ভালোবাসি
হাতে একটা বই নিয়ে বারান্দায় বসে
থাকাটা একটা নিয়মের মধ্যে পড়ে গেছে
আমার জন্য।দুপুরে খাওয়ার পর থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত এভাবেই বসে থাকি।মাঝে মাঝে
ভুল করে বইয়ের পাতায় এক দুইবার চোখ
পড়লেও একটা অক্ষরও স্পষ্ট দেখতাম না।
বইয়ের পাতায়ও উনার মুখ ভেসে উঠতো।মূলত
উনাকে দেখার জন্যই বারান্দায় বসে
থাকতাম।
.
গাছে পানি দেয়ার জন্য বারান্দায় গেলাম
সেদিন।বাইরে তাকাতেই রাস্তার ওপাশে
দাড়িয়ে থাকা কয়েকজনের মধ্য থেকে
একজনের উপর আমার চোখ আটকে গেলো।
দ্বিতীয় বার যখন তাকালাম তখন বেশ
ভালো করেই উনার পূর্ণ অবয়বটা দেখে
নিলাম।রাজপুত্রের মতো সুন্দর নয় তবে
প্রথম
দেখায় মায়া লেগে যাওয়ার মতো।আর
আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো।মায়ায় পড়ে
গেলাম আমি।সেদিনের পর থেকেই
প্রতিদিন বারান্দায় গিয়ে বসে থাকি।
.
আমার ভাইয়া আগে থেকেই ঢাকায়
থাকতেন।তবে বাবা মা আমাকে
হোস্টেলে
বা হলে কোথাও একা ছাড়তে রাজি নন আর
আমিও এর আগে একা কোথাও থাকিনি।
তাই
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চান্স পাওয়ার
সুবাদে আমি আর আব্বু আম্মুও ঢাকায় চলে
আসলাম।বলতে গেলে আমি এখানে
একেবারেই নতুন।
.
কিছুদিন পরই উনাদের আড্ডার মাঝে
ভাইয়াকেও দেখতে পেলাম।বুঝতে পারলাম
বাসার সামনের রাস্তায় যারা আড্ডা
মারেন তারা ভাইয়ার বন্ধু কিংবা বেশ
পরিচিত কেউ।
.
উনাকে যতই দেখতাম ততোই অবাক হতাম
আর
ভালো লাগা বেড়ে যেতে লাগলো।
অন্যেরা কম করে একবার করে তাকালেও
উনাকে কখনোই আমাদের বারান্দার দিকে
তাকাতে দেখিনি।যদি উনি তাকাতো
তাহলে যে কতোবার চোখাচোখি হতো কে
জানে।
একটা ব্যাপার বুঝতে আমার একটু সময়
লেগেছিলো।হঠাৎ করেই উনি আড্ডা ছেড়ে
উঠে যেতেন।আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে
আসতেন।মাঝে মাঝে দেখতাম আমার
ভাইয়া আর অন্য বন্ধুদেরকেও উনার সাথে
যাওয়ার জন্য হাত ধরে টানাটানি করতেন।
কেউ যেতো আর কেউ যেতোনা।অনেক
চিন্তা করে বের করলাম যে আসরের
নামাজ
পড়ার জন্যই উনি উঠে যেতেন।বুঝলাম উনি
নিয়মিত নামাজ পড়েন।ব্যাপারটা এতো
ভালো লেগেছিলো যে বুঝাতে পারবোনা।
আমিও যে আজকাল ভালো মেয়ে হয়ে
যাচ্ছি তার পিছনে উনার হাত আছে কিনা
বুঝতে পারছিনা।হয়তো আছে হয়তো নেই।
আম্মুতো আমার উপর বেশ খুশি।আমি আগে
থেকেই আম্মুর লক্ষী মেয়ে ছিলাম আর
এবার
লক্ষীগিরি আরএকটু বেড়ে গেলো সাথে
আমার প্রশংসাও "আমার মেয়ের উপর
আল্লাহর রহমত পড়ছে।পাঁচওয়াক্ত
নামাজ,কুরআন তিলাওয়াত করছে।আল্লাহ
তুমি আমার ছেলের উপরও রহমত বর্ষণ করো
আমিন "
.
ক্লাশে যাওয়া আর কোন দরকার ছাড়া
বাসা থেকে খুব একটা বের হতাম না।আগে
মাথায় ঘোমটা না দিলেও এখন ওড়না টেনে
ঘোমটা দেই।উনাদের সামনে দিয়ে যখন
যেতাম তখন ভাইয়া আমাকে দেখে এমন
ভাব করতেন যেন আমাকে চিনেনই না আর
আমিও তাই করতাম।সেদিন ভাইয়ার ডাক
শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে
তাকিয়ে পিপড়াদের হাটাচলা পর্যবেক্ষণ
করছি কিন্তু উনাকে এতো সামনে থেকে
দেখতে পেয়ে আমার বুকের ভেতর ডিপডিপ
করছিলো।ভাইয়া বললেন
-কই গেছিলি?
-চা পাতা আনতে
-আমাকে ফোন করে বললেই পারতি,তুই
নিচে নামলি কেন?
-আমি আম্মুকে বলছি কিন্তু আম্মু বললো
তুমি
অকর্মার ঢেঁ…
-ওই চুপ চুপ আর বলিসনা।বন্ধুদের সামনে মান
ইজ্জত ডুবাই ফেলবি মনে হচ্ছে।দেখি তোর
হাতে ভাংতি কতো টাকা আছে?
.
আমার হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে নিলো।
আমার হাতে বিশটাকার একটা নোট গুঁজে
দিয়ে বললো
-এইনে তোর ঘুস।আম্মারে বলবি তুই
বাকিটাকা রাস্তায় হারাই ফেলছিস
-আমি মিথ্যে বলবো কেন?আর আমি
রাস্তায়
টাকা হারাবো এটা আম্মু বিশ্বাস করবেনা
কারণ আমি তোর মতো না
-আর কয়দিন বাদে যখন চাকরি পেয়ে যাবো
তখন তো আমার কাছেই হাত পাতবি।
.
বাসায় যাওয়ার সময় পেছন থেকে শুনতে
পেলাম কেউ একজন ভাইয়াকে বলছিলো "ও
তোর বোন দীপা?কোন ভার্সিটিতে যেন
পড়ে?"
.
দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিলো।অনেক
দিনই এই অচেনা অজানা শহরে কেটে
গেছে।খারাপ লাগতো ভার্সিটিতে এসে।
কারণ তখনো পর্যন্ত বন্ধু তো দূরে থাক
তেমন
কোন বান্ধবীই মেলাতে পারিনি যাকে
আমি আমার খুব কাছের ভাববো।এই সময়টায়
কলেজের বান্ধবীদের কথা একটু বেশিই মনে
পড়তো আর বান্ধবী না থাকার সুবাদে আমি
উনার কথা একটু বেশিই ভাবতাম। ও হ্যা
উনার নাম হাসান।একদিন এই নামেই
উনাকে
কেউ একজন ডাকতে শুনেছি।
.
ঈদের পরে একদিন ভাইয়ার সব বন্ধুরা
আমাদের বাসায় এসেছিলেন।উনিও ছিলেন
সাথে।উনি যে একেবারে শান্ত তা কিন্তু
নয়।অনেক দুষ্টুমি করতেও জানে।
-হাসান তোর এমন ঘন কালো চুলের রহস্য
কি?
আমরা সবাই তো টাক হয়ে যাচ্ছি আর তোর
মাথায় চুলের জঙ্গল।
-সকালে নারিকেল তেল ,দুপুরে সরিষার
তেল আর রাতে কদুর তেল ব্যাস ।ভাই
তোদের জন্য আমার আফসোস লাগে।বউ যে
আদর করে চুলে হাত বুলাই দিবে তাও
পারবেনা।এখনই এই অবস্থা বিয়ে হতে
হতেই
মাথা পুরাই কেশবিহীন হয়ে পড়বে।এই টাক
মাথা নিয়ে বউ পাবি কিনা সন্দেহ।
.
উনার কথা শুনে আমি আমার রুমের
বিছানায়
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
ভাইয়ার অন্যসব বন্ধুরা আমার সাথে হাই
হ্যালো কথা বললেও উনি কখনোই আমার
সাথে কথা বলেননি।আমি অন্যদেরকে
ভাইয়া ডাকলেও উনাকে ভাইয়া ডাকার
কথা ভাবতেই নিজের মধ্যে কেমন জানি
জড়তা কাজ করতো।
.
ভাইয়ার ফোন বাজলে মাঝে মধ্যে
দেখতাম স্ক্রীনে হাসান নাম ভেসে
উঠেছে কিন্তু রিসিভ করার সাহস পেতাম
না কেন জানি অথচ অন্যদের কল ঠিকই
রিসিভ করতাম।রিসিভ করার জন্য হাত
কেমন নিশফিশ করতো আর উনার কথা শুনার
জন্যও বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠতো।
একদিন সাহস করে রিসিভ করেই ফেললাম
-হ্যা হ্যা হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
-হ্যালো, কে?
-আমি… দীপা
-ও আচ্ছা,দীপ্ত কোথায়?
-ভাইয়া তো গোসল করে
-ও আচ্ছা রাখি তাহলে,বাই
.
আমি কেমন আছি সেটাও জানতে
চাইলোনা?এমন কেন এই লোকটা?আপনি যদি
আমার ভাইয়ার বন্ধু না হতেন তাইলে
আপনারে…কি?কিছুই করতে পারতাম না।
.
পরীক্ষার কারণে এখন বারান্দায় যাওয়া
হয়না।আর উনাকেও তেমন দেখিনা।একদিন
বিকেলে পড়তে বসছিলাম।মনে হলো বাইরে
থেকে কেউ ভাইয়ার নাম ধরে ডাকছে।
বারান্দায় গিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে
আছে।আমাকে দেখে বললেন
-দীপ্ত বাসায় নেই?
-হ্যা আছে,আমি ডেকে দিচ্ছি।
এরপর বেশ কয়েকদিন উনি বাসার সামনে
এসে ভাইয়াকে ডাকতেন আর আমি
বারান্দায় গিয়ে কখনো বলতাম ভাইয়া
ঘুমুচ্ছে বা বাসায় নেই বা বাসায় আছে।
.
মাঝে মধ্যে দেখতাম বাসার সামনেই
উনারা ক্যারাম খেলতো।উনাদের হৈ চৈ
এর
শব্দ আমাদের বাসা পর্যন্ত আসতো।
শীতকালে বারান্দায় বসে আমি রাত একটা
দুটো পর্যন্ত উনাদের ব্যাডমিন্টন খেলা
দেখতাম।আমি ভাবতাম আমার ভাইয়াই সব
থেকে ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে
এখন দেখি উনিই আমার ভাইয়ার থেকেও
ভালো খেলেন।
.
কয়েকবার ভাইয়ার রুমে গিয়ে আবার ফিরে
এসেছি।ভাইয়া কম্পিউটারের স্ক্রিন
থেকে
চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকায় আর
চোখের ভ্রু উঁচু করে কোন কথা না বলে
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।আমি একটু হেসে
মাথা নেড়ে আবার চলে আসি।এবার একবুক
সাহস সঞ্চয় করে গেলাম ভাইয়ার সামনে।
কিন্তু কিছুই হলোনা।যখন চলে আসার জন্য
পা
বাড়াতে যাবো তখন ভাইয়া ডাক দিলেন
-এই দীপা কি হইছে কি তোর?প্রবলেম কি?
-কককই ?কোন প্রবলেম নাই?
-আব্বু নতুন মোবাইল কিনে দিছে তোরে।
আমারে তো ট্রিট ও দিলিনা
-ট্রিট? কেনার পর থেকে আমার ফোন তো
তুই
ইউজ করছিস।আচ্ছা যা কালকে তোকে আমি
নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবো।
-এহহ…এখন তোর মতলব কি বল?টাকা লাগলে
আমার কাছে ঘুরে লাভ নাই
-টাকা না তো
-তাইলে কি?
-ভাইয়া তুই না বলছিলি?
-কি বলছিলাম?
-ওইযে বলছিলি না যে আমার এইচএসসি
পরীক্ষা শেষ হলে?
-কি?এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে তোকে
বিয়ে দিবো বলছি?
-ধ্যাত্তেরি!
-তাইলে আমি বিয়ে করবো বলছি?
-ধুরর,বলছিলি যে আমাকে একটা ফেইসবুক
একাউন্ট খুলে দিবি।এখন তো আমি অনার্স
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি কিন্তু আমার একটা
ফেইসবুক একাউন্ট নাই।আমি কিন্তু চাইলেই
নিজে খুলতে পারতাম কিন্তু তোর ভয়ে
.
ভাইয়ার মিউচুয়াল ছিলো বলে হাসান
আহমেদকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি।ফেইসবুক
বলতে আমি বুঝতাম হাসান আহমেদের
প্রোফাইলে পড়ে থাকা।উনার ছবি আর
স্ট্যাটাসের প্রায় সব কমেন্টস ইতিমধ্যেই
আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।কিন্তু কেন জানি
রিকোয়েস্ট পাঠাইনি।
.
ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখি উনি গেটের
সামনে দাড়িয়ে আছে।ভাবলাম সারাক্ষণ
উনাকে নিয়ে কল্পনা করি বলেই হয়নি
চোখের সামনে উনার ছবি ভাসছে।
মোবাইল
হাতে নিয়ে দেখি আব্বু,আম্মু আর ভাইয়ার
নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসডকল।কি
ব্যাপার?এতোগুলো কল দেয়ার কারণ কি?
কোন সমস্যা হয়নিতো?ধুরর কি সব উল্টা
পাল্টা ভাবছি?আব্বু আম্মুকে কল করে
পেলাম না।দুইবারের সময় ভাইয়া কল
রিসিভ
করলেন
- হ্যাঁ ভাইয়া বল
-দীপা তুই কই?
-এইতো বের হলাম ক্লাস থেকে।এতোবার
ফোন দিলিযে?
-দীপা
.
ভাইয়া কেঁদে উঠলেন।কান্নার জন্য ভাইয়া
কথা বলতে পারছিলেননা।বুকের ভেতর
মোচড় দিয়ে উঠলো।আম্মুর কিছু হয়নিতো?
-কি হইছে ভাইয়া?কথা বলছিস না ক্যান?
কান্না করতেছিস ক্যান?
-দাদা আর নেই,দীপা।
-কি?
.
মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো।
আমার অন্যতম দুর্বলতার জায়গা হলো
আমার
দাদা।দাদাকে এতো বেশি ভালোবাসি
যে
আম্মু আব্বুকেও মনে হয় এতো
ভালোবাসিনা।
তাই তার চলে যাওয়ার খবর টা এভাবে
মেনে নিতে পারছিলাম না। সিড়িতে ধপ
করে বসে কাঁদতে লাগলাম।
-দীপা শোন কাদিস না প্লিজ।
-কবে হলো এমনটা ভাইয়া?
-সকালেই।শোন আমি আব্বু আম্মুকে নিয়ে
গ্রামে চলে যাচ্ছি।বাড়ি পৌছাতে অনেক
আরও দু'তিন ঘন্টা লাগবে
-মানে কি?আমাকে না নিয়েই?আমি
যাবোনা?তোরা আমার জন্য অপেক্ষা
করলিনা ক্যান?
-মাথা ঠান্ডা কর।কাল থেকে তোর
পরীক্ষা।তুই কিভাবে আসবি?আর যদি
কাছে
হতো তাইলে একটা কথা ছিলো।
-আমি থাকবো কোথায়?আমি একা বাসায়
কিভাবে থাকবো?আমি থাকতে পারবোনা।
আমি এক্ষুণি বাসে উঠবো,আমি দাদাকে
শেষবারের মতো দেখবোনা?
-তুই আসতে অনেক রাত হবে ততক্ষণ দাদাকে
রাখবেনা।আর তোর থাকার ব্যবস্থা করেই
আসছি আমি।তুই হাসানদের বাসায় থাকবি
-কিহ?কেন?আমি ওই বাসায় কেন থাকবো?
-এই ছাড়া আর কোন ওয়ে নাই।আর ওই বাসায়
তোর কোন প্রবলেম হবেনা।আমি হাসানের
কাছে আমাদের বাসার চাবি দিয়ে গেছি।
তুই বাসায় গিয়ে জামাকাপড় আর বই খাতা
নিয়ে ওর সাথে ওদের বাসায় যাবি।আচ্ছা
ও এখনো আসেনাই তোর ভার্সিটিতে?
আমিতো ওকে অনেক আগেই বলছি
.
এখন বুঝতে পারছি আমি আসলে উনাকে
সত্যিই দেখেছি।এতক্ষণ খেয়ালই করিনি
উনি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।হাতের
তালু দিয়ে চোখের পানি মুছলাম।নিজেকে
কিছুটা কন্ট্রোল করলাম।ভাইয়াকে বললাম
-কিন্তু ভাইয়া আমি উনার বাসায় কেন
থাকবো?আমার ফ্রেন্ড রিয়ার বাসায়
থাকি।
-কোন রিয়া?ওইযে যেই মেয়েটার ভাই তোর
পিছে ঘুরছিলো কয়দিন?কোন দরকার নাই ওই
বাসায় যাওয়ার।তুই হাসানের বাসায়ই
সেফ।
আর আমাদের তিন বিল্ডিং পরেই ওদের
বাসা।
.
আমাকে টেনশন করতে না বলে আর ঠান্ডা
মাথায় পরীক্ষা দেয়ার কথা বলে ভাইয়া
কল কেটে দিলেন।উনি আমার দিকে
তাকিয়ে বললেন
-চলো
.
রিক্সায় উঠে বসলাম।এই প্রথমবার আমি
উনার এতো কাছাকাছি।কিন্তু সেদিকে
আমার কোন খেয়াল নেই।আমিযে ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কাঁদছি এটা যেন আশে পাশের কেউ
দেখতে বা বুঝতে না পারে তাই উনি
রিক্সার হুড তুলে দিলেন।আমার ইচ্ছে
করছিলো কাউকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে
কাঁদি তাহলে মনে হয় একটু হালকা লাগবে।
উনাকে কেন জানি আমার খুব আপন,খুব
কাছের কেউ মনে হলো আর তাই আগ পিছ
না
ভেবে হঠাৎ উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে
লাগলাম।উনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন
কিন্তু আমাকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা
করলেননা।রিক্সাওয়ালা মামা একবার
পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলেন
-উনার কি হইছে মামা?
-কিছু হয়নাই।আপনি সামনে
তাকান,বারবার
পিছনে তাকানোর দরকার নাই।
.
উনাদের বাসায় যাওয়ার পর উনার আম্মু আর
ভাবী আমাকে খুব সহজেই গ্রহণ করলেন।
আমাকে বোঝালেন আমি যেন এটা নিজের
বাসা মনে করি,আর কোন চিন্তা না করি।
আমি ঠিকমতো পড়ছি কিনা,ঠিকমতো
খাচ্ছি কিনা সব খেয়াল করতেন।আমাদের
বাসায় থাকতে দেখা যেত কখনো না
খেয়েই ক্লাসে যেতাম কিংবা রাতে না
খেয়ে শুয়ে পড়তাম কিন্তু এ বাসায় আসার
পর "খাবোনা" বললেও উনারা খাওয়ার জন্য
জোর করতেন।আন্টি বলতেন " না খেয়ে
শুকিয়ে কাট হয়ে গেলে তোমার আম্মু তো
ভাববে আমরা তোমার যত্ন নেইনি
ঠিকমতো।" লজ্জা পেতাম বলে উনাদের
কথার উপর আর কোন কথা বলতাম না।
উনাদের
আন্তরিকতা সত্যিই আমার মন ছুয়ে গেলো।
.
আর এদিকে আমি যে উনার বাসায় আছি
এটা
মনে হয় উনার খেয়ালই নেই।দরকার ছাড়া
আমার সাথে কথাই বলতোনা।একই বাসায়
থাকা সত্ত্বেও উনার সাথে আমার খুব কম
দেখা হতো।একদিন ভাইয়ার সাথে ফোনে
কথা বলছিলাম
-তুই টাকাটা পাঠিয়ে দে,আমার হাতে এক
টাকাও নাই
-আজিব!তুই হাসানের কাছ থেকে নিয়ে নে
-না,আমি উনার কাছে চাইতে পারবোনা।
তুই
পাঠা
-আচ্ছা আমি ওকে বলে দিচ্ছি তোকে পাঁচশ
টাকা দেয়ার জন্য।
-না না না না তুই বিকাশে পাঠিয়ে দে
আমি এতো কিছু জানিনা।
.
কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলাম উনি
আমার
পাশে দাড়িয়ে।টেবিলের উপর দুটো পাঁচশ
টাকার নোট রাখলেন।আমি উনার চোখের
দিকে তাকাতেই একটু হেসে বেরিয়ে
গেলেন রুম থেকে।
.
আট দশদিন পর আম্মুরা গ্রাম থেকে ফিরে
এলেন।আন্টি আর ভাবীকে বললাম আবার
উনাদের বাসায় আসবো আর উনাদেরকেও
আমাদের বাসায় যেতে বললাম।উনাকে
ছেড়ে চলে আসতে খুব খারাপ লাগছিলো।
.
আম্মু আমাকে দেখে বললেন
-আমার মেয়েটা কতো শুকিয়ে
গেছে,গায়ের রংটাও কেমন কালো হয়ে
গেছে।
.
ভাইয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে বলেন
- কি বলো আম্মা?দীপা তো আগের থেকে
সুন্দর হয়ে গেছে আর একটু মোটাও হইছে ।
উনারা কি একটু বেশিই খাওয়াইছে? এবার
তো তাইলে আমিও কয়েকদিন গিয়ে
থাকতে হবে ওই বাসায়"
.
ক্লাস থেকে বাসায় ফিরছিলাম।উনাকে
দেখলাম হাতের ফাইল টা মাথার উপর ধরে
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছেন।আমি
রিক্সাওয়ালা মামাকে থামতে বললাম।
মাথায় একটা ঘোমটা টেনে উনার সামনে
গেলাম।আমাকে দেখে উনি ভূত দেখার
মতো তাকালেন।
-তুমি?
- জি,আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন যে?
-রিক্সা পাচ্ছিনা
- আমিতো বাসার দিকেই যাচ্ছি,আমার
সাথে আসতে পারেন।
-না ঠিক আছে,তুমি যাও।একটু সামনে হেটে
গেলেই রিক্সা পেয়ে যাবো।
.
আমি কিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসলাম।
দেড় দুমিনিট পর উনি আমার পাশে এসে
বসলেন।যদিও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার
চেষ্টা করছিলেন কিন্তু এতোটুকু রিক্সায়
আবার দূরত্ব!
.
দুজনেই কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করলাম।
আমি
মাথায় ঘোমটা তুলতেই ব্যাস্ত।
-থাক,মাথায় যখন ঘোমটা থাকতে চাইছেনা
তখন চেষ্টা করাটা বৃথা।
.
আমি কোন কথা বললাম না।ওড়না ঠিক করে
বসে রইলাম।উনি আবার বললেন
-বিকেলে বারান্দায় বসে থাকো কেন?
-এমনি।না না এমনি না।বারান্দায় বসে বই
পড়ি
-আমার তো মনে হয়না।সবসময় আমার দিকে
তাকিয়ে থাকো কেন?
-কককই নাতো।আমি আপনার দিকে
তাকাবো
কেন?
-আমার যতদূর মনে হয় তোমার চোখ ট্যারা
না।
.
কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।তবে হঠাৎ
ই
অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো।প্রথমবারের
মতো হওয়ায় আবেশে চোখ বন্ধ করে
ফেললাম।উনি বেশ শক্ত করেই আমার হাত
চেপে ধরলেন।ছাড়িয়ে নেয়ার মতো কোন
শক্তি ছিলোনা আমার মাঝে,আসলে মন
থেকে সাড়াই পাচ্ছিলাম না।আমার খুব
কাছে আসলেন
-কি?বলোনা কেন?আমার দিকে তাকিয়ে
থাকতে কেন সবসময়?
.
বলে আমার হাতে ছোট্ট করে চাপ দিলেন।
আমার হাতটা উনার বুকের বাম পাশে চেপে
ধরলেন।বললেন
-কিছু বুঝতে পারছো?ফিল করছো কিছু?
.
আমার চোখে পানি টলমল করছিলো।
যেকোন
মুহুর্তে তা গড়িয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত
ছিলো।
-আমি এখানেই নেমে যাচ্ছি।
.
উনার এমন কথায় আমার কল্পনায় ছেদ
পড়লো।
এতক্ষণ আমি সব কল্পনা করছিলাম?ধ্যাত্ত
েরিকা।বাইরে তাকিয়ে দেখি বাসার
কাছাকাছি চলে এসেছি।উনার দিকে
তাকাতেই উনি আবার বললেন
-না মানে তোমাকে আর আমাকে একসাথে
দেখতে পেলে অনেকেই অনেক কথা
ভাববে।তুমি বাসায় চলে যাও,আমি এখান
থেকে হেটে চলে যাবো।মামা,বামে একটু
সাইড করে রাখেন।
.
রাতে খাওয়া শেষে টিভির সামনে
বসলাম।
একের পর এক চ্যানেল চেঞ্জ করছি কিন্তু
দেখার মতো কিছুই পাচ্ছিলাম না।আম্মু
এসে
বললেন
-কিরে? কতক্ষণ ধরে বেল বাজছে শুনতে
পাচ্ছিস না?
.
ভাইয়া এসেই আমার হাত থেকে রিমোটটা
নিয়ে নিলেন।আম্মু বললেন
-এতোরাত পর্যন্ত কই ছিলি?সারাদিনরাত
টেই টেই করে ঘুরা ছাড়া আর কাজ নাই
তাইনা?
- আম্মা তুমি আমাকে এখনো বকা দাও
কেন?
আমি এখন বড় হইছিনা?
-বড় কই হইলি?এখনো বাবার কাছ থেকে হাত
খরচ নিস।এতোদিন ধরে খুঁজেও একটা চাকরি
পেলিনা।আয় এখন খেতে আয়।
-খেয়ে আসছি।হাসান খুবই ভালো একটা জব
পাইছে তাই ট্রিট দিছে।
.
হাসান নাম শুনতেই বুকের ভেতর ঘন্টা
বেজে উঠলো।খুশি খুশি চোখে ভাইয়াকে
বললাম
-তাই নাকি?কোথায় জব পাইছে?
-তুই এতো খুশি ক্যান?মনে হচ্ছে যেন তোর
ভাই জব পাইছে।
-ধুরর,ভাইয়া!কি বলিস এসব?উনি আমার ভাই
হতে যাবে কেন?
-আমার বন্ধু তোর ভাই না তো কি?
-না না দরকার নাই আমার এতো ভাইয়ের।
তুমি আমার একমাত্র আদরের ভাই।তোমার
ভাগ আর কাউকে দিতে পারবোনা
-হইছে আর আল্লাদ দেখাতে হবেনা
.
টেবিলে গোছগাছ করতে করতে আম্মু বললেন
-দুনিয়ার সব ছেলেই চাকরি করে বিয়া
শাদী করে দুতিন বাচ্চার বাপ হয়ে যাবে
খালি আমার ছেলেটাই চাকরি পাবেনা।
অকর্মার ঢেঁকি
.
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
-উনি আল্লাহর কাছে চাইছে বলেই চাকরি
পাইছে।তুমি আল্লাহকে খুশি করতে
পারোনা তাই আল্লাহ ও তোমাকে খুশি
করেনা
-কি কইতে চাস তুই?
-তোমার বন্ধু আমি আবার বলছি তোমার বন্ধু
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে
বলছে চাকরি পাওয়ার জন্য তাই পাইছে।
-তুই ক্যামনে জানিস ও নামাজ পড়ে?
-বা রে!আমি উনাদের বাসায় ছিলামনা
মনে হয়।তখন দেখেছি উনি নামাজ পড়ে
তাও আবার মসজিদে গিয়ে
.
এবার আম্মু আবার শুরু করলেন
-দুনিয়ার সব ছেলেই নামাজ পড়ে আর আমার
ছেলে খালি শুক্রবার আসলেই হুজুর হয়ে যায়
তাও এক বেলার জন্য।হাসানকে দেখে একটু
শিখতে পারিস না?ওর মায়ের কোন দুঃখ
নেই।দুই ছেলেই একেবারে রত্ন
.
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত
কিড়মিড় করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
.
কিছুদিন পার হয়ে গেলো।উনাকে এখন আর
রাস্তায় আড্ডা মারতে দেখিনা বলে
বারান্দায় খুবই কম যাই।
বাসায় পা রাখতেই মনে হলো সবকিছু কেমন
যেন নীরব।দরজা খোলার সময় আম্মুর মুখটাও
অন্যরকম দেখলাম।আমার রুমের দিকে পা
বাড়াতেই ভাইয়া ডাক দিলেন
-দীপা এইদিকে আয়
.
এতক্ষণে খেয়াল করলাম আব্বু,আম্মু,ভাইয়া
তিনজনি চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
সবাইকে
এতো সিরিয়াস মুডে দেখাচ্ছে কেন?আমার
দিকে তাদের তাকানোর স্টাইল দেখে
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।অথচ ভয় পাওয়ার
মতো কিছু করেছি বলে আমার মনে হয়না।
ভাইয়া বললেন
-হাসানের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
.
কথাটা শুনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
বলে কি?হাসানের সাথে আমার কিসের
সম্পর্ক?কোন সম্পর্ক নাইতো?আমি ভাইয়ার
দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া
আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমি এবার
সত্যিই বেশ ভয় পাচ্ছিলাম।
- কিরে?বল কিসের সম্পর্ক?
ভাইয়ার ধমক শুনে ভয়ে চমকে উঠলাম।
-কোন সম্পর্ক নাই।আজিব ব্যাপার!কি বলো
না বলো?
- তাইলে হাসান বললো যে?
- কি বললো?যা বলছে সব মিথ্যা বলছে
.
নিজের নামে মিথ্যে অপবাদ শুনে আমার
চোখে পানি টলমল করছিলো।
- তাইলে সত্যি টা তুই বল।কার সাথে সম্পর্ক
তোর?
-ভাইয়া আমার কারও সাথেই সম্পর্ক নাই
-সত্যি করে বল
-বললাম তো আমার কারও সাথে সম্পর্ক নাই
- তাইলে তো ভালোই।আমরা যেখানে
বলবো সেখানেই বিয়ে করবি।কালকে
তোকে দেখতে আসবে
-মানে কি?আমি এখন বিয়ে টিয়ে করতে
পারবোনা
- হাসানকেও না ?
.
ভাইয়ার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে
পারছিলাম না।কথায় কথায় হাসান হাসান
করে কেন?কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে
আছি।
- আরে বল!না বললে বুঝবো কিভাবে?হাসান
কে তোর পছন্দ?
.
মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে কঠিন
পরীক্ষার সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন শুনতে
পেলাম।যার উত্তর জানা সত্ত্বেও আমি
বলতে পারছিনা।কত কিছুই ভাবছিলাম।যদি
বলি পছন্দ করি তাহলে যদি ভাইয়া একটা
থাপ্পড় দেয়?আবার পছন্দ করিনা সেটাও
বলতে পারছিনা।ভাইয়া বললেন
-নীরবতা সম্মতির লক্ষণ!আম্মা আমি
বলছিনা
তোমারে যে দীপা হাসানকে পছন্দ করে?
.
অনেক্ষণ চুপ থাকার পর আব্বু কথা বললেন
এবার
-হাসানের পরিবারের সবাই তোমাকে খুব
পছন্দ করে।উনারা আজই আসতে
চেয়েছিলেন
কিন্তু হাসান বললো একবার তোমার মত
জেনে নিতে।তোমার কোন আপত্তি আছে?
.
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।হ্যা না
কিছুই বলছিলাম না।ভাইয়া আমার কাছে
এসে বললেন
-বল তোর আপত্তি নাই?বল না!আম্মা
দেখেন
দীপা কিন্তু মনে মনে হাসতেছে আর লজ্জা
পাচ্ছে, তার মানে ও রাজি।
.
ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।ভাইয়ার
চোখেও পানি।আমার চোখের কোনে জমে
থাকা পানিটাও গড়িয়ে পড়লো।
-তোর সাথে দুষ্টুমি করছিলাম।আমিতো
জানি তোর সাথে হাসানের কোন সম্পর্ক
নেই।তোকে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।
তুই অনেক সুখে থাকবি আমি গ্যারান্টি
দিয়ে বলছি।আম্মা তুমি বিশ্বাস করবানা
আমি আজকে কতোটা খুশি আর নিশ্চিন্ত।
আম্মা আমি দীপাকে কি ডাকবো
বলোতো?
বন্ধুর বউকেতো সবাই ভাবী ডাকে?আমি
বুঝি আমার নিজের বোনকে ভাবী ডাকবো?
.
আম্মা বললেন
-আজকের তারিখটা মনে রাখতে হবে।দুই
দুইটা খুশির খবর একসাথে পেলাম।আমার
ছেলেমেয়েদের নিয়ে আর কোন চিন্তা
থাকলোনা।
আমি বললাম
-ভাইয়ারও বিয়ে ঠিক হইছে নাকি?
.
ভাইয়া আমার কান টেনে বললেন
-বিয়ে ছাড়া দুনিয়াতে আর কোন খুশির খবর
নাই?আমার চাকরি হয়ে গেছে গাধী
-সত্যি?এতো খুশির একটা খবর আর তুমি
আমার
জন্য কিছুই আনলানা?
-তোর বিয়ের খবর আনলাম এরপরও আরও কিছু
লাগবে তোর?
-ভাইয়া,মাইর খাবি কিন্তু
.
দৌড়ে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।নাচলে
চলবেনা।যিনি আমার মনের আশা কবুল
করেছেন তার কাছে আগে শুকরিয়া আদায়
করতে হবে।
.
নামাজ শেষ করে উঠে দাড়াতেই বারান্দা
দিয়ে উনার ডাক শুনতে পেলাম।আজকে একটু
বেশিই লজ্জা পাচ্ছি উনাকে দেখে।উনার
দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।কেমন
যেন
নতুন জামাই জামাই লাগছিলো উনাকে।
উনিও মনে হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছিলো।উনার
হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিলো আমাকে কিছু
বলতে চান কিন্তু বলতে পারছেননা আর
আমিও উনার কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য
আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
-ইয়ে মানে,দীপ্ত বাসায় নেই?
-আছে,ডেকে দিচ্ছি
- না না ডাকতে হবেনা।ইয়ে মানে না
মানে আচ্ছা ডেকে দাও
.
আমি বিছানার উপর বসে আছি।রজনীগন্ধা
ফুলের ঘ্রাণে পুরো ঘর মাতোয়ারা।ভাইয়া
আর তার বন্ধুরা উনাকে ভেতরে আসতে
দিচ্ছিলোনা।উনি বললেন
-দীপ্ত আমি তোর বোনজামাই।কোথায় তুই
আমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করবি আর
তুই নিজেই টাকা চেয়ে বসে আছিস।
-কিসের বোনজামাই?আমি এখন তোর বন্ধু।
টাকা না দিলে তোরে ভেতরে যাইতে
দিবোনা।
-না তুই আমার সমন্ধী।তুই আমার বাসায়
আসলি ক্যান?বিয়ের দিন শ্বশুরবাড়িতে
বোনের সাথে কোন ভাইকে আসতে
দেখিনি আমি
-না আমি তোর শালা।সমন্ধী হলে আমার
নাম
ধরে ডাকিস ক্যান?আর তুই করে বলিস ক্যান?
- আচ্ছা আমি দুঃখিত দীপ্ত ভাইয়া।এই নেন
পাঁচশ টাকা।আপনারা সবাই চা খাইয়েন।
এবার আপনি প্লিজ আমার আর আপনার
বন্ধুদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।
আর আমার টাকা আপনাদেরকে দিলে
আপনার বোনের জন্য শাড়ি,চুড়ি কিনবো
কিভাবে?
-কথা সত্যি।খবরদার আমার বোনের সাথে
কিন্তু কিপটেমি করবিনা।
-আচ্ছা ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।দোয়া
করবেন আমাদের জন্য।গুড নাইট ভাইয়া
.
বিছানা থেকে নেমে উনার পা ছুঁয়ে
সালাম করলাম।কোন কিছুই আর আমার
চাওয়া
নেই।যাকে মন থেকে চেয়েছি সে আজ
থেকে সারাজীবনের জন্য আমার ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ দেয়ার মতো
উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।দুজনে মিলে
নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া
আদায়
করলাম।
.
উনি আমার পাশে এসে বসলেন।
-একটা গল্প শুনবা?
.
মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম।উনি
বলতে শুরু করলেন
-একটা মেয়ে
.
আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি আবার
বললেন
-একটা ছেলেও আছে।মেয়েটা বারান্দায়
বসে থাকতো আর ছেলেটা তাকিয়ে
থাকতো।তবে বেশি তাকাতে পারতোনা
পাছে মেয়েটার চোখে ধরা পড়ে যায়।
ছেলেটার ইচ্ছে করতো মেয়েটাকে গিয়ে
গাল টেনে বলতে "এই মেয়ে তুমি আমার
দিকে তাকাই থাকো কেন?তোমার জন্য
আমি তোমার দিকে ভালো করে তাকাতেই
পারিনা আর এভাবে বারান্দায় বসে
থাকো
কেন?রাস্তার ছেলেগুলো তোমার দিকে
তাকিয়ে থাকে এইটা আমার ভালো লাগে
বলো?"
-তারপর?
-গল্পটা কি কমন মনে হচ্ছে?অবশ্য আমার
মনে
হয় এই গল্প তুমি আর আমি ছাড়া কেউই
জানেনা
-আমিও জানিনা
-তাই নাকি?
-জি
-তাহলে শোনো আমার কাছ থেকে।
ছেলেটা অনেক বার ভেবেছে মেয়েটাকে
গিয়ে তার ভালোলাগার কথা বলবে কিন্তু
কেন জানি মেয়েটার সামনে গেলেই সে
সব কথা গিলে ফেলতো।
-ছেলেটা কি মেয়েটাকে ভয় পেতো?
-কিজানি?পেত মনে হয়।যদিও মেয়েটা বাঘ
ভাল্লুক না।বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম
ব্যাপার টা কেমন জানি লাগছিলো তাই
আর মেয়েটাকে কিছুই জানায়নি ছেলেটা
-তারপর?
-একদিন সব বন্ধুরা মিলে মেয়েটার বাসায়
যায়।ছেলেটা মূলত মেয়েটাকে দেখার
জন্যই গিয়েছে।পানির গ্লাস নেয়ার ছলে
ছেলেটা মেয়েটার হাত ছুয়ে দেয়।
মেয়েটাকি সেটা বুঝতে পেরেছে?
- সম্ভবত।
-মেয়েটার পরীক্ষার কারণে বারান্দায়
আসতোনা।আর ছেলেটা তাকে দেখার জন্য
মেয়েটার ভাইয়ের নাম ধরে ডাকতো যেন
মেয়েটা বারান্দায় আসে
-কত্তো শয়তান
-মেয়েটার বান্ধবীর ভাই ওকে ডিস্টার্ব
করতো।কথাটা শুনে ছেলেটা সহ্য করতে
পারেনি।তাই বান্ধবীর ভাইকে গিয়ে কষে
দুচড় লাগিয়ে বলেছে"ওর দিকে যেন আর
তাকাতে না দেখি"
-তাই নাকি?আমিতো ভেবেছি ভাইয়া
গিয়ে ঝাঁরি মেরেছে সেই ছেলেকে
- তোমার ভাইয়া ঝাঁরি মেরেছে কিন্তু
আমি যে থাপ্পড় দিয়ে আসছি ওইটা
তোমার
ভাইয়াও জানেনা এখনো।
-আমি তাইলে বলে দিবো
- না থাক।সেদিনের কথা মনে আছে?যেদিন
তোমার দাদা মারা গিয়েছিলেন?রিক্সায়
হঠাৎ করে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে
কান্না শুরু করে দিলা।
-সরি
-সরি?আমার তখন মনে হয়েছিলো ওই মুহুর্তে
আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই।আমিই
তোমার একমাত্র ভরসা।
-আমারও সেটাই মনে হয়েছিলো।
-তুমি যেদিন আমাদের বাড়ি থেকে চলে
যাচ্ছিলে আমার মনে হয়েছিলো আমার
খুবই
দামী কিছু আমার কাছ থেকে দূরে সরে
যাচ্ছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।সেদিনি
বুঝতে পারলাম তোমাকে আমার
লাগবেই,তোমাকে ছাড়া চলবেনা।
-কচু
-সত্যিই।তুমি আমাদের বাসায় আসার পর
দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ নাচানাচি করছি।
নিজেকে বাচ্চা মনে হয়েছিলো।আর
ভাবছি "আমার বউ আমার বাসায় আসছে।
কি
মজা কি মজা!"
-তাই নাকি?আমিতো কোন গানের আওয়াজ
পেলাম না।
-হেডফোন লাগিয়ে ছিলাম কানে।
-মিচকে শয়তান
-ওইদিন যখন তুমি রিক্সায় বসতে বললা মনে
মনে খুশিই হয়েছিলাম।তুমি বারবার
মাথায়
ঘোমটা টেনে দিচ্ছিলে।আমার ইচ্ছে
করেছিলো তোমাকে বলি ঘোমটা দিতে
হবেনা।
-বলেননাই ক্যান?একটা কথাও বলেননি
সেদিন
-কিজানি?বলতে চেয়েছি কিন্তু মুখের
কাছে এসে কথা আবার গিলে ফেলতাম।
তোমার হাত ধরার জন্য আমার হাত কেমন
জানি করছিলো।তুমি চড় মারবা এই ভয়ে
তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।
নয়তো সেদিন সত্যিই হাত ধরতাম।
-চাপা
-সত্যিই।ইয়ে মানে এখন তোমার হাত ধরি?
.
এতক্ষণে তিনি আমার হাত ধরলেন।উনি
আমার আঙ্গুল নিয়ে দুষ্টুমি করছিলেন।
-এতো চিকন ক্যান তোমার আঙ্গুল গুলা?
-আমি অনেক মোটা তাই
-এহহ মোটা!আর কিছু বললাম না।
-ভাইয়াকে কিভাবে বললেন কথাটা?
-আর বইলোনা!দীপ্তকে আমি সেদিন কেন
এতো ভয় পাচ্ছিলাম আল্লাহই ভালো
জানে।ওকে আমার কাছে বন্ধু মনে
হচ্ছিলোনা,মনে হচ্ছিলো প্রেমিকার বড়
ভাই।
-হিহিহি,তারপর?
-অনেকবার বলবো বলবো করেও বলিনি।
এইদিকে আম্মা আর ভাবী বলছিলো আমি
না
বলতে পারলে তারাই দীপ্তকে জানাবে।
কিন্তু আমি বলেছি আমি জানাবো।পরে
একদিন বলেই ফেললাম।
-কি বলেছেন?
-কতো সুন্দর করে কথা গুছিয়ে রেখেছি।
কিন্তু সব গুলিয়ে ফেলেছি।এক নিঃশ্বাসে
বললাম "দীপ্ত,দীপাকে দিবি?আমার জন্য?
মানে আমার বউ হিসেবে?মানে আমি ওকে
বিয়ে করতে চাই।আমার আম্মারও ওকে খুব
পছন্দ।"
-এইভাবে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়?ভাইয়া
আপনাকে মারেনাই?
-প্রথমে অবাক হয়ছিলো।ও ভেবেছিলো
তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আছে।পরে
অবশ্য আমি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছি।কিছুই
বলেনি শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো
"আমার বোনকে দেখে রাখবি"
-তারপর?
-তারপরদীপ্তর বোন আজ আমার ঘরে,বউ
সেজে।
-তারপর?
-তারপর?
-হুমম
-তারপর সেদিনের মতো একবার জড়িয়ে
ধরো।
-ধ্যাত
.
উনি আমাকে উনার বুকে টেনে নিলেন।
সেদিন কাছের কাউকে হারানোর বেদনায়
কেঁদেছি আজ আরও কাছের কাউকে পাওয়ার
আনন্দে চোখ ভিজে এসেছে।দুটো হৃদয়ের
স্পন্দন একতালে চলছে ।উনি দুহাত দিয়ে
আলতো করে আমার মুখ ধরলেন,সাথে সাথে
চোখের মিলনও ঘটছে।বললেন
-ভালোবাসি
-কাকে?
-তোমাকে
-ও আচ্ছা
-তুমি বাসোনা?
-না
-সত্যি?
-মিথ্যা
-তাইলে বলো
-না বললে হয়না?
-না হয়না।একবার বলো
-আমিও
-আমিও কি?
-ভালোবাসি
-কাকে?
-আপনাকে
-আপনাকে?
-না তোমাকে
থাকাটা একটা নিয়মের মধ্যে পড়ে গেছে
আমার জন্য।দুপুরে খাওয়ার পর থেকে সন্ধ্যা
পর্যন্ত এভাবেই বসে থাকি।মাঝে মাঝে
ভুল করে বইয়ের পাতায় এক দুইবার চোখ
পড়লেও একটা অক্ষরও স্পষ্ট দেখতাম না।
বইয়ের পাতায়ও উনার মুখ ভেসে উঠতো।মূলত
উনাকে দেখার জন্যই বারান্দায় বসে
থাকতাম।
.
গাছে পানি দেয়ার জন্য বারান্দায় গেলাম
সেদিন।বাইরে তাকাতেই রাস্তার ওপাশে
দাড়িয়ে থাকা কয়েকজনের মধ্য থেকে
একজনের উপর আমার চোখ আটকে গেলো।
দ্বিতীয় বার যখন তাকালাম তখন বেশ
ভালো করেই উনার পূর্ণ অবয়বটা দেখে
নিলাম।রাজপুত্রের মতো সুন্দর নয় তবে
প্রথম
দেখায় মায়া লেগে যাওয়ার মতো।আর
আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো।মায়ায় পড়ে
গেলাম আমি।সেদিনের পর থেকেই
প্রতিদিন বারান্দায় গিয়ে বসে থাকি।
.
আমার ভাইয়া আগে থেকেই ঢাকায়
থাকতেন।তবে বাবা মা আমাকে
হোস্টেলে
বা হলে কোথাও একা ছাড়তে রাজি নন আর
আমিও এর আগে একা কোথাও থাকিনি।
তাই
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চান্স পাওয়ার
সুবাদে আমি আর আব্বু আম্মুও ঢাকায় চলে
আসলাম।বলতে গেলে আমি এখানে
একেবারেই নতুন।
.
কিছুদিন পরই উনাদের আড্ডার মাঝে
ভাইয়াকেও দেখতে পেলাম।বুঝতে পারলাম
বাসার সামনের রাস্তায় যারা আড্ডা
মারেন তারা ভাইয়ার বন্ধু কিংবা বেশ
পরিচিত কেউ।
.
উনাকে যতই দেখতাম ততোই অবাক হতাম
আর
ভালো লাগা বেড়ে যেতে লাগলো।
অন্যেরা কম করে একবার করে তাকালেও
উনাকে কখনোই আমাদের বারান্দার দিকে
তাকাতে দেখিনি।যদি উনি তাকাতো
তাহলে যে কতোবার চোখাচোখি হতো কে
জানে।
একটা ব্যাপার বুঝতে আমার একটু সময়
লেগেছিলো।হঠাৎ করেই উনি আড্ডা ছেড়ে
উঠে যেতেন।আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে
আসতেন।মাঝে মাঝে দেখতাম আমার
ভাইয়া আর অন্য বন্ধুদেরকেও উনার সাথে
যাওয়ার জন্য হাত ধরে টানাটানি করতেন।
কেউ যেতো আর কেউ যেতোনা।অনেক
চিন্তা করে বের করলাম যে আসরের
নামাজ
পড়ার জন্যই উনি উঠে যেতেন।বুঝলাম উনি
নিয়মিত নামাজ পড়েন।ব্যাপারটা এতো
ভালো লেগেছিলো যে বুঝাতে পারবোনা।
আমিও যে আজকাল ভালো মেয়ে হয়ে
যাচ্ছি তার পিছনে উনার হাত আছে কিনা
বুঝতে পারছিনা।হয়তো আছে হয়তো নেই।
আম্মুতো আমার উপর বেশ খুশি।আমি আগে
থেকেই আম্মুর লক্ষী মেয়ে ছিলাম আর
এবার
লক্ষীগিরি আরএকটু বেড়ে গেলো সাথে
আমার প্রশংসাও "আমার মেয়ের উপর
আল্লাহর রহমত পড়ছে।পাঁচওয়াক্ত
নামাজ,কুরআন তিলাওয়াত করছে।আল্লাহ
তুমি আমার ছেলের উপরও রহমত বর্ষণ করো
আমিন "
.
ক্লাশে যাওয়া আর কোন দরকার ছাড়া
বাসা থেকে খুব একটা বের হতাম না।আগে
মাথায় ঘোমটা না দিলেও এখন ওড়না টেনে
ঘোমটা দেই।উনাদের সামনে দিয়ে যখন
যেতাম তখন ভাইয়া আমাকে দেখে এমন
ভাব করতেন যেন আমাকে চিনেনই না আর
আমিও তাই করতাম।সেদিন ভাইয়ার ডাক
শুনে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।
সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে
তাকিয়ে পিপড়াদের হাটাচলা পর্যবেক্ষণ
করছি কিন্তু উনাকে এতো সামনে থেকে
দেখতে পেয়ে আমার বুকের ভেতর ডিপডিপ
করছিলো।ভাইয়া বললেন
-কই গেছিলি?
-চা পাতা আনতে
-আমাকে ফোন করে বললেই পারতি,তুই
নিচে নামলি কেন?
-আমি আম্মুকে বলছি কিন্তু আম্মু বললো
তুমি
অকর্মার ঢেঁ…
-ওই চুপ চুপ আর বলিসনা।বন্ধুদের সামনে মান
ইজ্জত ডুবাই ফেলবি মনে হচ্ছে।দেখি তোর
হাতে ভাংতি কতো টাকা আছে?
.
আমার হাত থেকে টাকাগুলো নিয়ে নিলো।
আমার হাতে বিশটাকার একটা নোট গুঁজে
দিয়ে বললো
-এইনে তোর ঘুস।আম্মারে বলবি তুই
বাকিটাকা রাস্তায় হারাই ফেলছিস
-আমি মিথ্যে বলবো কেন?আর আমি
রাস্তায়
টাকা হারাবো এটা আম্মু বিশ্বাস করবেনা
কারণ আমি তোর মতো না
-আর কয়দিন বাদে যখন চাকরি পেয়ে যাবো
তখন তো আমার কাছেই হাত পাতবি।
.
বাসায় যাওয়ার সময় পেছন থেকে শুনতে
পেলাম কেউ একজন ভাইয়াকে বলছিলো "ও
তোর বোন দীপা?কোন ভার্সিটিতে যেন
পড়ে?"
.
দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিলো।অনেক
দিনই এই অচেনা অজানা শহরে কেটে
গেছে।খারাপ লাগতো ভার্সিটিতে এসে।
কারণ তখনো পর্যন্ত বন্ধু তো দূরে থাক
তেমন
কোন বান্ধবীই মেলাতে পারিনি যাকে
আমি আমার খুব কাছের ভাববো।এই সময়টায়
কলেজের বান্ধবীদের কথা একটু বেশিই মনে
পড়তো আর বান্ধবী না থাকার সুবাদে আমি
উনার কথা একটু বেশিই ভাবতাম। ও হ্যা
উনার নাম হাসান।একদিন এই নামেই
উনাকে
কেউ একজন ডাকতে শুনেছি।
.
ঈদের পরে একদিন ভাইয়ার সব বন্ধুরা
আমাদের বাসায় এসেছিলেন।উনিও ছিলেন
সাথে।উনি যে একেবারে শান্ত তা কিন্তু
নয়।অনেক দুষ্টুমি করতেও জানে।
-হাসান তোর এমন ঘন কালো চুলের রহস্য
কি?
আমরা সবাই তো টাক হয়ে যাচ্ছি আর তোর
মাথায় চুলের জঙ্গল।
-সকালে নারিকেল তেল ,দুপুরে সরিষার
তেল আর রাতে কদুর তেল ব্যাস ।ভাই
তোদের জন্য আমার আফসোস লাগে।বউ যে
আদর করে চুলে হাত বুলাই দিবে তাও
পারবেনা।এখনই এই অবস্থা বিয়ে হতে
হতেই
মাথা পুরাই কেশবিহীন হয়ে পড়বে।এই টাক
মাথা নিয়ে বউ পাবি কিনা সন্দেহ।
.
উনার কথা শুনে আমি আমার রুমের
বিছানায়
হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
ভাইয়ার অন্যসব বন্ধুরা আমার সাথে হাই
হ্যালো কথা বললেও উনি কখনোই আমার
সাথে কথা বলেননি।আমি অন্যদেরকে
ভাইয়া ডাকলেও উনাকে ভাইয়া ডাকার
কথা ভাবতেই নিজের মধ্যে কেমন জানি
জড়তা কাজ করতো।
.
ভাইয়ার ফোন বাজলে মাঝে মধ্যে
দেখতাম স্ক্রীনে হাসান নাম ভেসে
উঠেছে কিন্তু রিসিভ করার সাহস পেতাম
না কেন জানি অথচ অন্যদের কল ঠিকই
রিসিভ করতাম।রিসিভ করার জন্য হাত
কেমন নিশফিশ করতো আর উনার কথা শুনার
জন্যও বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠতো।
একদিন সাহস করে রিসিভ করেই ফেললাম
-হ্যা হ্যা হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
-হ্যালো, কে?
-আমি… দীপা
-ও আচ্ছা,দীপ্ত কোথায়?
-ভাইয়া তো গোসল করে
-ও আচ্ছা রাখি তাহলে,বাই
.
আমি কেমন আছি সেটাও জানতে
চাইলোনা?এমন কেন এই লোকটা?আপনি যদি
আমার ভাইয়ার বন্ধু না হতেন তাইলে
আপনারে…কি?কিছুই করতে পারতাম না।
.
পরীক্ষার কারণে এখন বারান্দায় যাওয়া
হয়না।আর উনাকেও তেমন দেখিনা।একদিন
বিকেলে পড়তে বসছিলাম।মনে হলো বাইরে
থেকে কেউ ভাইয়ার নাম ধরে ডাকছে।
বারান্দায় গিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে
আছে।আমাকে দেখে বললেন
-দীপ্ত বাসায় নেই?
-হ্যা আছে,আমি ডেকে দিচ্ছি।
এরপর বেশ কয়েকদিন উনি বাসার সামনে
এসে ভাইয়াকে ডাকতেন আর আমি
বারান্দায় গিয়ে কখনো বলতাম ভাইয়া
ঘুমুচ্ছে বা বাসায় নেই বা বাসায় আছে।
.
মাঝে মধ্যে দেখতাম বাসার সামনেই
উনারা ক্যারাম খেলতো।উনাদের হৈ চৈ
এর
শব্দ আমাদের বাসা পর্যন্ত আসতো।
শীতকালে বারান্দায় বসে আমি রাত একটা
দুটো পর্যন্ত উনাদের ব্যাডমিন্টন খেলা
দেখতাম।আমি ভাবতাম আমার ভাইয়াই সব
থেকে ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে
এখন দেখি উনিই আমার ভাইয়ার থেকেও
ভালো খেলেন।
.
কয়েকবার ভাইয়ার রুমে গিয়ে আবার ফিরে
এসেছি।ভাইয়া কম্পিউটারের স্ক্রিন
থেকে
চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকায় আর
চোখের ভ্রু উঁচু করে কোন কথা না বলে
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।আমি একটু হেসে
মাথা নেড়ে আবার চলে আসি।এবার একবুক
সাহস সঞ্চয় করে গেলাম ভাইয়ার সামনে।
কিন্তু কিছুই হলোনা।যখন চলে আসার জন্য
পা
বাড়াতে যাবো তখন ভাইয়া ডাক দিলেন
-এই দীপা কি হইছে কি তোর?প্রবলেম কি?
-কককই ?কোন প্রবলেম নাই?
-আব্বু নতুন মোবাইল কিনে দিছে তোরে।
আমারে তো ট্রিট ও দিলিনা
-ট্রিট? কেনার পর থেকে আমার ফোন তো
তুই
ইউজ করছিস।আচ্ছা যা কালকে তোকে আমি
নিজের হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবো।
-এহহ…এখন তোর মতলব কি বল?টাকা লাগলে
আমার কাছে ঘুরে লাভ নাই
-টাকা না তো
-তাইলে কি?
-ভাইয়া তুই না বলছিলি?
-কি বলছিলাম?
-ওইযে বলছিলি না যে আমার এইচএসসি
পরীক্ষা শেষ হলে?
-কি?এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে তোকে
বিয়ে দিবো বলছি?
-ধ্যাত্তেরি!
-তাইলে আমি বিয়ে করবো বলছি?
-ধুরর,বলছিলি যে আমাকে একটা ফেইসবুক
একাউন্ট খুলে দিবি।এখন তো আমি অনার্স
সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি কিন্তু আমার একটা
ফেইসবুক একাউন্ট নাই।আমি কিন্তু চাইলেই
নিজে খুলতে পারতাম কিন্তু তোর ভয়ে
.
ভাইয়ার মিউচুয়াল ছিলো বলে হাসান
আহমেদকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি।ফেইসবুক
বলতে আমি বুঝতাম হাসান আহমেদের
প্রোফাইলে পড়ে থাকা।উনার ছবি আর
স্ট্যাটাসের প্রায় সব কমেন্টস ইতিমধ্যেই
আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।কিন্তু কেন জানি
রিকোয়েস্ট পাঠাইনি।
.
ক্লাস থেকে বেরিয়ে দেখি উনি গেটের
সামনে দাড়িয়ে আছে।ভাবলাম সারাক্ষণ
উনাকে নিয়ে কল্পনা করি বলেই হয়নি
চোখের সামনে উনার ছবি ভাসছে।
মোবাইল
হাতে নিয়ে দেখি আব্বু,আম্মু আর ভাইয়ার
নাম্বার থেকে অনেকগুলো মিসডকল।কি
ব্যাপার?এতোগুলো কল দেয়ার কারণ কি?
কোন সমস্যা হয়নিতো?ধুরর কি সব উল্টা
পাল্টা ভাবছি?আব্বু আম্মুকে কল করে
পেলাম না।দুইবারের সময় ভাইয়া কল
রিসিভ
করলেন
- হ্যাঁ ভাইয়া বল
-দীপা তুই কই?
-এইতো বের হলাম ক্লাস থেকে।এতোবার
ফোন দিলিযে?
-দীপা
.
ভাইয়া কেঁদে উঠলেন।কান্নার জন্য ভাইয়া
কথা বলতে পারছিলেননা।বুকের ভেতর
মোচড় দিয়ে উঠলো।আম্মুর কিছু হয়নিতো?
-কি হইছে ভাইয়া?কথা বলছিস না ক্যান?
কান্না করতেছিস ক্যান?
-দাদা আর নেই,দীপা।
-কি?
.
মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরতে লাগলো।
আমার অন্যতম দুর্বলতার জায়গা হলো
আমার
দাদা।দাদাকে এতো বেশি ভালোবাসি
যে
আম্মু আব্বুকেও মনে হয় এতো
ভালোবাসিনা।
তাই তার চলে যাওয়ার খবর টা এভাবে
মেনে নিতে পারছিলাম না। সিড়িতে ধপ
করে বসে কাঁদতে লাগলাম।
-দীপা শোন কাদিস না প্লিজ।
-কবে হলো এমনটা ভাইয়া?
-সকালেই।শোন আমি আব্বু আম্মুকে নিয়ে
গ্রামে চলে যাচ্ছি।বাড়ি পৌছাতে অনেক
আরও দু'তিন ঘন্টা লাগবে
-মানে কি?আমাকে না নিয়েই?আমি
যাবোনা?তোরা আমার জন্য অপেক্ষা
করলিনা ক্যান?
-মাথা ঠান্ডা কর।কাল থেকে তোর
পরীক্ষা।তুই কিভাবে আসবি?আর যদি
কাছে
হতো তাইলে একটা কথা ছিলো।
-আমি থাকবো কোথায়?আমি একা বাসায়
কিভাবে থাকবো?আমি থাকতে পারবোনা।
আমি এক্ষুণি বাসে উঠবো,আমি দাদাকে
শেষবারের মতো দেখবোনা?
-তুই আসতে অনেক রাত হবে ততক্ষণ দাদাকে
রাখবেনা।আর তোর থাকার ব্যবস্থা করেই
আসছি আমি।তুই হাসানদের বাসায় থাকবি
-কিহ?কেন?আমি ওই বাসায় কেন থাকবো?
-এই ছাড়া আর কোন ওয়ে নাই।আর ওই বাসায়
তোর কোন প্রবলেম হবেনা।আমি হাসানের
কাছে আমাদের বাসার চাবি দিয়ে গেছি।
তুই বাসায় গিয়ে জামাকাপড় আর বই খাতা
নিয়ে ওর সাথে ওদের বাসায় যাবি।আচ্ছা
ও এখনো আসেনাই তোর ভার্সিটিতে?
আমিতো ওকে অনেক আগেই বলছি
.
এখন বুঝতে পারছি আমি আসলে উনাকে
সত্যিই দেখেছি।এতক্ষণ খেয়ালই করিনি
উনি আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন।হাতের
তালু দিয়ে চোখের পানি মুছলাম।নিজেকে
কিছুটা কন্ট্রোল করলাম।ভাইয়াকে বললাম
-কিন্তু ভাইয়া আমি উনার বাসায় কেন
থাকবো?আমার ফ্রেন্ড রিয়ার বাসায়
থাকি।
-কোন রিয়া?ওইযে যেই মেয়েটার ভাই তোর
পিছে ঘুরছিলো কয়দিন?কোন দরকার নাই ওই
বাসায় যাওয়ার।তুই হাসানের বাসায়ই
সেফ।
আর আমাদের তিন বিল্ডিং পরেই ওদের
বাসা।
.
আমাকে টেনশন করতে না বলে আর ঠান্ডা
মাথায় পরীক্ষা দেয়ার কথা বলে ভাইয়া
কল কেটে দিলেন।উনি আমার দিকে
তাকিয়ে বললেন
-চলো
.
রিক্সায় উঠে বসলাম।এই প্রথমবার আমি
উনার এতো কাছাকাছি।কিন্তু সেদিকে
আমার কোন খেয়াল নেই।আমিযে ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কাঁদছি এটা যেন আশে পাশের কেউ
দেখতে বা বুঝতে না পারে তাই উনি
রিক্সার হুড তুলে দিলেন।আমার ইচ্ছে
করছিলো কাউকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে
কাঁদি তাহলে মনে হয় একটু হালকা লাগবে।
উনাকে কেন জানি আমার খুব আপন,খুব
কাছের কেউ মনে হলো আর তাই আগ পিছ
না
ভেবে হঠাৎ উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে
লাগলাম।উনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন
কিন্তু আমাকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা
করলেননা।রিক্সাওয়ালা মামা একবার
পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলেন
-উনার কি হইছে মামা?
-কিছু হয়নাই।আপনি সামনে
তাকান,বারবার
পিছনে তাকানোর দরকার নাই।
.
উনাদের বাসায় যাওয়ার পর উনার আম্মু আর
ভাবী আমাকে খুব সহজেই গ্রহণ করলেন।
আমাকে বোঝালেন আমি যেন এটা নিজের
বাসা মনে করি,আর কোন চিন্তা না করি।
আমি ঠিকমতো পড়ছি কিনা,ঠিকমতো
খাচ্ছি কিনা সব খেয়াল করতেন।আমাদের
বাসায় থাকতে দেখা যেত কখনো না
খেয়েই ক্লাসে যেতাম কিংবা রাতে না
খেয়ে শুয়ে পড়তাম কিন্তু এ বাসায় আসার
পর "খাবোনা" বললেও উনারা খাওয়ার জন্য
জোর করতেন।আন্টি বলতেন " না খেয়ে
শুকিয়ে কাট হয়ে গেলে তোমার আম্মু তো
ভাববে আমরা তোমার যত্ন নেইনি
ঠিকমতো।" লজ্জা পেতাম বলে উনাদের
কথার উপর আর কোন কথা বলতাম না।
উনাদের
আন্তরিকতা সত্যিই আমার মন ছুয়ে গেলো।
.
আর এদিকে আমি যে উনার বাসায় আছি
এটা
মনে হয় উনার খেয়ালই নেই।দরকার ছাড়া
আমার সাথে কথাই বলতোনা।একই বাসায়
থাকা সত্ত্বেও উনার সাথে আমার খুব কম
দেখা হতো।একদিন ভাইয়ার সাথে ফোনে
কথা বলছিলাম
-তুই টাকাটা পাঠিয়ে দে,আমার হাতে এক
টাকাও নাই
-আজিব!তুই হাসানের কাছ থেকে নিয়ে নে
-না,আমি উনার কাছে চাইতে পারবোনা।
তুই
পাঠা
-আচ্ছা আমি ওকে বলে দিচ্ছি তোকে পাঁচশ
টাকা দেয়ার জন্য।
-না না না না তুই বিকাশে পাঠিয়ে দে
আমি এতো কিছু জানিনা।
.
কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখলাম উনি
আমার
পাশে দাড়িয়ে।টেবিলের উপর দুটো পাঁচশ
টাকার নোট রাখলেন।আমি উনার চোখের
দিকে তাকাতেই একটু হেসে বেরিয়ে
গেলেন রুম থেকে।
.
আট দশদিন পর আম্মুরা গ্রাম থেকে ফিরে
এলেন।আন্টি আর ভাবীকে বললাম আবার
উনাদের বাসায় আসবো আর উনাদেরকেও
আমাদের বাসায় যেতে বললাম।উনাকে
ছেড়ে চলে আসতে খুব খারাপ লাগছিলো।
.
আম্মু আমাকে দেখে বললেন
-আমার মেয়েটা কতো শুকিয়ে
গেছে,গায়ের রংটাও কেমন কালো হয়ে
গেছে।
.
ভাইয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে বলেন
- কি বলো আম্মা?দীপা তো আগের থেকে
সুন্দর হয়ে গেছে আর একটু মোটাও হইছে ।
উনারা কি একটু বেশিই খাওয়াইছে? এবার
তো তাইলে আমিও কয়েকদিন গিয়ে
থাকতে হবে ওই বাসায়"
.
ক্লাস থেকে বাসায় ফিরছিলাম।উনাকে
দেখলাম হাতের ফাইল টা মাথার উপর ধরে
রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছেন।আমি
রিক্সাওয়ালা মামাকে থামতে বললাম।
মাথায় একটা ঘোমটা টেনে উনার সামনে
গেলাম।আমাকে দেখে উনি ভূত দেখার
মতো তাকালেন।
-তুমি?
- জি,আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন যে?
-রিক্সা পাচ্ছিনা
- আমিতো বাসার দিকেই যাচ্ছি,আমার
সাথে আসতে পারেন।
-না ঠিক আছে,তুমি যাও।একটু সামনে হেটে
গেলেই রিক্সা পেয়ে যাবো।
.
আমি কিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসলাম।
দেড় দুমিনিট পর উনি আমার পাশে এসে
বসলেন।যদিও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার
চেষ্টা করছিলেন কিন্তু এতোটুকু রিক্সায়
আবার দূরত্ব!
.
দুজনেই কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করলাম।
আমি
মাথায় ঘোমটা তুলতেই ব্যাস্ত।
-থাক,মাথায় যখন ঘোমটা থাকতে চাইছেনা
তখন চেষ্টা করাটা বৃথা।
.
আমি কোন কথা বললাম না।ওড়না ঠিক করে
বসে রইলাম।উনি আবার বললেন
-বিকেলে বারান্দায় বসে থাকো কেন?
-এমনি।না না এমনি না।বারান্দায় বসে বই
পড়ি
-আমার তো মনে হয়না।সবসময় আমার দিকে
তাকিয়ে থাকো কেন?
-কককই নাতো।আমি আপনার দিকে
তাকাবো
কেন?
-আমার যতদূর মনে হয় তোমার চোখ ট্যারা
না।
.
কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।তবে হঠাৎ
ই
অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো।প্রথমবারের
মতো হওয়ায় আবেশে চোখ বন্ধ করে
ফেললাম।উনি বেশ শক্ত করেই আমার হাত
চেপে ধরলেন।ছাড়িয়ে নেয়ার মতো কোন
শক্তি ছিলোনা আমার মাঝে,আসলে মন
থেকে সাড়াই পাচ্ছিলাম না।আমার খুব
কাছে আসলেন
-কি?বলোনা কেন?আমার দিকে তাকিয়ে
থাকতে কেন সবসময়?
.
বলে আমার হাতে ছোট্ট করে চাপ দিলেন।
আমার হাতটা উনার বুকের বাম পাশে চেপে
ধরলেন।বললেন
-কিছু বুঝতে পারছো?ফিল করছো কিছু?
.
আমার চোখে পানি টলমল করছিলো।
যেকোন
মুহুর্তে তা গড়িয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত
ছিলো।
-আমি এখানেই নেমে যাচ্ছি।
.
উনার এমন কথায় আমার কল্পনায় ছেদ
পড়লো।
এতক্ষণ আমি সব কল্পনা করছিলাম?ধ্যাত্ত
েরিকা।বাইরে তাকিয়ে দেখি বাসার
কাছাকাছি চলে এসেছি।উনার দিকে
তাকাতেই উনি আবার বললেন
-না মানে তোমাকে আর আমাকে একসাথে
দেখতে পেলে অনেকেই অনেক কথা
ভাববে।তুমি বাসায় চলে যাও,আমি এখান
থেকে হেটে চলে যাবো।মামা,বামে একটু
সাইড করে রাখেন।
.
রাতে খাওয়া শেষে টিভির সামনে
বসলাম।
একের পর এক চ্যানেল চেঞ্জ করছি কিন্তু
দেখার মতো কিছুই পাচ্ছিলাম না।আম্মু
এসে
বললেন
-কিরে? কতক্ষণ ধরে বেল বাজছে শুনতে
পাচ্ছিস না?
.
ভাইয়া এসেই আমার হাত থেকে রিমোটটা
নিয়ে নিলেন।আম্মু বললেন
-এতোরাত পর্যন্ত কই ছিলি?সারাদিনরাত
টেই টেই করে ঘুরা ছাড়া আর কাজ নাই
তাইনা?
- আম্মা তুমি আমাকে এখনো বকা দাও
কেন?
আমি এখন বড় হইছিনা?
-বড় কই হইলি?এখনো বাবার কাছ থেকে হাত
খরচ নিস।এতোদিন ধরে খুঁজেও একটা চাকরি
পেলিনা।আয় এখন খেতে আয়।
-খেয়ে আসছি।হাসান খুবই ভালো একটা জব
পাইছে তাই ট্রিট দিছে।
.
হাসান নাম শুনতেই বুকের ভেতর ঘন্টা
বেজে উঠলো।খুশি খুশি চোখে ভাইয়াকে
বললাম
-তাই নাকি?কোথায় জব পাইছে?
-তুই এতো খুশি ক্যান?মনে হচ্ছে যেন তোর
ভাই জব পাইছে।
-ধুরর,ভাইয়া!কি বলিস এসব?উনি আমার ভাই
হতে যাবে কেন?
-আমার বন্ধু তোর ভাই না তো কি?
-না না দরকার নাই আমার এতো ভাইয়ের।
তুমি আমার একমাত্র আদরের ভাই।তোমার
ভাগ আর কাউকে দিতে পারবোনা
-হইছে আর আল্লাদ দেখাতে হবেনা
.
টেবিলে গোছগাছ করতে করতে আম্মু বললেন
-দুনিয়ার সব ছেলেই চাকরি করে বিয়া
শাদী করে দুতিন বাচ্চার বাপ হয়ে যাবে
খালি আমার ছেলেটাই চাকরি পাবেনা।
অকর্মার ঢেঁকি
.
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
-উনি আল্লাহর কাছে চাইছে বলেই চাকরি
পাইছে।তুমি আল্লাহকে খুশি করতে
পারোনা তাই আল্লাহ ও তোমাকে খুশি
করেনা
-কি কইতে চাস তুই?
-তোমার বন্ধু আমি আবার বলছি তোমার বন্ধু
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে
বলছে চাকরি পাওয়ার জন্য তাই পাইছে।
-তুই ক্যামনে জানিস ও নামাজ পড়ে?
-বা রে!আমি উনাদের বাসায় ছিলামনা
মনে হয়।তখন দেখেছি উনি নামাজ পড়ে
তাও আবার মসজিদে গিয়ে
.
এবার আম্মু আবার শুরু করলেন
-দুনিয়ার সব ছেলেই নামাজ পড়ে আর আমার
ছেলে খালি শুক্রবার আসলেই হুজুর হয়ে যায়
তাও এক বেলার জন্য।হাসানকে দেখে একটু
শিখতে পারিস না?ওর মায়ের কোন দুঃখ
নেই।দুই ছেলেই একেবারে রত্ন
.
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত
কিড়মিড় করে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
.
কিছুদিন পার হয়ে গেলো।উনাকে এখন আর
রাস্তায় আড্ডা মারতে দেখিনা বলে
বারান্দায় খুবই কম যাই।
বাসায় পা রাখতেই মনে হলো সবকিছু কেমন
যেন নীরব।দরজা খোলার সময় আম্মুর মুখটাও
অন্যরকম দেখলাম।আমার রুমের দিকে পা
বাড়াতেই ভাইয়া ডাক দিলেন
-দীপা এইদিকে আয়
.
এতক্ষণে খেয়াল করলাম আব্বু,আম্মু,ভাইয়া
তিনজনি চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
সবাইকে
এতো সিরিয়াস মুডে দেখাচ্ছে কেন?আমার
দিকে তাদের তাকানোর স্টাইল দেখে
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।অথচ ভয় পাওয়ার
মতো কিছু করেছি বলে আমার মনে হয়না।
ভাইয়া বললেন
-হাসানের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?
.
কথাটা শুনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
বলে কি?হাসানের সাথে আমার কিসের
সম্পর্ক?কোন সম্পর্ক নাইতো?আমি ভাইয়ার
দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া
আমার সামনে এসে দাড়ালেন।আমি এবার
সত্যিই বেশ ভয় পাচ্ছিলাম।
- কিরে?বল কিসের সম্পর্ক?
ভাইয়ার ধমক শুনে ভয়ে চমকে উঠলাম।
-কোন সম্পর্ক নাই।আজিব ব্যাপার!কি বলো
না বলো?
- তাইলে হাসান বললো যে?
- কি বললো?যা বলছে সব মিথ্যা বলছে
.
নিজের নামে মিথ্যে অপবাদ শুনে আমার
চোখে পানি টলমল করছিলো।
- তাইলে সত্যি টা তুই বল।কার সাথে সম্পর্ক
তোর?
-ভাইয়া আমার কারও সাথেই সম্পর্ক নাই
-সত্যি করে বল
-বললাম তো আমার কারও সাথে সম্পর্ক নাই
- তাইলে তো ভালোই।আমরা যেখানে
বলবো সেখানেই বিয়ে করবি।কালকে
তোকে দেখতে আসবে
-মানে কি?আমি এখন বিয়ে টিয়ে করতে
পারবোনা
- হাসানকেও না ?
.
ভাইয়ার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে
পারছিলাম না।কথায় কথায় হাসান হাসান
করে কেন?কিছু না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে
আছি।
- আরে বল!না বললে বুঝবো কিভাবে?হাসান
কে তোর পছন্দ?
.
মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে কঠিন
পরীক্ষার সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন শুনতে
পেলাম।যার উত্তর জানা সত্ত্বেও আমি
বলতে পারছিনা।কত কিছুই ভাবছিলাম।যদি
বলি পছন্দ করি তাহলে যদি ভাইয়া একটা
থাপ্পড় দেয়?আবার পছন্দ করিনা সেটাও
বলতে পারছিনা।ভাইয়া বললেন
-নীরবতা সম্মতির লক্ষণ!আম্মা আমি
বলছিনা
তোমারে যে দীপা হাসানকে পছন্দ করে?
.
অনেক্ষণ চুপ থাকার পর আব্বু কথা বললেন
এবার
-হাসানের পরিবারের সবাই তোমাকে খুব
পছন্দ করে।উনারা আজই আসতে
চেয়েছিলেন
কিন্তু হাসান বললো একবার তোমার মত
জেনে নিতে।তোমার কোন আপত্তি আছে?
.
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।হ্যা না
কিছুই বলছিলাম না।ভাইয়া আমার কাছে
এসে বললেন
-বল তোর আপত্তি নাই?বল না!আম্মা
দেখেন
দীপা কিন্তু মনে মনে হাসতেছে আর লজ্জা
পাচ্ছে, তার মানে ও রাজি।
.
ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।ভাইয়ার
চোখেও পানি।আমার চোখের কোনে জমে
থাকা পানিটাও গড়িয়ে পড়লো।
-তোর সাথে দুষ্টুমি করছিলাম।আমিতো
জানি তোর সাথে হাসানের কোন সম্পর্ক
নেই।তোকে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।
তুই অনেক সুখে থাকবি আমি গ্যারান্টি
দিয়ে বলছি।আম্মা তুমি বিশ্বাস করবানা
আমি আজকে কতোটা খুশি আর নিশ্চিন্ত।
আম্মা আমি দীপাকে কি ডাকবো
বলোতো?
বন্ধুর বউকেতো সবাই ভাবী ডাকে?আমি
বুঝি আমার নিজের বোনকে ভাবী ডাকবো?
.
আম্মা বললেন
-আজকের তারিখটা মনে রাখতে হবে।দুই
দুইটা খুশির খবর একসাথে পেলাম।আমার
ছেলেমেয়েদের নিয়ে আর কোন চিন্তা
থাকলোনা।
আমি বললাম
-ভাইয়ারও বিয়ে ঠিক হইছে নাকি?
.
ভাইয়া আমার কান টেনে বললেন
-বিয়ে ছাড়া দুনিয়াতে আর কোন খুশির খবর
নাই?আমার চাকরি হয়ে গেছে গাধী
-সত্যি?এতো খুশির একটা খবর আর তুমি
আমার
জন্য কিছুই আনলানা?
-তোর বিয়ের খবর আনলাম এরপরও আরও কিছু
লাগবে তোর?
-ভাইয়া,মাইর খাবি কিন্তু
.
দৌড়ে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।নাচলে
চলবেনা।যিনি আমার মনের আশা কবুল
করেছেন তার কাছে আগে শুকরিয়া আদায়
করতে হবে।
.
নামাজ শেষ করে উঠে দাড়াতেই বারান্দা
দিয়ে উনার ডাক শুনতে পেলাম।আজকে একটু
বেশিই লজ্জা পাচ্ছি উনাকে দেখে।উনার
দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।কেমন
যেন
নতুন জামাই জামাই লাগছিলো উনাকে।
উনিও মনে হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছিলো।উনার
হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিলো আমাকে কিছু
বলতে চান কিন্তু বলতে পারছেননা আর
আমিও উনার কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য
আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
-ইয়ে মানে,দীপ্ত বাসায় নেই?
-আছে,ডেকে দিচ্ছি
- না না ডাকতে হবেনা।ইয়ে মানে না
মানে আচ্ছা ডেকে দাও
.
আমি বিছানার উপর বসে আছি।রজনীগন্ধা
ফুলের ঘ্রাণে পুরো ঘর মাতোয়ারা।ভাইয়া
আর তার বন্ধুরা উনাকে ভেতরে আসতে
দিচ্ছিলোনা।উনি বললেন
-দীপ্ত আমি তোর বোনজামাই।কোথায় তুই
আমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করবি আর
তুই নিজেই টাকা চেয়ে বসে আছিস।
-কিসের বোনজামাই?আমি এখন তোর বন্ধু।
টাকা না দিলে তোরে ভেতরে যাইতে
দিবোনা।
-না তুই আমার সমন্ধী।তুই আমার বাসায়
আসলি ক্যান?বিয়ের দিন শ্বশুরবাড়িতে
বোনের সাথে কোন ভাইকে আসতে
দেখিনি আমি
-না আমি তোর শালা।সমন্ধী হলে আমার
নাম
ধরে ডাকিস ক্যান?আর তুই করে বলিস ক্যান?
- আচ্ছা আমি দুঃখিত দীপ্ত ভাইয়া।এই নেন
পাঁচশ টাকা।আপনারা সবাই চা খাইয়েন।
এবার আপনি প্লিজ আমার আর আপনার
বন্ধুদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।
আর আমার টাকা আপনাদেরকে দিলে
আপনার বোনের জন্য শাড়ি,চুড়ি কিনবো
কিভাবে?
-কথা সত্যি।খবরদার আমার বোনের সাথে
কিন্তু কিপটেমি করবিনা।
-আচ্ছা ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।দোয়া
করবেন আমাদের জন্য।গুড নাইট ভাইয়া
.
বিছানা থেকে নেমে উনার পা ছুঁয়ে
সালাম করলাম।কোন কিছুই আর আমার
চাওয়া
নেই।যাকে মন থেকে চেয়েছি সে আজ
থেকে সারাজীবনের জন্য আমার ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে ধন্যবাদ দেয়ার মতো
উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না।দুজনে মিলে
নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া
আদায়
করলাম।
.
উনি আমার পাশে এসে বসলেন।
-একটা গল্প শুনবা?
.
মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জবাব দিলাম।উনি
বলতে শুরু করলেন
-একটা মেয়ে
.
আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি আবার
বললেন
-একটা ছেলেও আছে।মেয়েটা বারান্দায়
বসে থাকতো আর ছেলেটা তাকিয়ে
থাকতো।তবে বেশি তাকাতে পারতোনা
পাছে মেয়েটার চোখে ধরা পড়ে যায়।
ছেলেটার ইচ্ছে করতো মেয়েটাকে গিয়ে
গাল টেনে বলতে "এই মেয়ে তুমি আমার
দিকে তাকাই থাকো কেন?তোমার জন্য
আমি তোমার দিকে ভালো করে তাকাতেই
পারিনা আর এভাবে বারান্দায় বসে
থাকো
কেন?রাস্তার ছেলেগুলো তোমার দিকে
তাকিয়ে থাকে এইটা আমার ভালো লাগে
বলো?"
-তারপর?
-গল্পটা কি কমন মনে হচ্ছে?অবশ্য আমার
মনে
হয় এই গল্প তুমি আর আমি ছাড়া কেউই
জানেনা
-আমিও জানিনা
-তাই নাকি?
-জি
-তাহলে শোনো আমার কাছ থেকে।
ছেলেটা অনেক বার ভেবেছে মেয়েটাকে
গিয়ে তার ভালোলাগার কথা বলবে কিন্তু
কেন জানি মেয়েটার সামনে গেলেই সে
সব কথা গিলে ফেলতো।
-ছেলেটা কি মেয়েটাকে ভয় পেতো?
-কিজানি?পেত মনে হয়।যদিও মেয়েটা বাঘ
ভাল্লুক না।বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম
ব্যাপার টা কেমন জানি লাগছিলো তাই
আর মেয়েটাকে কিছুই জানায়নি ছেলেটা
-তারপর?
-একদিন সব বন্ধুরা মিলে মেয়েটার বাসায়
যায়।ছেলেটা মূলত মেয়েটাকে দেখার
জন্যই গিয়েছে।পানির গ্লাস নেয়ার ছলে
ছেলেটা মেয়েটার হাত ছুয়ে দেয়।
মেয়েটাকি সেটা বুঝতে পেরেছে?
- সম্ভবত।
-মেয়েটার পরীক্ষার কারণে বারান্দায়
আসতোনা।আর ছেলেটা তাকে দেখার জন্য
মেয়েটার ভাইয়ের নাম ধরে ডাকতো যেন
মেয়েটা বারান্দায় আসে
-কত্তো শয়তান
-মেয়েটার বান্ধবীর ভাই ওকে ডিস্টার্ব
করতো।কথাটা শুনে ছেলেটা সহ্য করতে
পারেনি।তাই বান্ধবীর ভাইকে গিয়ে কষে
দুচড় লাগিয়ে বলেছে"ওর দিকে যেন আর
তাকাতে না দেখি"
-তাই নাকি?আমিতো ভেবেছি ভাইয়া
গিয়ে ঝাঁরি মেরেছে সেই ছেলেকে
- তোমার ভাইয়া ঝাঁরি মেরেছে কিন্তু
আমি যে থাপ্পড় দিয়ে আসছি ওইটা
তোমার
ভাইয়াও জানেনা এখনো।
-আমি তাইলে বলে দিবো
- না থাক।সেদিনের কথা মনে আছে?যেদিন
তোমার দাদা মারা গিয়েছিলেন?রিক্সায়
হঠাৎ করে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে
কান্না শুরু করে দিলা।
-সরি
-সরি?আমার তখন মনে হয়েছিলো ওই মুহুর্তে
আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই।আমিই
তোমার একমাত্র ভরসা।
-আমারও সেটাই মনে হয়েছিলো।
-তুমি যেদিন আমাদের বাড়ি থেকে চলে
যাচ্ছিলে আমার মনে হয়েছিলো আমার
খুবই
দামী কিছু আমার কাছ থেকে দূরে সরে
যাচ্ছিলো।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।সেদিনি
বুঝতে পারলাম তোমাকে আমার
লাগবেই,তোমাকে ছাড়া চলবেনা।
-কচু
-সত্যিই।তুমি আমাদের বাসায় আসার পর
দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ নাচানাচি করছি।
নিজেকে বাচ্চা মনে হয়েছিলো।আর
ভাবছি "আমার বউ আমার বাসায় আসছে।
কি
মজা কি মজা!"
-তাই নাকি?আমিতো কোন গানের আওয়াজ
পেলাম না।
-হেডফোন লাগিয়ে ছিলাম কানে।
-মিচকে শয়তান
-ওইদিন যখন তুমি রিক্সায় বসতে বললা মনে
মনে খুশিই হয়েছিলাম।তুমি বারবার
মাথায়
ঘোমটা টেনে দিচ্ছিলে।আমার ইচ্ছে
করেছিলো তোমাকে বলি ঘোমটা দিতে
হবেনা।
-বলেননাই ক্যান?একটা কথাও বলেননি
সেদিন
-কিজানি?বলতে চেয়েছি কিন্তু মুখের
কাছে এসে কথা আবার গিলে ফেলতাম।
তোমার হাত ধরার জন্য আমার হাত কেমন
জানি করছিলো।তুমি চড় মারবা এই ভয়ে
তাড়াতাড়ি রিক্সা থেকে নেমে গেলাম।
নয়তো সেদিন সত্যিই হাত ধরতাম।
-চাপা
-সত্যিই।ইয়ে মানে এখন তোমার হাত ধরি?
.
এতক্ষণে তিনি আমার হাত ধরলেন।উনি
আমার আঙ্গুল নিয়ে দুষ্টুমি করছিলেন।
-এতো চিকন ক্যান তোমার আঙ্গুল গুলা?
-আমি অনেক মোটা তাই
-এহহ মোটা!আর কিছু বললাম না।
-ভাইয়াকে কিভাবে বললেন কথাটা?
-আর বইলোনা!দীপ্তকে আমি সেদিন কেন
এতো ভয় পাচ্ছিলাম আল্লাহই ভালো
জানে।ওকে আমার কাছে বন্ধু মনে
হচ্ছিলোনা,মনে হচ্ছিলো প্রেমিকার বড়
ভাই।
-হিহিহি,তারপর?
-অনেকবার বলবো বলবো করেও বলিনি।
এইদিকে আম্মা আর ভাবী বলছিলো আমি
না
বলতে পারলে তারাই দীপ্তকে জানাবে।
কিন্তু আমি বলেছি আমি জানাবো।পরে
একদিন বলেই ফেললাম।
-কি বলেছেন?
-কতো সুন্দর করে কথা গুছিয়ে রেখেছি।
কিন্তু সব গুলিয়ে ফেলেছি।এক নিঃশ্বাসে
বললাম "দীপ্ত,দীপাকে দিবি?আমার জন্য?
মানে আমার বউ হিসেবে?মানে আমি ওকে
বিয়ে করতে চাই।আমার আম্মারও ওকে খুব
পছন্দ।"
-এইভাবে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেয়?ভাইয়া
আপনাকে মারেনাই?
-প্রথমে অবাক হয়ছিলো।ও ভেবেছিলো
তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আছে।পরে
অবশ্য আমি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেছি।কিছুই
বলেনি শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো
"আমার বোনকে দেখে রাখবি"
-তারপর?
-তারপরদীপ্তর বোন আজ আমার ঘরে,বউ
সেজে।
-তারপর?
-তারপর?
-হুমম
-তারপর সেদিনের মতো একবার জড়িয়ে
ধরো।
-ধ্যাত
.
উনি আমাকে উনার বুকে টেনে নিলেন।
সেদিন কাছের কাউকে হারানোর বেদনায়
কেঁদেছি আজ আরও কাছের কাউকে পাওয়ার
আনন্দে চোখ ভিজে এসেছে।দুটো হৃদয়ের
স্পন্দন একতালে চলছে ।উনি দুহাত দিয়ে
আলতো করে আমার মুখ ধরলেন,সাথে সাথে
চোখের মিলনও ঘটছে।বললেন
-ভালোবাসি
-কাকে?
-তোমাকে
-ও আচ্ছা
-তুমি বাসোনা?
-না
-সত্যি?
-মিথ্যা
-তাইলে বলো
-না বললে হয়না?
-না হয়না।একবার বলো
-আমিও
-আমিও কি?
-ভালোবাসি
-কাকে?
-আপনাকে
-আপনাকে?
-না তোমাকে
লেখকঃ নীলান্দ্রী.
No comments