Header Ads

♥ এ জার্নি বাই রিলেশন♥

অনেকদিন ধরে দুরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না, তাই ভাবলাম এই ঈদের পর কোথাও থেকে ঘুরে আসি!!
যেই ভাবা সেই কাজ,, বন্ধুদের নিয়ে প্লান করলাম সিলেট যাবো!!
কিন্তুু সমস্যা বাধলো কিসে যাবো "বাসে নাকি ট্রেনে " আমি বললাম ট্রেনে তো কখনো যাওয়া হয়নাই তাই ট্রেনেই যাই!!সবাই মত দিল!!
তো যথাদিন আমরা চার বন্ধু মিলে কমলাপুর রেল স্টেশনে গেলাম!!
আমরা একটু আগে সন্ধা ৭ টাই চলে গেলাম,,ট্রেন ছিল ১১:২০ অনেক দেরি তাই সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া ঘুরাঘুরি করতে লাগলাম,,
একটু পর ভাবলাম পেজে একটা স্ট্যাটাস দেওয়া দরকার, তাই ওদের কে বললাম দোস্ত তোরা ঘোরাঘুরি কর আমি একটু বসি,,ওরা চলে গেল আর আমি বসে স্ট্যাটাস দিতে লাগলাম।।
(ও আমার পরিচয় টা দেই,,!! আমি আবির, সবাই হিমু নামেই চিনে।। ছোট-খাটো একটা চাকরি করি।। বাড়ির বড় ছেলে।। আর কিছু জানার দরকার নাই)
হঠাত একটা বোরকা পরা মেয়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো!!
মেয়ে: আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া! কেমন আছেন??
আমি:ওয়ালাইকুম সালাম,,জি আমি কি আপনাকে চিনি??
মেয়ে: আপনি আবির খান হিমু রাইট!!
আমি: এক নামে তো অনেকেই আছে!!
মেয়ে: না আমি আপনার পিক দেখেছি,,আর আপনি #অবহেলিত_ভালবাসা পেইজে কাজ করেন।,আপনার নিক নেম #অবহেলিত_হিমু।।
আমি: জি কিন্তুু আপনি কিভাবে এত কিছু জানেন?আর আপনি বা কে??
মেয়ে: আমি তাসফিয়া জান্নাত,,গত এক মাস ধরে আপনার ফলো লিস্টে ঝুলতেছি,,,একসেপ্ট করেন না কেন??এত ভাব কিসের আপনার?? হুম!!
আমি :আসলে ভাবের কিছুই না! আমি অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড বানাই না,,,,আপনি তো মেয়ে! একসেপ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই!!
মেয়ে: কেন মেয়েরা আপনার কি করসে??
আমি: আম্মু বলসে মেয়েদের থেকে ১০০ হাত দুরে থাকতে!!
মেয়ে: আচ্ছা আমি আন্টি কে বলব!!করেন!!
আমি: আরে না না আপনি কি বলবেন!! কিচ্ছু বলার দরকার নাই।। কি জল্লাদ মেয়েরে বাবা!( আস্তে) যান করবো নে!!
মেয়ে: না এখখনি করেন!!
কি আর করার,,করে নিলাম।।পাগল চেতলে কি না কি করে বসে ঠিক নাই!!
মেয়ে: আচ্ছা আপনার মনে কি অনেক কষ্ট?
আমি: নাহ! আমার মনে কোন কষ্ট নাই!!কেন??
মেয়ে: তাইলে এমন সব কষ্টের পোস্ট দেন কেনো??
আমি: আসলে পেজটার নামই "অবহেলিত ভালবাসা " তো নামের সাথে তো পোস্ট গুলার ও মিল থাকতে হবে তাই না!!
মেয়ে : আচ্ছা কোথায় যাচ্ছেন আপনি??
আমি:আমরা সিলেট যাচ্ছি ভ্রমনে!! আপনি??
মেয়ে: আমরাও সিলেট যাচ্ছি। দাদা বাসায় বেড়াতে ।
এরমধ্যেই এক মহিলা সাথে একটা পিচ্চি মেয়ে এসে হাজির।।
মহিলা: কিরে জান্নাত তার সাথে কথা বলিস??
জান্নাত: আম্মু তোমাকে না একটা ছেলের পিক দেখাইসিলাম, এটাই সেই ছেলে!!
মহিলা: মাসাআল্লাহ কি সুন্দর চেহারা! (যদিও আস্তে বলসে, কিন্তু আমি শুনে ফেলছি)
আমি: আসসালামু আলাইকুম আন্টি! কেমন আছেন??
মহিলা: ওয়ালাইকুম সালাম!!ভাল আছি বাবা।।তুমি কেমন আছো??
আমি: জি ভাল আছি!!আন্টি আপনাদের কোন সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারেন!!
মহিলা: বাবা আমাদের সিট টা কোথায় একটু বের করে দিবে??
আমি: জি আন্টি আসেন আমার সাথে!!
অতপর তাদের সিট খুজতে গিয়ে দেখলাম আমাদের পাশেই তাদের সিট!
তো ট্রন ছাড়ার সময় হয়ে গেল। বন্ধুরা এসে পরলো।।তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম!!তারা মোট তিন জন ছিল,আন্টি,জান্নাত,ওর পিচ্চি বোন সুমাইয়া।।
তো যাত্রা পথে তাদের সাথে সব বিষয়ে অনেক কথা হলো! এর মধ্যে জান্নাত কে দেখলাম বারবার খালি আমার দিকে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকে,,মহে যেন তার চোখ কিছু চায়।। বাট আমার সেটা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই।।
একবার তো ওর ছোট বোন বলেই ফেলল " ভাইয়া!! আপু সারাদিন খালি তোমার ছবি দেখে" ওর কথা শুনে আমরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।।
তো সারারাত মজা করতে করতে এসে পরলাম স্টেশনে,, নামলাম আমরা।।
তাদের কে একটা সিএনজি ঠিক করে দিলাম!!
আন্টি: বাবা তোমরাও আমাদের সাথে চলো,,আজকে আমাদের বাসায় বেড়াও কালকে ঘোরাঘুরি কইরো!!
জান্নাত: হুম ভাইয়া চলেন আপনারা তো এখানে নতুন!!
আমরা: না অন্য সময় দেখা হবে,,আসি!! আসসালামুআলাইকুম!!
আন্টি: ওয়ালাইকুম সালাম! আচ্ছা বাবা
সাবধানে যেও তোমরা!! আর ঢাকায় কিন্তু অবশ্যই দেখা করবা!!
আমি : আচ্ছা ঠিক আছে!!
তাদের কে বিদায় দিয়ে আমরা হোটেলে চলে গেলাম,,ফ্রেশ হয়ে এতটু রেস্ট নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম ঘুরতে,,।।অনেক মজা করলাম ৩ দিন!!
ঢাকায় আসার দিন সবার মন খারাপ হয়ে গেল,,,কিন্তুু কি আর করার যেতে তো হবেই!!সবাই বাসায় ফিরে আসলাম!!
কিছুদিন পর সব আগের মতই চলতে লাগলো!!
জান্নাতের সাথে মোটামুটি প্রতিদিনি কথা হতো।।আন্টির সাথেও কথা হতো।আসলে ওরা খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ!! অল্প কিছুদিনেই তাদের সাথে খুব ক্লোজ হয়ে গেলাম।।
আমার আম্মুর সাথে একদিন কথা বলতে চাইল,!
আমি তো অনেক ভয়ে আম্মুর কাছে তাদের ব্যাপারে বললাম, না জানি আম্মু কি বলে।। কিন্তুু আম্মু বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিল!! তাদের মা মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতে আমাকেই ভুলে গেল।। কি সাংঘাতিক!!
একেই বলে মহিলা!" দুজন মহিলার কথা শুরু হলে আর শেষ ই হতে চায় না।।"
দীর্ঘ দের ঘন্টা পর তাদের কথা শেষ হলো।।আর এদিকে আমার মোবাইলে টাকা যা ছিল সব শেষ।
আম্মু: অবশেষে সিলেটেই যেতে হলো?( রাগি মুডে)
আমি: আম্মু আসলে তুমি যা ভাবসতেসো তা না!! আর আমি কেমন তা তো জানোই!! চলো তোমাকে ঘটনা টা খুলে বলি!! তার আগে আমাকে ৩০০ টাকা দাও!!
আম্মু: কেন টাকা দিবো কেন?
আমি: বাহ! দের ঘন্টা কথা বলে আমার সব টাকা গুলা শেষ করছো! দাও তারাতারি!!
আম্মু: আচ্ছা দিব নে,, আগে বল কি হইসিলো???
তারপর সব বললাম কাহিনী।। আম্মু খুব খুশি হলো।।
আম্মু: আচ্ছা মেয়েটার ছবি দেখাওতো!!
তারপর ওর ছবি দেখালাম।।
আম্মু : মাশাল্লাহ কি সুন্দর।।এমন একটা মেয়েই তো চাচ্ছিলাম!
আমি: তোমার এতটি মেয়ে থাকতে তুমি ওকে চাচ্ছিলা মানে??? ওরে দিয়া কি করবা??
আম্মু:তা তোমার বুঝা লাগবে না! আর শুনো মেয়েটা খুব ভাল,,ওরে কখনো যদি শুনসি কষ্ট দিসো,তাইলে তোমার খবর আছে!! আর ওর নাম্বার টা আমার মোবাইলে সেভ করে দাও!!
আমি:আচ্ছা এবার টাকা দাও!!
আম্মু ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বললো নাও আমার মোবাইলে ১০০ টাকা দিও!
নোটটা নিয়ে বাইরে এসে পরলাম,,কি ভাল আম্মুটা চাইলাম ৩০০ দিল ৪০০ বাহ!!এমন আম্মু কয়জনের কপালে জুটে! যাক যা নিয়ে ভয়ে ছিলাম সেই ভয় টা কেটে গেল। কিন্তুু একটা জিনিষ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আম্মু কেন ওকে চায়! তবে কি আমার জন্য, ধুর!! কি ভাবসি এসব!!
ও ওর কথা তো বলাই হয় নাই,,ও খুবি ভদ্র একটা মেয়ে,,যেমন তার চেহারা এককথায় অসম্ভব সুন্দর,,বাচ্চা একটা মেয়ে।
যাইহোক দিনগুলা খুব তারাতারি চলে যেতে লাগলো। আর দুইমাস পরেই সৌদি আরব চলে যাচ্ছি।। যদিও আন্টি ব্যাপার টা জানে।।এখনো জান্নাত জানাই নি।। কারন জানাইলে হয়তবা কান্না কাটি করবে!!
১ মাস পর তার আব্বু আসলো সৌদি থেকে,, তার আব্বু ও সৌদি থাকে!
তো আন্টি একদিন বললেন তাদের বাসায় যেতে। আমার ছোট বোন আয়শা কে নিয়ে।। আংকেলের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করলাম,,সে অনেক দিক-নির্দেশনা দিলেন।।
আর আয়শা তো সেখানে গিয়ে আমাকেই ভুলে গেল।। জমিয়ে আড্ডা দিতে লাগল ওদের সাথে।।
অনেক আপ্যায়ন করলো তারা।
বিকেলে বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হলাম,,তারা তো কোন ভাবেই আসতে দিবে না,,যাইহোক অনেক বুঝিয়ে চলে আসলাম।।
আস্তে আস্তে আমার যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এল! রাতেই চলে যাবো! বন্ধুরা অনেক শান্তনা দিল। বাসার সবাই অনেক কান্নাকাটি করলো।।
আংকেল -আন্টিকে ফোন দিয়ে বিদায় নিলাম! তারাও বুঝাইলো।। আন্টি কে বললাম জান্নাতকে না জানাইতে,,কারন ওরে জানালে কি না কি করে বসে ঠিক নাই। বড্ড পাগলি একটা মেয়ে!! বললাম আমিই পরে জানাবো!
রাতে সবাই কে বিদায় দিয়ে চলে গেলাম!
নতুন দেশ সবকিছুই অচেনা! কিন্তুু কিছুই করার নাই মানাই নিতে হবে!!এখানে আসার পর সবার সাথে রাতে কথা বলতাম,,।। কিন্তুু এখনো জান্নাতকে জানাই নি।। দুইদিন ভালই কাটলো।।
তৃতীয় দিন দুপুরে হটাৎ আয়শার কল আসলো! গেলাম টেনশনে পরে, আবার কোন প্রবলেম হলো নাতো!! কলটা কেটে গেল, সাথে সাথেই কলটা ব্যাক করলাম।।
ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ! গেলাম আরো টেনশনে পরে,, ৩ দিন ধরে আসলাম। এর মধ্যেই আবার কি হলো!! ভয়ে আমার মুখ বন্ধ হয়ে গেল!!
কিছুক্ষন পর (তুমি এত খারাপ কেন?? যাওয়ার আগে একবার আমাকে বললে কি হতো?? আমি কি তোমাকে যেতে নিষেধ করতাম?? তুমি নিজের পায়ে দাড়াও এটাই তো আমি চাই!! কারন তোমার ভালই তো আমার ভাল!!) আরে এ তো জান্নাত! আমাকে তুমি করে ডাকতেসে কেন? আর ও আমাদের বাসায়!,,,,তার মানে আমার খোজ না পেয়ে আমার বাসায় চলে আসছে?! আসলে মেয়েটা পারেও বটে!!
আমি: আসলে তুমি কি না কি বলো তাই জানাই নি। আর তুমি আমাদের বাসায় আসলা কেমনে??
তোমার কি কিছু হইসে?
জান্নাত: হইসে আর ন্যাকামি করতে হবে না।।আমি একা না সবাই আসছে! আমি ঠিক আছি!
আমি: ও আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
জান্নাত: না! এই শুনো! ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবা,,ঘুমাবা,, আর নামায, কোর-আন পড়া যাতে মিস না হয়! আর রাস্তা-ঘাটে ভদ্র ভাবে চলা ফেরা করবা!! আর আমাকে বলে যাও নাই এই শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। আসো দেখাবো!!হুহ!!( আল্লাহ পিচ্চি মেয়েটা বলে কি! এত শাসন তো বউ ও তার জামাইরে করে না!! সবি আমার কপাল।। অবশ্য খারাপ কিছু বলে নাই!!)
আমি: আচ্ছা মেডাম ঠিক আছে।
তারপর আরো অনেকক্ষণ কথা হলো, সবার সাথেই।
দেখতে দেখতে চারটি বছর কেটে গেল।।
আজ আবারো সিলেট যাচ্ছি!! একা নয় সাথে জান্নাত ও আছে।। কিন্তুু এখন সে অপরিচিতা নয়,, সে এখন আমার স্ত্রী।। একমাস হইসে আমাদের বিয়ে হইসে।।অনেক ভালোবাসে আমাকে।আমিও যে বাসি না তা না!আমিও আমার সেরাটা দিয়েই ভালবাসি।
বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হইসে।। দির্ঘ চার বছর পর সৌদিআরব থেকে এসে তাদের বাসায় বিয়ের পস্তাব পাঠাই,, আর তারা তো আগের থেকেই রাজি। যার কারনে আর কোন ভেজাল ছিল না!! সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন!!
বি:দ্র: বন্ধুরা এটা আমার জীবনের প্রথম লেখা গল্প, পুরোটাই কাল্পনিক,,গুছিয়ে লেখতে পারি নাই। ভুল-ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।
kamrul

No comments

Powered by Blogger.