Header Ads

ধুলো জমা ডায়রী

writer
ব্যাট টা হাতে নিয়ে মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ইশ আজ প্রতিপক্ষ তুহিনের বিপরীতে ভাল একটা রান করতেই হবে নয়ত পাড়ায় আমার মান সম্মান থাকবো না। যদি গত দুই ম্যাচে তুহিনের বলেই বার বার হতে হয়েছে তবে এখন ওর বল গুলো বুঝে গেছি। এইসব চিন্তা করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাটছি তখন মুন্নির সাথে দেখা।
.
-- কিরে সাইফুল এতো দুপুরে কোথায় যাস?
-- মাঠে যাচ্ছিরে।
-- তাই বলে এতো রোদের মাঝে। একটু নিজের খেয়াল তো রাখ।
-- খেয়াল রাখার জন্য তো বাকিটা জীবন পরেই রইলো। এখন না হয় একটু খেলাধুলা করে কাটাই।
-- তোর সাথে কথায় পারবো না।
-- ( আমি শুধু ওর কথায় হাসলাম)
-- এখানে হাসির কি হলো? খেলতে যাচ্ছিস ভালো তবে মনে রাখির সামনেই কিন্তু আমাদের পি এস সি পরীক্ষা।
-- সমস্যা কোথায়? তুই তো আমার সামনে বসবি তাহলে এমনি পাশ।
-- হুহ হইছে যা এবার মাঠে।
.
মুন্নির সাথে কথা শেষ করে আবার মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ও হা আমার পরিচয়টা তো এখনো বাকি রয়ে গেল। আমি হলাম সাইফুল। খুবই শান্ত শিষ্ট আর ছোট্ট একটা লেজ বিশিষ্ট বান্দরও বলতে পারেন। এবার আমি ক্লাস ফাইভে পরি আর সামনেই আমার সমাপনী পরীক্ষা । আর যার সাথে এতখন কথা বললাম সে হলো আমার বান্ধবী রূপি বন্ধু মুন্নি। ও আমার সামনের সিটে বসে আর প্রতি পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়। এমন বন্ধু কয়জনের কপালে জুটে ভগবানই জানে। ও ভগবান এমন বন্ধু দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ কিন্তু আর কাউকে দিয়েন না তাইলে সবাই আমার মত সামনের বেঞ্চের থেকে পাশ করার জন্য চাতক পাখি হয়ে যাবে। যাই হোক, এইসব ভাবতে ভাবতে মাঠে চলে আসলাম।তারপর খেলা শুরু করে দিলাম আর আজ তুহিনের বলে খুব ভাল না খেললেও খারাপ খেলি নি।
.
একদিন একদিন করে দিন গুলো উপরওয়ালার নিয়মে ভালই যেতে লাগলো আর সমাপনী পরীক্ষাও চলে আসলো আর আমি মুন্নীর পিছনে বসে দুইজনে ভালই পরীক্ষা দিলাম। আর স্কুল বন্ধ দিয়ে দেয় আর আমার সময় গুলো বিন্দাস কাটতে লাগলো। প্রায় এক মাস পর আমাদের রেজাল্ট বের হলো তাতে আমি আর মুন্নী দুইজনেই পাশ করছি।
.
মুন্নী আর আমি এক স্কুলেই সিক্সে ভর্তি হই। ভালই লাগছিল নতুন স্কুলে গিয়ে তবে সব থেকে মিশি মুন্নীর সাথেই। আস্তে আস্তে আমার বন্ধুর পরিমান এক এক করে বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তবে সাকিব, রুমান আর নিহান আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও পেলাম।
প্রতিদিন দুষ্টামী করে, হেসে হেসে দিন গুলো ভালই যাচ্ছিল। একদিন আমরা সবাই ক্লাসে বসে আছি হঠাৎ আমাদের বাংলা মেডাম আসলো.....
.
-- আজ তো বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে তাই ক্লাস করাবো না কিন্তু তোমাদের মাঝে যারা গান পারো তারা আজ গান গাইবে।
মেডামের কথা শেষ হতে না হতে মুন্নী দাড়িয়ে বলতে লাগলো...
-- মেডাম সাইফুল খুব ভাল গান গাইতে পারে। আমি তো মাঝে মাঝে ওর গান শুনতাম
ও বলা শেষ না হতেই মেডাম আর ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকলো আর আমি মাটির দিকে তাকালাম কিন্তু কোন কিছুতেই লাভ হলো না বরং মেডামের ডাকে সবার সামনে ব্লাক বোর্ডের কাছে গেলাম। কিন্তু কি গান গাইবো যে ভাবছি তবে যেন সব গান এক হয়ে যাচ্ছে। তারপর আমার প্রিয় গান টার কয়টা লাইন গাইলাম " আমাকে আমার মত থাকতে দাও......"। আমার গান শেষ না হতেই সবাই আমাকে উদ্দেশ্য করে হাত তালি দিতে লাগলো। আমিও এইভাবে সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে লাগলাম। এভাবে ক্লাস সিক্সটা খুব ভালই কাটলো।
তারপর সেভেনে পা রাখলাম। আর প্রথমে আগের মতই আমার দিন গুলো ভাল কাটছে। হঠাৎ একদিন আমি ক্লাসে আসতেই মুন্নী আমার সামনে আসলো......
-- সাইফুল শুন?
-- হুমম বলো।
-- চলো আজ তোমাকে আমার কিছু বন্ধুর সাথে পরিচয় করাবো। আর ওরাও অনেকদিন ধরে আমাদের ক্লাসের এই গানওয়ালা ছেলেটার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে আছে।
-- বাব্বা আচ্ছা চলো।
.
তারপর মুন্নী আমাকে মাঠে নিয়ে যায় আর সেখানে কতগুলো মেয়ের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমিও তাদের সাথে পরিচিত হই। আর এদের মাঝে একটা মেয়েকে আমার ভালো লেগে যায় আর ওর নাম হলো এলিনা। আমি একটু পর পর এলিনা কে আড় চোখে দেখতে থাকি।
এভাবে ক্লাস সেভেনটাও ভাল কেটে যায় আর ক্লাস এইটও এভাবেই চলে যাই। আমরা সবাই ক্লাস নাইনে উঠে আর আমাদের ছেলে মেয়েদের আলাদা করে দেওয়া হয়। মেয়েদের ক্লাসটা হলো চার তলা ভবনে আর আমাদের ক্লাসটা বিপরীত পার্শ্বের একটা ভবনে। তবে আমি মাঝে মাঝে মেয়েদের ভবনের সামনে এসে দাড়িয়ে থাকতাম এলিনাকে দেখার জন্য। হয়ত দুইবছর যাবত একটু একটু দেখা আমার মনের কোথাও এলিনা জায়গা করে নিয়েছে। আমার এই মনের কথা শুধু আমার তিনটা বেস্টফ্রেন্ড সাকিব, রোমান আর নিহান জানতো।
.
ক্লাসে এসে মাঠে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ দেখি এলিনা আমার দিকে আসছে....
-- এই যে সাইফুল শুনো?
-- জ্বী
-- আমি এইসব কি শুনছি?
-- কি শুনলে?
-- তুমি নাকি আমায় ভালবাসো।
-- কে বলেছে?
-- নিহান আমায় বলেছে।
-- হুমম
-- তোর সাহস হয় কি করে যে আমায় ভালবাসার কথা বলিস। তোর মত এমন ক্ষ্যাত মার্কা ছেলের সাথে আমি রিলেশন করবো ছি:।
--( আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি)
-- আর যেন কখনো এইসব না শুনি।
.
কথা গুলো বলেই ও চলে গেল আর আমার চোখ দিয়ে জল চলে আসলো। ভালবাসা কি অন্যায় ছিল। আমি তো ওরে প্রপোজও করি নি যে আমায় কিছু বলবে। কি এমন দোষ করলাম যে এমন ভাবে সবার সামনে অপমান করবো।
এই ব্যবহারের কারনে আমি দৌড়ে বাড়ি চলে আসি আর দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। খুব খারাপ লাগলো আজ ওর ব্যবহারটা। কি এমন দোষ ছিল আমার। যদি একতরফাও ভালবাসা হয় ভুল তাহলে এই ভুল তো হাজার হাজার মানুষ করছে। কারন পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ কাউকে না কাউকে ভালবাসে।
.
এভাবে প্রায় ১ সপ্তাহ শুধু নিজেকে রুম বন্ধ করে রাখি। আর নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করি যা হয়েছে তা ভুলে যাবো। তারপর দিন ব্যাগ গুছিয়ে নিজেকে নতুন করে শক্ত করে স্কুলের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
.
স্কুলে ঢুকতেই অনেকেই চোখে পরলো কিন্তু এলিনাকে পরলো না তাই আমি সরাসরি আমার ক্লাসে চলে গেলাম। যখন ক্লাসে পা রাখলাম তখন দেখি এলিনা আর নিহান পিছনে বেঞ্চে বসে আসে। আর আমায় দেখা মাত্র এলিনা আর নিহান দুইজন দুইজনের হাত ধরে কথা বলতে শুরু করে। এটা দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না যে নিহান আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।
ও যদি মুখ ফোটে আমায় বলতে ও এলিনাকে ভালবাসে তাহলে কি আমি ওরে না করলাম। কেন ও এমন করলো। যতখন এলিনা আর নিহান রুমে ছিল ততখন আমি রুমের বাইরে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি এলিনা রুম থেকে চলে যাচ্ছে তাই আমি রুমে ডুকেই নিহানের কাছে যাই...
.
-- এলিনার সাথে তোর কিসের সম্পর্ক নিহান?
-- আমাদের দেখে কি ভাই বোন মনে হচ্ছিল তোর।
-- যা জানতে চাইছি তার সোজা জবাব দে।
-- দিবো না কি করবি তুই?
-- সরাসরি বলে দে।
-- ও আমার জি এফ লাগে তুই কি করবি কর।
.
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ওর উপর হাত তুলে দেই। আর ক্লাসের মাঝে আমার আর নিহানের মাঝে ঝগড়া হয়। এতে সাকিব আর রুমানও নিহানের সাপোর্ট দেয়। তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা তিন জনের কাজ।
একদিন ক্লাসে সবাই বসে আছি আর একটা স্যার ক্লাস করছে তখন ওনি আমায় ওনার সামনে ডাকে আর বলে গান গাইতে। প্রথমে আমি না করে দিলেও স্যারের জোরে আমি গান গাইতে শুরু করি তবে আগের মত না। ৩ লাইন গান গাইতেই আমার চোখ দিয়ে জল চলে আসে। আমি কোন মতে জল লুকিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসি। তবে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
এরপর আমি পুরু একা হয়ে যাই। ক্লাসে আসলেও কারো সাথে কথা বলি না। আর খুজ নিয়ে জানতে পারি এলিনা নাকি নিহানকে প্রপোজ করেছিল আর নিহানও রাজি হয়ে যায়। হায়রে নিহান তুই যদি আমায় একবার বলতি তাহলে কি আমি তোরে বাধা দিতাম। এভাবে একা একা দিন গুলো কাটছি।
.
এই রকম একা ভাবেই আমার এস এস সি পরীক্ষা শেষ করি। সবাই সাজেশন বা হেল্পের জন্য নানা রকম বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতো তবে আমি একা থাকতাম।
এভাবে এস এস সি পরীক্ষা শেষ করি আর মোটামোটি রেজাল্ট নিয়ে পাশ করি। হয়ত বন্ধুরা পাশে থাকলে হয়ত ভালো রেজাল্ট করতাম। তারপর কোন রকম একটা কলেজে এডমিশন নেই আর পারিবারিক ব্যবসায় পারি জমাই। এখন আমি পুরু একা তবে মুন্নীর কথা মত আমি আজও আমার গান নিয়ে বেচে আছি। তবে ওরে খুব মিস করি। মুন্নী তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে। এভাবেই আমার দিন গুলো চলতে লাগলো আর এক সময় আস্তে আস্তে আমায় গ্রাস করে নিচ্ছে।
.
ডায়রীটা বন্ধ করলাম। আমি এতখন বসে বসে আমার জীবনের ফেলে আসা অতীতটা পাল্টে দেখছিলাম। একটা মেয়ের কারনে আমাদের সব বন্ধুর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেল। আজ জানি না কে কোথায় আছে তবে আমি সেই চুপই রয়ে গেলাম। খুব মিস করি মুন্নী তোকে। তোর মত কেউ নেই যে আমায় বুঝবে।

No comments

Powered by Blogger.