তুই আমার ছোট্ট বোন
----আপু আসতে পারি?
----ভাইয়া আমার ঘরে আসার জন্য অনুমতি
লাগবে বুঝি?
----লাগবেই তো, এখন তুই বড় হয়ে গিয়েছিস না?
----বাদ দেও তো?
----আচ্ছা।
----কিছু বলবে মনে হচ্ছে?
----হুম, তোর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
----কি হয়েছে ভাইয়া,
আজ এভাবে কথা বলছো?
----তোর একটা মতামত এর প্রয়োজন ছিলো?
----কিসের মতামত?
----গতো ৩ দিন আগে একটা তোর জন্য বিয়ের
সম্মদ্ধো এসেছিলো।
----তারপর?
----পরে আমি ওদের সম্পর্কে সব খোজ খবরও
নিলাম।
----তার পর?
----সব দিক থেকে ভালো ওরা, তেমন
ছেলেটাও,
এখন যদি তোর অমত না থাকে তাহলে ওদের
আমরা হ্যা বলতে পারি?
----না আমি এই বিয়ে করবো না।
কখনো না?
----আচ্ছা রাগ করিস না আমার বোনটি আচ্ছা
থাক না করে দেই।
----ভাইয়া তুমি কি ভেবেছিলে আমি এমন কথা
বলবো?
----মানে?
----তোমার মতে আমি অমত দেবো ভাবলে কি
করে ভাইয়া?
----না রে তুই বড় হয়েছিস এটা তোর সারাজীবন
এর ব্যাপার প্রয়োজন তো আছেই।
----না নেই,
আমি জানি তুমি বা মা বাবা আমার ভালোর
জন্য করবে।
তোমরা যেটা বলবে আমি সেটাই করবো
ভাইয়া।
----আমি জানতাম তুই এই কথায় বলবি।
----জানতে যখন তাহলে জিঙ্গাসা করলে কেন?
----আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে আর করবো না,
এই কান ধরছি আপু?
----ভাইয়া ছাড়ো বলছি আমার কান?
নিজের টা ধরো? আমার কান না।
----ওহ্, ছরি,, ভুলে গিয়েছিলাম ওটা আমার না।
নে ধরলাম।
----এতেও হবে না?
----তাহলে এখন কি করতে হবে আমার
তিথীমনির জন্য?
----আইস্ক্রিম খাবো এনে দেও?
----এখন রাতে খেতে নেই,, সকালে এনে
দেবো?
----না এখনি দেও না হলে কান্না করবো কিন্তু?
----ওলে ওলে ওলে, আমার তিথীমনি কান্না
করবে রে।
----ভাইয়া দেবে কি না বলো?
----আচ্ছা আনছি।
----এইতো আমার লক্ষী ভাইয়া।
----যেটা বলবে সেটাই করতে হবে,,, (মাথাই
ছোট্ট একটা গাট্টা দিয়ে বললাম।)
তিথীর ঘর থেকে বের হয়ে ওর জন্য আইস্ক্রিম
আনতে গেলাম।
এনেও দিলাম ওকে একটা আর ওর ভাবিকে
একটা।
যাক তিথীও রাজি হয়ে গেলো এবার বাবাকে
বলি তাহলে ওদের, সুখবর টা দিতে।
ছেলে পক্ষকে জানিয়ে দিলাম আমারা
রাজী কিন্তু তিথীকে পড়া শোনা শেষ
করাতে হবে।
ওরাও রাজী সব কিছু মানার জন্য বিয়ের দিন
ঠিক হলো ১০ দিন পরে।
সেই ছোট্ট তিথী আজ কতো বড় হয়ে গিয়েছে
চোখের পলকে মনে হলো।
সুখের সময় গুলো যে তাড়াতাড়ি যায় এটার
প্রমান পেয়ে গেলাম আমি আবারো।
বিয়ের পরে তিথী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
ওহ্, গো এতো কস্ট হচ্ছে কেনো?
কিসের এতো কষ্ট হচ্ছে?
আমি যে সহ্য করতে পারছিনা ?
কিন্তু কিছুইযে করার নেই,
মেয়ে হয়ে জন্মেছে পরের বাড়িতে যেতে
দিতেই হবে তাকে।
তিথীর বিয়ের দিন আর ২ দিন বাকি আছে।
আমার আদরের ছোটো বোনের বিয়ে,কোনো
কিছুতে কমতি হবে না।
আমার আদরের বোন তিথী মনির বিয়ে সবাই
দেখবে,
অবাক হবে আমার তিথীর বিয়ের আয়োজন
দেখে।
বাজিতে বাজিতে ছড়িয়ে যাবে দুনিয়ার বুকে
আজ,
হৃদয়ের জান পাখীটার বিয়ে গো।
রাত পওয়ালেই তিথীর বিয়ে।
তিথীর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
দোরটা দেওয়াছিলো।আমি চুপটি করে পাশেই
দাড়িয়ে আছি।
তারপর,,,,
----ভাইয়া বাইরে দাড়িয়ে কেনো ভেতরে
আসবা না?
----তুই কি করে জানলি আমি এখানে আছি?
----কিযে বলো না ভাইয়া তুমি।
----কেন কি বললাম আমি?
----আচ্ছা আমি তোমার কি?
----তুই আমার জীবন, আমার কলিজার সম্পর্ন
অংশ তুই।
----ঠিক তুমিও আমার তাই ভাইয়া, তাইতো মন
বলে দেই তুমি কোথায় আছো।
তুমি আসলে আমি বুঝতে পারি গো ভাইয়া।
----হুঁ হুঁ হুঁ,,,
----ও ভাইয়া কাঁদো কেন ভাইয়া?
----
----আবার কাঁদে চুপ করো বলছি হুঁ হুঁ,,,,
----কাল আমাকে ছেড়ে যখন চলে যাবি, আমি
কি করে থাকবো রে বোনটি?
----কে বলেছে তোমাকে ছেড়ে আমি চলে
যাবো, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো
না ভাইয়া কোথাও না।
----তাই বললে কি আর হয় যেতে তো হবেই।
বলতেই আমাকে ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে
কাঁন্না করতে লাগলো পাগলী না আমার।
কি করবো আমি?
কি বলবো আমি?
কি বুঝাবো ওকে?
কে ভুঝাবে আমাকে?
দুই ভাইবোন এক সাথেই কাঁন্না জুড়ে দিলাম
আমারা।
আমাদের কান্না শুনে পাশের ঘর থেকে মা
আর তিথীর ভাবিও চলো আসলো।
এসেই আমাদের বুঝ দিতে শুরু করলো ওরা দুই জন
মিলে।
আমাদের দুইজন কে।
ঐ রাতে আর ঘুম হলো না আমি সারা রাত
জেগে জেগে তিথীর ছোটো বেলার কথা
গুলো মনে করেছিলাম।
এভাবে রাতের অধার ভেঙ্গে সূর্যের নতুন
আলোতে ভরে উঠলো সকাল টা।
কেনো উঠবে না হুহ।,
আজ যে আমার তিথীমনির বিয়ে গো
আমার আদরের ছোটো বোন এর বিয়ে।
পুরো বাড়িতে হয়চয়, আনন্দে মেতে আছে
সবাই।
মহল্লাবাসিরাও কতো খুসি আজ।
সবাই কতো কিছু দিয়েছে আমার তিথীকে।
মহল্লার সবাই যে ওকে খুব ভালোবাসতো,
কতো না যন্ত করতো তিথীকে।
চারি দিকে বাজির শব্দ, বাড়ি ভর্তি আত্নীও
রা,মহল্লার সকল কে দাওয়াত দেওয়াছিলো
বিয়েতে।
কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি আমি,
তিথীর বিয়ের জন্য অনেক টাকা দরকার বলে
ওর অজাতেই নিজের নামের করা কিছু অংশ
জমি বিক্রি করে দিয়েছি।
এটা যদি ও জানতো এই বিয়ে কখনো করতো
না।
যাক সে সব কথা,
তিথীকে বিয়ের গোসল করানো হয়ে গেলো।
তিথীকে এবার লালা বেনারসি তে সাজানো
হবে একটু পর।
ঘরে তিথীকে নিয়ে সবাই কতো মজা করছে,
এদিকে আমার জানটা ছিড়ে যাচ্ছে ।
কি করে সামলাবো আমি এ কস্টটা।
সহ্য করতেই হবে,
করতেই হবে আমার,
আমি পারবো,
পারতে হবে আমার?
সবাই নতুন নতুন পোসাক,
ও কতো সুন্দর করে না সেজেছে আর সবাই।
এখন অধিক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা বরের জন্য।
কিছু ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে আছে ফুল নিয়ে
গেটের সামনে।
বাড়ির ছেলে মেয়েরা দাড়িয়ে আছে গেটের
সামনে।
বর এর কাছ থেকে গেট ধরার টাকা আদায়
করার জন্য।
সবাই হাসি আনন্দে মেতে আছে।
আজ আমি তিথীর সামনে বেশী গেলাম না,
কারন কষ্টটা বাড়বে বেশী তাই।
কিন্তু ব্যপার কি, যহোরের আজান দেচ্ছে
কিন্তু বরের গাড়ির কোনো খবর নেই।
কি হলো রাস্তাঘাটে সমস্যা হলো না তো
আবার?
এতো দেরি তো হওয়ার কথা না?
মনের ভিতরে কেমন কুঁডাকছে আমার?
ছি আমি এসব কি ভাবছি?
কিন্তু কি হলো তারা এতো লেট কেনো করছে?
মহল্লার মুরুব্বী গন জিঙ্গাসা করতে লাগলো
এদিকে।
কি জবাব দেবো আমি বুঝতে পারছিনা।
নাহ্, আর লেট করা ঠিক হবে না একটা ফোন
দিতেই হবে ওদের।
ফোন টা হাতে নিতেই বরের বাড়ি থেকে কল
আসলো...
----হ্যালো?( বরের বাব)
----আসসালামু ওয়ালাইকুম?( আমি)
----ওয়ালাইকুম আসসালাম।
----জ্বি, আপনারা কোথায় এখনো, রাস্থাই
কোনো সমস্য হলো নাকি? আপনাদের দেরি
হচ্ছে যে?
----সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু আমরা আসছি না।
----হা হা হা,ভালো মজা করতে পারেন।
----আমি কোনো মজা করছি না সত্যি আমরা
আসছি না।
----এই সব কি বলছেন আপনি,? আপনি ভেবে
দেখেছেন কি বলছেন আপনি?
----আমি ভেবেই বলছি কথা টা আমি ঐ কুড়িয়ে
পাওয়া মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে
দেবো না।
----.....(আমি নিরব হয়ে গেলাম)
----তোমরা আমাদের সাথে চিটারি করতে
চাইছিলে?
কার না কার পাপের ফল তুমি ঘরে তুলে এনে,
এখন আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছিলে
তোমারা?
----.......(নিরব)
----তোমার জানতে একটা জানতে পারলে
আমরা রাজি হতে নাও পারি তাই চুপিচুপি সব
কিছু করতে চাইছিলে?
একটা কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে,
যার কোনো পরিচয় নেই,
যার মা বাবার কোনে ঠিক নেই তাকে আমারা
ঘরের বউ করবো না তাই এই বিয়ে হচ্ছে না।
তুমি তোমার কুড়িয়ে পাওয়া বোন কে কে
তোমার কাছেই পুসে রাখো ভালো থাকবে
রাখি।
আমি নিশ্চুপ হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।
আমি যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে
ফেলেছিলাম।
কি বললো ওরা এইসব?
কি শোনালো আমাকে ওরা?
এখন আমার বোন টির কি হবে?
সবাই ওকে অপয়া অলক্ষী বলবে?
লোকে জানবে কেনো, কি কারনে ওর বিয়ে
হলো না?
কি জবাব দেবো আমি?
তিথী আমার কুড়িয়ে পাওয়া বোন বলে?
কি করবো আমি, কি করবো আমি এখন, কি করে
বোঝাবো তিথীকে?
সবাই আমকে ধরে একটা চেয়ারে বসালো
আমার শরীর এর বল হারিয়ে ফেলেছিলাম।
সবাই জিঙ্গাসা করছে কি হয়েছে, কি হয়েছে
হৃদয়?
আমি বোবার মতো অপলক তাকিয়ে আছি এক
দিকে করে।
হইচয় শুনে তিথী ঘর থেকে দোঁড়ে আমার
কাছে এসে পড়ে।
বলে,
কি হয়েছে ভাইয়া তোমার?
ও ভাইয়া কথা বলছো না কেনো?
কি হয়েছে বলো না ভাইয়া?
আমি শুধু দেখছিলাম,হঠ্যাৎ তিথী আমার
মোবাইল টা নিলো।
তার পরে ও কল রেকড চেক করতে থাকে।
আমার মোবাইল এ অটো কল রেকড চালু করা
ছিলো তিথীর জন্য।
ওর সাথে যখনি কথা বলতাম রেকড করে আবার
শুনতাম।
এর পর তিথী ঐ রেকড টা শুনলো সবার মাঝেই।
ওর চোখের পানি দেখে আমার হুস ফিরলো
তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে
আছাড় মারলাম।
কিন্তু লাব হলো না, সব কিছু শুনে ফেলেছে ও।
তিথীর দুই চোখের অশ্রু গুলো বৃষ্টির মতো
পড়তে থাকে।
আমি তিথীকে কাছে নিয়ে বলি,
----কিছু হয় নি আপু, ওরা মিথ্যা বলেছে সব?
ওরা বিয়ে করতে চাই না বলে এই মিথ্যা গুলো
বলেছে আপু কাঁদিস না, কাঁদিস না রে বোনটি
আমার?
----ভাইয়া আমি তোমার বোন না?
----ঐ চুপ কে বলেছে তুই আমার বোন না,
তুই আমার বোন, শুধুই আমার বোন।
----মা গো, আমি তোর গর্ভের সন্তান না মা?
----.........(চুপ) মা)
----আমাকে তুমি, কুড়িয়ে পেয়েছিলে ভাইয়া?
----চুপ কর বলছি তুই, আর একটা কথা বলবি না
বলে দিলাম।
----বলো না ভাইয়া, তোমারা আমার আসল মা
বাবা,ভাইয়া কেও না,?
----ঐ মা, তুই তিথীকে চুপ করতে বলিস না কেন,
চুপ করতে বল না ওকে।
----ভাইয়া ও ভাইয়া, আমি সত্যি তোমার ছোট
বোন না ভাইয়া?
----তুই আমর বোন।
তুই শুধু আমারি ছোট্ট বোন।
বলেই ওকে জড়িয়ে ধড়লাম তিথীকে।
তিথী আমাকে জড়িয়ে ধরে উচ্চোসরে কান্না
করতে লাগলো।
কোনো মতে তিথীকে আমি চুপ করাতে
পারছিনা
তিথীর কান্না দেখে ওখান কার সবার চোখে
পানি চলে এসেছে।
একটু আগে যে বাড়িটা আনন্দে,মেতে ছিলো,
মুহূর্তে একটা শসানে পরিনতো হলো।
হাসি খুসিতে মেতে থাকা বাড়ি টা,
কান্নাতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
এর পর তিথীর বিয়েটা আর হলো না ভেঙ্গে
গেলো।
যে যার বাড়িতে সবাই চলে গেলো।
তিথী ঐযে ঘরে ঢুকে বসে আছে, আর বের হলো
না।
সারাদিন কিছুই খাইনি মেয়েটা ,
মন খারাপ করে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে
আছে।
নিজেও খাইনি।
বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে।
দিন পেরিয়ে জ্যোৎস্না নিয়ে নীল আকশে
চাঁদের দেখা মিললো।
আজ কের রাত টা কতো সুন্দর লাগছে।
আজ এই জ্যোৎস্না ময় রাতে আমার বোনটির
জিবনটা নতুন করে সাজানোর কথা ছিলো।
কিন্তু ভাগ্য তার সহ্যয় হলো না আমার কলিজা
টুকরা বোনটির।
বাইরে মাটিতে বসে আছি একা একা।
তিথী এসে চুপচাপ আমার পাসে বসলো।
বসে আমার কাঁধে মাথা দিয়ে, দুই হাত দিতে
আমার ডান হাত এর কনুইএর উপরে ধরলো।
আমি তিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,
কিছুক্ষন পর আমার কাঁধ টা ভেজা অনুভব
করলাম।
বুঝতে বাকি রইলো না, এটা বৃষ্টির পনি নাগো,
এতো আমার কলিজার টুকরা বোনটির চোখের
পানি গো।
-----ঐ পাগলী কাঁদছিস কেনো রে?
-----কই না তো আমি কাঁদছিনা ভাইয়া।
-----চিন্তা করিস না বোন আমার এই থেকে
তোর আরো ভালো পরিবারে বিয়ে দেবো
দেখে নিস।
-----হুমম, হবে তো তুমি আছো না ভাইয়া হবেই।
-----হুম,,,তাহলে কাঁদছিস কেন?
-----এটা ভেবে কাঁদছি আমি তোমার রক্তের
বোন না হয়েও আমার কোনো দিক থেকে তুমি
কম রাখোনি, হয় তো সব সময় বেশী বেশী
দিয়েছো।
-----এক চড় মারবো তোর,, এই কথা বললে,
তুই আমার বোন শুধুই আমার বোন, তুই এই বাড়ির
মেয়ে বুঝলি। আর কখনো যেনো না শুনি আমি?
----- ভাইয়া,, কিন্তু সত্যি টা আর কতো দিন
ঢেকে রাখবে ভাইয়া?
-----যতো দিন তোর এই ভাইয়ার ভিতরে জান টা
আছে ততো দিন ও মরনের পরেও রাখবো, বোন
আমার তবুও এমন কথা বলিস না?
-----ভাইয়া তোমাকে ছেড়ে থাকবো কি করে
আমি?
-----মানে কি এর?
-----আমি যদি হারিয়ে যায় তাহলে তুমি আমার
খুজবে না কিন্তু ভাইয়া।
-----কি সব পাগলরে মতো কথা বলছিস তুই, কই
যাবি হা?
-----কিছু না ভাইয়া, চলো ঘরে চলো বাইরে আর
থেকো না।
-----আচ্ছা চল,,
-----ভাইয়া খুব খুদা পেয়েছে একটু গালে তুলে
খাইয়ে দেবে আমার?
চোখে অশ্রু নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ
জানালাম ওকে।
তার পর দুই ভাই বোন মিলে খাবার টেবিলে
বসে আছি।
মা খাবার দিলো আর পাসে বাবা মা আর
তিথীর ভাবিও বসে আছে।
তিথী আমার দিকে মুখ ফিরে তাঁকিয়ে আছে
আমার মুখের দিকে।
আমি ভাত মাখিয়ে আমার আদরের বোন টা
কে খাইয়ে দিচ্ছি।
সেই ছোট্ট বেলার মতো বসে আছে আর
খাচ্ছে,
চোখে ওর অশ্রুর কনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বের
হবে বলে।
কয়েক গাল খাওয়ানোর পরে,
তিথী বললো,
ভাইয়া আজ আমি তোমার এক গাল খাইয়ে দেই
ভাইয়া?
আমি মাথা নেড়ে বললাম দে।
ও এক নলা ভাত নিয়ে আমার গাল তোকাত
আনতে গিয়ে হাতটা হিমশীতল ঠান্ডার মতো
কাঁপছিলো।
কোনে রকম গালে দিয়ে জোর করে কেঁদে
দিলো।
মা, আর ওর ভাবি ওকে ধরে আছে।
আমি ওখান থেকে উঠে চলে গেলাম আর সহ্য
হচ্ছে না আমার বেনটির কান্না,
রাতে ঘুমানোর আগে আমাকে বললো,
ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসি গো ভাইয়া,
খুব মা বাবার থেকেও তোমাকে আমি বেশী
ভালোবাসি।
বলেই দরজা দিয়েদিলো।
আমি আর কিছু বললাম না। মন খারাপ বলে এমন
করছে।
কাল থেকে সব আগের মতো হয়ে যাবে,
ঐ রাত টা কিছটা ঘুম হয়েছিলো আমার।
সকাল হয়ে গেলো, অনেক বেলা হয়ে
গিয়েছে।
আজ কেও ডাক দিলোনা তো?
হঠ্যাৎ তিথীর কথা মনে আসলো ,
এক দোড়ে চলে গেললাম ওর রুমের দরজাতে
গিয়ে ডাক দিলাম
-----তিথী, তিথীমনি, অনেক বেলা হয়ে গেছে
উঠ?
ওপাস থেকে কোনে আওয়াজ আসলো না।
বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে আমার,
চিন্তাতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,
আবার ডাক দিলাম তিথীমনি বলে তাও
কোনো খবর সাড়া পেলাম না।
জোরে ডাক দিলাম।, আমার ডাক শুনে সবাই
ছুটে আসলো।
এসেই কি হয়েছে কি হয়েছে বলে বলতে
থাকলো।
আমার মন আর ভালো বলছে না।
প্রতিবেশী এক কাকা চলে আসলো।
বললাম কাকা দরজা ধাক্কা লাগাও, আমার
ভালো লাগছে না,
এদিকে মা, তিথী মা তিথী মা বলে কেঁদে
ফেঁলেছে।
কি হলো আমার আমার বোনটির?
দুই জন মিলে দরজাটা অনেক কষ্টে খুলা সম্ভব
হলো,
কিন্তু সম্ভব হলে না আমার,
শরীর এর শক্তিবল ধরে রাখতে সম্ভব হলো না।
নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।
এটা আমি কি দেখছি?
এটা হতে পারে না?
আমাকে ফেলে যেতে পারে না ও?
খাটের পরে ঘুমন্ত ভাবে শুয়ে আছে আমার
জান টা,
কিন্তু জান টা যে আর রইলো না তার মাঝে।
চলে গেছে আমাকে একা ফেলে চলে গেছে
ও,
এই ভাই টাকে ফেঁলে চলে গেছে স্বার্থপর এর
মতো।
বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে আমার পাগলী
বোনটা।
মূহুর্তের মাঝে কান্নাকাটির ঢোল পড়ে
গেলো।
আমি খুব কষ্ট করে উঠে তিথীর কাছে যেতেই
ওর মাথার কাছে একটা কাগজ পেলাম,
হাতে নিয়ে পড়তে থাকলাম,
*ভাইয়া,
ও ভাইয়া আমি না একটা ভুল করেছি গো
ভাইয়া
।তোমাকে না বলে আমি দূরে চলে যাচ্ছি গো
ভাইয়া।
আমাকে তুমি বকবে না তো এর জন্য? বকলে
কিন্তু কান্না করবো হুহ,আর তার জন্য জরিমানা
আইস্ক্রিম দিতে হবে হি হি হি।
ও ভাইয়া আমি মনে হয় এই দুনিয়ার সব থেকে
ভাগ্যপতী গো, তোমার মতো একটা ভাইয়া
পেয়ে আমার জীবনটা ধন্য ভাইয়া। ভাইয়া
আমি তাদের কে হাজার সালাম জানাই, যারা
আমাকে ঐ ঝোপের মাঝে ফেলে রেখে
গিয়েছিলো।
আজ ওরা যদি না রাখতো, তো তোমার মতো
ভাইয়ার দেখা আমার হতো না, যে আমার
জীবনে এতোটুকু কষ্ট কি বুঝতে দেইনি। কোনো
জিনিসের অভাব রাখেনি। কোকিছুর অপূর্নতা
রাখেনি।ভাইয়া গো তুমি আমার জীবনের সব
থেকে আপন মানুষ গো ভাইয়া। ভাইয়া মা
বাবা না খুব ভালো গো আমাকে কতো আদর
করতো, মা আমার বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতো,
বাবা আমার ঘোড়া হয়ে আমার পিঠে নিয়ে
চড়াতো যখন তুমি থাকতে না। ভাইয়া আমি
তোমার রক্তের কেও না,আমি কোন পাপের
ফসল জানি না।কে আমার মা বাবা জানিনা।
কার গর্ভ থেকে এসেছি জানি না।আমার মতো
পাপ কোনো মানুষই জেনে শুনে ঘরে তুলবে না।
আর তার জন্য তোমারা বার বার মানুষ এর
কাছে লজ্জিত হবে আর এটা আমি কোনো
মতে মানতে পারবে না ভাইয়া।যারা আমার
রাস্থা থেকে কুড়িয়ে এনে, আদর যন্তো, স্নেহ
মায়া মমতা দিয়ে বড় করেছে তাদের কে
লজ্জিত হতে আমি দেখতে পারবো না। তাই
আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে গেলাম।
ও ভাইয়া কাঁদবে না কিন্তু বলে দিলাম?
কাঁদলে কিন্তু আমিও কেঁদে দেবো হুহ,? তুমি
কিন্তু আমার কথা শুনছো না ভাইয়া? আমিও
কাঁদবো হুঁ হুঁ হুঁ,,,, এবার হয়েছে তো। ও ভাইয়া
প্লিজ কেঁদোনা আমি তোমার জান না
তোমার জান হয়ে তোমার মাঝেই আছি
দেখো?
সব সময় ভালো থেকো ভাইয়া, এবার তোমারা
একটা বাচ্চা নিও ভাইয়া, আর যদি মেয়ে হয়
তাহলে নাম টা তিথী দিও তাহলে ওর মাঝেই
আমাকে পাবে গো। ভালো থেকো ভাইয়া ও
ভাইয়া শোনো, একটু এদিকে তাঁকাও,
ভালোথেকো ভাইয়া বিদায় ভাইয়া,
ইতি তোমার আদরের ছোট্ট বোন তিথীমনি.....
চিঠিটা পড়ার পরে হাওমাও করে কেঁদে
দিলাম তিথী মনি বলে।
বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার,
তিথী, তিথী রে
ওরে তিথী তুই আমার বোন রে,
কোনো রাস্তার মেয়ে না তুই?
তুই আমার বোন রে তিথী।
----ভাইয়া আমার ঘরে আসার জন্য অনুমতি
লাগবে বুঝি?
----লাগবেই তো, এখন তুই বড় হয়ে গিয়েছিস না?
----বাদ দেও তো?
----আচ্ছা।
----কিছু বলবে মনে হচ্ছে?
----হুম, তোর সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।
----কি হয়েছে ভাইয়া,
আজ এভাবে কথা বলছো?
----তোর একটা মতামত এর প্রয়োজন ছিলো?
----কিসের মতামত?
----গতো ৩ দিন আগে একটা তোর জন্য বিয়ের
সম্মদ্ধো এসেছিলো।
----তারপর?
----পরে আমি ওদের সম্পর্কে সব খোজ খবরও
নিলাম।
----তার পর?
----সব দিক থেকে ভালো ওরা, তেমন
ছেলেটাও,
এখন যদি তোর অমত না থাকে তাহলে ওদের
আমরা হ্যা বলতে পারি?
----না আমি এই বিয়ে করবো না।
কখনো না?
----আচ্ছা রাগ করিস না আমার বোনটি আচ্ছা
থাক না করে দেই।
----ভাইয়া তুমি কি ভেবেছিলে আমি এমন কথা
বলবো?
----মানে?
----তোমার মতে আমি অমত দেবো ভাবলে কি
করে ভাইয়া?
----না রে তুই বড় হয়েছিস এটা তোর সারাজীবন
এর ব্যাপার প্রয়োজন তো আছেই।
----না নেই,
আমি জানি তুমি বা মা বাবা আমার ভালোর
জন্য করবে।
তোমরা যেটা বলবে আমি সেটাই করবো
ভাইয়া।
----আমি জানতাম তুই এই কথায় বলবি।
----জানতে যখন তাহলে জিঙ্গাসা করলে কেন?
----আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে আর করবো না,
এই কান ধরছি আপু?
----ভাইয়া ছাড়ো বলছি আমার কান?
নিজের টা ধরো? আমার কান না।
----ওহ্, ছরি,, ভুলে গিয়েছিলাম ওটা আমার না।
নে ধরলাম।
----এতেও হবে না?
----তাহলে এখন কি করতে হবে আমার
তিথীমনির জন্য?
----আইস্ক্রিম খাবো এনে দেও?
----এখন রাতে খেতে নেই,, সকালে এনে
দেবো?
----না এখনি দেও না হলে কান্না করবো কিন্তু?
----ওলে ওলে ওলে, আমার তিথীমনি কান্না
করবে রে।
----ভাইয়া দেবে কি না বলো?
----আচ্ছা আনছি।
----এইতো আমার লক্ষী ভাইয়া।
----যেটা বলবে সেটাই করতে হবে,,, (মাথাই
ছোট্ট একটা গাট্টা দিয়ে বললাম।)
তিথীর ঘর থেকে বের হয়ে ওর জন্য আইস্ক্রিম
আনতে গেলাম।
এনেও দিলাম ওকে একটা আর ওর ভাবিকে
একটা।
যাক তিথীও রাজি হয়ে গেলো এবার বাবাকে
বলি তাহলে ওদের, সুখবর টা দিতে।
ছেলে পক্ষকে জানিয়ে দিলাম আমারা
রাজী কিন্তু তিথীকে পড়া শোনা শেষ
করাতে হবে।
ওরাও রাজী সব কিছু মানার জন্য বিয়ের দিন
ঠিক হলো ১০ দিন পরে।
সেই ছোট্ট তিথী আজ কতো বড় হয়ে গিয়েছে
চোখের পলকে মনে হলো।
সুখের সময় গুলো যে তাড়াতাড়ি যায় এটার
প্রমান পেয়ে গেলাম আমি আবারো।
বিয়ের পরে তিথী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
ওহ্, গো এতো কস্ট হচ্ছে কেনো?
কিসের এতো কষ্ট হচ্ছে?
আমি যে সহ্য করতে পারছিনা ?
কিন্তু কিছুইযে করার নেই,
মেয়ে হয়ে জন্মেছে পরের বাড়িতে যেতে
দিতেই হবে তাকে।
তিথীর বিয়ের দিন আর ২ দিন বাকি আছে।
আমার আদরের ছোটো বোনের বিয়ে,কোনো
কিছুতে কমতি হবে না।
আমার আদরের বোন তিথী মনির বিয়ে সবাই
দেখবে,
অবাক হবে আমার তিথীর বিয়ের আয়োজন
দেখে।
বাজিতে বাজিতে ছড়িয়ে যাবে দুনিয়ার বুকে
আজ,
হৃদয়ের জান পাখীটার বিয়ে গো।
রাত পওয়ালেই তিথীর বিয়ে।
তিথীর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
দোরটা দেওয়াছিলো।আমি চুপটি করে পাশেই
দাড়িয়ে আছি।
তারপর,,,,
----ভাইয়া বাইরে দাড়িয়ে কেনো ভেতরে
আসবা না?
----তুই কি করে জানলি আমি এখানে আছি?
----কিযে বলো না ভাইয়া তুমি।
----কেন কি বললাম আমি?
----আচ্ছা আমি তোমার কি?
----তুই আমার জীবন, আমার কলিজার সম্পর্ন
অংশ তুই।
----ঠিক তুমিও আমার তাই ভাইয়া, তাইতো মন
বলে দেই তুমি কোথায় আছো।
তুমি আসলে আমি বুঝতে পারি গো ভাইয়া।
----হুঁ হুঁ হুঁ,,,
----ও ভাইয়া কাঁদো কেন ভাইয়া?
----
----আবার কাঁদে চুপ করো বলছি হুঁ হুঁ,,,,
----কাল আমাকে ছেড়ে যখন চলে যাবি, আমি
কি করে থাকবো রে বোনটি?
----কে বলেছে তোমাকে ছেড়ে আমি চলে
যাবো, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো
না ভাইয়া কোথাও না।
----তাই বললে কি আর হয় যেতে তো হবেই।
বলতেই আমাকে ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে
কাঁন্না করতে লাগলো পাগলী না আমার।
কি করবো আমি?
কি বলবো আমি?
কি বুঝাবো ওকে?
কে ভুঝাবে আমাকে?
দুই ভাইবোন এক সাথেই কাঁন্না জুড়ে দিলাম
আমারা।
আমাদের কান্না শুনে পাশের ঘর থেকে মা
আর তিথীর ভাবিও চলো আসলো।
এসেই আমাদের বুঝ দিতে শুরু করলো ওরা দুই জন
মিলে।
আমাদের দুইজন কে।
ঐ রাতে আর ঘুম হলো না আমি সারা রাত
জেগে জেগে তিথীর ছোটো বেলার কথা
গুলো মনে করেছিলাম।
এভাবে রাতের অধার ভেঙ্গে সূর্যের নতুন
আলোতে ভরে উঠলো সকাল টা।
কেনো উঠবে না হুহ।,
আজ যে আমার তিথীমনির বিয়ে গো
আমার আদরের ছোটো বোন এর বিয়ে।
পুরো বাড়িতে হয়চয়, আনন্দে মেতে আছে
সবাই।
মহল্লাবাসিরাও কতো খুসি আজ।
সবাই কতো কিছু দিয়েছে আমার তিথীকে।
মহল্লার সবাই যে ওকে খুব ভালোবাসতো,
কতো না যন্ত করতো তিথীকে।
চারি দিকে বাজির শব্দ, বাড়ি ভর্তি আত্নীও
রা,মহল্লার সকল কে দাওয়াত দেওয়াছিলো
বিয়েতে।
কোনো কিছুতে কমতি রাখেনি আমি,
তিথীর বিয়ের জন্য অনেক টাকা দরকার বলে
ওর অজাতেই নিজের নামের করা কিছু অংশ
জমি বিক্রি করে দিয়েছি।
এটা যদি ও জানতো এই বিয়ে কখনো করতো
না।
যাক সে সব কথা,
তিথীকে বিয়ের গোসল করানো হয়ে গেলো।
তিথীকে এবার লালা বেনারসি তে সাজানো
হবে একটু পর।
ঘরে তিথীকে নিয়ে সবাই কতো মজা করছে,
এদিকে আমার জানটা ছিড়ে যাচ্ছে ।
কি করে সামলাবো আমি এ কস্টটা।
সহ্য করতেই হবে,
করতেই হবে আমার,
আমি পারবো,
পারতে হবে আমার?
সবাই নতুন নতুন পোসাক,
ও কতো সুন্দর করে না সেজেছে আর সবাই।
এখন অধিক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা বরের জন্য।
কিছু ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে আছে ফুল নিয়ে
গেটের সামনে।
বাড়ির ছেলে মেয়েরা দাড়িয়ে আছে গেটের
সামনে।
বর এর কাছ থেকে গেট ধরার টাকা আদায়
করার জন্য।
সবাই হাসি আনন্দে মেতে আছে।
আজ আমি তিথীর সামনে বেশী গেলাম না,
কারন কষ্টটা বাড়বে বেশী তাই।
কিন্তু ব্যপার কি, যহোরের আজান দেচ্ছে
কিন্তু বরের গাড়ির কোনো খবর নেই।
কি হলো রাস্তাঘাটে সমস্যা হলো না তো
আবার?
এতো দেরি তো হওয়ার কথা না?
মনের ভিতরে কেমন কুঁডাকছে আমার?
ছি আমি এসব কি ভাবছি?
কিন্তু কি হলো তারা এতো লেট কেনো করছে?
মহল্লার মুরুব্বী গন জিঙ্গাসা করতে লাগলো
এদিকে।
কি জবাব দেবো আমি বুঝতে পারছিনা।
নাহ্, আর লেট করা ঠিক হবে না একটা ফোন
দিতেই হবে ওদের।
ফোন টা হাতে নিতেই বরের বাড়ি থেকে কল
আসলো...
----হ্যালো?( বরের বাব)
----আসসালামু ওয়ালাইকুম?( আমি)
----ওয়ালাইকুম আসসালাম।
----জ্বি, আপনারা কোথায় এখনো, রাস্থাই
কোনো সমস্য হলো নাকি? আপনাদের দেরি
হচ্ছে যে?
----সব কিছু ঠিক আছে, কিন্তু আমরা আসছি না।
----হা হা হা,ভালো মজা করতে পারেন।
----আমি কোনো মজা করছি না সত্যি আমরা
আসছি না।
----এই সব কি বলছেন আপনি,? আপনি ভেবে
দেখেছেন কি বলছেন আপনি?
----আমি ভেবেই বলছি কথা টা আমি ঐ কুড়িয়ে
পাওয়া মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে
দেবো না।
----.....(আমি নিরব হয়ে গেলাম)
----তোমরা আমাদের সাথে চিটারি করতে
চাইছিলে?
কার না কার পাপের ফল তুমি ঘরে তুলে এনে,
এখন আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছিলে
তোমারা?
----.......(নিরব)
----তোমার জানতে একটা জানতে পারলে
আমরা রাজি হতে নাও পারি তাই চুপিচুপি সব
কিছু করতে চাইছিলে?
একটা কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে,
যার কোনো পরিচয় নেই,
যার মা বাবার কোনে ঠিক নেই তাকে আমারা
ঘরের বউ করবো না তাই এই বিয়ে হচ্ছে না।
তুমি তোমার কুড়িয়ে পাওয়া বোন কে কে
তোমার কাছেই পুসে রাখো ভালো থাকবে
রাখি।
আমি নিশ্চুপ হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।
আমি যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে
ফেলেছিলাম।
কি বললো ওরা এইসব?
কি শোনালো আমাকে ওরা?
এখন আমার বোন টির কি হবে?
সবাই ওকে অপয়া অলক্ষী বলবে?
লোকে জানবে কেনো, কি কারনে ওর বিয়ে
হলো না?
কি জবাব দেবো আমি?
তিথী আমার কুড়িয়ে পাওয়া বোন বলে?
কি করবো আমি, কি করবো আমি এখন, কি করে
বোঝাবো তিথীকে?
সবাই আমকে ধরে একটা চেয়ারে বসালো
আমার শরীর এর বল হারিয়ে ফেলেছিলাম।
সবাই জিঙ্গাসা করছে কি হয়েছে, কি হয়েছে
হৃদয়?
আমি বোবার মতো অপলক তাকিয়ে আছি এক
দিকে করে।
হইচয় শুনে তিথী ঘর থেকে দোঁড়ে আমার
কাছে এসে পড়ে।
বলে,
কি হয়েছে ভাইয়া তোমার?
ও ভাইয়া কথা বলছো না কেনো?
কি হয়েছে বলো না ভাইয়া?
আমি শুধু দেখছিলাম,হঠ্যাৎ তিথী আমার
মোবাইল টা নিলো।
তার পরে ও কল রেকড চেক করতে থাকে।
আমার মোবাইল এ অটো কল রেকড চালু করা
ছিলো তিথীর জন্য।
ওর সাথে যখনি কথা বলতাম রেকড করে আবার
শুনতাম।
এর পর তিথী ঐ রেকড টা শুনলো সবার মাঝেই।
ওর চোখের পানি দেখে আমার হুস ফিরলো
তাড়াতাড়ি ওর হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে
আছাড় মারলাম।
কিন্তু লাব হলো না, সব কিছু শুনে ফেলেছে ও।
তিথীর দুই চোখের অশ্রু গুলো বৃষ্টির মতো
পড়তে থাকে।
আমি তিথীকে কাছে নিয়ে বলি,
----কিছু হয় নি আপু, ওরা মিথ্যা বলেছে সব?
ওরা বিয়ে করতে চাই না বলে এই মিথ্যা গুলো
বলেছে আপু কাঁদিস না, কাঁদিস না রে বোনটি
আমার?
----ভাইয়া আমি তোমার বোন না?
----ঐ চুপ কে বলেছে তুই আমার বোন না,
তুই আমার বোন, শুধুই আমার বোন।
----মা গো, আমি তোর গর্ভের সন্তান না মা?
----.........(চুপ) মা)
----আমাকে তুমি, কুড়িয়ে পেয়েছিলে ভাইয়া?
----চুপ কর বলছি তুই, আর একটা কথা বলবি না
বলে দিলাম।
----বলো না ভাইয়া, তোমারা আমার আসল মা
বাবা,ভাইয়া কেও না,?
----ঐ মা, তুই তিথীকে চুপ করতে বলিস না কেন,
চুপ করতে বল না ওকে।
----ভাইয়া ও ভাইয়া, আমি সত্যি তোমার ছোট
বোন না ভাইয়া?
----তুই আমর বোন।
তুই শুধু আমারি ছোট্ট বোন।
বলেই ওকে জড়িয়ে ধড়লাম তিথীকে।
তিথী আমাকে জড়িয়ে ধরে উচ্চোসরে কান্না
করতে লাগলো।
কোনো মতে তিথীকে আমি চুপ করাতে
পারছিনা
তিথীর কান্না দেখে ওখান কার সবার চোখে
পানি চলে এসেছে।
একটু আগে যে বাড়িটা আনন্দে,মেতে ছিলো,
মুহূর্তে একটা শসানে পরিনতো হলো।
হাসি খুসিতে মেতে থাকা বাড়ি টা,
কান্নাতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।
এর পর তিথীর বিয়েটা আর হলো না ভেঙ্গে
গেলো।
যে যার বাড়িতে সবাই চলে গেলো।
তিথী ঐযে ঘরে ঢুকে বসে আছে, আর বের হলো
না।
সারাদিন কিছুই খাইনি মেয়েটা ,
মন খারাপ করে ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে
আছে।
নিজেও খাইনি।
বাড়ির সবাই না খেয়ে আছে।
দিন পেরিয়ে জ্যোৎস্না নিয়ে নীল আকশে
চাঁদের দেখা মিললো।
আজ কের রাত টা কতো সুন্দর লাগছে।
আজ এই জ্যোৎস্না ময় রাতে আমার বোনটির
জিবনটা নতুন করে সাজানোর কথা ছিলো।
কিন্তু ভাগ্য তার সহ্যয় হলো না আমার কলিজা
টুকরা বোনটির।
বাইরে মাটিতে বসে আছি একা একা।
তিথী এসে চুপচাপ আমার পাসে বসলো।
বসে আমার কাঁধে মাথা দিয়ে, দুই হাত দিতে
আমার ডান হাত এর কনুইএর উপরে ধরলো।
আমি তিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,
কিছুক্ষন পর আমার কাঁধ টা ভেজা অনুভব
করলাম।
বুঝতে বাকি রইলো না, এটা বৃষ্টির পনি নাগো,
এতো আমার কলিজার টুকরা বোনটির চোখের
পানি গো।
-----ঐ পাগলী কাঁদছিস কেনো রে?
-----কই না তো আমি কাঁদছিনা ভাইয়া।
-----চিন্তা করিস না বোন আমার এই থেকে
তোর আরো ভালো পরিবারে বিয়ে দেবো
দেখে নিস।
-----হুমম, হবে তো তুমি আছো না ভাইয়া হবেই।
-----হুম,,,তাহলে কাঁদছিস কেন?
-----এটা ভেবে কাঁদছি আমি তোমার রক্তের
বোন না হয়েও আমার কোনো দিক থেকে তুমি
কম রাখোনি, হয় তো সব সময় বেশী বেশী
দিয়েছো।
-----এক চড় মারবো তোর,, এই কথা বললে,
তুই আমার বোন শুধুই আমার বোন, তুই এই বাড়ির
মেয়ে বুঝলি। আর কখনো যেনো না শুনি আমি?
----- ভাইয়া,, কিন্তু সত্যি টা আর কতো দিন
ঢেকে রাখবে ভাইয়া?
-----যতো দিন তোর এই ভাইয়ার ভিতরে জান টা
আছে ততো দিন ও মরনের পরেও রাখবো, বোন
আমার তবুও এমন কথা বলিস না?
-----ভাইয়া তোমাকে ছেড়ে থাকবো কি করে
আমি?
-----মানে কি এর?
-----আমি যদি হারিয়ে যায় তাহলে তুমি আমার
খুজবে না কিন্তু ভাইয়া।
-----কি সব পাগলরে মতো কথা বলছিস তুই, কই
যাবি হা?
-----কিছু না ভাইয়া, চলো ঘরে চলো বাইরে আর
থেকো না।
-----আচ্ছা চল,,
-----ভাইয়া খুব খুদা পেয়েছে একটু গালে তুলে
খাইয়ে দেবে আমার?
চোখে অশ্রু নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ
জানালাম ওকে।
তার পর দুই ভাই বোন মিলে খাবার টেবিলে
বসে আছি।
মা খাবার দিলো আর পাসে বাবা মা আর
তিথীর ভাবিও বসে আছে।
তিথী আমার দিকে মুখ ফিরে তাঁকিয়ে আছে
আমার মুখের দিকে।
আমি ভাত মাখিয়ে আমার আদরের বোন টা
কে খাইয়ে দিচ্ছি।
সেই ছোট্ট বেলার মতো বসে আছে আর
খাচ্ছে,
চোখে ওর অশ্রুর কনা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বের
হবে বলে।
কয়েক গাল খাওয়ানোর পরে,
তিথী বললো,
ভাইয়া আজ আমি তোমার এক গাল খাইয়ে দেই
ভাইয়া?
আমি মাথা নেড়ে বললাম দে।
ও এক নলা ভাত নিয়ে আমার গাল তোকাত
আনতে গিয়ে হাতটা হিমশীতল ঠান্ডার মতো
কাঁপছিলো।
কোনে রকম গালে দিয়ে জোর করে কেঁদে
দিলো।
মা, আর ওর ভাবি ওকে ধরে আছে।
আমি ওখান থেকে উঠে চলে গেলাম আর সহ্য
হচ্ছে না আমার বেনটির কান্না,
রাতে ঘুমানোর আগে আমাকে বললো,
ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসি গো ভাইয়া,
খুব মা বাবার থেকেও তোমাকে আমি বেশী
ভালোবাসি।
বলেই দরজা দিয়েদিলো।
আমি আর কিছু বললাম না। মন খারাপ বলে এমন
করছে।
কাল থেকে সব আগের মতো হয়ে যাবে,
ঐ রাত টা কিছটা ঘুম হয়েছিলো আমার।
সকাল হয়ে গেলো, অনেক বেলা হয়ে
গিয়েছে।
আজ কেও ডাক দিলোনা তো?
হঠ্যাৎ তিথীর কথা মনে আসলো ,
এক দোড়ে চলে গেললাম ওর রুমের দরজাতে
গিয়ে ডাক দিলাম
-----তিথী, তিথীমনি, অনেক বেলা হয়ে গেছে
উঠ?
ওপাস থেকে কোনে আওয়াজ আসলো না।
বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করছে আমার,
চিন্তাতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,
আবার ডাক দিলাম তিথীমনি বলে তাও
কোনো খবর সাড়া পেলাম না।
জোরে ডাক দিলাম।, আমার ডাক শুনে সবাই
ছুটে আসলো।
এসেই কি হয়েছে কি হয়েছে বলে বলতে
থাকলো।
আমার মন আর ভালো বলছে না।
প্রতিবেশী এক কাকা চলে আসলো।
বললাম কাকা দরজা ধাক্কা লাগাও, আমার
ভালো লাগছে না,
এদিকে মা, তিথী মা তিথী মা বলে কেঁদে
ফেঁলেছে।
কি হলো আমার আমার বোনটির?
দুই জন মিলে দরজাটা অনেক কষ্টে খুলা সম্ভব
হলো,
কিন্তু সম্ভব হলে না আমার,
শরীর এর শক্তিবল ধরে রাখতে সম্ভব হলো না।
নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি।
এটা আমি কি দেখছি?
এটা হতে পারে না?
আমাকে ফেলে যেতে পারে না ও?
খাটের পরে ঘুমন্ত ভাবে শুয়ে আছে আমার
জান টা,
কিন্তু জান টা যে আর রইলো না তার মাঝে।
চলে গেছে আমাকে একা ফেলে চলে গেছে
ও,
এই ভাই টাকে ফেঁলে চলে গেছে স্বার্থপর এর
মতো।
বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে আমার পাগলী
বোনটা।
মূহুর্তের মাঝে কান্নাকাটির ঢোল পড়ে
গেলো।
আমি খুব কষ্ট করে উঠে তিথীর কাছে যেতেই
ওর মাথার কাছে একটা কাগজ পেলাম,
হাতে নিয়ে পড়তে থাকলাম,
*ভাইয়া,
ও ভাইয়া আমি না একটা ভুল করেছি গো
ভাইয়া
।তোমাকে না বলে আমি দূরে চলে যাচ্ছি গো
ভাইয়া।
আমাকে তুমি বকবে না তো এর জন্য? বকলে
কিন্তু কান্না করবো হুহ,আর তার জন্য জরিমানা
আইস্ক্রিম দিতে হবে হি হি হি।
ও ভাইয়া আমি মনে হয় এই দুনিয়ার সব থেকে
ভাগ্যপতী গো, তোমার মতো একটা ভাইয়া
পেয়ে আমার জীবনটা ধন্য ভাইয়া। ভাইয়া
আমি তাদের কে হাজার সালাম জানাই, যারা
আমাকে ঐ ঝোপের মাঝে ফেলে রেখে
গিয়েছিলো।
আজ ওরা যদি না রাখতো, তো তোমার মতো
ভাইয়ার দেখা আমার হতো না, যে আমার
জীবনে এতোটুকু কষ্ট কি বুঝতে দেইনি। কোনো
জিনিসের অভাব রাখেনি। কোকিছুর অপূর্নতা
রাখেনি।ভাইয়া গো তুমি আমার জীবনের সব
থেকে আপন মানুষ গো ভাইয়া। ভাইয়া মা
বাবা না খুব ভালো গো আমাকে কতো আদর
করতো, মা আমার বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতো,
বাবা আমার ঘোড়া হয়ে আমার পিঠে নিয়ে
চড়াতো যখন তুমি থাকতে না। ভাইয়া আমি
তোমার রক্তের কেও না,আমি কোন পাপের
ফসল জানি না।কে আমার মা বাবা জানিনা।
কার গর্ভ থেকে এসেছি জানি না।আমার মতো
পাপ কোনো মানুষই জেনে শুনে ঘরে তুলবে না।
আর তার জন্য তোমারা বার বার মানুষ এর
কাছে লজ্জিত হবে আর এটা আমি কোনো
মতে মানতে পারবে না ভাইয়া।যারা আমার
রাস্থা থেকে কুড়িয়ে এনে, আদর যন্তো, স্নেহ
মায়া মমতা দিয়ে বড় করেছে তাদের কে
লজ্জিত হতে আমি দেখতে পারবো না। তাই
আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে গেলাম।
ও ভাইয়া কাঁদবে না কিন্তু বলে দিলাম?
কাঁদলে কিন্তু আমিও কেঁদে দেবো হুহ,? তুমি
কিন্তু আমার কথা শুনছো না ভাইয়া? আমিও
কাঁদবো হুঁ হুঁ হুঁ,,,, এবার হয়েছে তো। ও ভাইয়া
প্লিজ কেঁদোনা আমি তোমার জান না
তোমার জান হয়ে তোমার মাঝেই আছি
দেখো?
সব সময় ভালো থেকো ভাইয়া, এবার তোমারা
একটা বাচ্চা নিও ভাইয়া, আর যদি মেয়ে হয়
তাহলে নাম টা তিথী দিও তাহলে ওর মাঝেই
আমাকে পাবে গো। ভালো থেকো ভাইয়া ও
ভাইয়া শোনো, একটু এদিকে তাঁকাও,
ভালোথেকো ভাইয়া বিদায় ভাইয়া,
ইতি তোমার আদরের ছোট্ট বোন তিথীমনি.....
চিঠিটা পড়ার পরে হাওমাও করে কেঁদে
দিলাম তিথী মনি বলে।
বুকটা ফেটে যাচ্ছে আমার,
তিথী, তিথী রে
ওরে তিথী তুই আমার বোন রে,
কোনো রাস্তার মেয়ে না তুই?
তুই আমার বোন রে তিথী।
No comments