Header Ads

ইভটিজিং


.
সকাল ১০টা। ইমন এখনো নিদ্রায় আচ্ছন্ন। প্রচন্ড শীতের মধ্যে লেপের ভিতর গুজিয়ে থাকা এবং সাথে যদি কোমল বালিশ জড়িয়ে নেওয়া যায় তখন, ওই সময়ের অনুভূতিটা কেমন হয় তা নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। ইমনের ক্ষেত্রেও একই রকম। কিন্তু, ইমনের এইরকম ঘুমিয়ে থাকাটাই যে দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজে মলিন হয়ে যাবে, তা আর কে জানতো??
---টকটক...!! টকটক....!! (বাহির থেকে দরজা ধাক্কার আওয়াজ)
ততক্ষণে, ইমনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
---এই, কে?? এত সাত সকালে বিরক্ত করার কোনো মানে হয়? (ইমন)
---দরজা খুলো। আমি এস.আই. রফিক।
এস.আই. মানে.... পুলিশ!! (ইমন মনে মনে ভাবছে) ইমন বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলল।
---কী!! কাকে চায়?? (ইমন)
---তোমাকে! (পুলিশ)
---আমাকে মানে! কিন্তু, কেনো? (ইমন)
---'ইভটিজিং' এর মামলা আছে তোমার নামে। (পুলিশ)
---আমার নামে!! দেখুন, আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। আর নাহয়, শীতের কারণে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। (ইমন)
---ভুল আমার হচ্ছেনা। এই আবুল দারোগা!! অ্যারেস্ট হিম। ওকে থানায় নিয়ে চলো। (পুলিশ)
---ওকে, স্যার!! (আবুল দারোগা)
---এই, ছাড়ুন বলছি আমাকে। ছাড়ুন। এইটা কিন্তু একদম ভাল হচ্ছেনা। (ইমন)
কিন্তু, কে শুনে কার কথা? পুলিশ তো নিজের দায়িত্ব পালন করবেই। এটাই স্বাভাবিক। ইমনকে পুলিশ ষ্টেশনে এনে সোজা কারাগারে বন্ধি করে দিল। ইমন এখন কারাগারে বন্ধি, এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে। কী থেকে কী হয়ে গেল, সে নিজেও বুঝতে পারলনা। পুলিশ ইমনের বন্ধু রাকিবকে কল করে সব কথা খুলে বলল। রাকিব ইমনকে সরাসরি জামিন করার কথা বললে, পুলিশ বলে, মামলাটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতে মামলাটি লড়তে হবে। আর মামলায় জিততে পারলে, তবেই জেল থেকে মুক্তি। কল কেটে ইমনের দিকে তাকিয়ে, পুলিশ বিভৎস রকমের একটা হাসি দেয়। ইমন তো রাগে ফুলতে থাকে।
.
প্রায় রাত ৮টার দিকে রাকিবের আগমন ঘটে......
---দোস্ত..!! (ইমন)
---দোস্ত, তুই একদম চিন্তা করিসনা। আমি এসে গেছি। কালকে আদলতে যেতে হবে। তোর মামলাটা লড়ার জন্য আমি উকিল সাহেবকে এনেছি। (রাকিব)
---হ্যালো....!! আমি এ্যাডবোকেট সিরাজ। (উকিল)
---আমি ইমন। (ইমন)
---তোমাকে আমি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চায়। তুমি, যদি সঠিক ভাবে উত্তর দিতে চাও, তাহলে আমি তোমাকে প্রশ্ন করব। আর নাহলে, করবনা?? (উকিল)
---আচ্ছা, ঠিক আছে। বলুন। (ইমন)
---আমাকে বল তো, কখন? কোথায়? কীভাবে? কোন মেয়েকে তুমি ইভটিজিং করেছ? (উকিল)
---আমার কথা কে বিশ্বাস করে!! আমি কোন মেয়েকে ইভটিজিং করিনি? করিনি কোন মেয়েকে ইভটিজিং। কেন কেউ আমাকে বিশ্বাস করছেনা। (ইমন)
---তাহলে, পুলিশ কেন শুধু শুধু তোমায় গ্রেফতার করবে!! ভেবে চিন্তে আমাকে বল? (উকিল)
---ওকে, আমি গত কালকের শুরু থেকে যত ঘটনা ঘটেছে সব কটি বলছিঃ
.
১) আমি গতকাল কলেজে যাচ্ছিলাম গাড়িতে (CNG) করে। যখন, গাড়ি কলেজ গেইটে এসে থামল তখন আমি আমার ভাড়া দিয়ে চলে আসছিলাম। তখন, আমাদের সাথে আসা একটি মেয়ে বলল,
---ভাইয়া......!!
(আমি পেছনে তাকিয়ে)
---ওহ! তুমি? কী বলবা বলো, আমার হাতে সময় নেই। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে এখন। (ইমন)
---ভাইয়া আসলে আমি তো ভুলে ঘরে টাকা রেেখ আসছি! আপনি যদি কাইন্ডলি আমার ভাড়া দিয়ে দেন তো, আমি খুশি হব।
---আহ্! শখ কতো!! টাকা কী গাছে ধরে নাকি?? যে টাকা দিতে বললেন, আর আমি গাছ থেকে ছিড়ে দিয়ে দিলাম। ড্রাইবার সাহেব, ঔ মেয়েকে যেখান থেকে এনেছেন! ওখানে আবার দিয়ে আসুন। তবেই শিক্ষা হবে। হেঃ হেঃ
(এটাতো কোনো ইভটিজিং হতে পারেনা।)
.
২) গতকাল আমি আমার বন্ধুর বাইক চালাচ্ছিলাম। তখন, হঠাৎ করে একটা মেয়ে আমার সামনে চলে আসলে আমি বুঝে উঠার আগেই মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়। তারপর, মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো হয়। আর, সব ঔষুধ পত্রের খরচও আমাকে বহন করতে হয়। প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ হয় সব মিলিয়ে। ঔ মেয়েটিকে বিশ টাকার ভাড়া দেয়নি আর, এই মেয়ের পেছনে দুই হাজার টাকা খরচ করেছি। বাহ! কিয়া পরিণতি!!
(এটাও ইভটিজিং হতে পারেনা)
.
৩) গতকাল রাতে ফেসবুকে ডুকলাম। ফেসবুকে ডুকা মাত্রই নিজের ওয়ালে দেখতে পেলাম, একটি মেয়ের ফেসবুক আইড়ি থেকে নিজের ছবি আপলোড় করল হিজাব পরে। তখন, আমি কমেন্টস করলাম, প্রত্যেক মেয়েকেই পর্দাশীল হওয়া উচিত। কিন্তু, আপনার মতো পর্দাশীল হওয়া কোনো মেয়েরই উচিত নয়। আপনি ফেসবুকে নিজের ছবি আপলোড় করেছেন। এখন, আপনার সাথে যাদের (ছেলে) এড রয়েছে তারা সবাই আপনার সৌন্দর্যময় ছবি ললাট দৃষ্টিতে অবলোকন করবে। হয়ত, কেউ কেউ আপনাকে নিয়ে চার দেওয়ালের মাঝে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর চিন্তা ভাবনাও তৈরি করবে। আর, হয়তো বা কেউ কেউ আপনার ছবি দিয়ে ফেক আইড়ি খুলবে। আর, হয়তো ওখানে আপনার ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিতে পারে, "আমার ছবিতে পাঁচটা কমেন্ট করলে, আমি আমার ফোন নাম্বার দিব" নতুবা এই রকমও দিতে পারে "আমাকে আজকের রাতের জন্য কে কে চাও"?? তখন, এই লেখা গুলো যখন ফেক আইড়ি থেকে আপনার ছবির সাথে লিখে স্ট্যাটাস দিবে, তখন হয়তো এটা দেখে আপনার মোটেও ভালো লাগবেনা। তখন, হয়তো আপনি আফসোস করবেন আর মনে মনে বলবেন, ইস!! কেনো যে নিজের ছবি আপলোড় করলাম?? আর নাহলে হয়তো, এই দিনটা আজ আমায় দেখতে হতোনা।
(এইটাও কোনো ইভটিজিং হতে পারেনা, তাহলে আমি ইভটিজিং করলাম কাকে??)
---তোমাকে আর কোনো কিছু ভাবতে হবেনা। যা বুঝার তা আমি বুঝে গেছি। আগামিকাল তাহলে আদালতে দেখা হচ্ছে। (উকিল)
---হুম। (ইমন)
---ইমন! আমিও আসি তাহলে, ঘরে আবার চিন্তা করবে। (রাকিব)
---ওকে দোস্ত! তুই আমার জন্য যা করতাছস, তা কখনোই ভুলার মত না। (ইমন)
---যায় তাহলে! (রাকিব)
রাকিবের চলে যাওয়া অপলক দৃষ্টিতে দেখে আছে ইমন। ঘরির কাটাও থেমে নেই, ট্রেনের মতো ছুটছে। নির্দিষ্ট সময়ে রেল ষ্টেশনে গিয়ে নিজের বিদায় ঘন্টা বাজাচ্ছে। আর জানান দিচ্ছে, এই যে আমি চলে যাচ্ছি, এমন ভাবে যাচ্ছি যে, আমাকে আর শত চেষ্টা করেও আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না। বলছিলাম, সময়ের কথা। এইজন্যই হইতো বলা হয়েছে, "Time and tide, wait for none!
.
যে ছেলেটি গতকাল রাতে লেপ গায়ে দিয়ে, কোমল বালিশ জড়িয়ে ধরে আরামে ঘুমাচ্ছিল। সে ছেলে আজ একটা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে নিতে পারছেনা, নিজের জ্যাকেটও ফেলে এসেছে বাসায়। এভাবে, কনকনে শীতের মধ্যে নির্ঘুম রাত কেটে গেল ইমনের।
.
সকাল ১০টার দিকে, পুলিশ ইমনকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়। রাকিব আর উকিল সাহেবও চলে এসেছে অনেক্ষন আগে। এখনই জর্জ সাহেব আসবে। কিন্তু, ইমন এখনো বুঝতে পারছেনা কে তার বিরুদ্ধে 'ইভটিজিং' এর মামলা করল। ততক্ষণে, জর্জ সাহেব চলে আসছে।
---অর্ড়ার!! অর্ড়ার!! উকিল সিরাজ, আপনার মক্কেল তো কাঠগড়ায় দাড়ানো আছে। কিন্তু, উকিল শিহাবের মক্কেল অর্থাৎ, যে মেয়েটি ইমনের নামে ইভটিজিং এর মামলা দায়ের করেছিল, ঔ মেয়েটি কোথায়? (জর্জ সাহেব)
-আমার মক্কেল বাহিরে দাড়িয়ে আছে। এখনি ড়াকছি আমি। এই নিশি, ভিতরে আস তো? (উকিল শিহাব)
.
নিশি নামের মেয়েটি ভেতরে প্রবেশ করছে। আর, ইমন তো দেখেই হতবাক। তাহলে, এই মেয়েটি আমার নামে ইভটিজিং এর মামলা করল (ইমন মনে মনে ভাবছে)। কিন্তু, আমি তো মেয়েটির কথা উকিলকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। তাহলে, এখন কী হবে??
ততক্ষণে, মেয়েটি কাঠগড়ায় এসে দাড়াল।
---তুমি কি সেই মেয়ে যে কিনা, এই ছেলেটির নামে ইভটিজিং এর মামলা করল?? (জর্জ)
---জ্বী জর্জ সাহেব। এই ছেলেটি আমাকে ইভটিজিং করার চেষ্টা করেছে। (নিশি)
---না, জর্জ সাহেব!! ও মিথ্যা কথা বলছে। আমি মেয়েটিকে ইভটিজিং করার চেষ্টা করিনি। (ইমন)
---আচ্ছা, ইমন তুমি যে নিশিকে ইভটিজিং করার চেষ্টা করনি, তা কতটুকু সত্য?? (উকিল শিহাব)
---ওকে, তাহলে আমি নিজেই বলছিঃ গতকাল বিকেলে রাস্তা দিয়ে আসার সময় এই মেয়েটিকে (নিশি) দেখলাম। যে মেয়েটির মাথায় কোনো কাপড় নেই। তাই চুল গুলো খুব ভালো ভাবেই দেখা যাচ্ছে। চুল গুলো পেঁছানো পেঁছানো, যা দেখতে একদম নুডুলস এর মতো। তাই, আমি চিৎকার করে বলতে লাগলাম, নুডুলস....!! নুডুলস....!! তখন, মেয়েটি (নিশি) আমার দিকে আগুনের চোখে তাকিয়ে ছিল। আমার মনে হলো, তার চোখ থেকে আগুনের গুলা বের হয়ে আমাকে পুড়ে ছাই করে দেবে। তাই, আমি তাড়াতাড়ি দৌঁড়ে ওখান থেকে পালিয়ে এলাম। আর, এটাতো কোনো ইভটিজিং এর মধ্যে পারেনা। আমি তো শুধু ওর চুল দেখেই 'নুডুলস' বললাম। কিন্তু, আমি তো ওকে বিশ্রি ভাষায় কোনো কথা বলিনি। আমি ওকে নুডুলস বলার পেছনে, দোষটা আমার না। দোষটা ওর নিজের। কারণ, ওর মাথায় কোনো উড়না ছিলনা। ও যদি এভাবে বেপর্দায় ঘর থেকে বের না হতো কিংবা ও যদি বোরখা পরে পর্দাশীল হয়ে ঘর থেকে বের হতো, তাহলে তো ওকে নুডুলস বলে ডাকার কোনো প্রশ্নই উঠতো না। কারণ, ঔ সময় তার পুরো শরীর বোরখায় ঢাকা থাকত। আচ্ছা, ঠিক আছে আমি নাহয় ওকে দেখে শুধু নুডুলসই বলেছি। কিন্তু, সবাই তো আর ভালো হয়না, কেউ কেউ খারাপও হয়। আচ্ছা, আপনি আমাকে একটা কথা বলুন তো, ঔ সময় যদি আমার জায়গায় অন্য একটা খারাপ ছেলে থাকতো। তখন কী আপনি ওর দিকে আগুনের চোখে তাকাতে পারতেন? নাকি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখান থেকে খেঁটে পরতেন!! কেন আজ চারিদিকে ইভটিজিং এবং পরে ধর্ষণ?? সব কিছু শুধু মাত্রই মেয়েদের বেপর্দার কারণেই হয়ে থাকে।
.
আপনারা ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে চান। মাঝে মাঝে ছেলেদের মতো শার্ট-প্যান্ট ও পরেন। সব মিলিয়ে যতটুকু সম্ভব আমেরিকানদের স্টাইল ফলো করার চেষ্টা করেন। আর যখন, ধর্ষণের শিকার হন, তখন সৌধি আরবের স্টাইলে বিচার চান। কিন্তু, কেন এইসব?? সৌধি আরবের মেয়েদের মতো পর্দাশীল হয়ে চলার চেষ্টা করেননা, তাহলে সৌধি আরবের স্টাইলে বিচার কেন চাইবেন? ইসলাম কি আপনাকে ত্রী-পিছ আর শার্ট-প্যান্ট পরে ঘর থেকে বের হতে বলেছে?? নাকি, যথাযথ পর্দার সহিত ঘর থেকে বের হতে বলেছে। এর উত্তর নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। আর যখন, এর উত্তর আপনার কাছে অজানা নয়, তাহলে, অহেতুক কেন বেপর্দা হয়ে ঘর থেকে বের হন। আমার আর কিছুই বলার নেই জর্জ সাহেব। আমার অপরাধের কারণে আমাকে উপযুক্ত শাস্তি দিন। প্লীজ। (ইমন)
---না। জর্জ সাহেব, না। আপনি ওনাকে শাস্তি দিবেননা। নাহলে, আমি যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা। এটা আমার ভুল। আমাকে মামলাটি তুলে নিয়ে নিজেকে প্রাশ্চ্যিত্ব করার সুযোগ দিন জর্জ সাহেব। (এই বলে কেঁদে দিল নিশি)
---অর্ড়ার!! অর্ড়ার!! নিশি নিজ থেকে মামলা তুলে নেওয়াই এবং ইমন নিজের সত্য কথা শিকার করার কারণে আদালত তাকে এই মামলা থেকে মুক্তি দিচ্ছে। আজকের আদালত এখানেই সমাপ্ত। (এই বলে জর্জ সাহেব চলে গেল)
---Congratulations মি. ইমন। (উকিল সিরাজ)
---সব কিছু তো আপনিই করেছেন। ধন্যবাদটা অবশ্যই আপনার প্রাপ্য। ধন্যবাদ মি. আবুল দারোগা!! না, না, স্যরি মি. উকিল সিরাজ!! হাঃ হাঃ হাঃ
.
সবাই চলে যাচ্ছে। নিশিও চলে যাচ্ছে, তবে হাসি মুখে নয়, চোখের জল মুচতে মুচতে। নিশিকে কাঁদতে দেখে ইমনের খুব মায়া হলো। মানে, Something..!! Something..!!
.
---দোস্ত!! এবার চল যাই। (রাকিব)
---হুম, চল। (ইমন)
.
রাকিব নিজের বাসায় চলে গেল, আর ইমন ম্যাচে। সব কিছু পূনরায় আবার ঠিকঠাক মতো চলতে লাগল। এর প্রায় ১০-১৫ দিন পর শুরু হয় ইমনের পরীক্ষা। সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে ইমন নিজের বাড়ি রাউজানে চলে যাই। নিজের বাড়িতে বেশ কিছুদিন থাকার পর সোজা চলে যায় নানুর বাড়িতে। আর, নানুর বাড়িতে গেলেই ইমন সর্বপ্রথম চলে যায় তানজিদের বাসায়। তানজিদের সাথে যেন ইমনের হৃৎপিন্ডটা লাগানো। দুজন দুজনকে ছাড়া তো থাকতেই পারেনা। সব সময় গল্প গুজব, আড্ডা, এদিক থেকে এদিক ঘুরাফেরা এইসব। এভাবেই কেটে যায় ইমনের নানুর বাড়ির দিনগুলো। দুজন একসাথে হলেই যেন শুধু সুখ আর সুখ। অমর হোক তাদের দুজনের বন্ধুত্ব। নানুর বাড়িতো আর নিজের বাড়ি না! যে, সারাজীবন থেকে যাবে। তাই, রোববার ইমন বিদায় জানায় তানজিদকে। তানজিদ সেদিন নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি, কেঁদেই দিয়েছিল সেদিন। ইমন প্রায় পাঁচ দিন নানুর বাড়ি থাকার পর, নিজের বাড়ি চলে যায়। আর, নিজের বাড়ি থেকে আবার শহরে। কারণ, কয়েকদিন পর থেকেই ক্লাস শুরু।
.
ইমন কোনো একদিন বিকাল বেলা আনমনে হাঁটছিল। একা একা হাঁটতে তার ভালোই লাগে। প্রকৃতির মধ্যে সে নিজেকে উপভোগ করতে পারে। হাঁটতে... হাঁটতে... হঠাৎ
---এই যে, শুনছেন!! (পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে আওয়াজ)
(ইমন পেছনে ফিরে দেখল, বোরখা পরা একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে সামান্য দূরে জোড়া চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। তখন, ইমন এদিক ওদিক তাকালো, দেখলো, ও ছাড়া এখানে অন্য কেউ নেই।)
---আপনি কী আমাকে বলছেন?? (ইমন)
---হ্যাঁ। আপনাকে বলছি!! (মেয়ে)
(ইমন মেয়েটির সামনে গেল)
---কেমন আছেন? (মেয়ে)
---ভালো। কিন্তু, আপনাকে তো চিনলাম না? (ইমন)
---আমাকে চেনেন নি? (মেয়ে)
---কই? নাতো? (ইমন)
---আমি হলাম, আপনার সেই নুডুলস এর মতো চুল ওয়ালা মেয়েটি অর্থাৎ নিশি। (নিশি)
---ওহ! তাই বলুন। আপনি এত Change....!! কিন্তু, কিভাবে?? (ইমন)
---জানিনা। আমি তো আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু, আপনি কোথায় ছিলেন। (নিশি)
---আমি!! পরীক্ষা শেষ হয়েছিল, তাই বাড়িতে গিয়েছিলাম। (ইমন)
---ওহ! আসলে আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি। কিন্তু, কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা। আপনি যদি.... (নিশিকে থামিয়ে দিল ইমন)
---নিশি, wait.. wait.. আচ্ছা, আপনি কী আমাকে ঐ কথাটি বলতে চাচ্ছেন, যে কথাটা বললে আপনার জন্য আমার হৃদয়ে আলাদা একটি জায়গা তৈরি হবে?? (ইমন)
---আপনি কিভাবে বুঝলেন!! আমি যে আপনাকে সেই কথাটি বলতে চাচ্ছি?? (নিশি)
---কারণ, আপনি আমাকে এখন যেই কথাটি বলতে চাচ্ছেন। সেটা যে আমি মনে মনে সেদিন আদালতেই বলে ফেলেছিলাম। (ইমন)
---সত্যি!! (নিশি)
---মিথ্যাও কিন্তু না। (ইমন)
.
সব কথা কী বলতে হয়?? কিছু সাধারণ কথা নিজের থেকেই বুঝে নিতে হয়। যা গোপন থাকে। (সমাপ্ত)
.
বিঃদ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

No comments

Powered by Blogger.