ভালো থাকিস
একটা শান্ত বিকেল,
একটা মফস্বল এলাকা এবং একটা কোচিং সেন্টার!
৯ম শ্রেনির ক্লাসে পরিচালক একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলছে "ওর নাম তুশি,ও আজ থেকেই ক্লাস করবে"
,
তুশি গিয়ে ২য় বেঞ্চ এর সাইডে বসলো! তুশির পরিচয় দেই,তুশি মুটামুটি সচ্ছল ফ্যামিলির মেয়ে,তুশির বাবা একজন সরকারি চাকুরী করা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাক্তি! তুশির মা একটি বেসরকারি প্রাইমারী স্কুলের টিচার! তুশি একাই তার কোন ভাইবোন নেই! তুশির চেহারায় একটা অসাধারণ মায়া আছে,চশমা পড়ে তুশি!
,
তুশি ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দাড়াতেই দেখে তার মা দাড়িয়ে আছে,মায়ের সাথে রিকশায় উঠে বাসায় চলে যায় তুশি,,কিন্তু পরেরদিন থেকে তুশি একাই কোচিং শেষ করে বাসায় যাবে এমনটাই কথা হয়!
,
তুশি কোচিং শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে তুশি খেয়াল করে কোচিং এরই একটা ছেলে তুশির পিছন পিছন আসে! তুশি ব্যাপারটা ২-৩ দিন খেয়াল করে! তারপর একদিন কোচিং এ ক্লাসের মধ্যে "
তুশি; এই সিমি ওই ছেলেটার নাম কি রে?
সিমি; কেন কি হয়েছে?
তুশি; ছেলেটা না আমার পিছন পিছন প্রতিদিন বাড়ি অবদি যায়!
সিমি; বিরক্ত করে?
তুশি; আরে না বিরক্ত করে না,খালি পিছন পিছন আসে!
সিমি; আচ্ছা ছুটির পর দেখতাসি বেটাকে
(ছুটির পর)
সিমি আর তুশি দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে,ছেলেটা গেট দিয়ে বের হতে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে,
সিমি; এইযে ভাইয়া শুনেন
ছেলেটা; কে আমি?
সিমিঃ জি আপনি
ছেলেটি; জি বলুন
সিমি; আপনি প্রতিদিন ওকে(তুশি) ফলো করেন কেন?
ছেলেটি; যেদিন উনি নিজে জিজ্ঞাসা করতে পারবে সেদিন উত্তর দিব!
(বলেই ছেলেটা চলে যায়)
,
পরেরদিন কোচিং ছুটির পর আবার ছেলেটা তুশির পিছু নেয়!এবার তুশি ডাকে,ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ায়,
তুশি; আপনার সমস্যা কি?
ছেলেটি; আমি একটা কথা বলতে চাই!
তুশি; হম বলুন কিন্তু আমি এসবে জড়াবো না!
ছেলেটা; চশমা ছাড়া কি একদমই কিচ্ছু দেখেন না?
তুশি; (অবাক হয়ে) মানে?
ছেলেটি; চশমা ছাড়া আপনাকে আরও বেশি মায়াময়ী লাগবে, ব্যস এটাই বলতে চাই!
(ছেলেটি চলে যায়)
,
পরেরদিন থেকে তুশির কাছে কেন যেন কোচিং এর অন্য সব ছেলেদের থেকে ওই ছেলেটাকে আলাদা লাগতো!
,
ছেলেটির নাম সিফাত! মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একটা ছেলে!
,
সিফাত সবসময় তুশিকে বিভিন্ন ভালো ভালো বই,মুভি এবং জিনিসপত্র দিত এবং ক্লাসের মধ্যে তাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে! ফেসবুকে এড হয়,নাম্বার আদান প্রদান হয়,,এবং কোচিং এর সব বন্ধুরা মিলে একটা গ্রুপ খুলে,সেখানে চ্যাটিং করতো সবাই!
,
সেই চ্যাটিং গ্রুপে চ্যাটিং করতে একদিন রাত ১২টার দিকে তুশির ইনবক্সে ম্যাসেজ দেয় সিফাত!
,
সিফাত; পিছনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকা
তুশি; কেন? এত রাতে জানালায় যাবো?
সিফাত; আরে যা,ভূত দাঁড়িয়ে আছে!
,
তুশি জানালা খুলে দেখে নিচে মাঠে একটা লাইট জলছে!
তুশি কাছে সিফাতের কল,
তুশিঃ কি রে নিচে কিসের লাইট এটা?
সিফাত; আমি দাঁড়িয়ে আছি,
তুশি; তুই এত রাতে এখানে কি করছ?
সিফাত; আগে তুই ও মোবাইল এর লাইটটা জালা,আমি দেখি তুই কই,অন্ধকারে কিছু দেখি না!
(তুশি মোবাইল এর লাইটটা জ্বালায়)
তুশি; ওই পাগল তুই এত রাতে কেন আসছস?
সিফাতঃ তুই ই তো গ্রুপে বললি,বিরিয়ানী রান্না করেছি,সবাই চলে আসো!
তুশি; তুই একটা রাম ছাগল,,আর কেউ তো আসলো না,তুই এসে পড়লি!
সিফাত; সবাই আমি কি এক রে?
তুশি; (মুচকি হেসে) ইস তুই কিসের আলাদা,বোচা নাক নিয়ে আলাদা হতে চাস!
সিফাত; নাকটা বোচা কিন্তু মনটা সোজা! এমন মন আর কই পাবি?
তুশি; কি এমন আলাদা শুনি মহাশয়!
সিফাত; তোর ভালো থাকার গ্যারান্টি দিব আমি আর অসীম ভালোবাসা,আর কি চাস?
তুশি; আবেগে বলছিস এসব,বাড়ি যা,গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!
সিফাত; তুশি তুই নিজেও যানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি,যতবার বলতে গেছি,এভাবেই এড়িয়ে গেছিস! আজ এড়িয়ে যাইস না!
তুশি; আমি ঘুমাতে গেলাম,তুই বাড়িতে যা!এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল!
(বলেই তুশি জানালা বন্ধ করে কল কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে)
,
সকালে তুশি ঘুম থেকে উঠে দেখে সিফাতের ১৮৯ টা কল! তারপর তুশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে স্কুলের জন্য বের হয়!
,
কিন্তু তুশি অবাক,
সামনে সিফাত দাঁড়িয়ে আছে!
তুশি; কি রে তুই এত সকালে এখানে কেন? এত ঘেমেছিস কেন আর এমন দেখাচ্ছে কেন?
সিফাত; বাড়িতে যাই নি,সারারাত মশায় কামড়িয়েছে!
তুশি; তুই বাড়ি যাস নাই মানে,তুই কি পাগল?
সিফাত; হ্যা পাগল! মেডিসিন তো তোর কাছেই আছে,সুস্থ করে দে আমায়!
তুশি; কি লাভ বল রিলেশন করে? ওই কিছুদিন পর কোন এক মেয়ে তোর জন্য আমার সাথে এসে মারামারি করবে,মানুষ এগুলো ভিডিও করে মজা নিবে! সত্যিকারের ভালোবাসা হয় না এখন আর!
সিফাত; তুশি আমি জানি তুই ও আমাকে ভালোবাসছ! একবার হাতটা ধর,সব কিছু হারিয়ে আমরা জিতব!
তুশি; তাছাড়া সেইম এডজের রিলেশন এর ভবিষ্যত ভালো হয় না!
সিফাত; অল্প কিছু হেরে যায়,বেশিরভাগই সফল হয়,,তুই আর আমি ঠিক থাকলে সব ভালো হবে!
তুশি; আচ্ছা এখন চল আগে কিছু খাবি,চেহারার কি অবস্থা দেখছস!
সিফাত; যামু না,আগে উত্তর দে
তুশি; এই চেহারায় আমার বফ হতে চাস,খেয়ে টেয়ে আগের মত হ,তারপর দেখা যাবে!
,
এভাবেই শুরু হয় সিফাত আর তুশির রিলেশন! রিলেশন ভালই চলছে! একই বয়সের রিলেশনে যা যা হয় তা সবই হচ্ছিল! প্রথম দুজন এক রিকশায় বসা,গায়ে গা ঘেসে বসা,দুজন দুজনের হাতে হাত রাখা,দুজন দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করা,একসাথে পথ চলা ইত্যাদি ইত্যাদি,!
,
এভাবে কেটে যায় ২ বছর! সিফাত আর তুশি কলেজে উঠে যায়,তাদের দুজনের দুজনের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়!
,
হঠাৎ একদিন তুশির বাবা ব্যাপারটা জানতে পারে এবং সেদিন তুশি বাড়ি ফিরলে,তুশিকে তুশির বাবা প্রচুর মারে এবং বাসা থেকে বের হতে দেয় না!
,
তুশি সিফাতকে কল দেয়,
তুশি; (কেদে) বাবা আমাদের রিলেশন কখনো মেনে নিবে না,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে!
সিফাত; কি বলিস?
তুশি; আজ রাতেই আমরা পালাবো!
সিফাত; না তুশি এটা হয় না,আমি তোর বাবাকে বোঝাব
তুশি; আমার বাবাকে তুই আমার চাইতে বেশি চিনস না,আজ রাত ১১টায় আমাদের কলেজের সামনে চলে আসবি,মনে রাখিস তুই ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করার আগেই সুইসাইড করবো! যদি ১ মিনিট দেরি করিস তাহলে লাশ পাবি আমার!
,
তারপর রাত ১১টায় সিফাত আর তুশি ঢাকা পালিয়ে আসে! অচেনা ঢাকাতে দুটি অবুজ মনের ভালোবাসার কি ঠাই হবে?
,
সিফাত একটা রুম ভাড়া নেয়,সেখানেই আপাতত গিয়ে উঠে সিফাত আর তুশি! সিফাত কিছু খাবার,কাপড় আর কিছু হাড়ি পাতিল কিনে আনে! সেই সামান্য জিনিস নিয়েই শুরু করে তুশি তার নতুন লাইফ!
সিফাত বেরিয়ে পড়ে চাকুরীর খোজ করতে! কিন্তু এই রাক্ষুসে ঢাকায় অনেক পড়াশুনা করা ছেলেরাই বেকার,সেখানে মেট্রিক পাশ করা সিফাতের কি ই বা চাকুরী হবে! সিফাত সারাদিন ঘুরেও কোন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারে না! এভাবেই অভাবে অনাহারে না খেয়ে মুখে হাসি নিয়ে তুশি দিন কাটাচ্ছিল!
কেটে যায় বেশ কিছুদিন,
একটা গারমেন্টস এ চাকুরীর একটা আশা দেখা যায়,সিফাত ভিতরে যায়!
,
একটা লোক; মেশিন চালাইতে পারেন?
সিফাত; নাহ
লোক; কোয়ালিটি তে কাজের অভিজ্ঞতা আছে?
সিফাত; না স্যার কিন্তু শিখিয়ে দিলে পারবো
লোক; অভিজ্ঞতা ছাড়া লোক নেই না ভাই,চলে যান আপনি!
সিফাত; স্যার আমি এস.এস.সি কম্পিলিট! এই যে সারটিফিকেট!
লোক; দূর মিয়া সারটিফিকেট দিয়া কি চুকা খামু,কাম জানেন না! যান তো যান!
,
সেদিন সিফাতের মনে একটা অজানা কষ্ট কাজ করে! সিফাত বাড়িতে এসে পড়ে,এসে দেখে তুশি বিছানায় শুয়ে আছে!
সিফাত দেখেই বুঝতে পারছে,মেয়েটার শরীর এ বিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই যে সে উঠে দাঁড়াবে! কিচ্ছু খেতে পারে নি! সিফাত এসে বিছানায় বসে পড়লো,
সিফাত; আজও তোর মুখে খাবার দিতে পারলাম না!
তুশি; আরে আমি তো একটু আগে বিরিয়ানী খেলাম,পাশের ঘরের আপুটা দিয়েছিল,সেটাই খেয়েছি!
সিফাত; (মুচকি হেসে) তুশি রে ওই ঘরের লোক গুলা আজ ৩ দিন ধরে বাসায় নেই,কে তোকে বিরিয়ানী দিয়েছে!
তুশি; আরে আমার খাবার নিয়ে ভাবিস না,আমার ক্ষুধা সহ্য করার ক্ষমতা আছে!
(সিফাতের চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে)
সিফাত; কেন মিথ্যা বলিস? আমি তোকে ভালো রাখার কথা দিয়েছিলাম,আমি কথা রাখতে পারছি না!
তুশি; সব ঠিক হয়ে যাবে!
সিফাত; হম এবার সব আমাকেই ঠিক করতে হবে!
,
সিফাত তুশির চোখ এ একটা কাপড় বাধে তারপর তুশিকে নিয়ে কোথাও একটা রওনা দেয়!
তুশি; কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সিফাত; প্রশ্ন করিস না,বিলিভ করিস তো আমাকে,চুপ করে বসে থাক!
,
একটা সময় তুশিকে নিয়ে সিফাত একটা যায়গায় এসে দাঁড়ায়,তখনও তুশির চোখ এ কাপড় বাধা! সিফাত তুশির হাতে একটা কাগজ দেয় আর তারপর বলে "আমি তোর জন্য খাবার আনতে গেলাম,তুই ৩০ সেকেন্ড পর চোখ খুলবি"
,
সিফাত খাবার আনতে যায়,
তুশি ৩০ সেকেন্ড পর চোখ খুলে দেখে সে তার নিজের বাসার উঠানে দাঁড়িয়ে আছে,আশেপাশে সিফাত নেই!
হাতের কাগজটা খুলে তুশি পড়া শুরু করে "আমার সাথে থাকলে তুই শুধু কষ্ট ই পাবি,আর আমি তোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না,আমিও যে তোকে ভালবাসি,তোকে ভালো থাকতে দেখতে আমারও ইচ্ছা করে,কিন্তু আমি তোকে কখনোই ভালো রাখতে পারবো না,তাই কলিজাটা ছিড়ে গেলেও এই কাজটা আমার করতে হল,আমি বেচে থাকলে তুই আমার কাছেই আসবি তাই আমি না ফেরার দেশে চলে গেলাম,তুই নিজেকে সামলে নতুন করে ভালো লাইফ লিড কর,আমাকে ক্ষমা করিস আমি তোর অনেক ক্ষতি করেছি,আমাকে আর খুজিস না,ভালো থাকিস"
তুশি স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে চিরকুট টা পড়ে!
এদিকে তুশির বাবা আর মা রুম থেকে বেরিয়ে আসে,
তুশির বাবা; মা তুশি তুই ফিরে এসেছিস? মা তুই এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলি কেন? আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতি! আমি ওই সিফাতকেই আমার মেয়ের জামাই বানাবো,, আমার সারাজীবন এর সঞ্চয় দিয়ে ওকে একটা ব্যবসা দিয়ে দিব,ও শিক্ষিত ছেলে খুব উন্নতি করবে"তোরা খুব ভালো থাকবি!
,
তুশি কথাটা শুনে ছলছল চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর হঠাৎ চিতকার করে বাবা বাবা বলে কাদা শুরু করে! চিতকার করে কাদতেই থাকে তুশি! তুশি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিতকার করে কাদতে থাকে আর বলতে থাকে "ও কি জানে না,ও ই যে আমার ভালো থাকা"
,
তারপর থেকে তুশি বাড়িতেই থাকে,সারাক্ষণ ঘরে বসে কান্নাকাটি করতো আর সিফাতের ছবি নিয়ে কাদত!
,
তারপর একদিন তুশির রুম থেকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তুশির লাশ পাওয়া যায়!
সুইসাইড নোট এ তুশি লিখেছিল "সিফাত আমাকে নিতে এসেছিল তাই চলে গেলাম"
,
সমাপ্ত
লেখকঃ আলিখ খান
একটা মফস্বল এলাকা এবং একটা কোচিং সেন্টার!
৯ম শ্রেনির ক্লাসে পরিচালক একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলছে "ওর নাম তুশি,ও আজ থেকেই ক্লাস করবে"
,
তুশি গিয়ে ২য় বেঞ্চ এর সাইডে বসলো! তুশির পরিচয় দেই,তুশি মুটামুটি সচ্ছল ফ্যামিলির মেয়ে,তুশির বাবা একজন সরকারি চাকুরী করা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাক্তি! তুশির মা একটি বেসরকারি প্রাইমারী স্কুলের টিচার! তুশি একাই তার কোন ভাইবোন নেই! তুশির চেহারায় একটা অসাধারণ মায়া আছে,চশমা পড়ে তুশি!
,
তুশি ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দাড়াতেই দেখে তার মা দাড়িয়ে আছে,মায়ের সাথে রিকশায় উঠে বাসায় চলে যায় তুশি,,কিন্তু পরেরদিন থেকে তুশি একাই কোচিং শেষ করে বাসায় যাবে এমনটাই কথা হয়!
,
তুশি কোচিং শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে তুশি খেয়াল করে কোচিং এরই একটা ছেলে তুশির পিছন পিছন আসে! তুশি ব্যাপারটা ২-৩ দিন খেয়াল করে! তারপর একদিন কোচিং এ ক্লাসের মধ্যে "
তুশি; এই সিমি ওই ছেলেটার নাম কি রে?
সিমি; কেন কি হয়েছে?
তুশি; ছেলেটা না আমার পিছন পিছন প্রতিদিন বাড়ি অবদি যায়!
সিমি; বিরক্ত করে?
তুশি; আরে না বিরক্ত করে না,খালি পিছন পিছন আসে!
সিমি; আচ্ছা ছুটির পর দেখতাসি বেটাকে
(ছুটির পর)
সিমি আর তুশি দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে,ছেলেটা গেট দিয়ে বের হতে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে,
সিমি; এইযে ভাইয়া শুনেন
ছেলেটা; কে আমি?
সিমিঃ জি আপনি
ছেলেটি; জি বলুন
সিমি; আপনি প্রতিদিন ওকে(তুশি) ফলো করেন কেন?
ছেলেটি; যেদিন উনি নিজে জিজ্ঞাসা করতে পারবে সেদিন উত্তর দিব!
(বলেই ছেলেটা চলে যায়)
,
পরেরদিন কোচিং ছুটির পর আবার ছেলেটা তুশির পিছু নেয়!এবার তুশি ডাকে,ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ায়,
তুশি; আপনার সমস্যা কি?
ছেলেটি; আমি একটা কথা বলতে চাই!
তুশি; হম বলুন কিন্তু আমি এসবে জড়াবো না!
ছেলেটা; চশমা ছাড়া কি একদমই কিচ্ছু দেখেন না?
তুশি; (অবাক হয়ে) মানে?
ছেলেটি; চশমা ছাড়া আপনাকে আরও বেশি মায়াময়ী লাগবে, ব্যস এটাই বলতে চাই!
(ছেলেটি চলে যায়)
,
পরেরদিন থেকে তুশির কাছে কেন যেন কোচিং এর অন্য সব ছেলেদের থেকে ওই ছেলেটাকে আলাদা লাগতো!
,
ছেলেটির নাম সিফাত! মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির একটা ছেলে!
,
সিফাত সবসময় তুশিকে বিভিন্ন ভালো ভালো বই,মুভি এবং জিনিসপত্র দিত এবং ক্লাসের মধ্যে তাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে! ফেসবুকে এড হয়,নাম্বার আদান প্রদান হয়,,এবং কোচিং এর সব বন্ধুরা মিলে একটা গ্রুপ খুলে,সেখানে চ্যাটিং করতো সবাই!
,
সেই চ্যাটিং গ্রুপে চ্যাটিং করতে একদিন রাত ১২টার দিকে তুশির ইনবক্সে ম্যাসেজ দেয় সিফাত!
,
সিফাত; পিছনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকা
তুশি; কেন? এত রাতে জানালায় যাবো?
সিফাত; আরে যা,ভূত দাঁড়িয়ে আছে!
,
তুশি জানালা খুলে দেখে নিচে মাঠে একটা লাইট জলছে!
তুশি কাছে সিফাতের কল,
তুশিঃ কি রে নিচে কিসের লাইট এটা?
সিফাত; আমি দাঁড়িয়ে আছি,
তুশি; তুই এত রাতে এখানে কি করছ?
সিফাত; আগে তুই ও মোবাইল এর লাইটটা জালা,আমি দেখি তুই কই,অন্ধকারে কিছু দেখি না!
(তুশি মোবাইল এর লাইটটা জ্বালায়)
তুশি; ওই পাগল তুই এত রাতে কেন আসছস?
সিফাতঃ তুই ই তো গ্রুপে বললি,বিরিয়ানী রান্না করেছি,সবাই চলে আসো!
তুশি; তুই একটা রাম ছাগল,,আর কেউ তো আসলো না,তুই এসে পড়লি!
সিফাত; সবাই আমি কি এক রে?
তুশি; (মুচকি হেসে) ইস তুই কিসের আলাদা,বোচা নাক নিয়ে আলাদা হতে চাস!
সিফাত; নাকটা বোচা কিন্তু মনটা সোজা! এমন মন আর কই পাবি?
তুশি; কি এমন আলাদা শুনি মহাশয়!
সিফাত; তোর ভালো থাকার গ্যারান্টি দিব আমি আর অসীম ভালোবাসা,আর কি চাস?
তুশি; আবেগে বলছিস এসব,বাড়ি যা,গিয়ে ঘুমিয়ে পড়!
সিফাত; তুশি তুই নিজেও যানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি,যতবার বলতে গেছি,এভাবেই এড়িয়ে গেছিস! আজ এড়িয়ে যাইস না!
তুশি; আমি ঘুমাতে গেলাম,তুই বাড়িতে যা!এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল!
(বলেই তুশি জানালা বন্ধ করে কল কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে)
,
সকালে তুশি ঘুম থেকে উঠে দেখে সিফাতের ১৮৯ টা কল! তারপর তুশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে স্কুলের জন্য বের হয়!
,
কিন্তু তুশি অবাক,
সামনে সিফাত দাঁড়িয়ে আছে!
তুশি; কি রে তুই এত সকালে এখানে কেন? এত ঘেমেছিস কেন আর এমন দেখাচ্ছে কেন?
সিফাত; বাড়িতে যাই নি,সারারাত মশায় কামড়িয়েছে!
তুশি; তুই বাড়ি যাস নাই মানে,তুই কি পাগল?
সিফাত; হ্যা পাগল! মেডিসিন তো তোর কাছেই আছে,সুস্থ করে দে আমায়!
তুশি; কি লাভ বল রিলেশন করে? ওই কিছুদিন পর কোন এক মেয়ে তোর জন্য আমার সাথে এসে মারামারি করবে,মানুষ এগুলো ভিডিও করে মজা নিবে! সত্যিকারের ভালোবাসা হয় না এখন আর!
সিফাত; তুশি আমি জানি তুই ও আমাকে ভালোবাসছ! একবার হাতটা ধর,সব কিছু হারিয়ে আমরা জিতব!
তুশি; তাছাড়া সেইম এডজের রিলেশন এর ভবিষ্যত ভালো হয় না!
সিফাত; অল্প কিছু হেরে যায়,বেশিরভাগই সফল হয়,,তুই আর আমি ঠিক থাকলে সব ভালো হবে!
তুশি; আচ্ছা এখন চল আগে কিছু খাবি,চেহারার কি অবস্থা দেখছস!
সিফাত; যামু না,আগে উত্তর দে
তুশি; এই চেহারায় আমার বফ হতে চাস,খেয়ে টেয়ে আগের মত হ,তারপর দেখা যাবে!
,
এভাবেই শুরু হয় সিফাত আর তুশির রিলেশন! রিলেশন ভালই চলছে! একই বয়সের রিলেশনে যা যা হয় তা সবই হচ্ছিল! প্রথম দুজন এক রিকশায় বসা,গায়ে গা ঘেসে বসা,দুজন দুজনের হাতে হাত রাখা,দুজন দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করা,একসাথে পথ চলা ইত্যাদি ইত্যাদি,!
,
এভাবে কেটে যায় ২ বছর! সিফাত আর তুশি কলেজে উঠে যায়,তাদের দুজনের দুজনের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়!
,
হঠাৎ একদিন তুশির বাবা ব্যাপারটা জানতে পারে এবং সেদিন তুশি বাড়ি ফিরলে,তুশিকে তুশির বাবা প্রচুর মারে এবং বাসা থেকে বের হতে দেয় না!
,
তুশি সিফাতকে কল দেয়,
তুশি; (কেদে) বাবা আমাদের রিলেশন কখনো মেনে নিবে না,বাবা আমার বিয়ে ঠিক করছে!
সিফাত; কি বলিস?
তুশি; আজ রাতেই আমরা পালাবো!
সিফাত; না তুশি এটা হয় না,আমি তোর বাবাকে বোঝাব
তুশি; আমার বাবাকে তুই আমার চাইতে বেশি চিনস না,আজ রাত ১১টায় আমাদের কলেজের সামনে চলে আসবি,মনে রাখিস তুই ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করার আগেই সুইসাইড করবো! যদি ১ মিনিট দেরি করিস তাহলে লাশ পাবি আমার!
,
তারপর রাত ১১টায় সিফাত আর তুশি ঢাকা পালিয়ে আসে! অচেনা ঢাকাতে দুটি অবুজ মনের ভালোবাসার কি ঠাই হবে?
,
সিফাত একটা রুম ভাড়া নেয়,সেখানেই আপাতত গিয়ে উঠে সিফাত আর তুশি! সিফাত কিছু খাবার,কাপড় আর কিছু হাড়ি পাতিল কিনে আনে! সেই সামান্য জিনিস নিয়েই শুরু করে তুশি তার নতুন লাইফ!
সিফাত বেরিয়ে পড়ে চাকুরীর খোজ করতে! কিন্তু এই রাক্ষুসে ঢাকায় অনেক পড়াশুনা করা ছেলেরাই বেকার,সেখানে মেট্রিক পাশ করা সিফাতের কি ই বা চাকুরী হবে! সিফাত সারাদিন ঘুরেও কোন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারে না! এভাবেই অভাবে অনাহারে না খেয়ে মুখে হাসি নিয়ে তুশি দিন কাটাচ্ছিল!
কেটে যায় বেশ কিছুদিন,
একটা গারমেন্টস এ চাকুরীর একটা আশা দেখা যায়,সিফাত ভিতরে যায়!
,
একটা লোক; মেশিন চালাইতে পারেন?
সিফাত; নাহ
লোক; কোয়ালিটি তে কাজের অভিজ্ঞতা আছে?
সিফাত; না স্যার কিন্তু শিখিয়ে দিলে পারবো
লোক; অভিজ্ঞতা ছাড়া লোক নেই না ভাই,চলে যান আপনি!
সিফাত; স্যার আমি এস.এস.সি কম্পিলিট! এই যে সারটিফিকেট!
লোক; দূর মিয়া সারটিফিকেট দিয়া কি চুকা খামু,কাম জানেন না! যান তো যান!
,
সেদিন সিফাতের মনে একটা অজানা কষ্ট কাজ করে! সিফাত বাড়িতে এসে পড়ে,এসে দেখে তুশি বিছানায় শুয়ে আছে!
সিফাত দেখেই বুঝতে পারছে,মেয়েটার শরীর এ বিন্দু পরিমাণ শক্তি নেই যে সে উঠে দাঁড়াবে! কিচ্ছু খেতে পারে নি! সিফাত এসে বিছানায় বসে পড়লো,
সিফাত; আজও তোর মুখে খাবার দিতে পারলাম না!
তুশি; আরে আমি তো একটু আগে বিরিয়ানী খেলাম,পাশের ঘরের আপুটা দিয়েছিল,সেটাই খেয়েছি!
সিফাত; (মুচকি হেসে) তুশি রে ওই ঘরের লোক গুলা আজ ৩ দিন ধরে বাসায় নেই,কে তোকে বিরিয়ানী দিয়েছে!
তুশি; আরে আমার খাবার নিয়ে ভাবিস না,আমার ক্ষুধা সহ্য করার ক্ষমতা আছে!
(সিফাতের চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে)
সিফাত; কেন মিথ্যা বলিস? আমি তোকে ভালো রাখার কথা দিয়েছিলাম,আমি কথা রাখতে পারছি না!
তুশি; সব ঠিক হয়ে যাবে!
সিফাত; হম এবার সব আমাকেই ঠিক করতে হবে!
,
সিফাত তুশির চোখ এ একটা কাপড় বাধে তারপর তুশিকে নিয়ে কোথাও একটা রওনা দেয়!
তুশি; কোথায় যাচ্ছি আমরা?
সিফাত; প্রশ্ন করিস না,বিলিভ করিস তো আমাকে,চুপ করে বসে থাক!
,
একটা সময় তুশিকে নিয়ে সিফাত একটা যায়গায় এসে দাঁড়ায়,তখনও তুশির চোখ এ কাপড় বাধা! সিফাত তুশির হাতে একটা কাগজ দেয় আর তারপর বলে "আমি তোর জন্য খাবার আনতে গেলাম,তুই ৩০ সেকেন্ড পর চোখ খুলবি"
,
সিফাত খাবার আনতে যায়,
তুশি ৩০ সেকেন্ড পর চোখ খুলে দেখে সে তার নিজের বাসার উঠানে দাঁড়িয়ে আছে,আশেপাশে সিফাত নেই!
হাতের কাগজটা খুলে তুশি পড়া শুরু করে "আমার সাথে থাকলে তুই শুধু কষ্ট ই পাবি,আর আমি তোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি না,আমিও যে তোকে ভালবাসি,তোকে ভালো থাকতে দেখতে আমারও ইচ্ছা করে,কিন্তু আমি তোকে কখনোই ভালো রাখতে পারবো না,তাই কলিজাটা ছিড়ে গেলেও এই কাজটা আমার করতে হল,আমি বেচে থাকলে তুই আমার কাছেই আসবি তাই আমি না ফেরার দেশে চলে গেলাম,তুই নিজেকে সামলে নতুন করে ভালো লাইফ লিড কর,আমাকে ক্ষমা করিস আমি তোর অনেক ক্ষতি করেছি,আমাকে আর খুজিস না,ভালো থাকিস"
তুশি স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে আছে চিরকুট টা পড়ে!
এদিকে তুশির বাবা আর মা রুম থেকে বেরিয়ে আসে,
তুশির বাবা; মা তুশি তুই ফিরে এসেছিস? মা তুই এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলি কেন? আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলতি! আমি ওই সিফাতকেই আমার মেয়ের জামাই বানাবো,, আমার সারাজীবন এর সঞ্চয় দিয়ে ওকে একটা ব্যবসা দিয়ে দিব,ও শিক্ষিত ছেলে খুব উন্নতি করবে"তোরা খুব ভালো থাকবি!
,
তুশি কথাটা শুনে ছলছল চোখে তার বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর হঠাৎ চিতকার করে বাবা বাবা বলে কাদা শুরু করে! চিতকার করে কাদতেই থাকে তুশি! তুশি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে চিতকার করে কাদতে থাকে আর বলতে থাকে "ও কি জানে না,ও ই যে আমার ভালো থাকা"
,
তারপর থেকে তুশি বাড়িতেই থাকে,সারাক্ষণ ঘরে বসে কান্নাকাটি করতো আর সিফাতের ছবি নিয়ে কাদত!
,
তারপর একদিন তুশির রুম থেকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তুশির লাশ পাওয়া যায়!
সুইসাইড নোট এ তুশি লিখেছিল "সিফাত আমাকে নিতে এসেছিল তাই চলে গেলাম"
,
সমাপ্ত
লেখকঃ আলিখ খান
No comments