Header Ads

"দাগ" সত্য ঘটনা অবলম্বনে


লেখক:: আলিফ খান (মেন্টাল)
.
গল্পটা পিয়াসের। পিয়াস মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেরা একটু বড় হলেই পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু একটা করা লাগে। পিয়াস ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। কলেজের পাশাপাশি ২টা বাচ্চাকে টিউশনি করে। খুব সাদামাটা জিবন। উচ্চ বিলাসিতা নেই আবার একেবারে নিম্ন নয়। কলেজ,বন্ধুবান্ধব,স্ট­ুডেন্ট,পরিবার এইসব নিয়েই সারাটাদিন কেটে যেত পিয়াসের।
.
একদিন পিয়াস স্টুডেন্ট পড়িয়ে বাসায় ফিরছিল। হঠাত রাস্তায় বৃষ্টি নেমে যায়। পিয়াস জলদি করে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে দাড়ায়। পিয়াস দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন পর বৃষ্টি একটু কমে। পিয়াস আকাশের মেঘ দেখার জন্য উপরে তাকাতেই তার চোখ পড়ে,, রাস্তার ওপর পাশের বিল্ডিংয়ের ৪তলার বারান্দায়। একটা মেয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে এবং মাঝে মাঝে চোখ ঘুরিয়ে নিচে রাস্তার পাশের দোকানে দাড়িয়ে থাকা লোক গুলাকে দেখছে। যেখানে পিয়াসও ছিল।
পিয়াস মেয়েদের ব্যাপারে কিছুটা অনাগ্রহী ছিল তাই সে চোখ নামিয়ে বাসার দিকে হাটা ধরলো। কিন্তু মেয়েটা এতটাই মায়াবী যে পিয়াসের মনে দাগ কেটে গেল। পিয়াস এর আগে কোন মেয়ের জন্য এমন হয় নাই। সে বেশিরভাগই মেয়েদের থেকে দূরে থাকতো কিন্তু এখন সে প্রতিদিন সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেই বারান্দার দিকে তাকাতো। বৃষ্টি এলে সেই চায়ের দোকানে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটির বৃষ্টির সাথে খেলা দেখতো।
.
অনেকদিনই এভাবে চলতে থাকলো। এদিকে মেয়েটাও পিয়াসের ব্যাপারটা লক্ষ্য করতে লাগলো।
একদিন পিয়াস বৃষ্টির মাঝে সেই চায়ের দোকানে দাড়িয়ে চা খাচ্ছিল আর মেয়েটির অপেক্ষা করছিল কিন্তু অনেক্ষন বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু মেয়েটি বারান্দায় আসছে না।
পিয়াস প্রায় দুইকাপ চা নেয়ার পর।
চাওয়ালা:: এই কাগজটা আপনারে আপামনি দিসে।
পিয়াস:: কোন আপামনি??
চাওয়ালা:: যার লেইগা দাড়াইয়া আছেন আর কইসে আপনারে আর চা না দিতে!
পিয়াস:: (কিছুটা থমকে) চিঠিটা খুলল।
..
"আপনার সমস্যা কি হে? ভ্যবলার মত তাকাইয়া থাকেন কেন? আশেপাশের মানুষজন কি ভাবে? কিছু বলার থাকলে.. কাল সকাল ১০টায় স্কুল যাওয়ার সময় বলবেন" (লিয়া)
.
পিয়াস চাওয়ালাকে ৫০ টাকা দিয়ে। খুশিতে তার বন্ধুদের সবাইকে ৫টাকার করে জালমুড়ি খায়িয়ে জালমুড়ি পার্টি করে।
.
পরের দিন সকাল ৯:৪৪ বাজে। পিয়াস লিয়ার বাসার সামনে দাড়িয়ে। ৯:৫১ তে লিয়া বাসার গেট থেকে বেরুতেই পিয়াসকে দেখে একটু মুচকি হেসে চলে গেল। পিয়াস পিছু পিছু ছুটল।
.
এলাকা থেকে বেরুতেই। লিয়া পিছনে ফিরে পিয়াসকে ডাকে।
পিয়াস সামনে আসে।
লিয়া:: বলুন
পিয়াস::কি বলবো?
লিয়া:: ঘোড়ার আন্ডা বলবেন।
পিয়াস:: মানে।
লিয়া:: আমি গেলাম
পিয়াস::নাম্বারটা পেতে পারি??
লিয়া:: (ফিরে তাকিয়ে) যে সামনাসামনি কাপাকাপি করে। সে তো ফোনেও কাপবে।
পিয়াস:: নাহ নাহ প্রথমবার তো তাই।
লিয়া:: এমন সবাই বলে। ০১*---***৬৭..
(লিয়া নাম্বারটা দিয়ে চলে গেলো)পিয়াস এখন বেশ খুশি। লাইফে প্রথমবার একটা মেয়েকে ফোন দিচ্ছে।
পিয়াস::কি করছেন??
লিয়া:: পড়ছি।
পিয়াস:: কোন ক্লাসে পড়েন??
লিয়া:: ১০ম এ।
পিয়াস:: বাসার সবাই ভালো??
লিয়া:: ঘ্যন ঘ্যন বাদ দিয়ে আসল কথা বলেন।পিয়াস:: আমার সাহস হচ্ছে না।
লিয়া:: আপনি জানেন আমার আগে রিলেশন ছিলো।
পিয়াস:: না তবে জানতে চাই না। আমরা কি নতুন করে সব শুরু করতে পারি না??
লিয়া:: সিনেমা দেখেন অনেক না।
পিয়াস:: আমি মজা করছি না। সিরিয়াস।
লিয়া:: তাই! সব জেনেও।
পিয়াস:: হম। আমি চাদের টুকরা মিস করতে চাই না।
লিয়া:: এবার উল্টা পাল্টা কিছু আমার সাথে হলে সুইসাইড ছাড়া উপায় নেই।
পিয়াস:: আপনি শুধু মন থেকে ভালোবেসে যাবেন।আপনাকে ভালো রাখা এবং ভালোবাসার দায়িত্ব আমার। কথা দিলাম।
লিয়া:: এভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছ। পরে তো ভেংগে দিবা।
পিয়াস:: আমি শুধু তুমার ভালো বাসা চাই। এর বেশি কিছু না।
.
এভাবে তাদের মাঝে পরিচয় হয়। ভালোবাসার সম্প্রকে আবদ্ধ হয়।
পিয়ার তার সকল কলেজ,এলাকার সব বন্ধুদের সাথে লিয়ার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা সারাদিন ম্যসেজে কথা বলতো এবং ঘন্টায় একবার ফোনে কথা বলতো। শুক্রবারে দুজন মিলে ঘুরতে যেত,মুভি দেখতে যেত। খুব সুন্দর চলছিল তাদের রিলেশন। এবং তাদের ভালোবাসায় কোনো নোংরামি ছিল না।
.
তাদের ছিল গভীর ভালোবাসা। কেউ কাউকে ছাড়া বাচবে না এমনবস্তা কিন্তু পিয়াসের মধ্যবিত্ত হওয়াটা একটু সমস্যা করতো কিন্তু লিয়া সেটা মানিয়ে নিতো।
.
একদিন পিয়াস আর লিয়া বেড়াতে গেছে একটি ব্রিজে। সেখানে যাওয়ার পর হঠাত করে লিয়া বলে "আইসক্রিম খাবো".. পিয়াস আইস্ক্রিম আনতে যায়। লিয়া একাই দাড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষন পর পিয়াস আইস্ক্রিম নিয়ে আসছে দুর থেকেই দেখছে লিয়া একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।
পিয়াস কাছে আসতেই ছেলেটা মুচকি হেসে চলে গেল।
পিয়াস:: (রেগে) ছেলেটা কে?
লিয়া:: ভেবেছিল আমি একা তাই চান্স নিতে এসেছিল।
পিয়াস:: তুমি কি বললে?
লিয়া:: আমার হাজবেন্ট আছে।
পিয়াস:: মিথ্যা না তো?
লিয়া:: না গো সোনামণি। দাও আইসক্রিম খায়িয়ে দাও।
.
এরপর থেকেই লিয়া কিছুটা পরিবরতন হতে শুরু করে। আগের মত ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে না। ফেসবুকেও তেমন থাকে না। পিয়াস ব্যাপার গুলা খেয়াল করছে। কিছুদিন খেয়াল করার পর।
.
পিয়াস:: ফোন দাও না। ফেসবুকে থাকো না। তাহলে করো কি?
লিয়া:: ঘরের কাজ বাবু।
পিয়াস:: এত কাজ হঠাত কিভাবে আসলো?
লিয়া:: তুমি বুঝিবা না।
.
তারপর আবার যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।
কিছুদিন পর পিয়াস তার এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে লিয়া নতুন একটি ফেসবুক আইডি খুলেছে।
পুরান আইডির পাসওয়ার্ড পিয়াসের কাছে আছে।তাই নতুন আইডি। এটা পিয়াস বুঝে গেলো।
সাথে সাথে লিয়াকে ফোন।
.
পিয়াস:: নতুন আইডি কেন খুলছ?
লিয়া:: কি বল তুমি/?
পিয়াস::তুমার মায়ের কসম। মিথ্যা বইলো না।
লিয়া:: হম খুলেছি। তাতে তুমার কি??
পিয়াস:: পাসওয়ার্ডটা দাও।
লিয়া:: "*****" এই নাও।
.
পিয়াস নতুন আইডি চেক করে দেখে ব্রিজে দেখা সেই ছেলেটার সাথে লিয়ার প্রতিনিয়ত চেট এবং ফোনে কথা হয়। রীতিমত তাদের রিলেশন চলছে।
.
পিয়াস:: এই তুমার ভালোবাসা??
লিয়া:: আমি করতে বাধ্য হয়েছি।
পিয়াস:: কেন করেছো?
লিয়া:: কেন করবো না?/ কি আছে তুমার??
না একটা ডি.এস.এল.আর। কিন্তু রবিনের আছে। না টাকা,, কিন্তু রবিনের আছে। রবিনের মত স্মার্ট ছেলে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আর তুমি সেই মান্দা আমলের কাপড়। রাতের বেলা আমি কষ্টে থাকি আর তুমি তখন সস্তা সস্তা ভালোবাসার কথা শুনাও কিন্তু রবিন আমাকে ঠিক সময়মত ঠিক জিনিসগুলা দেয় তাই আমিও শান্তিতে থাকি। সব মিলিয়ে রবিনের কাছে আমার একটা সুন্দর আরামের জিবন আছে। কিন্তু তুমার কাছে অভাবের সংসার পাবো। ভালোবাসা কি ধুয়ে পানি খাবো?? রবিন তুমার চাইতে বেটার ফর মি।
পিয়াস:: খুব ভালো বলছ। আজ সব প্রমিস,সব কথা মিথ্যা হয়ে গেল। তবুও তুমি ভালো থেকো।
"এই বলে পিয়াস লিয়ার জিবন থেকে বিদায় নেয়...আর ফিরে নি"...
.
আজ প্রায় অনেকবছর পর খবর নিয়ে জানতে পারা যায় "পিয়াস বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করেছে। এখন অনেক বড় বড় ঘরের মেয়েরা বিয়ের জন্য তার পিছনে লাইন ধরে আছে।।। অন্যদিকে লিয়াকে রবিন ব্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয় কিন্তু বেশিদিন টিকে নাই। ডিবোর্স হয়ে যায়। এখন সে একটা সস্তা চাকুরী করে নিজের জীবিকা নিজে নির্বাহ করে"".

No comments

Powered by Blogger.