে কি হয়েছে বলবি তো
--আব্বু আম্মু, কাকু কাকির সাথে কি যেন কথা বলছে
--ওহহ এটা।বলতেই পারে স্বাভাবিক ব্যাপার
--আরে চলো না গিয়ে শুনি
--ওই তুই যা তো এখান থেকে।ঘুমাতে দে আমাকে
--আরে ভাইয়া চলো না প্লিজ
--লিয়া.....(চোখ বড় করে)
--আরে ভাইয়া চলো না দেখে আসি প্লিজ প্লিজ
--উফফফ একটু শান্তিও দিবি না তুই আমাকে।
--আগে চলো তো
.
অত:পর ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম আব্বুর রুমের সামনে।সাথে লিয়া।আব্বুর রুমের দরজাটা হালকা লাগানো।তবে ভিতরে কি বলছে তারা তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
.
--দেখ ছোট,আসিফের অনার্স কমপ্লিট হলেই আমি কাজটা সেরে ফেলতে চাই।
--আমিও এটাই চাই ভাইজান
--শুভ কাজে দেড়ি করতে নেই
--হ্যাঁ আমিও সেটাই বলছি
.
আব্বু ঠিক কি বলতে চাইছে তার কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।আসলে তাদের প্ল্যানটা কি....???
.
--ওই লিয়া....
--কি..???
--আব্বু কি বলছে রে....??
--আমি কিভাবে বলব....!!
.
তারপরেই শুনতে পেলাম তাদের আসল মতলবটা কি......!!
.
--যাক ভালোই হয়েছে।ছিলাম বড় ভাই। এখন আবার সাথে যোগ হলো বিয়াই হাহাহা
--হাহাহা
.
ওরে সালা এতক্ষনে বুঝতে পেরেছি আসলে তারা কি নিয়ে কথা বলছিল।
লিয়ার দিকে একটু তাকালাম।লিয়ার দিকে তাকাতেই সে হাসি দিয়ে সোজা ছাদের দিকে দৌড়।
.
লিয়া ছাদে চলে যাবার পর আমিও ছাদে যাবার জন্য পিছনের দিকে ফিরে তাকালাম।তখনই বেঁধে গেল মহা এক বিপদ।
.
--দুলাভাই.....
--কিরে মিয়াদ তুই এইখানে.....!!
--দুলাভাই আমি কিন্তু সবই শুনেছি
--তো কি হয়েছে...??
--১০০ টাকা দাও
--টাকা দিয়ে তুই কি করবি....??
--কোণ আইসক্রিম খাব
--এখন টাকা নাই।যা তো এখন
--তুমি না আমার দুলাভাই.....!!
--তো...???
--তাই এখন এই ১০০ টাকা আমি তোমার থেকে পাওনা
--কোণ আইসক্রিম ৪০ টাকা।তুই ১০০ দিয়ে কি করবি...??
--ও মা আমি কি একাই খাব নাকি সাথে গার্লফ্রেন্ডকেও খাওয়াতে হবে
.
মিয়াদের কথা শুনে বোকাবনে চলে গেলাম।এইটুকু একটা বাচ্চা ছেলে তার নাকি আবার গার্লফ্রেন্ডও আছে।আপডেট পোলাপাইন।বুঝা উচিত ছিল
.
আর কিছু না বলে মিয়াদকে ১০০ টাকা দিয়ে ভাগিয়ে দিলাম।অত:পর হাঁটা শুরু করলাম ছাদের দিকে।
লিয়া ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল।হাঁটতে হাঁটতে লিয়ার সামনে গেলাম।
সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।অনেকক্ষন চুপ থাকার পর লিয়াই মুখ খুলল
.
--আসিফ
.
বাপরে বাপ.....!! এতদিন বলত আসিফ ভাইয়া আর এখন শুধু আসিফ.....!!
.
--হ্যাঁ....!!
--বাবা এইটা কি করল....??
--কি করল....???
--বলব...???
--হ্যাঁ বল
--সত্যি বলব....??
--আরে হ্যাঁ বল
--বলছি কিন্তু..
--ধরে রাখছি....!!
--বাবা শেষ পর্যন্ত.....
--কি...??
--শেষ পর্যন্ত একটা গাধার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করল.......
--কিহহ.....??? তবে রে.....
.
বলেই লিয়া হাসতে হাসতে সোজা নিচে দৌড়....!!
.
.
ছোটবেলা থেকেই যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আসছি,যাকে নিয়ে আমার এত জল্পনাকল্পনা তাকেই যদি আমার মনের রাজকুমারী হিসেবে পাই তাহলে সেখানে আমার থেকে খুশি কি আর কেউ হবে.....??? মনে হয় না।

1 comment:

Powered by Blogger.