অনাকাঙ্ক্ষিত ব্রেকাপ।
তামান্নার সাথে আজকে আমাদের দ্বিতীয় দেখা।
.
ভার্চুয়াল নামের মিথ্যা জগত থাকতেও ওর সাথে রং নাম্বারে
পরিচয় হয়েছিল। যতই দিন যায় ততই কথা বাড়তে থাকে
আমাদের। কথা অবশ্য এই ভার্চুয়ালেই হত।
.
খুব আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল যে, ফেসবুক আইডি পাবার
পরে দেখি ওর সাথে আমার আরো অনেক আগে
থেকেই পরিচয়। তখন কেউ কাউকে চিনতাম না। শুধুই কথা
বলতাম। কেউ কারো নাম্বার বা পিক কোনটাই দেই নি। আমিও
চাইতাম না। সেও চাইত না।
.
আমার মনে হয় একটা কারণে চাইত না। কারণ টা হল, আমার
বেশিরভাগ পোষ্টেই বলা থাকত।
" কথা বলবেন ভাল কথা। কিন্তু ছবি বা ফোন নাম্বার চেয়ে
লজ্জিত হবেন না"। এবাউটেও এই জাতীয় কিছু বাক্য লিখে
কড়া হুশিয়ারী দিয়েছি।
.
আইডিতে ও আমার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করত। সেই
কথাগুলোই আমার সাথে আবার ফোনে বলত। যেহেতু ও
ভাবত ফোনে কথা বলা ব্যাক্তি, আর চ্যাটিং করা ব্যাক্তি দুই জন।
কিন্ত ও তখনো জানতনা। ফেসবুকে কথা বলা আর ফোনে
কথা লোকটা একই বা একজনই। আমি এই ব্যাপারে অনেক
মজা পেতাম। আলাদা লোক ভেবে আমার কাছেই বলত।
খুব ইন্টারেস্টিং হতাম। আমি মাঝে মাঝে তার সাথে ফেক রাগ
দেখাতাম। কেন সে আরেকজনের কথা আমাকে বলে?
রাগ দেখাতাম ঠিকই কিন্তু আড়ালে হেসে কুটি কুটি হতাম।
ফোন দূরে রেখে হেসে তারপর আবার কথা বলতাম।
.
ফোনে একরকম, আর এফবি তে আরেকরকম কথা বলতাম।
ফোনে রাগারাগি করলে, এফবিতে দুষ্টু মিষ্টি কথা বলতাম
যেন তার মনের আকাশ মেঘ রাঙা না হয়। একদিন তো খুব
ঝাড়লাম তাকে। আমি বুঝতে পারছিলাম তামান্না খুব কষ্ট পাচ্ছে।
আমার মনটাও কেমন যেন আনচান আনচান করতেছিল।
কোথাও শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই রাতে একটা ছোট মেসেজ
পাঠালাম ফোনে। সেখানে লেখা ছিল, দুজন ব্যাক্তিই আমি।
অন্য কেউ না। এই কাজটা আমি দিনেই করতে পারতাম কিন্তু
করি নি। কেন জানেন? দিনে করলে ও ফোন দিত। আমি
রিসিভ না করে পারতাম না। রিসিভ করলেই, তুমি খুব পাজি, এই কথা
এতদিন কেন বলনি? এই সব কথার উত্তর দিতে হইত। তাই রিক্সটা
নিলাম না। ও ঘুমানোর পরেই মেসেজটা পাঠালাম। আমি জানতাম
সে এখন ঘুমিয়ে গেছে। এটাই তার ঘুমানোর টাইম।
সকালেই মেসেজ চেক করবে। সকালে সবার মতই তার
মন মেজাজ গরম থাকে না। ঠান্ডা মাথায় যদি আমার দেওয়া
মেসেজটা পড়ে তাহলে আর ঝাড়ি খাবার রিক্স নাই।
.
ওর সাথে পরিচয় বেশী দিনের না। পাঁচ ছয় মাসের। এরই
মাঝে ওর নারী নক্ষত্র সব জেনে ফেলেছি। আই মিন
আমাদের সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন।
,
আমাদের ফার্স্ট মিট ( দেখা ) হয়েছে গত জানুয়ারিতে।
প্রচন্ড শীত ছিল।
এরপরে অনেকবার দেখা করতে চাইছি কিন্তু পারিনি। আমার
সময় হলে ওর নাই, ওর হলে আমার নাই। এইভাবেই পাঁচ বার মিট
করার প্রোগ্রাম কেন্সেল করি। যদি সেই পাঁচ বার দেখা
হত তাহলে এই নিয়ে সাতবার হয়ে যেত। প্রথম বার সহজেই
মিট হয়ে গেছিল। কারণ সে কলেজ থেকে পিকনিকে
এসেছিল। শুধু সাইন্সের স্যার ম্যাডাম আর ছাত্র ছাত্রীরা
পিকনিকে আসছিল।
.
এখন জুন মাস। রোজার মাস। সামনেই ঈদ। আপু আর
দুলাভাইকে আনতে ঢাকা যাচ্ছি।
,
ঢাকায় গিয়ে তামান্নাকে ফোন দিলাম রাতে।
:- হ্যালো তামান্না?
ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল,
:- হুম্ম বল।
:- এই পুচকি মেয়ে। এখন কটা বাজে? যে ঘুমিয়ে পড়ছ
এখনি?
:- সারাদিন অনেক কাজ করেছি। তাই বিছানায় পিঠ লাগাতেই ঘুম
এসে গেছে।
:- যাও গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এস। তন্দ্রা কেটে যাবে।
:- আচ্ছা যাচ্ছি ।
,
সে হাতমুখ ধুয়ে এসে। আমাকে ডাইরেক্ট কল দিল। আমি
রিসিভ না করে কল কেটে দিয়ে ব্যাক করলাম।
আমি তামান্নাকে বললাম,
:- তন্দ্রা কেটেছে?
:- কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়েছ। হালকা মাথা ব্যাথা করছে।
:- তাহলে বেশী কিছু বলব না। অল্প কিছু কথা বলেই
রেখে দেব।
:- হুম্ম। বল।
:- আমি তো ঢাকায় আসছি। আপু আর দুলাভাইকে নিতে। চলনা
দ্বিতীয় বারের মত দেখা করি। খুব মন চাচ্ছে।
:- কাল অবশ্য কলেজ বন্ধ। আমারো অনেক ইচ্ছা করছে
তোমাকে দেখতে।
:- দেখা করছ তাহলে?
:- এই শোন। শিউর না! গতিবিধি লক্ষ করে। সকালে
তোমাকে ফোন দিয়ে জানাব।
:- আচ্ছা জানিও।
:- রাখি। হুম্ম?
:- খোদা হাফেজ।
:- খোদা হাফেজ।
.
সকালে ফোনের কর্কশ শব্দে আমার সাধের ঘুম হাওয়া
হয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তামান্না ফোন
দিয়েছে। রিসিভ করতে করতেই ফোনটা কেটে গেল।
এই যাহ!
.
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি পাঁচ টা মিস কল। ফোনের
উপরিভাগে চোখ যেতেই চোখ আরো বড় হয়ে
গেল। ওহ মাই গড ৯:২৫ বাজে। এত বেলা করে আমি
ঘুমাতে পারি? যাক আজকে না জানি কোন শনি আছে।
দেরী না করে ডাইরেক্ট ফোন দিলাম। ঢুকার সাথে
সাথে রিসিভ হয়ে গেল।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম -
:- জানু, গুড মর্নিং......
:- গুড মর্নিং।
উত্তর টা জোরেই দিল। স্বাভাবিক নাকি রাগী ভাব তা স্পষ্ট বুঝা
গেল না।
:- ফোন রিসিভ করতে না পারার জন্য স্যরি।
:- কোথায় ছিলে তুমি?
:- এইতো ওয়াশরুমে ছিলাম।
,
জেনেশুনে ডাহা মিথ্যা কথা বললাম।
,
:- ফোন কোথায় ছিল?
:- খাটের উপরে। সাইলেন্ট মোডে ছিল। তাই খোজ
পাইনি।
:- দু:খের বিষয়। তুমি সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে পার না।
:- কেমনে বুঝলা আমি মিথ্যা বলছি?
:- কথা বলার সময় তুমি হাই তুলছিলে। বরং তুমি ওয়াশরুমে নয়
বিছানায় ছিলে।
এই যা! ধরা পড়ে গেলাম। কি করি এখন?
তাই সত্য কথাটাই বললাম।
:- হ্যা। আমি ঘুমেই ছিলাম।
:- থাক ঘুমে। দেখা করতে পারব না।
বুঝলাম রেগেই বলল কথাটা। আমিও বললাম।
:- আচ্ছা। গিয়ে টিকিট কিনে আনি। বাড়ি চলে যাব।
:- জ্বী..... না। আজকে টিকিট তুমি ঠিকই কাটবে। বাসের নয়,
পার্কের।
:- তারমানে দেখা হচ্ছে?
:- হুম্ম। আমি অলরেডি বেরিয়ে পড়েছি। তাড়াতাড়ি তুমি বের
হও।
:- আচ্ছা। এখনি বের হচ্ছি।
,
ফোনটা রেখে ইয়াহু বলে চিৎকার দিয়ে খাটে লাফিয়ে
পড়লাম। বালিশ, চাঁদর, রুমাল এদিক সেদিক ছিটাছিটি করতে লাগলাম।
,
দশটার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। জানি সে যতই বলুক
বের হয়ে গেছে। দেখা যাবে আমি গিয়ে বসে আছি
তার কোন খবর নেই। ঘটলও তাই। পার্কের গেটে গিয়ে
ফোন দিলাম।
:- বাবুর মা তুমি কই?
:- স্যরি রং নাম্বার।
,
আমি কান থেকে নামিয়ে স্ক্রীনে নাম্বার চেক করলাম।
দেখি ঠিকই আছে তবুও কেন রং নাম্বার বলল? আমি হ্যালো
বলার আগেই সে বলল।
:- আমি তামান্না। কারো বাবুর মা নই।
এতক্ষণে বুঝলাম কাহিনী কি? এই নামে ( বাবুর মা ) আজই
প্রথম ডাকলাম তামান্নাকে।
:- হুম্ম বুঝতে পারছি। তুমি বাবুর মা নও। কিন্তু তুমি এখন
কোথায়?
:- এইতো জ্যামে আটকে গেছি।
:- বাহ! বাহ! । ভাল কাজ করেছ। আমি বসে আছি পার্কের
সামনে।
:- সামনে কেন? ভিতরে গিয়ে বস।
:- না। ম্যাডাম। দাড়োয়ান একা ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আপনি
এলেই ঢুকব।
,
ফোন কেটে দিলাম। আসলে তা না। ভিতরে যাওয়া কোন
ব্যাপার ই না। পার্কের ভিতর গেলেই দেখব শুধু জোড়ায়
জোড়ায় বসে আছে। আমি সিঙ্গেল তাই লজ্জা করবে।
এতগুলো ডাবলদের মাঝে আমি সিঙ্গেল? বিষয়টা খুব ইয়ে
হয়ে যায়। টিকেট কেটে বেঞ্চে বসে আছি।
,
আধাঘণ্টা পর সে আসল।
গেট ছাড়িয়ে একটু ভিতরে যেতেই কিছু আপত্তিকর দৃশ্য
চোখে পড়ল। অবশ্য একটা দৃশ্যের কথা আপনাদের
সাথে শেয়ার করা যেতেই পারে।
,
এক জোড়া কপোত - কপোতী একই আইসক্রিম দুজনে
খাচ্ছে। তাও আবার একবারে। চিন্তা করেন তাহলে একবারে
খাওয়ার জন্য কতটুকু কাছে আসতে হয়?
.
সেই দৃশ্য দেখে তামান্না লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে
সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু একবার চোখ তুলে তাকাল।
দেখল আমি কোনদিকে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টিও সংযত
ছিল।
,
পার্কে এসে আরেকটা জিনিস দেখলাম। সেটা হল এখানকার
মানুষ রোজা বলতে কিছু চিনেই না। বছরের অন্যান্য
সময়ের চেয়ে খাবার সামগ্রী এখনি অনেক বেশী
বেঁচাকেনা হচ্ছে।
,
আমি এসেছি। জাস্ট দেখা করব। কিছু কথাবার্তা বলব। এইতো
আর কিছু না।
,
অনেক ক্ষণ হল পার্কে ঢুকেছি। তামান্না তো কথার ঝুড়ি
নিয়েই বসেছে। কথা যেন ফুরোতেই চায় না। আমি শুধু
তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কী অসাধারণ কথা বলার
ভঙ্গিমা! ঠোট আর জিহব্বা অনবরত নাড়িয়েই যাচ্ছে। আমি
মাথায় হাত রেখে কাত হয়ে দেখছিলাম।
.
শাড়িতে অনেক মায়াবী লাগছে। আগের থেকে অনেক
কিউট হয়েছে। কন্ঠটাও অনেক ভাল হয়েছে। তাইতো
দীর্ঘ সময় কথা শুনার পরেও আমার ক্লান্তি লাগছে না।
সময়টুকু মন্দ যাচ্ছে না।
,
একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। ও যে সময়ের কথা
বলেছে, যে এর চেয়ে বেশী সময় কিছুতেই
থাকতে পারবে না। তা পেরিয়ে আধাঘণ্টা চলছে।
আমি আর বাধা দেই নি। অনেক কথা জমা হয়েছিল। সব কথাই
বলছে। ফোনে আর মেসেজে কয়টা কথা বলা যায়।
সরাসরি দেখা করে সে অনেক কথাই বলল আমাকে। ওর
আর আমার কথার পরিমান হিসেব করলে দেখা যাবে। ওর
দশভাগের একভাগও ( ১০: ১ ) আমি বলি নি।
,
আচ্ছা। এত্তক্ষণ তো গল্প পড়লেন। একটা কথা আপনাদের
জিজ্ঞেস করি।
কি বলেন? করব?
হুম্ম। করিই তাহলে।
,
আশা করছি। মেয়েরা এই উত্তরটা ভাল দিতে পারবেন।
.
মনে করুন খুব সুস্বাদু একটা খাদ্য রান্না করছেন। সব মিলিয়ে
খুবই টেস্ট হবে বলে আশা করতেছেন। এমন সময় আমি
বা অন্যকেউ সেই রান্না করা তরকারী বা খাদ্যে পানি
ঢেলে দিল। তবে কি আর সেই স্বাদ পাবেন?
,
যদিও আমি রান্না তেমন করি না তারপরেও অন্তত এইটুকু বুঝি
যে, সেই রান্না করা খাবার টুকু খাওয়ার অযোগ্য হবে।
কি ঠিক বলেছি না, আপুরা?
.
ঠিক এমনি করেই আমাদের সম্পর্কের তেরোটা
বাজিয়েছিল। একটা পিচ্চি মেয়ে। এখন বলবেন। পিচ্চি
মেয়ে বুঝে কি! যে আপনার সম্পর্কে ফাটল ধরাবে?
ভাই বুঝে নি দেখেই তো ফাটল ধরিয়েছে।
কেমনে ধরাইল? জানতে চান? অপেক্ষা করেন।
.
আমি আর তামান্না পুকুরের সামনে বসে আছি। শুধু শুধু পুকুর
দেখছি তা নয় কিন্তু। একটা রাজহংসী আর একটা রাজহংস। তাদের
ভালবাসা প্রকাশের নমুনা দেখছি। দুই হাঁস মুখোমুখি হয়ে লম্বা
গলা বেকিয়ে, ঠোটদ্বয় নিচের দিকে রেখে এমন এক
জিনিস সৃষ্টি হয়েছে। তা লাভ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু
আমরা নই। আমাদের মত অনেকেই এই দৃশ্য উপভোগ
করেছে।
,
দূর থেকে একটা পিচ্চি মেয়ের কন্ঠে আব্বু! ডাক
ভেসে এল। আমি শুনছি কিন্তু পিছনে তাকাই নি। মেয়েটি
হয়তো তার বাবাকে ডাকতেছে। আর সেই বাবা
অন্যকেউ।
আমি দৃশ্য দেখায় মনোনিবেশ করলাম।
হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
চেয়ে দেখি পিচ্চি মেয়ে।
আব্বু ডাক দিয়েই এক লাফে কোলে বসে পড়ল। আমি
সহ তামান্না পুরাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। খেয়াল করে
দেখলাম। তামান্নার দৃষ্টি একবার আমার দিকে, আবার পিচ্চি
মেয়েটির দিকে নিবদ্ধ হচ্ছে। ওর চোখের ভাষা আমি
স্পষ্ট বুঝতে পারছি। যা বুঝেছিলাম তা হল।
:- বেইমান, বিশ্বাস ঘাতক, নিমকহারাম। তোর মেয়ে আছে,
তুই বিবাহিত, তারপরেও আমার সাথে সম্পর্ক করে আমার
জীবনটা এভাবে নষ্ট করলি? জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দিলি
আমার এই সুন্দর জীবন? বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে গলা টিপে
মেরে ফেললি, বিশ্বাসের অমর্যাদা এভাবে করতে পারলি?
এই রকম হাজারো প্রশ্ন তার চোখে ফুটে উঠেছে।
আমি তার অনুভূতি বুঝতে পেরে বললাম।
.
:- বিশ্বাস কর তামান্না। এই বাচ্চা আমার নয়।
:- ছি:
এই একটা মাত্র কথা উচ্চারণ করে সামনে এগুতে থাকল।
ভয়ংকর রকমের ভুল বুঝেছে আমাকে। যারা মন ভাংগার শিকার
হইছেন। তারা এই ছি : শব্দটার সাথে অধিক পরিচিত। তারা জানেন।
এই শব্দটা কত যন্ত্রণাদায়ক!!!
,
তার চলে যাওয়া দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরলাম।
কিছুই বলল না। ঘুরে এসে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারল।
আবার ঘুরে এসে বলল, আর কোনদিন ফোন দিবানা
আমাকে। ভেবে নিবে আমি মরে গেছি।
,
হাড়ে হাড়ে বুঝতেছিলাম। কতটা আঘাত পেলে এই
কথাগুলো বলে।
একবারের জন্যও তামান্না পিছে ফিরে নি। সে চলে
গেছে। কথা ছিল তাকে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে
আসব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ও একাই যাচ্ছে।
,
এমন সময় পিচ্চিটা এসে বলল,
:- আব্বু! ও আব্বু কোলে নাও না।
আমার ইচ্ছা হচ্ছিল সজোরে একটা থাপ্পড় লাগাই। কিন্তু তা
করলাম না।
বাগানের আড়াল থেকে একটা মহিলা কণ্ঠ ভেসে এল।
:- কলি! এই কলি! মা আমার কোথায় গেলি?
বাগান পেরুতেই আমাদের নজরে এল। এসেই
মেয়েকে জড়িয়ে ধরল। চুমোতে মেয়েটাকে
ভরিয়ে দিল। মা আমার, সোনা আমার। পিছন থেকে কই
গেছিলি?
পিচ্চি মেয়েটি তখনো আমার আঙ্গুল ধরে দাড়িয়ে
আছে।
একটু পর মেয়েটির বাবাও এসে হাজির।
বাবা মা তার মেয়েকে খুজে পেয়ে অনেক আদর
সোহাগ করছে।
.
হঠাৎ মেয়েটির বাবা আমার হাত ধরে বলে ফেলল,
:- ভাই আপনি ফেরেস্তা। আপনি না থাকলে আমি আমার
মেয়ে কে ফিরে পেতাম না।
মেয়েটির মা বলতেছে।
:- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। কিন্তু আপনার গালে কি
হয়েছে?
আমি কি উত্তর দেব কিছু না বলে চলে আসলাম। তামান্নার মত
আমিও চলে আসলাম। পিছনে ফিরে তাকাইনি। ফিরলে হতো
দেখতে পেতাম দুই জোরা চোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে
আছে। আর প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছে। হয়তো
মনে মনে বলছে ছেলেটা কত্তবড় বেয়াদব! উত্তর না
দিয়েই চলে গেল।
,
,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,
.
ভার্চুয়াল নামের মিথ্যা জগত থাকতেও ওর সাথে রং নাম্বারে
পরিচয় হয়েছিল। যতই দিন যায় ততই কথা বাড়তে থাকে
আমাদের। কথা অবশ্য এই ভার্চুয়ালেই হত।
.
খুব আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল যে, ফেসবুক আইডি পাবার
পরে দেখি ওর সাথে আমার আরো অনেক আগে
থেকেই পরিচয়। তখন কেউ কাউকে চিনতাম না। শুধুই কথা
বলতাম। কেউ কারো নাম্বার বা পিক কোনটাই দেই নি। আমিও
চাইতাম না। সেও চাইত না।
.
আমার মনে হয় একটা কারণে চাইত না। কারণ টা হল, আমার
বেশিরভাগ পোষ্টেই বলা থাকত।
" কথা বলবেন ভাল কথা। কিন্তু ছবি বা ফোন নাম্বার চেয়ে
লজ্জিত হবেন না"। এবাউটেও এই জাতীয় কিছু বাক্য লিখে
কড়া হুশিয়ারী দিয়েছি।
.
আইডিতে ও আমার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করত। সেই
কথাগুলোই আমার সাথে আবার ফোনে বলত। যেহেতু ও
ভাবত ফোনে কথা বলা ব্যাক্তি, আর চ্যাটিং করা ব্যাক্তি দুই জন।
কিন্ত ও তখনো জানতনা। ফেসবুকে কথা বলা আর ফোনে
কথা লোকটা একই বা একজনই। আমি এই ব্যাপারে অনেক
মজা পেতাম। আলাদা লোক ভেবে আমার কাছেই বলত।
খুব ইন্টারেস্টিং হতাম। আমি মাঝে মাঝে তার সাথে ফেক রাগ
দেখাতাম। কেন সে আরেকজনের কথা আমাকে বলে?
রাগ দেখাতাম ঠিকই কিন্তু আড়ালে হেসে কুটি কুটি হতাম।
ফোন দূরে রেখে হেসে তারপর আবার কথা বলতাম।
.
ফোনে একরকম, আর এফবি তে আরেকরকম কথা বলতাম।
ফোনে রাগারাগি করলে, এফবিতে দুষ্টু মিষ্টি কথা বলতাম
যেন তার মনের আকাশ মেঘ রাঙা না হয়। একদিন তো খুব
ঝাড়লাম তাকে। আমি বুঝতে পারছিলাম তামান্না খুব কষ্ট পাচ্ছে।
আমার মনটাও কেমন যেন আনচান আনচান করতেছিল।
কোথাও শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই রাতে একটা ছোট মেসেজ
পাঠালাম ফোনে। সেখানে লেখা ছিল, দুজন ব্যাক্তিই আমি।
অন্য কেউ না। এই কাজটা আমি দিনেই করতে পারতাম কিন্তু
করি নি। কেন জানেন? দিনে করলে ও ফোন দিত। আমি
রিসিভ না করে পারতাম না। রিসিভ করলেই, তুমি খুব পাজি, এই কথা
এতদিন কেন বলনি? এই সব কথার উত্তর দিতে হইত। তাই রিক্সটা
নিলাম না। ও ঘুমানোর পরেই মেসেজটা পাঠালাম। আমি জানতাম
সে এখন ঘুমিয়ে গেছে। এটাই তার ঘুমানোর টাইম।
সকালেই মেসেজ চেক করবে। সকালে সবার মতই তার
মন মেজাজ গরম থাকে না। ঠান্ডা মাথায় যদি আমার দেওয়া
মেসেজটা পড়ে তাহলে আর ঝাড়ি খাবার রিক্স নাই।
.
ওর সাথে পরিচয় বেশী দিনের না। পাঁচ ছয় মাসের। এরই
মাঝে ওর নারী নক্ষত্র সব জেনে ফেলেছি। আই মিন
আমাদের সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য যা জানা একান্ত প্রয়োজন।
,
আমাদের ফার্স্ট মিট ( দেখা ) হয়েছে গত জানুয়ারিতে।
প্রচন্ড শীত ছিল।
এরপরে অনেকবার দেখা করতে চাইছি কিন্তু পারিনি। আমার
সময় হলে ওর নাই, ওর হলে আমার নাই। এইভাবেই পাঁচ বার মিট
করার প্রোগ্রাম কেন্সেল করি। যদি সেই পাঁচ বার দেখা
হত তাহলে এই নিয়ে সাতবার হয়ে যেত। প্রথম বার সহজেই
মিট হয়ে গেছিল। কারণ সে কলেজ থেকে পিকনিকে
এসেছিল। শুধু সাইন্সের স্যার ম্যাডাম আর ছাত্র ছাত্রীরা
পিকনিকে আসছিল।
.
এখন জুন মাস। রোজার মাস। সামনেই ঈদ। আপু আর
দুলাভাইকে আনতে ঢাকা যাচ্ছি।
,
ঢাকায় গিয়ে তামান্নাকে ফোন দিলাম রাতে।
:- হ্যালো তামান্না?
ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল,
:- হুম্ম বল।
:- এই পুচকি মেয়ে। এখন কটা বাজে? যে ঘুমিয়ে পড়ছ
এখনি?
:- সারাদিন অনেক কাজ করেছি। তাই বিছানায় পিঠ লাগাতেই ঘুম
এসে গেছে।
:- যাও গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এস। তন্দ্রা কেটে যাবে।
:- আচ্ছা যাচ্ছি ।
,
সে হাতমুখ ধুয়ে এসে। আমাকে ডাইরেক্ট কল দিল। আমি
রিসিভ না করে কল কেটে দিয়ে ব্যাক করলাম।
আমি তামান্নাকে বললাম,
:- তন্দ্রা কেটেছে?
:- কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়েছ। হালকা মাথা ব্যাথা করছে।
:- তাহলে বেশী কিছু বলব না। অল্প কিছু কথা বলেই
রেখে দেব।
:- হুম্ম। বল।
:- আমি তো ঢাকায় আসছি। আপু আর দুলাভাইকে নিতে। চলনা
দ্বিতীয় বারের মত দেখা করি। খুব মন চাচ্ছে।
:- কাল অবশ্য কলেজ বন্ধ। আমারো অনেক ইচ্ছা করছে
তোমাকে দেখতে।
:- দেখা করছ তাহলে?
:- এই শোন। শিউর না! গতিবিধি লক্ষ করে। সকালে
তোমাকে ফোন দিয়ে জানাব।
:- আচ্ছা জানিও।
:- রাখি। হুম্ম?
:- খোদা হাফেজ।
:- খোদা হাফেজ।
.
সকালে ফোনের কর্কশ শব্দে আমার সাধের ঘুম হাওয়া
হয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি তামান্না ফোন
দিয়েছে। রিসিভ করতে করতেই ফোনটা কেটে গেল।
এই যাহ!
.
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি পাঁচ টা মিস কল। ফোনের
উপরিভাগে চোখ যেতেই চোখ আরো বড় হয়ে
গেল। ওহ মাই গড ৯:২৫ বাজে। এত বেলা করে আমি
ঘুমাতে পারি? যাক আজকে না জানি কোন শনি আছে।
দেরী না করে ডাইরেক্ট ফোন দিলাম। ঢুকার সাথে
সাথে রিসিভ হয়ে গেল।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম -
:- জানু, গুড মর্নিং......
:- গুড মর্নিং।
উত্তর টা জোরেই দিল। স্বাভাবিক নাকি রাগী ভাব তা স্পষ্ট বুঝা
গেল না।
:- ফোন রিসিভ করতে না পারার জন্য স্যরি।
:- কোথায় ছিলে তুমি?
:- এইতো ওয়াশরুমে ছিলাম।
,
জেনেশুনে ডাহা মিথ্যা কথা বললাম।
,
:- ফোন কোথায় ছিল?
:- খাটের উপরে। সাইলেন্ট মোডে ছিল। তাই খোজ
পাইনি।
:- দু:খের বিষয়। তুমি সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যাও বলতে পার না।
:- কেমনে বুঝলা আমি মিথ্যা বলছি?
:- কথা বলার সময় তুমি হাই তুলছিলে। বরং তুমি ওয়াশরুমে নয়
বিছানায় ছিলে।
এই যা! ধরা পড়ে গেলাম। কি করি এখন?
তাই সত্য কথাটাই বললাম।
:- হ্যা। আমি ঘুমেই ছিলাম।
:- থাক ঘুমে। দেখা করতে পারব না।
বুঝলাম রেগেই বলল কথাটা। আমিও বললাম।
:- আচ্ছা। গিয়ে টিকিট কিনে আনি। বাড়ি চলে যাব।
:- জ্বী..... না। আজকে টিকিট তুমি ঠিকই কাটবে। বাসের নয়,
পার্কের।
:- তারমানে দেখা হচ্ছে?
:- হুম্ম। আমি অলরেডি বেরিয়ে পড়েছি। তাড়াতাড়ি তুমি বের
হও।
:- আচ্ছা। এখনি বের হচ্ছি।
,
ফোনটা রেখে ইয়াহু বলে চিৎকার দিয়ে খাটে লাফিয়ে
পড়লাম। বালিশ, চাঁদর, রুমাল এদিক সেদিক ছিটাছিটি করতে লাগলাম।
,
দশটার দিকে বাসা থেকে বের হলাম। জানি সে যতই বলুক
বের হয়ে গেছে। দেখা যাবে আমি গিয়ে বসে আছি
তার কোন খবর নেই। ঘটলও তাই। পার্কের গেটে গিয়ে
ফোন দিলাম।
:- বাবুর মা তুমি কই?
:- স্যরি রং নাম্বার।
,
আমি কান থেকে নামিয়ে স্ক্রীনে নাম্বার চেক করলাম।
দেখি ঠিকই আছে তবুও কেন রং নাম্বার বলল? আমি হ্যালো
বলার আগেই সে বলল।
:- আমি তামান্না। কারো বাবুর মা নই।
এতক্ষণে বুঝলাম কাহিনী কি? এই নামে ( বাবুর মা ) আজই
প্রথম ডাকলাম তামান্নাকে।
:- হুম্ম বুঝতে পারছি। তুমি বাবুর মা নও। কিন্তু তুমি এখন
কোথায়?
:- এইতো জ্যামে আটকে গেছি।
:- বাহ! বাহ! । ভাল কাজ করেছ। আমি বসে আছি পার্কের
সামনে।
:- সামনে কেন? ভিতরে গিয়ে বস।
:- না। ম্যাডাম। দাড়োয়ান একা ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আপনি
এলেই ঢুকব।
,
ফোন কেটে দিলাম। আসলে তা না। ভিতরে যাওয়া কোন
ব্যাপার ই না। পার্কের ভিতর গেলেই দেখব শুধু জোড়ায়
জোড়ায় বসে আছে। আমি সিঙ্গেল তাই লজ্জা করবে।
এতগুলো ডাবলদের মাঝে আমি সিঙ্গেল? বিষয়টা খুব ইয়ে
হয়ে যায়। টিকেট কেটে বেঞ্চে বসে আছি।
,
আধাঘণ্টা পর সে আসল।
গেট ছাড়িয়ে একটু ভিতরে যেতেই কিছু আপত্তিকর দৃশ্য
চোখে পড়ল। অবশ্য একটা দৃশ্যের কথা আপনাদের
সাথে শেয়ার করা যেতেই পারে।
,
এক জোড়া কপোত - কপোতী একই আইসক্রিম দুজনে
খাচ্ছে। তাও আবার একবারে। চিন্তা করেন তাহলে একবারে
খাওয়ার জন্য কতটুকু কাছে আসতে হয়?
.
সেই দৃশ্য দেখে তামান্না লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে
সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু একবার চোখ তুলে তাকাল।
দেখল আমি কোনদিকে তাকিয়ে আছি। আমার দৃষ্টিও সংযত
ছিল।
,
পার্কে এসে আরেকটা জিনিস দেখলাম। সেটা হল এখানকার
মানুষ রোজা বলতে কিছু চিনেই না। বছরের অন্যান্য
সময়ের চেয়ে খাবার সামগ্রী এখনি অনেক বেশী
বেঁচাকেনা হচ্ছে।
,
আমি এসেছি। জাস্ট দেখা করব। কিছু কথাবার্তা বলব। এইতো
আর কিছু না।
,
অনেক ক্ষণ হল পার্কে ঢুকেছি। তামান্না তো কথার ঝুড়ি
নিয়েই বসেছে। কথা যেন ফুরোতেই চায় না। আমি শুধু
তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কী অসাধারণ কথা বলার
ভঙ্গিমা! ঠোট আর জিহব্বা অনবরত নাড়িয়েই যাচ্ছে। আমি
মাথায় হাত রেখে কাত হয়ে দেখছিলাম।
.
শাড়িতে অনেক মায়াবী লাগছে। আগের থেকে অনেক
কিউট হয়েছে। কন্ঠটাও অনেক ভাল হয়েছে। তাইতো
দীর্ঘ সময় কথা শুনার পরেও আমার ক্লান্তি লাগছে না।
সময়টুকু মন্দ যাচ্ছে না।
,
একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। ও যে সময়ের কথা
বলেছে, যে এর চেয়ে বেশী সময় কিছুতেই
থাকতে পারবে না। তা পেরিয়ে আধাঘণ্টা চলছে।
আমি আর বাধা দেই নি। অনেক কথা জমা হয়েছিল। সব কথাই
বলছে। ফোনে আর মেসেজে কয়টা কথা বলা যায়।
সরাসরি দেখা করে সে অনেক কথাই বলল আমাকে। ওর
আর আমার কথার পরিমান হিসেব করলে দেখা যাবে। ওর
দশভাগের একভাগও ( ১০: ১ ) আমি বলি নি।
,
আচ্ছা। এত্তক্ষণ তো গল্প পড়লেন। একটা কথা আপনাদের
জিজ্ঞেস করি।
কি বলেন? করব?
হুম্ম। করিই তাহলে।
,
আশা করছি। মেয়েরা এই উত্তরটা ভাল দিতে পারবেন।
.
মনে করুন খুব সুস্বাদু একটা খাদ্য রান্না করছেন। সব মিলিয়ে
খুবই টেস্ট হবে বলে আশা করতেছেন। এমন সময় আমি
বা অন্যকেউ সেই রান্না করা তরকারী বা খাদ্যে পানি
ঢেলে দিল। তবে কি আর সেই স্বাদ পাবেন?
,
যদিও আমি রান্না তেমন করি না তারপরেও অন্তত এইটুকু বুঝি
যে, সেই রান্না করা খাবার টুকু খাওয়ার অযোগ্য হবে।
কি ঠিক বলেছি না, আপুরা?
.
ঠিক এমনি করেই আমাদের সম্পর্কের তেরোটা
বাজিয়েছিল। একটা পিচ্চি মেয়ে। এখন বলবেন। পিচ্চি
মেয়ে বুঝে কি! যে আপনার সম্পর্কে ফাটল ধরাবে?
ভাই বুঝে নি দেখেই তো ফাটল ধরিয়েছে।
কেমনে ধরাইল? জানতে চান? অপেক্ষা করেন।
.
আমি আর তামান্না পুকুরের সামনে বসে আছি। শুধু শুধু পুকুর
দেখছি তা নয় কিন্তু। একটা রাজহংসী আর একটা রাজহংস। তাদের
ভালবাসা প্রকাশের নমুনা দেখছি। দুই হাঁস মুখোমুখি হয়ে লম্বা
গলা বেকিয়ে, ঠোটদ্বয় নিচের দিকে রেখে এমন এক
জিনিস সৃষ্টি হয়েছে। তা লাভ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু
আমরা নই। আমাদের মত অনেকেই এই দৃশ্য উপভোগ
করেছে।
,
দূর থেকে একটা পিচ্চি মেয়ের কন্ঠে আব্বু! ডাক
ভেসে এল। আমি শুনছি কিন্তু পিছনে তাকাই নি। মেয়েটি
হয়তো তার বাবাকে ডাকতেছে। আর সেই বাবা
অন্যকেউ।
আমি দৃশ্য দেখায় মনোনিবেশ করলাম।
হঠাৎ করে কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
চেয়ে দেখি পিচ্চি মেয়ে।
আব্বু ডাক দিয়েই এক লাফে কোলে বসে পড়ল। আমি
সহ তামান্না পুরাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। খেয়াল করে
দেখলাম। তামান্নার দৃষ্টি একবার আমার দিকে, আবার পিচ্চি
মেয়েটির দিকে নিবদ্ধ হচ্ছে। ওর চোখের ভাষা আমি
স্পষ্ট বুঝতে পারছি। যা বুঝেছিলাম তা হল।
:- বেইমান, বিশ্বাস ঘাতক, নিমকহারাম। তোর মেয়ে আছে,
তুই বিবাহিত, তারপরেও আমার সাথে সম্পর্ক করে আমার
জীবনটা এভাবে নষ্ট করলি? জ্বালিয়ে ছাড়খার করে দিলি
আমার এই সুন্দর জীবন? বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাকে গলা টিপে
মেরে ফেললি, বিশ্বাসের অমর্যাদা এভাবে করতে পারলি?
এই রকম হাজারো প্রশ্ন তার চোখে ফুটে উঠেছে।
আমি তার অনুভূতি বুঝতে পেরে বললাম।
.
:- বিশ্বাস কর তামান্না। এই বাচ্চা আমার নয়।
:- ছি:
এই একটা মাত্র কথা উচ্চারণ করে সামনে এগুতে থাকল।
ভয়ংকর রকমের ভুল বুঝেছে আমাকে। যারা মন ভাংগার শিকার
হইছেন। তারা এই ছি : শব্দটার সাথে অধিক পরিচিত। তারা জানেন।
এই শব্দটা কত যন্ত্রণাদায়ক!!!
,
তার চলে যাওয়া দেখে আমি দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরলাম।
কিছুই বলল না। ঘুরে এসে খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারল।
আবার ঘুরে এসে বলল, আর কোনদিন ফোন দিবানা
আমাকে। ভেবে নিবে আমি মরে গেছি।
,
হাড়ে হাড়ে বুঝতেছিলাম। কতটা আঘাত পেলে এই
কথাগুলো বলে।
একবারের জন্যও তামান্না পিছে ফিরে নি। সে চলে
গেছে। কথা ছিল তাকে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে
আসব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ও একাই যাচ্ছে।
,
এমন সময় পিচ্চিটা এসে বলল,
:- আব্বু! ও আব্বু কোলে নাও না।
আমার ইচ্ছা হচ্ছিল সজোরে একটা থাপ্পড় লাগাই। কিন্তু তা
করলাম না।
বাগানের আড়াল থেকে একটা মহিলা কণ্ঠ ভেসে এল।
:- কলি! এই কলি! মা আমার কোথায় গেলি?
বাগান পেরুতেই আমাদের নজরে এল। এসেই
মেয়েকে জড়িয়ে ধরল। চুমোতে মেয়েটাকে
ভরিয়ে দিল। মা আমার, সোনা আমার। পিছন থেকে কই
গেছিলি?
পিচ্চি মেয়েটি তখনো আমার আঙ্গুল ধরে দাড়িয়ে
আছে।
একটু পর মেয়েটির বাবাও এসে হাজির।
বাবা মা তার মেয়েকে খুজে পেয়ে অনেক আদর
সোহাগ করছে।
.
হঠাৎ মেয়েটির বাবা আমার হাত ধরে বলে ফেলল,
:- ভাই আপনি ফেরেস্তা। আপনি না থাকলে আমি আমার
মেয়ে কে ফিরে পেতাম না।
মেয়েটির মা বলতেছে।
:- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। কিন্তু আপনার গালে কি
হয়েছে?
আমি কি উত্তর দেব কিছু না বলে চলে আসলাম। তামান্নার মত
আমিও চলে আসলাম। পিছনে ফিরে তাকাইনি। ফিরলে হতো
দেখতে পেতাম দুই জোরা চোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে
আছে। আর প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছে। হয়তো
মনে মনে বলছে ছেলেটা কত্তবড় বেয়াদব! উত্তর না
দিয়েই চলে গেল।
,
,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,
No comments