সন্দেহ
লেখকঃAlif khan
অমিত ইন্টার 1st ইয়ারে পড়ে...এই বছরটাতে পড়াশুনার চাইতে অন্য জিনিসগুলাই বেশি হয়...
বিকাল ৫:০০... অমিতের কোচিং ছুটি হয়েছে.. সে প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে একটু দূরে গিয়ে কোচিং করে...
কোচিং থেকে বের হয়েই মেইন রোডে এসে অটোতে আসে বসলো... অটোওয়ালা আর যাত্রী ডাকছে...অমিত ড্রাইভারের সাথে সামনেই বসেছে...
একটু পর ২টা মহিলা আর তাদের সাথে একটি মেয়ে আর সাথে ১টা ছোট ছেলে এসে অটোতে এসে বসলো... মেয়েটা বোরকা পড়া ছিল..সাথে স্কার্ফ ছিল...অমিত পিছন দিকে ঘুরে তাকিয়ে যেন আটকে গেল... ""কাজল কালো সেই চোখ,,কি তার তাকানোর ভংগি,চোখ যেন কথা বলে""" মেয়েটার বয়স বেশি হবে না...চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না..
তবুও কাউকে পাগল করার জন্য তার অই চোখই যেন যথেষ্ট...
অমিতের মনে ঘন্টা বেজে উঠল...
অটো ছেড়ে দিল... অমিতের গন্তব্য পরের স্টান্ড...
অটো পরের স্টান্ড চলে এলো... কিন্তু অমিত নামছে না...
মনে হচ্ছে ""তার অই চোখ যেন তাকে আটকে রেখেছে""
যাই হোক অটো আবার ছেড়ে দিল... অটো চলছে... আর অমিতের মনের ঘন্টাও জোরে জোরে বাজছে...
একসময় অটো এমন এক স্টান্ডে এসে থামল যেখানে অমিত কিছুই চিনে না...
সেখানেই সেই মহিলারা আর বাচ্ছা ছেলেটা আর মেয়েটা নেমে গেল...
অমিত এখন তাদের পিছু নিলে সমস্যা হবে..আবার বাসায় অমিতের আম্মু অপেক্ষা করছে...
তাই অমিত সেই অটোতেই চলে এলো...
পরের দিন...
অমিত:: দোস্ত তোরা কই?
লিমন:: আয় পুকুর পাড়ে আয়..সবাই আছি
(অমিত চলে গেল?)
অমিত:: তোদের সাথে কিছু কথা আছে
মিলন:: হম বল..
অমিত:: ফাযলামি করবি না
লিমন:: আরে তুই বল
অমিত:: I am in Love
লিমন:: হাসতে হাসতে (ওরে মিলন আমারে ধর.. নাইলে কিন্তু এখনি পুকুরে লাফ দিমু)
অমিত:: তোরা সাহায্য না করলে না করবি..কিন্তু এমন করবি না
মিলন:: আচ্ছা কুল..মেয়েটার নাম কি?
অমিত:: জানি না
লিমন:: কোন স্কুলে পড়ে?
অমিত:: জানি না
মিলন:: দেখলে চিনবি তো?
অমিত:: না
লিমন::: সিনেমা মারাও...আমগো লগে (রেগে)
অমিত:: না রে ভাই..অরে খুজতে হইব... অরে না পাইলে তোরা অমিতরে আর পাবি না..
মিলন:: অরে মোর আল্লা.. আগে বল বাড়ি কই??
অমিত:: জানি না
লিমন:: হারামি কিছু একটা তো বল.. খুজতে তো হইব..
অমিত:: ওর এলাকা চিনি...
মিলন:: হম চল...
(৩ জনি চলে গেল..সেই এলাকায়)
লিমন:: মামা এইডা তো এলাকা না।। পুরা একটা দেশ... এনে কেমনে খুজমু...
মিলন:: মামা আইডিয়া পাইছি...
অমিত: কি??
মিলন:: মেয়ের সাথে একটা বাচ্চা ছিল না?? অইটারে তো দেখছস.. অয় তো আর বোরকা পইরা ছিল না..
অমিত:: হম দেখছি.. তারপর??
মিলন: : আজকে কি বার??
অমিত':: আবে হালা শুক্রবার.. আসল কথা বল..
মিলন::: ব্যাস.. এলাকায় মসজিদ একটাই... অই পিচ্চি অবশ্যই এই মসজিদে নামাজ পরতে আসব... অরে পাইলেই... সব পাইয়া গেছি
অমিত:: মামা তোরে আটানা দামের চকলেট খাওয়ামু.. অনেক ভাল বুদ্ধি দিসস
...
(তারপর ওরা চলে গেল মসজিদে..)
নামাজ শেষে অমিত দুটি পিচ্চিকে দেখিয়ে দিয়ে বলল ""এই দুইটার মধ্যেই যেকোন একটা""
মিলন একটা পিচ্চি কে জিজ্ঞাস করল ""তুমরা কয় ভাই বোন""
...
পিচ্চি:: বোন নাই.. ৫ জন ভাই
মিলন:: আচ্ছা তুমি বাসায় যাও...
(বাকি রইল আর একটা পিচ্ছি)
মিলন:: তুমরা কয় ভাই বোন?
পিচ্চি:: আমি আর আমার আপু
(অমিত খুশিতে লাফাচ্ছে)
মিলন:: তুমার আপু কি কালার বোরকা পরে??
পিচ্চি:: কালো
মিলন:: আচ্ছা বাবু বাসায় যাও.. এসব কথা কাউকে বইলো না..
(পিচ্চি চলে গেল)
আর ওরা পিচ্চির পিছু পিছু বাসা অবদি গেল...
বাসা চিনে ফেলল...
অমিত এখন আকাশে উড়ছে....
...
আবার আসরের নামাজের সময়... সেই মসজিদে পিচ্চিকে আবার ডাকে ওরা...
মিলন:: বাবু কি খাবা??
পিচ্চি:: কিছু না
মিলন:: শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়.. এই বলে অনেক গুলা চকলেট দিল
(পিচ্চি নিল)
মিলন:: এবার বল তো.. তুমার আপুর নাম কি??
পিচ্চি:: ইলমা
(অমিত খুশিতে বসে পড়েছে)
মিলন:: কোন ক্লাসে পড়ে?
পিচ্চি:: ক্লাস ৯
মিলন:: কখন স্কুলে যায়?
পিচ্চি:: সকাল ৯ টায়...
মিলন:: আচ্ছা.. যাও বাসায় যাও।।। কালকে আবার চকলেট নিয়ে যেও..
পিচ্চি:: আচ্ছা ভাইয়া
(এই বলে পিচ্চি চলে গেল)
এখন শুধু ওদের সকাল ৯টার অপেক্ষা...
একদম বাসার গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে... অমিত.মিলন.লিমন.....
সকাল ৮:৪৫ এ সেই কাজল কালো চোখ দুটি ২য় বারের মত দেখতে পেল... অমিত..
কালো বোরকা..স্কার্ফ.. কাধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে...
অমিতরাও অকে ফলো করল...
মেয়েটা একটু একটু বুঝতে পারছে...
....
আজ ১ সপ্তাহ এই পিছন পিছন এ চলছে...
...
ইলমা সামনে আর ওরা পিছনে...
আজ ইলমা অসহ্য হয়ে... পিছনে ঘুরে ওদের ইশারায় ডাক দিল...
মিলন আর লিমন তো ভয়ে দৌড়...
অমিত একটা বাচ্চার মত ইলমার সামনে এসে দাঁড়ালো...
ইলমা:: কি সমস্যা কি??
অমিত:: কিছু না তো
ইলমা:: আমার পিছন পিছন কেউ আসলে আমার সমস্যা হয়.. আর যেন না দেখি...
অমিত:: আচ্ছা
...
পরদিন...
এবার অমিত একাই....
আজকে অমিত ইলমার আগে আগে হাটছে...
ইলমা আবার ডাক দিল...
ইলমা:: আমাকে দেখতে পাচ্ছেন??
অমিত:: না
ইলমা::তাহলে ঘুরে লাভ কি?
অমিত:: ভাল লাগে
ইলমা:: আবার যদি এই এলাকায় দেখি.. পা ভেংগে হাতে ধরিয়ে দিব..
অমিত:: আচ্ছা
..
এরপর থেকে অমিত ইলমার এলাকায় দাঁড়ায় না..স্কুলের সামনে দাঁড়ায়...
এভাবেই চলছিল প্রতিদিন...
ইলমার ঝারি খেয়েও অমিত শুধু চোখ দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত...
একদিন অমিত সাহস করে সামনে গেল..
অমিত:: কিছু কথা ছিল..
ইলমা:: সিট খালি নাই..
অমিত:: আচ্ছা (এটা বলেই চলে গেল)
ইলমা অবাক (উল্টা কোন প্রশ্ন করল না)
এত সহজ সরল মানুষ হয়....
।।।
যাই হোক,,, ইলমা দেখল.. তবুও অমিত প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে...
অনেকদিন দেখার পর একদিন ডাক দিল...
ইলমা:: নাম কি??
অমিত:: অমিত
ইলমা:: সিট খালি নেই বলার পরও দাঁড়িয়ে থাকেন কেন??
অমিত:: কারন আপনি মিথ্যা বলেছেন
ইলমা:: কি আমি?? কে বলেছে??
অমিত:: আপনার বান্ধবী আফসানা..
ইলমা:: আচ্ছা এমন মেন্দা ছেলে কিন্তু আমি লাইক করি না..
অমিত:: কেমন চান??
ইলমা:: সালমান খান
অমিত:: আর কিছু??
ইলমা:: নাহ
...
এরপরদিন থেকে অমিত সালমান খানের মত স্টাইল করা শুরু করেছে...
...
ইলমা রাতে অনেক ভাল করে ভাবল এবং তার কিছু বন্ধুদের বলেছিল অমিতের ব্যাপারে খবর নিতে... তারাও দেখেছে যে অমিত খুব ভাল ছেলে....
...
তারপর একদিন ইলমা অমিতকে ডাক দিল...
ইলমা:: চল
অমিত: কোথায়??
ইলমা:: জাহান্নামে...
(ইলমা অমিতকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেল)
ইলমা:: সত্যি আমাকে ভালবাস??
অমিত:: (ভয়ে ভয়ে) হম
ইলমা:: পরিবারের চাপ কিংবা অন্য কোন চাপে পিছপা হবে না তো??
অমিত:: জিবনেও না
ইলমা:: আমি কিন্তু একজনকেই ভালবাসবো..
অমিত:: আমিও
ইলমা:: কিছু কন্ডিশন আছে...
অমিত:: ১) আমাকে দেখতে পারবা না..সময় হলে আমি নিজেই দেখাবো
২)কখনো খারাপ কিছু হবে না
৩)শুধু মন থেকে ভালবাইসো
অমিত:: আমি রাজি... আমি তোমাকে ভালবাসি... আজ থেকে তুমি আর আমি একজন মানুষ হয়ে গেলাম...
(এইভাবেই শুরু হয় ইন্টার 1st year এর অমিত আর ক্লাস ৯ এর ইলমার রিলেশন)
তাদের রিলেশন চলছে...
প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় কথা বলা...
ইলমার আম্মুর মোবাইলে কথা বলা...
ফেসবুকে কথা বলা....
১ বছর কেটে গেল......
.
কালকে ইলমার এস.এস.সি গনিত পরিক্ষা....অমিত রাতে ইলমাকে একটা সিউর সাজেশন দিয়েছে...ইলমা শুধু সেটাই পরে গেছে...
কিন্তু পরিক্ষায় সেটা আসে নাই...ইলমার পরিক্ষা খুব খারাপ হইছে...
বাসায় এসে সে অমিতকে ফোন দিল...
অমিত:: আমার জন্যি সব হইছে
ইলমা:: আরে না... আমি বোকামি করে কিচ্ছু পড়ে যাই নাই
অমিত:: আমার দোষ লুকাইও না প্লিয
ইলমা:: তুমি আমার জিবনের সবচাইতে দামি জিনিস... পরিক্ষা বার বার দেয়া যাবে.. কিন্তু তোমার মত মানুষ বার বার পাব না..
(এভাবেই কস্ট,সুখ নিয়েই রিলেশন এগচ্ছে)
.
আজকে অমিত প্রথম ভা্সিটিতে যাবে...সকাল বেলাই ইলমার ফোন...
ইলমা:: তুমি কোথায় যাচ্ছ??
অমিত:: ভা্সিটি
ইলমা:: কেন??
অমিত::পড়াশুনা করতে..
ইলমা:: মনে থাকে যেন...
অমিত:: মনে থাকবে কিন্তু যদি কোন মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে..তাহলে কিছু করার নাই..
ইলমা:: দুইটাকে খুন করে.. নিজে সুইসাইড করবো
অমিত:: ধুর পাগলি কি বল এইসব...
ইলমা;: বল কেন অইসব কথা.. আমার খারাপ লাগে নাহ??
অমিত:: আচ্ছা আর বলবো না...
(আজ ২ বছর পর... অমিত আর ইলমা একসাথে ঘুরতে বের হবে।।। অমিত আজকে ইলমাকে দেখবে)
তারা দুজনে.. একটা রিক্সা নিল... তারা অপরিচিত এলাকায় চলে গেল....
ইলমা রিক্সার মধ্যেই তার স্কার্ফটা খুলল ""অমিত অপলক তাকিয়ে আছে...
মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়....
ইলমা:: কি দেখছ?? এউ ভুতনিকে??
অমিত:: সাক্ষাত পরি
ইলমা:: হইছে হইছে
অমিত:: খুব ভালবাসি
ইলমা:: (কানে কানে) আমিও তুমার চেয়ে বেশি..
....
অনেকক্ষন রিক্সায় তারা ঘুরছে... ইলমার হাতে হাত রেখেছে অমিত...
হঠাত ৪-৫ টা ছেলে এসে তাদের রিক্সা দাড়া করায়....
একদম বাজারের মাঝে....
ছেলে:: কি রে রিক্সার ভিতরে কি করছ??
অমিত:: ভাই এইটা আমার কাজিন... আমরা বাসায় যাচ্ছি...
(এলাকার কিছু মুরুব্বি এগিয়ে আসল)
মুরুব্বি:: কি রে কি হইছে?
ছেলে:: কারা অরা দুইটায় রিক্সার ভিতরে ছোয়াছোয়ি খেলতাছিল
মুরুব্বি:: কি রে মাইয়া লিয়া ফুরতি করছ??
অমিত:: আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি।।
মুরুব্বি:: আচ্ছা ভালা... অই পোলাপাইন.. কাজি ডাক।।। অগো বিয়া কইরা দিমু
অমিত:: এইটা কি বলেন?? আমি পারব না..
মুরুব্বি:: অই মাইয়া?? অরে ভালবাস??
ইলমা:: হম
মুরুব্বি:: বিয়া করবার পারবা??
ইলমা:: হম
অমিত:: আমি পারব না..
ইলমা;: কেন পারবা না??
অমিত:: এইটা কি বিয়ের বয়স নাকি...
ইলমা:: পরে তো অই আমাকেই করতা,,, সেটা আগে না হয় করে ফেল...
অমিত:: পরে হয়ত তুমার চাইতে ভাল পাব...
(এই বলে অমিত দৌড়ে পালালো)
ইলমাকে নিয়ে বাজারের সবাই হাসাহাসি করল.... অপমানিত হতে হল।।।
ইলমা বাসায় চলে এলো.... অনেক দিন না খেয়ে থাকল ""তারপর সে অমিতকে লাস্ট একটা মেসেজ পাঠালো.....
"""" আসলে এইটা ছিল একটা পরিক্ষা... এই ছেলে গুলা আমার বন্ধু,,আর মুরুব্বিটা আমি ঠিক করেছি...শুধুমাত্র তুমার মনের খবরটা জানার জন্য..কিন্তু তুমি আমাকে ভালবাস না..সেটা বুঝে গেছি... আমি তুমাকে সারাজীবন ভালবেসে যাব""""
...
তারপর অমিত যোগাযোগের চেস্টা করলেও ইলমা করে নাই...
প্রায় ৬ মাস কেটে গেল....ইলমার বান্ধবিরা ইলমাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আরেকটা রিলেশন করালো....
সেই রিলেশন ১ মাস হওয়ার পর...অমিত জানতে পারে....
তারপর একদিন...
ইলমার নাম্বারে একটা মেসেজ আসে...
"""" নাটকটা সাজিয়েছিলা তুমি,,কিন্তু করিয়েছি আমি.. আসলে তুমি তুমার ফ্রেন্ড দের আর মুরুব্বিকে ঠিক করার পর... ওরা আমার কাছে এসে সব বলে... তারপর আমি ওদের বলেছি.. তুমার ইচ্ছামতি সব হবে... আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলাম.. কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম.. আমি তোমাকে এত কস্ট দেয়ার পরও তুমি আমার থাকো কি না?? কিন্তু না... তুমি ৬ মাসেই নতুন রিলেশনে জড়িয়ে পরলা... আর আমি... তুমাকেই ভালবেসে গেলাম... তুমি যখন এই মেসেজ পরছ তখন হয়ত আমি দুনিয়াতে নাই...তুমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করতে পারি।। কিন্তু তোমাকে ছাড়া বেচে থাকতে পারব না... চলে এসো সেই খানে ""যেখানে কথা দিয়েছিলা.. সারাজীবন আমাকেই ভালবাসবা"" সেই নদীর পাড়ে... আমার লাশ তুমার জন্য অপেক্ষা করছে.... (অমিত)
(ইলমা কাদতে কাদতে সেইখানে গেল.. গিয়ে দেখল অমিতের ক্ষত বিক্ষত দেহ পরে আছে সেই নদীর পাশে...
ইলমা কাদতে কাদতে চিৎকার করে বলল ""তুই বুঝলি না রে..তুই বুঝলি না.. আমাকে বোঝাতেও দিলি না""""
....
(ভালবাসার মানুষকে পরিক্ষা ও সন্দেহ থেকে বিরত থাকুন
বিকাল ৫:০০... অমিতের কোচিং ছুটি হয়েছে.. সে প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে একটু দূরে গিয়ে কোচিং করে...
কোচিং থেকে বের হয়েই মেইন রোডে এসে অটোতে আসে বসলো... অটোওয়ালা আর যাত্রী ডাকছে...অমিত ড্রাইভারের সাথে সামনেই বসেছে...
একটু পর ২টা মহিলা আর তাদের সাথে একটি মেয়ে আর সাথে ১টা ছোট ছেলে এসে অটোতে এসে বসলো... মেয়েটা বোরকা পড়া ছিল..সাথে স্কার্ফ ছিল...অমিত পিছন দিকে ঘুরে তাকিয়ে যেন আটকে গেল... ""কাজল কালো সেই চোখ,,কি তার তাকানোর ভংগি,চোখ যেন কথা বলে""" মেয়েটার বয়স বেশি হবে না...চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না..
তবুও কাউকে পাগল করার জন্য তার অই চোখই যেন যথেষ্ট...
অমিতের মনে ঘন্টা বেজে উঠল...
অটো ছেড়ে দিল... অমিতের গন্তব্য পরের স্টান্ড...
অটো পরের স্টান্ড চলে এলো... কিন্তু অমিত নামছে না...
মনে হচ্ছে ""তার অই চোখ যেন তাকে আটকে রেখেছে""
যাই হোক অটো আবার ছেড়ে দিল... অটো চলছে... আর অমিতের মনের ঘন্টাও জোরে জোরে বাজছে...
একসময় অটো এমন এক স্টান্ডে এসে থামল যেখানে অমিত কিছুই চিনে না...
সেখানেই সেই মহিলারা আর বাচ্ছা ছেলেটা আর মেয়েটা নেমে গেল...
অমিত এখন তাদের পিছু নিলে সমস্যা হবে..আবার বাসায় অমিতের আম্মু অপেক্ষা করছে...
তাই অমিত সেই অটোতেই চলে এলো...
পরের দিন...
অমিত:: দোস্ত তোরা কই?
লিমন:: আয় পুকুর পাড়ে আয়..সবাই আছি
(অমিত চলে গেল?)
অমিত:: তোদের সাথে কিছু কথা আছে
মিলন:: হম বল..
অমিত:: ফাযলামি করবি না
লিমন:: আরে তুই বল
অমিত:: I am in Love
লিমন:: হাসতে হাসতে (ওরে মিলন আমারে ধর.. নাইলে কিন্তু এখনি পুকুরে লাফ দিমু)
অমিত:: তোরা সাহায্য না করলে না করবি..কিন্তু এমন করবি না
মিলন:: আচ্ছা কুল..মেয়েটার নাম কি?
অমিত:: জানি না
লিমন:: কোন স্কুলে পড়ে?
অমিত:: জানি না
মিলন:: দেখলে চিনবি তো?
অমিত:: না
লিমন::: সিনেমা মারাও...আমগো লগে (রেগে)
অমিত:: না রে ভাই..অরে খুজতে হইব... অরে না পাইলে তোরা অমিতরে আর পাবি না..
মিলন:: অরে মোর আল্লা.. আগে বল বাড়ি কই??
অমিত:: জানি না
লিমন:: হারামি কিছু একটা তো বল.. খুজতে তো হইব..
অমিত:: ওর এলাকা চিনি...
মিলন:: হম চল...
(৩ জনি চলে গেল..সেই এলাকায়)
লিমন:: মামা এইডা তো এলাকা না।। পুরা একটা দেশ... এনে কেমনে খুজমু...
মিলন:: মামা আইডিয়া পাইছি...
অমিত: কি??
মিলন:: মেয়ের সাথে একটা বাচ্চা ছিল না?? অইটারে তো দেখছস.. অয় তো আর বোরকা পইরা ছিল না..
অমিত:: হম দেখছি.. তারপর??
মিলন: : আজকে কি বার??
অমিত':: আবে হালা শুক্রবার.. আসল কথা বল..
মিলন::: ব্যাস.. এলাকায় মসজিদ একটাই... অই পিচ্চি অবশ্যই এই মসজিদে নামাজ পরতে আসব... অরে পাইলেই... সব পাইয়া গেছি
অমিত:: মামা তোরে আটানা দামের চকলেট খাওয়ামু.. অনেক ভাল বুদ্ধি দিসস
...
(তারপর ওরা চলে গেল মসজিদে..)
নামাজ শেষে অমিত দুটি পিচ্চিকে দেখিয়ে দিয়ে বলল ""এই দুইটার মধ্যেই যেকোন একটা""
মিলন একটা পিচ্চি কে জিজ্ঞাস করল ""তুমরা কয় ভাই বোন""
...
পিচ্চি:: বোন নাই.. ৫ জন ভাই
মিলন:: আচ্ছা তুমি বাসায় যাও...
(বাকি রইল আর একটা পিচ্ছি)
মিলন:: তুমরা কয় ভাই বোন?
পিচ্চি:: আমি আর আমার আপু
(অমিত খুশিতে লাফাচ্ছে)
মিলন:: তুমার আপু কি কালার বোরকা পরে??
পিচ্চি:: কালো
মিলন:: আচ্ছা বাবু বাসায় যাও.. এসব কথা কাউকে বইলো না..
(পিচ্চি চলে গেল)
আর ওরা পিচ্চির পিছু পিছু বাসা অবদি গেল...
বাসা চিনে ফেলল...
অমিত এখন আকাশে উড়ছে....
...
আবার আসরের নামাজের সময়... সেই মসজিদে পিচ্চিকে আবার ডাকে ওরা...
মিলন:: বাবু কি খাবা??
পিচ্চি:: কিছু না
মিলন:: শুভ কাজে মিষ্টি মুখ করতে হয়.. এই বলে অনেক গুলা চকলেট দিল
(পিচ্চি নিল)
মিলন:: এবার বল তো.. তুমার আপুর নাম কি??
পিচ্চি:: ইলমা
(অমিত খুশিতে বসে পড়েছে)
মিলন:: কোন ক্লাসে পড়ে?
পিচ্চি:: ক্লাস ৯
মিলন:: কখন স্কুলে যায়?
পিচ্চি:: সকাল ৯ টায়...
মিলন:: আচ্ছা.. যাও বাসায় যাও।।। কালকে আবার চকলেট নিয়ে যেও..
পিচ্চি:: আচ্ছা ভাইয়া
(এই বলে পিচ্চি চলে গেল)
এখন শুধু ওদের সকাল ৯টার অপেক্ষা...
একদম বাসার গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে... অমিত.মিলন.লিমন.....
সকাল ৮:৪৫ এ সেই কাজল কালো চোখ দুটি ২য় বারের মত দেখতে পেল... অমিত..
কালো বোরকা..স্কার্ফ.. কাধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে...
অমিতরাও অকে ফলো করল...
মেয়েটা একটু একটু বুঝতে পারছে...
....
আজ ১ সপ্তাহ এই পিছন পিছন এ চলছে...
...
ইলমা সামনে আর ওরা পিছনে...
আজ ইলমা অসহ্য হয়ে... পিছনে ঘুরে ওদের ইশারায় ডাক দিল...
মিলন আর লিমন তো ভয়ে দৌড়...
অমিত একটা বাচ্চার মত ইলমার সামনে এসে দাঁড়ালো...
ইলমা:: কি সমস্যা কি??
অমিত:: কিছু না তো
ইলমা:: আমার পিছন পিছন কেউ আসলে আমার সমস্যা হয়.. আর যেন না দেখি...
অমিত:: আচ্ছা
...
পরদিন...
এবার অমিত একাই....
আজকে অমিত ইলমার আগে আগে হাটছে...
ইলমা আবার ডাক দিল...
ইলমা:: আমাকে দেখতে পাচ্ছেন??
অমিত:: না
ইলমা::তাহলে ঘুরে লাভ কি?
অমিত:: ভাল লাগে
ইলমা:: আবার যদি এই এলাকায় দেখি.. পা ভেংগে হাতে ধরিয়ে দিব..
অমিত:: আচ্ছা
..
এরপর থেকে অমিত ইলমার এলাকায় দাঁড়ায় না..স্কুলের সামনে দাঁড়ায়...
এভাবেই চলছিল প্রতিদিন...
ইলমার ঝারি খেয়েও অমিত শুধু চোখ দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত...
একদিন অমিত সাহস করে সামনে গেল..
অমিত:: কিছু কথা ছিল..
ইলমা:: সিট খালি নাই..
অমিত:: আচ্ছা (এটা বলেই চলে গেল)
ইলমা অবাক (উল্টা কোন প্রশ্ন করল না)
এত সহজ সরল মানুষ হয়....
।।।
যাই হোক,,, ইলমা দেখল.. তবুও অমিত প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে...
অনেকদিন দেখার পর একদিন ডাক দিল...
ইলমা:: নাম কি??
অমিত:: অমিত
ইলমা:: সিট খালি নেই বলার পরও দাঁড়িয়ে থাকেন কেন??
অমিত:: কারন আপনি মিথ্যা বলেছেন
ইলমা:: কি আমি?? কে বলেছে??
অমিত:: আপনার বান্ধবী আফসানা..
ইলমা:: আচ্ছা এমন মেন্দা ছেলে কিন্তু আমি লাইক করি না..
অমিত:: কেমন চান??
ইলমা:: সালমান খান
অমিত:: আর কিছু??
ইলমা:: নাহ
...
এরপরদিন থেকে অমিত সালমান খানের মত স্টাইল করা শুরু করেছে...
...
ইলমা রাতে অনেক ভাল করে ভাবল এবং তার কিছু বন্ধুদের বলেছিল অমিতের ব্যাপারে খবর নিতে... তারাও দেখেছে যে অমিত খুব ভাল ছেলে....
...
তারপর একদিন ইলমা অমিতকে ডাক দিল...
ইলমা:: চল
অমিত: কোথায়??
ইলমা:: জাহান্নামে...
(ইলমা অমিতকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেল)
ইলমা:: সত্যি আমাকে ভালবাস??
অমিত:: (ভয়ে ভয়ে) হম
ইলমা:: পরিবারের চাপ কিংবা অন্য কোন চাপে পিছপা হবে না তো??
অমিত:: জিবনেও না
ইলমা:: আমি কিন্তু একজনকেই ভালবাসবো..
অমিত:: আমিও
ইলমা:: কিছু কন্ডিশন আছে...
অমিত:: ১) আমাকে দেখতে পারবা না..সময় হলে আমি নিজেই দেখাবো
২)কখনো খারাপ কিছু হবে না
৩)শুধু মন থেকে ভালবাইসো
অমিত:: আমি রাজি... আমি তোমাকে ভালবাসি... আজ থেকে তুমি আর আমি একজন মানুষ হয়ে গেলাম...
(এইভাবেই শুরু হয় ইন্টার 1st year এর অমিত আর ক্লাস ৯ এর ইলমার রিলেশন)
তাদের রিলেশন চলছে...
প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় কথা বলা...
ইলমার আম্মুর মোবাইলে কথা বলা...
ফেসবুকে কথা বলা....
১ বছর কেটে গেল......
.
কালকে ইলমার এস.এস.সি গনিত পরিক্ষা....অমিত রাতে ইলমাকে একটা সিউর সাজেশন দিয়েছে...ইলমা শুধু সেটাই পরে গেছে...
কিন্তু পরিক্ষায় সেটা আসে নাই...ইলমার পরিক্ষা খুব খারাপ হইছে...
বাসায় এসে সে অমিতকে ফোন দিল...
অমিত:: আমার জন্যি সব হইছে
ইলমা:: আরে না... আমি বোকামি করে কিচ্ছু পড়ে যাই নাই
অমিত:: আমার দোষ লুকাইও না প্লিয
ইলমা:: তুমি আমার জিবনের সবচাইতে দামি জিনিস... পরিক্ষা বার বার দেয়া যাবে.. কিন্তু তোমার মত মানুষ বার বার পাব না..
(এভাবেই কস্ট,সুখ নিয়েই রিলেশন এগচ্ছে)
.
আজকে অমিত প্রথম ভা্সিটিতে যাবে...সকাল বেলাই ইলমার ফোন...
ইলমা:: তুমি কোথায় যাচ্ছ??
অমিত:: ভা্সিটি
ইলমা:: কেন??
অমিত::পড়াশুনা করতে..
ইলমা:: মনে থাকে যেন...
অমিত:: মনে থাকবে কিন্তু যদি কোন মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে..তাহলে কিছু করার নাই..
ইলমা:: দুইটাকে খুন করে.. নিজে সুইসাইড করবো
অমিত:: ধুর পাগলি কি বল এইসব...
ইলমা;: বল কেন অইসব কথা.. আমার খারাপ লাগে নাহ??
অমিত:: আচ্ছা আর বলবো না...
(আজ ২ বছর পর... অমিত আর ইলমা একসাথে ঘুরতে বের হবে।।। অমিত আজকে ইলমাকে দেখবে)
তারা দুজনে.. একটা রিক্সা নিল... তারা অপরিচিত এলাকায় চলে গেল....
ইলমা রিক্সার মধ্যেই তার স্কার্ফটা খুলল ""অমিত অপলক তাকিয়ে আছে...
মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়....
ইলমা:: কি দেখছ?? এউ ভুতনিকে??
অমিত:: সাক্ষাত পরি
ইলমা:: হইছে হইছে
অমিত:: খুব ভালবাসি
ইলমা:: (কানে কানে) আমিও তুমার চেয়ে বেশি..
....
অনেকক্ষন রিক্সায় তারা ঘুরছে... ইলমার হাতে হাত রেখেছে অমিত...
হঠাত ৪-৫ টা ছেলে এসে তাদের রিক্সা দাড়া করায়....
একদম বাজারের মাঝে....
ছেলে:: কি রে রিক্সার ভিতরে কি করছ??
অমিত:: ভাই এইটা আমার কাজিন... আমরা বাসায় যাচ্ছি...
(এলাকার কিছু মুরুব্বি এগিয়ে আসল)
মুরুব্বি:: কি রে কি হইছে?
ছেলে:: কারা অরা দুইটায় রিক্সার ভিতরে ছোয়াছোয়ি খেলতাছিল
মুরুব্বি:: কি রে মাইয়া লিয়া ফুরতি করছ??
অমিত:: আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি।।
মুরুব্বি:: আচ্ছা ভালা... অই পোলাপাইন.. কাজি ডাক।।। অগো বিয়া কইরা দিমু
অমিত:: এইটা কি বলেন?? আমি পারব না..
মুরুব্বি:: অই মাইয়া?? অরে ভালবাস??
ইলমা:: হম
মুরুব্বি:: বিয়া করবার পারবা??
ইলমা:: হম
অমিত:: আমি পারব না..
ইলমা;: কেন পারবা না??
অমিত:: এইটা কি বিয়ের বয়স নাকি...
ইলমা:: পরে তো অই আমাকেই করতা,,, সেটা আগে না হয় করে ফেল...
অমিত:: পরে হয়ত তুমার চাইতে ভাল পাব...
(এই বলে অমিত দৌড়ে পালালো)
ইলমাকে নিয়ে বাজারের সবাই হাসাহাসি করল.... অপমানিত হতে হল।।।
ইলমা বাসায় চলে এলো.... অনেক দিন না খেয়ে থাকল ""তারপর সে অমিতকে লাস্ট একটা মেসেজ পাঠালো.....
"""" আসলে এইটা ছিল একটা পরিক্ষা... এই ছেলে গুলা আমার বন্ধু,,আর মুরুব্বিটা আমি ঠিক করেছি...শুধুমাত্র তুমার মনের খবরটা জানার জন্য..কিন্তু তুমি আমাকে ভালবাস না..সেটা বুঝে গেছি... আমি তুমাকে সারাজীবন ভালবেসে যাব""""
...
তারপর অমিত যোগাযোগের চেস্টা করলেও ইলমা করে নাই...
প্রায় ৬ মাস কেটে গেল....ইলমার বান্ধবিরা ইলমাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আরেকটা রিলেশন করালো....
সেই রিলেশন ১ মাস হওয়ার পর...অমিত জানতে পারে....
তারপর একদিন...
ইলমার নাম্বারে একটা মেসেজ আসে...
"""" নাটকটা সাজিয়েছিলা তুমি,,কিন্তু করিয়েছি আমি.. আসলে তুমি তুমার ফ্রেন্ড দের আর মুরুব্বিকে ঠিক করার পর... ওরা আমার কাছে এসে সব বলে... তারপর আমি ওদের বলেছি.. তুমার ইচ্ছামতি সব হবে... আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলাম.. কারন আমি দেখতে চেয়েছিলাম.. আমি তোমাকে এত কস্ট দেয়ার পরও তুমি আমার থাকো কি না?? কিন্তু না... তুমি ৬ মাসেই নতুন রিলেশনে জড়িয়ে পরলা... আর আমি... তুমাকেই ভালবেসে গেলাম... তুমি যখন এই মেসেজ পরছ তখন হয়ত আমি দুনিয়াতে নাই...তুমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করতে পারি।। কিন্তু তোমাকে ছাড়া বেচে থাকতে পারব না... চলে এসো সেই খানে ""যেখানে কথা দিয়েছিলা.. সারাজীবন আমাকেই ভালবাসবা"" সেই নদীর পাড়ে... আমার লাশ তুমার জন্য অপেক্ষা করছে.... (অমিত)
(ইলমা কাদতে কাদতে সেইখানে গেল.. গিয়ে দেখল অমিতের ক্ষত বিক্ষত দেহ পরে আছে সেই নদীর পাশে...
ইলমা কাদতে কাদতে চিৎকার করে বলল ""তুই বুঝলি না রে..তুই বুঝলি না.. আমাকে বোঝাতেও দিলি না""""
....
(ভালবাসার মানুষকে পরিক্ষা ও সন্দেহ থেকে বিরত থাকুন
No comments