------ আভিমান-----
আমি কামরুল এবং বিছানায় যে শুয়ে আছে সে হল আমার স্ত্রী দিনা । এখন ৭টা বাজে। একটু পর আমি অফিসে যাব তাই তারাতারি উঠে গেছি দিনা এখন ও উঠেনি কখন উঠবে আমি জানি না। তবে এই মাস তিন আগেও দিনা আমার আগে উঠে আমার জন্য নাস্তা বানাত। তবে এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র ৩ মাসে। এখন আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল ঠিক করছি আয়নাটা বেশ পরিষ্কার বেলজিয়ামের আয়না তার পরেও কেন যেন ঘোলা ঘোলা লাগে আমার কাছে। অথচ আগের আয়নাটা অনেক ঘোলা ছিল তার পরেও অনেক পরিষ্কার দেখতাম সেই আয়নাটাতে।
.
আগের আয়নাটার সামনে বসে কত যে নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছিলাম দিনা কে সেই হিসেব নাই অথচ এই নতুন আয়নাটার সামনে বসে একবার ও সাজানও হয়নি দিনা কে। এইতো তো মাস তিন আগেও আমার একটা দুই রুমের ছোট বাসায় থাকতাম আমি আর দিনা এবং আমাদের ২ বছের বেবিটা। বেবিটা আমাদের মাঝে শুয়ে থাকত। তবে বেবিটা এখন আর আমাদের মাঝে শুতে পারে না। ওর জন্য আলাদা বিছানা হয়েছে আমাদের বিশাল রুমের এক সাইডে।
.
এখন আমি নাস্তা খাব সমস্যা হচ্ছে এই বিশাল ফ্ল্যাটে আমি এখন ও ড্রয়িংরুম, কিচেন, ডাইনিং রুম কিছুই মিল করে উঠতে পারি না সবই এক লাগে তাই এক রুম থেকে আরেক রুমে যাই পড়ে যেই রুমে বিশাল খাবার টেবিল দেখি সেটাতে বসে পড়ি। আগে দিনা নিজ হাতে আমার জন্য নাস্তা তৈরি করত। হয়ত কোন দিন সাদা ভাত বা কোন দিন রুটি আর একটা ডিম এই ছিল সকালের নাস্তা তার পরেও অনেক মজা লাগত। অথচ এখন কত ধরণের জিনিষ যে থাকে খাবার টেবিলে আমি নিজেও জানি না হাতে গোনা কয়েকটা জিনিষ ছাড়া অন্য কিছুর নাম জানি না আমি। অথচ সব গুলোর স্বাদ আমার কাছে এক রকম ঘাস ঘাস লাগে।
.
এখন আমি বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি গাড়িতে উঠব। ড্রাইভার দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে। অথচ এই কিছু দিন আগেও বাসের পিছেন ছুটতাম আমি। আর সেই আমি এখন এই বিশাল এক গাড়ি করে অফিসে যাই। আমি যেই বেতন পাই তার থেকে ২ গুন বেশি খরচ আছে এই গাড়ির পিছনে। তাই আমি গাড়ি অফিস পর্যন্ত নেই না তার একটু আগেই ছেড়ে দেই। গাড়ির ভিতর থেকে বাইরের পৃথিবীটাকে অন্যরকম লাগে। চোখ বন্ধ করলে সেই পুরনো দিনএ গুলো মনে পড়ে। এইতো কত দিন হবে বছর ৫ আগে একদিন দিনার সাথে ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে পরিচয় তার পড়ে প্রেম। ২ বছর প্রেম করার পড়ে বিয়ে।
.
আমার ও খুব কাছের আপন বলতে কেউ ছিল না। কয়েকজন কাকা, মামা ছিল তারা দূরে দূরে থাকত তাদের ধারণা ছিল আমার খোজ নিলেই আমার পকেট খরচ দিতে হবে তাই আমিও তাদের কে তেমন অস্তিতে ফেলতাম না দূরেই থাকতাম। খুব সাধারণ ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয় দিনারও মা ছাড়া কেউ ছিল না। আমাদের বিয়ের বছর খানেক পড়ে আমার শাশুড়ি মানে দিনার মা মারা যায় আর আমাদের বেবির জন্ম হয়। মা হারানোর দুঃখ আর নতুন বেবির আগমনে সব সমান সমান ছিল।
.
আমি মাঝারি ধরণের একটা জব করতাম ভালই চলছিল আমাদের সংসার। সব উলট –পালট হয়ে যায় মাস তিন আগে একটা উকিলের চিঠিতে সাথে থাকে একটা উইল। যেখানে আমার স্ত্রী দিনা ঢাকাতে বিশাল ২ টা বাড়ি ও একটা সুপার মার্কেটের একক মালিকানা এবং ব্যাংকে অবিশ্বাস পরিমাণের অঙ্কের টাকার মালিক হয়ে যায়। প্রথম প্রথম কয়েকদিন বিষয়টা নিছক মজা মনে করতাম আমি কিন্তু আসল সত্য আমি দিনার মুখ থেকেই জানতে পারলাম।দিনা ক্লাস ৭ তে থাকতে ওর বাবা আর মার ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায় ওর বাবা কানাডা চলে যায় ব্যাবসা করে প্রচুর টাকা ইনকাম করে। দিনা কে কানাডা নিয়ে যেতে চায় কিন্তু দিনা মার কথা ভেবে রাজি হয় না।
.
ওর বাবা সেখানে আরেকটা বিয়ে করে সেখানেই থেকে যায়।এক পর্যায় ওদের সাথে দিনার বাবার সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।দিনার বাবা কিছু দিন আগে মারা য়ার। মারা যাওয়ার আগে দিনার নামে তার সম্পদের নাম মাত্র একটা অংশ দিয়ে যায়। সত্যি বলতে কি এই রকম হঠাৎ করে এত কিছু পেয়ে যাওয়াতে আমি মনে মনে কিছুটা খুশি হই। কিন্তু কিছু দিন পড়ে সব কেমন জানি ওলট পালট হয়ে যায়। আমার নতুন বিশাল বাড়িতে উঠি দিনা চেঞ্জ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অনেক দেরি করে বাসায় আসে। আগে যেই খানে দিনার উপরে আমি জোর খাটাতাম সেই খানে ওকে কিছু বলতে পারি না সত্যি বলতে কি দিনা কে এখন আমার এক ধরণের ভঁয় করে। কেমন জানি দূরে সড়ে গেছে ও।
.
আগে যেমন অনেক লজ্জা মিশিয়ে আমার কাছে মাসের মাঝ খানে কিছু টাকা চাইতো সে খানে এখন ওর এক দিনের শপিং খরচ আমার এক মাসের সেলারি থেকে অনেক বেশি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। এখন আমার অনেক আছে কিন্তু মনে কোন আনন্দ নেই। জানি না সামনে কেমন হবে। দিনা কি আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে সরি ভুল বললাম দিনার সাথে কি আমি মানিয়ে নিতে পারব?!
.
.
দিনা......
সকাল ৭ টা বাজে আমি বিছানায় ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি। মাত্র বিছানা থেকে যে উঠে গেছে সে হল আমার স্বামী আরাফাত। ৩ মাসের ভিতরে আমাদের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই যেমন আগে এই সময় আমি ঘুম থেকে না উঠলে আরাফাত আমাকে কপালে আলত চুমু দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিত কিন্তু এখন আর দেয় না বরং এমন ভাবে বিছানা থেকে উঠে যাতে মনে হয় আমার ঘুম যাতে না ভাঙ্গে তাই এই রকম ভাবে বিছানা ছারে অথচ আমি ঘুমের ভান ধরে সব দেখি। আগে ওর জন্য নাস্তা নিজ হাতে বানাতাম এখন আর বানাই না কারণ আমি ওর ওপরে অভিমান করে আছি ভুতুমটা মনে হয় সেটাও বুঝেও না।
.
আরাফাত এখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথা আঁচড়াচ্ছে অথচ এই মাস তিন আগেও আমি ওর চুল ঠিক করে দিতাম। যেদিন আমি আসতাম না ওর চুল ঠিক করতে সেদিন করতো কি চিরুনি টা লুকিয়ে আমাকে ডাকতো বলতো দেখ তো চিরুনিটা কোথায় গেছে। আবার মাঝ রাতে মাঝে মাঝে আমাকে ঘুম থেকে তুলে লাজুক হেসে বলত এই তোমাকে না সাজুগুজু অবস্থায় দেখতে ইচ্ছা করছে এই বলে আমাকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিত পরে বিশেষ কিছু দাবি করত আমি রাগের ভান করতাম কিন্তু মনে মনে এত খুশি লাগত যে বলে বুঝাতে পারব না। এখন আর আমাকে সাজিয়ে দেয় না অনেকটা এড়িয়ে চলে। মনে হয় আমার কাছে কেন জানি ও লজ্জা পায়। কিন্তু আমার দোষ কি আমি জানি না।
.
আরাফাত একটু আগে ঘর থেকে বাহির হয়েছে। গাড়িতে উঠবে আমি এখন বিছানা থেকে উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছি প্রতিদিনি দেখি আরাফাত জানে না, ও মনে করে আমি অনেক বেলা করে ঘুমাই। আরাফাতকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও গাড়িতে উঠতে অসস্তি ফিল করছে। ড্রাইভারের কাছ থেকে জেনেছি ও গাড়ি অফিস পর্যন্ত নেয় না তাঁর আগেই নেমে পরে হয়ত অফিসের সহকর্মীরা হাসাহাসি করবে যে স্ত্রীর গাড়িতে করে অফিসে আসে।
.
একটা সময় ভাবতাম যদি অনেক টাকা থাকত তাহলে কত ভাল হত? এখন হাতে প্রচুর পরিমাণ টাকা অথচ মনে একদম শান্তি নেই। শেষ তিনটা মাস একটা রাতেও আমার ভাল ঘুম হয়নি। ভাবতাম এই বুঝি মনে হয় আরাফাত আমাকে ঘুম থেকে তুলে সাজিয়ে দিবে কিন্তু না তা হয়নি। আমি আর আরাফাত ভালবেসেই বিয়ে করেছিলাম। ও মোটামুটি একটা জব করত আমাদের চলে যেত কোন রকমে খেয়ে পরে সমান সমান থাকত। সব যন্ত্রণার মূল হল আমার বাবা। সেই ক্লাস ৭ তে থাকতে বাবার সাথে আমার আর আমার মার কোন যোগাযোগ ছিল না কারন বাবা কানাডাতে আরেকটা বিয়ে করেছিল তাই। আমিও মনে করেছিলাম বাবা আমাকে ভুলে গেছে তার চেহারাটাও আমার মনে নেই।
.
মাস তিন আগে আমার কাছে আমার নামে একটা উইল আসে বাবার কাছ থেকে। সে মারা যাওয়ার আগে তাঁর সামান্য কিছু সম্পদ আমার নামে লিখে দিয়ে যায়। ঢাকাতে বিশাল ২ টা বাড়ি ও একটা সুপার মার্কেটের একক মালিকানা এবং ব্যাংকে অবিশ্বাস পরিমাণের টাকা। প্রথম খুব আনন্দ লাগে, একটা বাড়ি ভাড়া দেওয়া ছিল আগে আরেকটাতে আমার উঠি। কিছু দিন পরে বুঝতে পারি আমাদের আগের ছোট ২ রুমের বাসাটায় যেই ভালবাসা ছিল এখনকার ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে সেই ভালবাসা নেই। আমিও এত কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। একদিন তো ইচ্ছা মত শপিং করে শেষে একটা সিএনজি ভাড়া করে বাসায় চলে আসলাম আসার পরে মনে পরল আমি তো গাড়ি নিয়ে গয়েছিলাম শপিং করতে। আরেকবার ৫ তারকা হোটেলে খেতে গিয়ে ওয়েটার কে স্যার বলে ফেলেছিলাম। কি করব এমন স্মার্ট ভাবে থাকে যে দেখলে স্যার এমনি মুখ দিয়ে বেড়িয়ে যায়।
.
আমার বেবিটা কে ইচ্ছা করেই আমাদের মাঝে শুতে নেই না এই আশায় হয়ত আমাকে কোন রাতে ও কাছে টেনে নিবে। আচ্ছা আরাফাত কি জানে আমি মাঝ রাতে ২-৩ বার উঠে বেবিটার কাছে গিয়ে চুমু খেয়ে আসি। মনে হয় না কারণ ওর ঘুম খুব গভীর একবার ঘুমালে আর কিছু হুশ থাকে না মাঝে মাঝে আমি আরাফাতকে ঘুমের মাঝে চুমু খাই আরাফাত কি সেটা জানে? আগে ও আমার উপরে এক ধরেনর ভালবাসার জোর খাটাতো এখন আর খাটায় না ওকি বোঝে না প্রতিটা মেয়ে চায় তার ভালবাসার মানুষ তার উপরে জোর খাটাক। আগে আমি মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে রাতে না খেয়ে থাকতাম তখন ও আমাকে জোর করে রাগারাগি করে খাওয়াতো আমার কিজে ভাল লাগত।
.
আজকে আমার অনেক কাজ আছে। অনেক দিন থেকেই চিন্তা করছি বিষয়টা সব কিছু রেডি। উকিলের সাথে কথা হয়েছে সব কমপ্লিট শুধু আমার সাইন দরকার। আমার সমস্ত সম্পত্তি আমি আরাফাতের নামে করে দিব। আমি এই সবের কিছুই চাই না চাই শুধু আরাফাত কে সেই আগের আরাফাতকে!
.
সব কাগজ এখন রেডি সব সম্পত্তি এখন আরাফাতের নামে আরাফাতের অবর্তমানে আমার বেবিটা পাবে সব কিছু আমার কাছে এখন কিছু নেই শুধু আমার বেবিটা ছাড়া। আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি যাওয়ার আগে শুধু একটা চিরকুট লিখে রেখে যাচ্ছি..
.
“ আমার এই জীবনে যদি কিছু চাওয়ার থাকে বা চেয়ে থাকি সেটা
হলে তুমি আর কিছু না। সেই তোমাকে না পেলে আমার আর
কিছুর দারকার নেই। চলে গেলাম যদি পার খুজে বের কর”
.
.২বছর পরের কথা আমি, আরাফাত এবং আমার বেবিটা কে ঘিরে দাড়িয়ে আছে অনেক গুলো ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। আমার মাসে একটা দিন এই খানে সময় কাটাই। আমার বেবিটা কে বাচ্চা গুলো খুব পছন্দ করে আমি আর আরাফাত দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি। আমার বেবিটা মনে হয় মাসে এই দিনটার আশায় থাকে। এই ছোট ছোট বাচ্চা গুলো সবাই এতিম আর এই এতিম খানাটা আমার চালাই আমাদের টাকায়। আর সে দিন আমি চিরকুট লিখে রেখে আমাদের সেই আগের ভাড়া করা বাসাটায় চলে আসি। অবশ্য আরাফাত আমাকে মুহূর্তের মাঝেই খুজে বের করে ফেলে তার পরে আবার সব হয়ে যায় আগের মতই। তবে আরাফাত আবার জোর করে সব সম্পত্তি আমাদের বেবিটার নামে করে দেয়।
.
আগের আয়নাটার সামনে বসে কত যে নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছিলাম দিনা কে সেই হিসেব নাই অথচ এই নতুন আয়নাটার সামনে বসে একবার ও সাজানও হয়নি দিনা কে। এইতো তো মাস তিন আগেও আমার একটা দুই রুমের ছোট বাসায় থাকতাম আমি আর দিনা এবং আমাদের ২ বছের বেবিটা। বেবিটা আমাদের মাঝে শুয়ে থাকত। তবে বেবিটা এখন আর আমাদের মাঝে শুতে পারে না। ওর জন্য আলাদা বিছানা হয়েছে আমাদের বিশাল রুমের এক সাইডে।
.
এখন আমি নাস্তা খাব সমস্যা হচ্ছে এই বিশাল ফ্ল্যাটে আমি এখন ও ড্রয়িংরুম, কিচেন, ডাইনিং রুম কিছুই মিল করে উঠতে পারি না সবই এক লাগে তাই এক রুম থেকে আরেক রুমে যাই পড়ে যেই রুমে বিশাল খাবার টেবিল দেখি সেটাতে বসে পড়ি। আগে দিনা নিজ হাতে আমার জন্য নাস্তা তৈরি করত। হয়ত কোন দিন সাদা ভাত বা কোন দিন রুটি আর একটা ডিম এই ছিল সকালের নাস্তা তার পরেও অনেক মজা লাগত। অথচ এখন কত ধরণের জিনিষ যে থাকে খাবার টেবিলে আমি নিজেও জানি না হাতে গোনা কয়েকটা জিনিষ ছাড়া অন্য কিছুর নাম জানি না আমি। অথচ সব গুলোর স্বাদ আমার কাছে এক রকম ঘাস ঘাস লাগে।
.
এখন আমি বাসার নিচে দাড়িয়ে আছি গাড়িতে উঠব। ড্রাইভার দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে। অথচ এই কিছু দিন আগেও বাসের পিছেন ছুটতাম আমি। আর সেই আমি এখন এই বিশাল এক গাড়ি করে অফিসে যাই। আমি যেই বেতন পাই তার থেকে ২ গুন বেশি খরচ আছে এই গাড়ির পিছনে। তাই আমি গাড়ি অফিস পর্যন্ত নেই না তার একটু আগেই ছেড়ে দেই। গাড়ির ভিতর থেকে বাইরের পৃথিবীটাকে অন্যরকম লাগে। চোখ বন্ধ করলে সেই পুরনো দিনএ গুলো মনে পড়ে। এইতো কত দিন হবে বছর ৫ আগে একদিন দিনার সাথে ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে পরিচয় তার পড়ে প্রেম। ২ বছর প্রেম করার পড়ে বিয়ে।
.
আমার ও খুব কাছের আপন বলতে কেউ ছিল না। কয়েকজন কাকা, মামা ছিল তারা দূরে দূরে থাকত তাদের ধারণা ছিল আমার খোজ নিলেই আমার পকেট খরচ দিতে হবে তাই আমিও তাদের কে তেমন অস্তিতে ফেলতাম না দূরেই থাকতাম। খুব সাধারণ ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয় দিনারও মা ছাড়া কেউ ছিল না। আমাদের বিয়ের বছর খানেক পড়ে আমার শাশুড়ি মানে দিনার মা মারা যায় আর আমাদের বেবির জন্ম হয়। মা হারানোর দুঃখ আর নতুন বেবির আগমনে সব সমান সমান ছিল।
.
আমি মাঝারি ধরণের একটা জব করতাম ভালই চলছিল আমাদের সংসার। সব উলট –পালট হয়ে যায় মাস তিন আগে একটা উকিলের চিঠিতে সাথে থাকে একটা উইল। যেখানে আমার স্ত্রী দিনা ঢাকাতে বিশাল ২ টা বাড়ি ও একটা সুপার মার্কেটের একক মালিকানা এবং ব্যাংকে অবিশ্বাস পরিমাণের অঙ্কের টাকার মালিক হয়ে যায়। প্রথম প্রথম কয়েকদিন বিষয়টা নিছক মজা মনে করতাম আমি কিন্তু আসল সত্য আমি দিনার মুখ থেকেই জানতে পারলাম।দিনা ক্লাস ৭ তে থাকতে ওর বাবা আর মার ছাড়া ছাড়ি হয়ে যায় ওর বাবা কানাডা চলে যায় ব্যাবসা করে প্রচুর টাকা ইনকাম করে। দিনা কে কানাডা নিয়ে যেতে চায় কিন্তু দিনা মার কথা ভেবে রাজি হয় না।
.
ওর বাবা সেখানে আরেকটা বিয়ে করে সেখানেই থেকে যায়।এক পর্যায় ওদের সাথে দিনার বাবার সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।দিনার বাবা কিছু দিন আগে মারা য়ার। মারা যাওয়ার আগে দিনার নামে তার সম্পদের নাম মাত্র একটা অংশ দিয়ে যায়। সত্যি বলতে কি এই রকম হঠাৎ করে এত কিছু পেয়ে যাওয়াতে আমি মনে মনে কিছুটা খুশি হই। কিন্তু কিছু দিন পড়ে সব কেমন জানি ওলট পালট হয়ে যায়। আমার নতুন বিশাল বাড়িতে উঠি দিনা চেঞ্জ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে অনেক দেরি করে বাসায় আসে। আগে যেই খানে দিনার উপরে আমি জোর খাটাতাম সেই খানে ওকে কিছু বলতে পারি না সত্যি বলতে কি দিনা কে এখন আমার এক ধরণের ভঁয় করে। কেমন জানি দূরে সড়ে গেছে ও।
.
আগে যেমন অনেক লজ্জা মিশিয়ে আমার কাছে মাসের মাঝ খানে কিছু টাকা চাইতো সে খানে এখন ওর এক দিনের শপিং খরচ আমার এক মাসের সেলারি থেকে অনেক বেশি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। এখন আমার অনেক আছে কিন্তু মনে কোন আনন্দ নেই। জানি না সামনে কেমন হবে। দিনা কি আমার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে সরি ভুল বললাম দিনার সাথে কি আমি মানিয়ে নিতে পারব?!
.
.
দিনা......
সকাল ৭ টা বাজে আমি বিছানায় ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি। মাত্র বিছানা থেকে যে উঠে গেছে সে হল আমার স্বামী আরাফাত। ৩ মাসের ভিতরে আমাদের মাঝে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এই যেমন আগে এই সময় আমি ঘুম থেকে না উঠলে আরাফাত আমাকে কপালে আলত চুমু দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিত কিন্তু এখন আর দেয় না বরং এমন ভাবে বিছানা থেকে উঠে যাতে মনে হয় আমার ঘুম যাতে না ভাঙ্গে তাই এই রকম ভাবে বিছানা ছারে অথচ আমি ঘুমের ভান ধরে সব দেখি। আগে ওর জন্য নাস্তা নিজ হাতে বানাতাম এখন আর বানাই না কারণ আমি ওর ওপরে অভিমান করে আছি ভুতুমটা মনে হয় সেটাও বুঝেও না।
.
আরাফাত এখন আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাথা আঁচড়াচ্ছে অথচ এই মাস তিন আগেও আমি ওর চুল ঠিক করে দিতাম। যেদিন আমি আসতাম না ওর চুল ঠিক করতে সেদিন করতো কি চিরুনি টা লুকিয়ে আমাকে ডাকতো বলতো দেখ তো চিরুনিটা কোথায় গেছে। আবার মাঝ রাতে মাঝে মাঝে আমাকে ঘুম থেকে তুলে লাজুক হেসে বলত এই তোমাকে না সাজুগুজু অবস্থায় দেখতে ইচ্ছা করছে এই বলে আমাকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিত পরে বিশেষ কিছু দাবি করত আমি রাগের ভান করতাম কিন্তু মনে মনে এত খুশি লাগত যে বলে বুঝাতে পারব না। এখন আর আমাকে সাজিয়ে দেয় না অনেকটা এড়িয়ে চলে। মনে হয় আমার কাছে কেন জানি ও লজ্জা পায়। কিন্তু আমার দোষ কি আমি জানি না।
.
আরাফাত একটু আগে ঘর থেকে বাহির হয়েছে। গাড়িতে উঠবে আমি এখন বিছানা থেকে উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে সেই দৃশ্য দেখছি প্রতিদিনি দেখি আরাফাত জানে না, ও মনে করে আমি অনেক বেলা করে ঘুমাই। আরাফাতকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও গাড়িতে উঠতে অসস্তি ফিল করছে। ড্রাইভারের কাছ থেকে জেনেছি ও গাড়ি অফিস পর্যন্ত নেয় না তাঁর আগেই নেমে পরে হয়ত অফিসের সহকর্মীরা হাসাহাসি করবে যে স্ত্রীর গাড়িতে করে অফিসে আসে।
.
একটা সময় ভাবতাম যদি অনেক টাকা থাকত তাহলে কত ভাল হত? এখন হাতে প্রচুর পরিমাণ টাকা অথচ মনে একদম শান্তি নেই। শেষ তিনটা মাস একটা রাতেও আমার ভাল ঘুম হয়নি। ভাবতাম এই বুঝি মনে হয় আরাফাত আমাকে ঘুম থেকে তুলে সাজিয়ে দিবে কিন্তু না তা হয়নি। আমি আর আরাফাত ভালবেসেই বিয়ে করেছিলাম। ও মোটামুটি একটা জব করত আমাদের চলে যেত কোন রকমে খেয়ে পরে সমান সমান থাকত। সব যন্ত্রণার মূল হল আমার বাবা। সেই ক্লাস ৭ তে থাকতে বাবার সাথে আমার আর আমার মার কোন যোগাযোগ ছিল না কারন বাবা কানাডাতে আরেকটা বিয়ে করেছিল তাই। আমিও মনে করেছিলাম বাবা আমাকে ভুলে গেছে তার চেহারাটাও আমার মনে নেই।
.
মাস তিন আগে আমার কাছে আমার নামে একটা উইল আসে বাবার কাছ থেকে। সে মারা যাওয়ার আগে তাঁর সামান্য কিছু সম্পদ আমার নামে লিখে দিয়ে যায়। ঢাকাতে বিশাল ২ টা বাড়ি ও একটা সুপার মার্কেটের একক মালিকানা এবং ব্যাংকে অবিশ্বাস পরিমাণের টাকা। প্রথম খুব আনন্দ লাগে, একটা বাড়ি ভাড়া দেওয়া ছিল আগে আরেকটাতে আমার উঠি। কিছু দিন পরে বুঝতে পারি আমাদের আগের ছোট ২ রুমের বাসাটায় যেই ভালবাসা ছিল এখনকার ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে সেই ভালবাসা নেই। আমিও এত কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি না। একদিন তো ইচ্ছা মত শপিং করে শেষে একটা সিএনজি ভাড়া করে বাসায় চলে আসলাম আসার পরে মনে পরল আমি তো গাড়ি নিয়ে গয়েছিলাম শপিং করতে। আরেকবার ৫ তারকা হোটেলে খেতে গিয়ে ওয়েটার কে স্যার বলে ফেলেছিলাম। কি করব এমন স্মার্ট ভাবে থাকে যে দেখলে স্যার এমনি মুখ দিয়ে বেড়িয়ে যায়।
.
আমার বেবিটা কে ইচ্ছা করেই আমাদের মাঝে শুতে নেই না এই আশায় হয়ত আমাকে কোন রাতে ও কাছে টেনে নিবে। আচ্ছা আরাফাত কি জানে আমি মাঝ রাতে ২-৩ বার উঠে বেবিটার কাছে গিয়ে চুমু খেয়ে আসি। মনে হয় না কারণ ওর ঘুম খুব গভীর একবার ঘুমালে আর কিছু হুশ থাকে না মাঝে মাঝে আমি আরাফাতকে ঘুমের মাঝে চুমু খাই আরাফাত কি সেটা জানে? আগে ও আমার উপরে এক ধরেনর ভালবাসার জোর খাটাতো এখন আর খাটায় না ওকি বোঝে না প্রতিটা মেয়ে চায় তার ভালবাসার মানুষ তার উপরে জোর খাটাক। আগে আমি মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে রাতে না খেয়ে থাকতাম তখন ও আমাকে জোর করে রাগারাগি করে খাওয়াতো আমার কিজে ভাল লাগত।
.
আজকে আমার অনেক কাজ আছে। অনেক দিন থেকেই চিন্তা করছি বিষয়টা সব কিছু রেডি। উকিলের সাথে কথা হয়েছে সব কমপ্লিট শুধু আমার সাইন দরকার। আমার সমস্ত সম্পত্তি আমি আরাফাতের নামে করে দিব। আমি এই সবের কিছুই চাই না চাই শুধু আরাফাত কে সেই আগের আরাফাতকে!
.
সব কাগজ এখন রেডি সব সম্পত্তি এখন আরাফাতের নামে আরাফাতের অবর্তমানে আমার বেবিটা পাবে সব কিছু আমার কাছে এখন কিছু নেই শুধু আমার বেবিটা ছাড়া। আমি এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি যাওয়ার আগে শুধু একটা চিরকুট লিখে রেখে যাচ্ছি..
.
“ আমার এই জীবনে যদি কিছু চাওয়ার থাকে বা চেয়ে থাকি সেটা
হলে তুমি আর কিছু না। সেই তোমাকে না পেলে আমার আর
কিছুর দারকার নেই। চলে গেলাম যদি পার খুজে বের কর”
.
.২বছর পরের কথা আমি, আরাফাত এবং আমার বেবিটা কে ঘিরে দাড়িয়ে আছে অনেক গুলো ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। আমার মাসে একটা দিন এই খানে সময় কাটাই। আমার বেবিটা কে বাচ্চা গুলো খুব পছন্দ করে আমি আর আরাফাত দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি। আমার বেবিটা মনে হয় মাসে এই দিনটার আশায় থাকে। এই ছোট ছোট বাচ্চা গুলো সবাই এতিম আর এই এতিম খানাটা আমার চালাই আমাদের টাকায়। আর সে দিন আমি চিরকুট লিখে রেখে আমাদের সেই আগের ভাড়া করা বাসাটায় চলে আসি। অবশ্য আরাফাত আমাকে মুহূর্তের মাঝেই খুজে বের করে ফেলে তার পরে আবার সব হয়ে যায় আগের মতই। তবে আরাফাত আবার জোর করে সব সম্পত্তি আমাদের বেবিটার নামে করে দেয়।
No comments