Header Ads

ভালবাসায় তুমি আমি

- জানিস কলেজে এসে প্রেম না করলে কেমন যেন একটা মনে হয়।(শুভ)
- কি বললি? কেমন যেন মনে হয়? কি মনে হয় বলতো?(মেহেদী)
- আরে বুঝিস না? একটা গার্লফ্রেন্ড থাকবে, ক্লাসের ফাকে দুষ্টু মিষ্টি প্রেম আহ জোশ।
- শুভ তুই কি সব সময় ঠাট্টা নিয়ে থাকিস?
- কেন ভাই? কি বললাম আমি?
- আচ্ছা বাদ দে কাজে কথায় আয়। পড়াশোনা হচ্ছে না। বাড়ি থেকে বকা শুনতে হচ্ছে।
- তুই যদি বলিস পড়াশোনা হচ্ছে না তাহলে পড়ছে কে সেটা বলতো?
- এই পাগল আমি আবার স্টুডেন্ট কবে হলাম?
- কথায় আছে না? আল্লাহ্‌ যাকে যত দেয়, তার তাতে হয় না আরো চাই।
- এই ভাবে বলিস না। আমি তো লাস্ট বেঞ্চির স্টুডেন্ট।
- চুপ কর, প্রাইভেট পড়তে হবে।
- হুম তুইও পড়বি?
- হুম পড়াতো লাগবেই না হলে রেজাল্ট খারাপ হবে আর বাপে ইচ্ছামত পিডাইবে।
- এইতো দারুণ বুঝছিস। কি কি পড়বি?
- তুই যেগুলা পড়িস আমিও সেইগুলাই পড়ব।
- আচ্ছা তাহলে কাল সকাল থেকে পড়া শুরু। শোন মিস দিস না প্লিজ দোস্ত।
- আচ্ছা ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না। চল বাসায় যাই।
- আচ্ছা চল।
প্রথম দিনের প্রাইভেট আমি, শুভ, বিপু তিন জন। সকাল ৭টায় পড়া। চিন্তায় আছি বজ্জাত গুলা ঠিক সময়মত আসলে হয়। বসে চিন্তা করছি ইতোমধ্যে অরাও চলে এলো। বাহ সবাই কেমন মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। দেখে ভালই লাগলো। অদের সাথে নিয়ে গেলাম প্রাইভেট পড়তে।
প্রথম দিনেই উলটা পালটা। উলটা পাল্টার কারণ হলো প্রাইভেটে তিনটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে আছে। দুইটা ছেলে খুবই ভদ্র। কিন্তু বাকি যে তিনটা মেয়ে আছে তাদের গুনের কথা আর কি বলব। একটা মেয়ে খুব শান্ত শিষ্ট প্রকৃতির আর বাকি দুইটা উফফ জালায় শেষ। স্যারের কাছে প্রথম দিন থেকে নালিশ করি। দুইটা ছাগলের মত প্যাচপ্যাচ করে সব সময়। খুবই বিরক্তিকর দুইটা। আমাদের বাসার অইদিক থেকেই আসে।
যে ভাবেই হোক পড়াটা চালিয়ে নিচ্ছিলাম। এদিকে বজ্জাত দুইটা শুভ আর বিপু অই দুইটা মেয়ের সাথে প্রেমালাপ শুরু করে দিছে। এদিকে আমাদের পড়া এগোচ্ছে না আর অদের প্রেম হরহর করে এগিয়ে চলেছে। বজ্জাত গুলার কি মাথায় কিছুই নাই? সামনে এক্সাম আর এখম প্রেম করা? হুহ, প্যেরা ছাড়া কিছু না।
- মেহেদী তুই প্রেম কর না ভাই।(বিপু)
- হুম করব কিন্তু এইচ এস সি'র পর করব।(মেহেদী)
- হুম তোর জন্যে তখন মেয়েরা অপেক্ষা করবে তাইনা? বোকা।(শুভ)
- কেন? সবারই কি বিয়ে হয়ে যাবে?
- তুই বুঝিস না কেন? এখন রিলেশন করে রাস্তা পাকা করে রাখ যাতে বৃষ্টিতে রাস্তায় কাঁদা না জমে, বুঝছিস?(বিপু)
- কিরে তুই এতো জ্ঞানের কথা কই পাইলি?
- তোর শ্বশুর এর থেকে ধার করছে হাহাহাহা (শুভ)।
- বাজে বকিস নাতো।
- তুই রিলেশন করবি কিনা সেটা বল(শুভ)
- আচ্ছা করব, কিন্তু আমি কিছু জানিনা সব দায়ভার তোদের।
- ঠিক আছে মামমাহ চিন্তা করিস না। (বিপু)
বাড়ি ফিরে চিন্তা করছি। রিলেশন যদি করি তাহলে কি কি ক্ষতি হতে পারে আর কি কি উপকার হতে পারে।
রিলেশন করলেই পড়ালেখা নিচে নেমে যাবে। আবার রিলেশন করলে পড়াশোনা ভাল হয়ে যায়। কিচ্ছুই বুঝতেছিনা। কি যে করি। শেষমেশ রাজি হলাম অদের কথায়। কিন্তু খুব ভয় লাগছে জানি না কি হবে।
প্রাইভেট পড়ে আসছিলাম তিনজন।
অরা অদের জিএফদের সাথে কথা বলতেছে আমার সামনে। আমি অদের পিছনে ধিরে ধিরে আসতেছিলাম। এমন সময় পেছনে খেয়াল করলাম। অই মেয়েদের তিনজনের একজন পেছনে অর্থাৎ আমার মতই মেয়েটাও বন্ধু থাকতেও এখন বন্ধু নাই। একটু কথা বলে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলাম।
- আসসালামু আলাইকুম।(মেহেদী)
- ওআলাইকুম আসসালাম।(মেয়েটি)
- আপনি কি খুব চুপচাপ থাকেন?
- জি হ্যাঁ।
- দেখেছেন অরা কত্ত স্বার্থপর। এক সাথে এসেও অদের বিএফ জিএফদের সাথে যায়।
- হ্যাঁ। আপনার জিএফ কোথায়?
- জিএফ? হয়তো তার শ্বশুর বাড়িতে।
- এটা কেমন উত্তর?
- কারণ জিএফ নেই যে। আপনার বিএফ কোথায়?
- আসবে কোনো একদিন।
- বাহ খুব ভাল, আসুক দেখা যাবে।
- ফ্রেন্ডশিপ করবেন?
- কেন নয়?
- আচ্ছা ঠিক আছে।
মেয়েটা খাতা বের করে কি যেন লিখে রাখলো বুঝলাম না।
- খাতায় কি লিখলেন?
- ফ্রেন্ডশিপ করলাম তারিখটা লিখে রাখলাম।
- ওয়াও আপনি তো খুব বুদ্ধিমতি।
- ঠিক জানি না, হয়তো ভুল অথবা ঠিক।
- এইযে আপনার নামই তো জানা হয়নি।
- আমি শারলিন, আপনি?
- আমি মেহেদী।
- আপনি কি প্রতিদিন এইদিকে দিয়ে আসেন?
- হুম আপনি?
- আমিও আসি। কিন্তু দেখা হয়না কেন?
- তাতো ঠিক বলতে পারব না।
- বাসার রাস্তাতো পেয়ে গেলাম এখন আসি।
- হ্যাঁ যান, সাবধানে যাবেন।
- ইনশাহ আল্লাহ্‌, আপনিও।
মেয়ে বন্ধুছিলো না কিন্তু হঠাৎ করে মেয়ে বন্ধু হয়ে গেলো। যা হয় ভালর জন্যই হয়। এখনো তাকে দেখিনি। সে কেমন, না দেখেই বন্ধুত্ব করা যায়? কারণ বন্ধুত্বের মাঝে অন্য রকম একটা ভালবাসা কাজ করে।
এক দিন, দুদিন, তিনদিন করে চলে গেলো পাঁচ মাস। বিপু শুভ অরা অদের জিএফদের নিয়ে তুমুল আড্ডা দেয়। কিন্তু আমি আর শারলিন বসে বসে আড্ডা চুপচাপ থাকি। আমরা দুজনই ফাঁকা। মানে সিঙ্গেল। বজ্জাত গুলা বলছিলো রিলেশন করতে। কিন্তু রিলেশন করব কার সাথে বাদর গুলা খুব বাজে।
- আচ্ছা মেহেদী একটা কথা বলোতো।(শারলিন)
- কি কথা?
- তুমি আমাকে দেখতে চাওনি কখনো। কিন্তু কেন দেখতে চাওনি?
- চাইব একদিন।
- একদিন? সেদিনটা কবে আসবে?
- আজ অথবা কাল অথবা পরশু।
- থাক আসতে হবে না।
- রাগ করেছো?
- করতেই পারি কারণ অধিকার আছে।
- করবে না কেন?
- হুম তাইতো।
- কিছু কথা আছে তোমার সাথ।
- বলো কি কথা আছে? আমারো কিছু কথা আছে।
- তুমি আগে বলো?
- না, তুমি আগে।
- না, তুমি।
- যার যখন মন চায় সে তখন বলবে, ঠিক আছে?
- হ্যাঁ, ঠিক আছে।
- বাসায় যাবো।
- আমিও যাবো
- চলো।
আড্ডা দিতে দিতে বাড়িতে এলাম।আমি যে বললাম শারলিনকে, "তোমার সাথে কথা আছে" কিন্তু কি কথা বলব সেটা নিজেও জানিনা। দেখি শারলিন কি বলে তার পর আমি বলব।
পরদিন শারলিনের সাথে দেখা। কিন্তু ও কিছুই বললো না। আমিও বলিনাই। অনেক খানি দুর্বল আমি ওর প্রতি। কেন যে দুর্বলতা নিজেও বুঝতে পারিনা। কয়েকদিন পর,
- আমার বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করেছে জানো?(শারলিন)
মনের মধ্যে আলো জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেলো আমার।
- ওয়াও তাইনাকি?(মেহেদী)
- হ্যাঁ, তোমাকে ইনভাইট করব আসবা কিন্তু।
- আচ্ছা ঠিক আছে(মন খারাপ করে)
- কি ব্যাপার তোমার মুখ শুকিয়ে গেছে কেন?
- কই নাতো, আমি ঠিক আছি।
- মিথ্যা বলবা না। কি হইছে সেটা বলো। আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড আমার কাছে লুকাবে কেন?
- আমার কাছের মানুষ আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তাই এমন হচ্ছে।
- ওহ! আচ্ছা মন খারাপ করো না।
- ঠিক আছে।
কোনো কথা না বলে চলে এলাম। কিছুই ভাল লাগছে না। ভিষন খারাপ লাগতেছে। এমন কখনো হয়নি। আম্মু বুঝতে পারেছে। আর আম্মু আমাকে বুঝিয়ে দিলো কেন আমার মন খারাপ। আম্মুর কথা মত শারলিনকে কল দিলাম কিন্তু সিম অফ। চিন্তার মাত্রা বেড়ে দিগুন হলো। আম্মু আমাকে কখনো এতো চিন্তিত দেখে নাই। মেসেজ দিলাম যাতে ফোন খোলার পরেই আমার মেসেজটা দেখতে পায়।
যাক মেসেজে কাজ করেছে। কিন্তু আমাকে আধামরা অবস্থা করার পর কাজ হলো। কল এলো আমার সিমে। কেটে দিয়ে কলব্যাক করলাম।
- হ্যালো, শারলিন।
- হ্যাঁ বলো, কেমন আছো?
- কাল সকালে কলেজে আসবা ঠিক ৬:৩০ এ এম। মনে থাকে যেন।
কেটে দিলাম। খুব ছটফট করছিলাম অকে না দেখতে পেয়ে। আম্মু আমাকে যতই শান্তনা দেয় কিন্তু তা বৃথা যাচ্ছিলো। রাত ১১টার দিকে হয়তো ঘুমিয়ে যাই। আম্মু ভোর ৬টায় আমাকে ডেকে দেয়। আমি আম্মুর শিখিয়ে দেয়া কথা মতই এগিয়ে গেলাম।
কলেজে আসলাম। কিন্তু শারলিনের কোনো খবর নেই। ৬:৩০ এ,এম পার হয়ে ৭টার দিকে যাচ্ছে কিন্তু মহারানীর কোনো খোঁজ নেই। ৭টা পার হয়ে ৮টার দিকে যাচ্ছে কিন্তু তার পরেও শারলিন আসছে না। কোনো উপায় না পেয়ে চলে আসছিলাম এমন সময় পেছন থেকে কলারটা ধরে।
- এই কই যাও?
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি গলা পরিচিত কিন্তু মুখ দেখে চিনিনা।
- কে আপনি? কলার ধরেছেন কেন?
- আমি আপনার বউ আমাকে বাড়ি নিয়ে চলেন।
- আজব কথা, আপনি ছাড়ুন তো আপু, আমি চিন্তায় আছি আর আপনি নাটক শুরু করেছেন।
- এই ছেলে বেশি কথা শিখছো তাইনা?
বুঝতে পারছিনা কে এই মেয়ে
- কে আপনি বললে বলেন, না বললে রাস্তা ছাড়ুন যেতে হবে।
- আমাকে সাথে নেবে না?
- ধুর জানতো আপনি।
- চলে আসছিলাম জোড় করেই কিন্তু মেয়েটা যা বলল আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
- আমি তোমার শারলিন।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি। এতো সুন্দরী কেন তুমি?
- এইযে কি হলো কথা বলনা কেন?
- ভাবনার কথাটা বলেই দিলাম "এতো সুন্দরী কেন তুমি?"
- আচ্ছা যাইহোক এবার আমাকে প্রপোজ কর।
- আমি করব? কিন্তু কি ভাবে করে জানিনা তো।
- আচ্ছা আমি করি,
"আমি তোমার ভালবাসায় আজীবন বেঁচে থাকতে চাই, মৃত্যুর পরেও যেন তোমাকে ভুলে না যাই, ভিশন ভালবাসি তোমাকে। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়োনা।"
- কি বলন বুুঝতে পারছিলাম না। তাই চুপ করেছিলাম।
শারলিন বেশ কয়েকবার কথা বলেছে হয়তো শুনি নাই। পেছন ঘুরে দেখি মেয়েটা কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছে।
- এই শোনো একটু দাঁড়াও।
কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে চলেই যাচ্ছে।
শারলিন আমিও ভালবাসি তোমায়।
- তুই এতো সময় আমাকে কাঁদিয়েছিস কেন? আমার চোখের জ্বলের দাম নেই তোর কাছে?
- আছে তো পাগলী, নেই মানে?
- তাহলে বল আর আমাকে কাঁদাবিনা?
- ইনশাহ আল্লাহ্‌, আমি আর আমার পাগলীকে কাঁদাবোনা।
- আন্টি বাসায় যেতে বলছে।
- কি?
- হ্যাঁ, চলো
- তুমি কখন কথা বলছো?
- তুমি ১১টায় ঘুমানোর পর।
- ছিঃ ছিঃ।
- ছিঃ ছিঃ করবা না, ভালবাসি এটা মনে রেখো।
- আমিও বাসি।
- তো চলো এখন।
- হুম চলো
বাড়িতে এসে আম্মুর সাথে কথা বার্তা বলে অকে বাড়িতে রেখে এলাম। বাড়িতে না মানে বাড়ির রাস্তায়। আমি বাড়ি চলে এলাম আম্মুতো অকে দেখে মহা খুশি। খুশি আমি নিজেও। খুশি বজ্জাত বন্ধু গুলাও।
ঘুমোতে যাবো এমন সময় সব গুলা এক সাথে কল দিছে।
এক এক করে কল আসছে। প্রথমে বিপু, তার পর শারলিন কনফারেন্স করার পরেই আবার শুভ। চার জন মিলে রাত ১:৩০ মিনিট পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে যাই। পর দিন এক নতুন সকালের দেখা পেলাম।
এই সবের মূল নির্মাতা হলো আমার কলিজা, আমার সব কিছু, আমার শরীরের একাংশ তিনি হলেন আমার "আম্মু"।
ভিশন ভালবাসি তোমায় আম্মু।

No comments

Powered by Blogger.