Header Ads

ভালোবাসার রঙ

Facebook
__অধরা,,, এই অধরা...!!(আমি)
__একবার বলছিনা ডাকবে না আমায়।(অধরা)
__এমন কেনো করছো তুমি। বলছি না আর এমনটা
হবে না কখনো।
__তুমি এই কথা প্রতিদিন বলো আবার ভুলে যাও।
__এবার সত্যি প্রমিজ করছি আর ভুল হবে না। এখন
থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো।
__তাহলে আমার নাম নিয়ে প্রমিজ করো।
__তোমার নাম নিয়ে প্রমিজ করতে পারবো না
আমি। যদি কোনো সময় নামাজ পড়া বাদ পড়ে তখন
তোমার সমস্যা হবে।
__বাদ কেনো পড়বে।
__না যদি পড়ে যায় তার কথা বলছি।
__থাকো তুমি তোমার যদি নিয়ে। আমার সাথে তুমি
আর কথা বলবা না।(রেগে গিয়ে)
__এই না...!! এমনটা বলবা না তোমার সাথে কথা না
বলে আমি এক মূহুর্তও থাকতে পারবো না।
__তাহলে প্রমিজ করো এখন থেকে নামাজ পড়বা
পাঁচ ওয়াক্ত।
__আচ্ছা প্রমিজ।
__আরে বোকা এমন ভাবে কেউ প্রমিজ করে
নাকি।
__তাহলে কিভাবে করে।
__বলো আমি অধরার নামে প্রমিজ করছি যে এখন
থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো।
__আমি আমার বউ অধরার নামে প্রমিজ করছি এখন
থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো। হইছে এখন।
(বাধ্য ছেলের মত বললাম)
__হুম হইছে। (মুচকি একটা হাসি দিয়ে)
যাইহোক এতক্ষন পরে আমি একটা শান্তির নিঃশ্বাস
ফেললাম।
কারন অধরাকে ছাড়া আমি এক মূহুর্ত থাকতে পারবো
না।
.
এবার একটু পরিচয় টা দেই। আমি আবরার জাওয়ার অপু,,,, একটা
প্রাইভেট কোম্পানিতে,,,
চাকরি করি। আর এতোসময় যার সাথে কথা বলছিলাম
সে আমার বিয়ে করা
একমাত্র বউ অধরা আবরার জান্নাত।
পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়। বিয়ের কিছুদিন
পরেই
বুজতে পারি অধরা প্রচন্ড রাগি আর জেদি টাইপের।
.
তবুও অধরার মত একজনকে জীবনসঙ্গী হিসাবে
পেয়ে নিজেকে মাঝেমাঝে
ধন্য মনে হয়। কারন মেয়েটা একদম মনের মত
পেয়েছি,,,,
যেমনি ধার্মিক তেমনি মুখটা সবসময় হাসিখুশি থাকে।
বাসার সবাইকে সারাক্ষণ
হাসিখুশির উপর রাখে। আজকালকার যুগে এমন
মেয়ে পাওয়া আসলেই খুব কষ্টসাধ্য।
.
[ভোর ৫ টা]
অধরা ঘুম থেকে উঠেই আমাকে নামাজে যাবার
জন্য ডাকছে। তারপর,
__মেঘ এই মেঘ ,,ওঠো বলছি..??
__কেনো কি হইছে আবার..!!
__কি হইছে মানে তুমি নামাজে পড়বা না।
__কালকে থেকে পড়বো,,,এখন একটু ঘুমাই।
__রাতের প্রমিসের কথা ভুলে গেছো তুমি।
__কিসের প্রমিস,,
__নামাজ পড়বে তার জন্য,,
.
হঠাৎ করে মনে পড়লো রাতে তো অধরা
আমাকে প্রমিস করিয়েছিল নামাজ পড়ার জন্য। এখন
বাধ্য হয়ে নামাজ পড়তে হবে। তারপর,
__হুম মনে পড়ছে,,
__মনে যখন পড়ছে, তখন তাড়াতাড়ি উঠেন। আর
ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামাজে যান।
__হুম যাচ্ছি বাবা,,,
.
পরে বিছানা ছেড়ে লাইট জ্বালিয়ে ফ্রেশ হতে
চলে গেলাম। ওযু করে এসে
একটা শার্ট আর তার উপর চাদরটা জড়িয়ে নামাজের
জন্য চলে গেলাম। কারন
এত সকালে কখনো উঠা হয় নি।
.
আর যেহেতু একটু শীতকাল তাই বাহিরে
ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ছে অনেক।
যখন গেট দিয়ে বের হচ্ছিলাম তখন দেখি বারান্দায়
অধরা দাঁড়িয়ে
আছে। আমিও ওর দিকে একবার তাকিয়ে চলে
গেলাম নামাজ পড়তে।
.
নামাজ শেষ করে এসে যেই গেট দিয়ে ঢুকবো
তখনই মহারাণী বারান্দা দিয়ে
আমায় ইশারা দিল যে গেটের ওখানে দাঁড়াতে।
কিছুক্ষণ পড়ে শব্দ পেলাম কেউ
যেন বাসার মেইন গেট খুলছে। পরক্ষনেই
দেখি মহারাণী বের হল বাসা দিয়ে। এরপর
কাছে এসে বললো,,
__চলে হাটবো একটু। (অধরা)
__কি বলো তুমি..?? এই ঠান্ডার মধ্যে হাটা লাগবে না
শরীর খারাপ করবে। (আমি)
__করবে না। করলে তো আমি আছি..!!
__বুজলাম বাট তোমার শরীর খারাপ হলে।
__কেনো তুমি আছো না। হি হি হি
__হা হা হা,, আচ্ছা চলো তাহলে।
.
এরপরে দুজন মিলে হাটতে হাটতে নদীর পাড়ের
দিকে চলে গেলাম।
যেহেতু পাগলী টা চাদর নিয়ে আসেনি তাই একটা
চাদর জড়িয়েই দুজনে হাটলাম।
কতক্ষণ পরে দেখি সূর্যটাও কুয়াশাকে ভেদ করে
আলো ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
.
ফিরে আসার সময় দেখলাম টং এর
দোকান আর রিক্সা গুলো কম বেশি চলা শুরু
করেছে। তারপরে একটা
দোকানে বসে দুজনে মিলে দুই কাপ চা খেলাম।
পরে রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
.
আজকে অনেকদিন পরে খুব আনন্দ অনুভব
হচ্ছে। কারন ভোরবেলা
অধরা নামাজে যাওয়ার জন্য ডাকলো,পরে দু জন
মিলে অনেকটা সময় এক চাদরে
জড়িয়ে হাটা, তারপর বাসায় ফেরা। সত্যিই আজকে খুব
খুশি লাগছে যা বলো
বোজানো যাবেনা।
.
বাসায় এসে অধরা আমার অফিসে যাবার
সবকিছু গুছিয়ে দিল। তারপর সবার জন্য নাস্তা বানাতে
রান্নাঘরে গেলো।
এদিকে মাও উঠে রান্নাঘরে গিয়ে অধরাকে নাস্তা
বানাতে সাহায্য করতে লাগলো।
.
পরে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেলাম। যদিও
আজকে যাবার কোনো মন ছিলো না।
অফিসে যাবার সময় পাগলীটার কপালে একটা
ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে
তারপর মা-কে বলে চলে গেলাম।
.
অফিসে এসে নিজের রুমে বসে মন দিয়ে
কাজ করছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই
হঠাৎ মেসেজ রিংটোন বেজে উঠলো। বুজতে
আর বাকি রইলো না যে
মেসেজ টা মহারাণী পাঠিয়েছে। কারন এমন
কাজের সময়ে অধরা ছাড়া আর কেউ
মেসেজ দিবে না আমায়।
.
পরে মোবাইল টা হাতে নিয়ে মেসেজ টা চেক
করলাম। মহারাণী ছোট করে একটা মেসে
দিয়েছে,
"সময় মত নামাজ পড়া আর খাবার খাওয়া হয় যেন।"
আমিও একটা মুচকি হাসি দিয়ে -"আচ্ছা মহারাণী আপনার
কথা রাখা হবে।"
কথাটুকু লিখে সেন্ড করে দিলাম।
.
এরপরে কাজ করা শুরু করলাম আবার। কারন, অনেক
ফাইল এসে জমা পড়েছে।
তা ঠিক হয়েছে কিনা দেখে তাতে সাইন দিতে
হবে। ঠিকঠাক মত সব কাজ হয়ে
যায় বলে অফিসের বস তার ছেলের মত ভালাবাসে।
.
এদিকে কাজ করতে করতে কখন যে ১:১৫
বেজে গেছে খেয়াল করি নি। হঠাৎ করে অধরা
কল দিলো। তারপর,
__হ্যালো,,,!! (অধরা).
__হুম বলো,,(আমি).
__নামাজ পড়ছো,,
__না কেনো,,
__কেনো মানে বাজে কয়টা দেখছো,
__(ঘড়ির দিকে তকিয়ে) ওহহো ১:১৫ বেজে
গেছে। মনে করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ
মহারাণী।
__কথা বলা বাদ দিয়ে নামাজে যাও। আর হ্যাঁ এসে
খাবারটা খেয়ে নিও কেমন।
__আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি...
__হুম। আল্লাহ হাফেজ।
__আল্লাহ হাফেজ,,
.
এরপর ফাইল গুলো টেবিলের উপর রেখে
নামাজের জন্য চলে গেলাম।
পরে নামাজ আর দুপুরের খাবার শেষ করে কাজ করা
শুরু করলাম। প্রতিদিন যেখানে
অধরা শুধু দুপুরে একবার কল দিতো আজকে
সেখানে তিনবার কল দিছে।
.
প্রতি বারেই কল দিয়ে নামাজ পড়ছি কিনা তার খবর
নিয়েছে। আর এসব
ভাবতেই নিজের অজান্তে মুখের একটা কোণে
হাসি ফুটে ওঠে। মেয়েটা আসলেই
একটা পাগলী। ৫ টার সময় অফিস থেকে বের
হয়ে একটা ফুলের দোকান
থেকে চারটা গোলাপফুল কিনে বাসায় রওনা হলাম
.
বাসায় এসে দরজায় নক করতেই অধরা এসে দরজাটা
খুললো। তারপরে
একটা হাসি দিয়ে কাধ থেকে ব্যাগটা নিয়ে রুমের
দিকে চলে গেলো। মায়ের রুমে
উকি দিয়ে দেখলাম সে বসে আছে। আর
আমাকে দেখে একটা হাসিদিয়ে বললো,
__আসছো,বাবা অফিস থেকে।
__হুম মা, কিছু বলবা।
__না বাবা, যাও রুমে গিয়া হাত মুখ ধোও।
__হুম যাচ্ছি।
এদিকে বাবাকে দেখি সে বসে টিভিতে খবর
দেখছে। আসলে দিন শেষে
হাজারো কষ্ট করে এসে এমন দৃশ্য দেখলে
সত্যিই যে কারো মনটা আনন্দে ভরে উঠবে।
সাথে সাথে কষ্ট গুলো সুখ আর শান্তিতে পরিপূর্ণ
হয়ে যাবে।
.
রুমে এসে দেখি অধরা বসে আছে। আমাকে
দেখে বললো,
__যাও জামাকাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে এসো।
মাগরিবের সময় হয়ে এসেছে।
__হুম যাচ্ছি,
পরে কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে ওযু করে বের
হলাম। বের হয়ে এসে দেখলাম অধরা ঘর গুছাতে
ব্যস্ত।
.
তারপর কাছে গিয়ে অফিস থেকে আসার সময় আনা
ফুল গুলো অধরার দিকে
বাড়িয়ে দিলাম। ফুল গুলো হাত থেকে নিয়ে
বললো, "খুব সুন্দর দেখতে ফুল গুলো।"
পরে অধরা ফুলদানীতে ফুল গুলো নিয়ে
রেখে দিল।
.
আসলেই আমি আজ খুব খুব খুশি।
অধরা ওর রাগ আর জেদটা আমার ভালো কাজের
জন্য লাগিয়ে আমাকে
নামাজ পড়তে সাহায্য করেছে। একজন স্ত্রীর
কাছ থেকে এর বেশি আর হয়তো কিছু আশা
করে করে না তার স্বামী।
.
পরে সেদিনের মত মাগরিব আর এশার নামাজ পড়ে
রাতের খাবার শেষ করে
ঘুমিয়ে গেলাম। এরপর থেকে প্রতিদিন ফজরের
পর দুজনে মিলে হাটতাম। আর
অফিসে গেলে অধরা বার বার ফোন দিয়ে
নামাজের কথা মনে করে দিতো। এই নিয়ে খুব
সুখে দিন কাটাচ্ছিলাম।
.
মাস দুই পরে আমার এই সুখে পরিমাণ আরো বেড়ে
গেলো। যখন শুনলাম
আমাদের ঘরে নতুন মেহমানের অাগমন হতে
যাচ্ছে। কি বলবো....!! সেদিন বলতে
গেলে খুশিতে এক প্রকার বাকরুদ্ধ হয়ে
গেছিলাম। পরে নামাজ
পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
.
আসলেই ভালোবাসার রঙে সেদিন নিজেকে
পরিপূর্ণ মনে হয়েছিল।
অধরার মত জীবনসঙ্গী পাওয়া, বাসার সবাইকে খুশি
রাখা, ,,,আমায় নামাজ
পড়তে বাধ্য করা, সবশেষ ঘরে আসা নতুন মেহমান।
সত্যিই আমি পূর্ণতা পেয়েছি।

No comments

Powered by Blogger.