Header Ads

একটি গোঁধুলি বিকেল


.
নীলের ফোনেই নীলান্তির বিকালের ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
ফোনটা কানের কাছে ধরে নীলান্তির ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে নীলের সাথে কথা বলছে।
.
-- কি করো তুমি? ঘুমাও নাকি? (নীল)
-- হুমমম, মাত্র শুয়েছি (ওয়য়য়য়ামমম) শুয়েছিলাম, কখন ঘুম আসলো বলতে পারবো না, আর তুমি কল দিয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে দিলে। (নীলান্তি)
-- আচ্ছা তাহলে ঘুমাও!
-- না বলো?
-- ঘুমাও তুমি পরে বলবো।
-- বলো না? ঘুম আর আসবে না।
-- তোমাকে নিয়ে একটু বের হতে চাচ্ছিলাম, বিকেলটা অনেক সুন্দর লাগছে তো।
-- এখন কোথায় তুমি?
-- এই তো বাসাতেই।
-- তুমি বাসার সামনে আসো আমি রেডি হচ্ছি।
-- ঘুমাবে না।
-- না, ঘুম থেকে তুমি ইম্পরট্যান্ট, আর ঘুম আসবেও না বললাম না।
-- পাগলি!
-- তাড়াতাড়ি এসো।
-- আচ্ছা আসছি,
.
নীলের সাথে বিকেল বেলায়য় ঘুরতে নীলান্তির ভালোই লাগে, শুধু ভালো লাগে না অসম্ভব ভালো লাগে।
তাই কোনোদিনও নীলের সাথে, “আজকে ভালো লাগছে না আরেকদিন ঘুরবো” কেনই বা না বলবে? নীলের যে সারাদিনের মাঝে বিকেলটাই সব চেয়ে পছন্দের।
.
দু’জনই মাস্টার্সে পড়ে, নীলের পড়ালেখায় একটু চাপ নেয় বেশি কারণ গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেই সে ভালো একটা কোম্পানীতে জব করতে চায়।
এজন্য নীলান্তিকে সময় একদম কম দেয়, এ ব্যাপারে নীলান্তিও কিচ্ছু বলে না।
ও হ্যা, তাদের সম্পর্কটা হয়েছে মাত্র চার কি পাঁচ মাস হবে।
নীলান্তির এর আগে কোনো এক্স বিএফ ছিলো না, নীলেরও কোনো এক্স জিএফ ছিলো না।
.
নীল বই পড়তেই বেশি ভালোবাসতো, তাই সে ভার্সিটির লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক ছিলো।
আর লাইব্রেরীতেই নীলান্তির দেখা মেলে এবং তার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু হয়।
.
নীলান্তিকে দেখলো যেকোনো ছেলেই ক্রাশ খাবে এটা বলতে হবে না।
আর নীলেরও তাই হলো, অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে নীলান্তি।
আর নীলের কাছে তো একটি “ডানা কাটা পড়ি”
.
নীলান্তিকে সামনা সামনি “ভালোবাসি” কথাটা বলার সাহস পায়নি নীল।
একদিন লাইব্রেরীতে বসে নীল নীলান্তির অপেক্ষায় আছে কখন সে আসবে।
নীলান্তি আসলো, বইও পড়ছে আর নীল বসে বসে নীলান্তিকেই দেখছে।
মুখোমুখি বসলে অবশ্য নীলান্তির চোখে পড়তো নীল একপাশ হয়ে বসায় দেখেনি নীল যে ওকে দেখছে।
পড়া শেষে নীলান্তি লাইব্রেরী থেকে বেরর চলে যাচ্ছিলো তখনি নীল নীলান্তির পিছু পিছু বের হয়ে গেল।
.
-- এই যে শুনুন! (নীল)
-- বলুন? (নীলান্তি)
-- আপনার একটা বই দিবেন?
-- কেন?
-- দিন না।
-- ওকে দিচ্ছি………… নিন।
.
ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা চিরকুট বের নীলান্তির বইয়ের মধ্যে দিয়ে বলে “বাসায় গিয়ে বইটা দেখবেন” তারপর এক দৌড়ে হাওয়া।
.
নীলান্তি তো রীতিমত অবাক, তারপরও নীলের কথা রাখল।
বাসায় গিয়েই বইটা খুলে এবং চিরকুটটা দেখতে পায়, চিরকুটটা খুলেই পড়া শুরু করলো।
.
“আপনাকে প্রথম যেদিন লাইব্রেরীতে দেখিছি,সেদিনই আপনাকে আমার খুব ভালো লেগে যায়, তারপর থেকে আপনাকে আমি লাইব্রেরীতেই দেখতাম। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো আপনাকে দেখার পর থেেক আমার প্রিয় পড়ালেখাটাই করতে ভালো লাগতো না। দিনের বেশির ভাগ সময়ই আপনাকে ভেবে কাটতো লাগলো।
আমার পড়ালেখার ক্ষতিটা আমি বুঝতে পারি কিন্তু আপনাকেও যে আমি ভালোবেসে পেলেছি এটাও বুঝতে পারি।
আর হ্যা কোনো মেয়েকে সামনে থেকে “ভালোবাসি” বলার সাহস আমার নেই বলেই আপনাকে চিরকুটটা দিলাম।
আপনিই আমার প্রথম ভালোবাসা, খুব ভালোবাসি আপনাকে”
.
পরেরদিন নীল আর লাইব্রেরীতে যায়নি ভয়ে।
ক্লাসে বসে বসে পড়া নিয়েই ব্যস্ত, কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে তার বইয়ে এই দিনের বেলাও ছায়া পড়ছে, সামনে তাকিয়ে দেখে সেই মেয়েটাই।
.
-- আআআপনি? (নীল)
-- হুম আমি, কেন কোনো সমস্যা? (নীলান্তি)
-- না, হবে কেন?
-- তোতলাচ্ছেন কেন? আপনি কি তোতলা?
-- না, আআপনাকে দেখেই কেন জানি তোত তোলাচ্ছি।
-- কালকে এমন করলেন কেন?
-- ……(ভয়ে চুপ)
-- কি হলো চুপ করে আছেন কেন?
-- জ্বি মানে?
-- চলুন।
-- কোথায়?
-- বাইরে?
-- কেএ কেএ কেন? (পুরা ভয় পাচ্ছে নীল)
-- চলুন তো।
.
নীলের হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলো।
.
-- কেউ চিঠি এভাবে লিখে? (নীলান্তি)
-- কি হয়েছে? (নীল)
-- চিঠিতে কেউ প্রেমিকাকে আপনি করে বলে?
-- না মানে কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলিনি তো, তাই কনফিউজড ছিলাম, আপনি বলবো না তুমি বলবো। তুমি বললে কেমন কেমন দেখায় তো তাই আপনি করে বললাম।
-- কেমন কেমন দেখায়।
-- জ্বি
-- বলছি তুমি বললে কেমন কেমন দেখায়।
-- অসম্মান করা হয় মনে হলো তাই আপনি।
-- সত্যি আমি কি আপনার প্রথম ভালোবাসা?
-- জ্বি,
-- আগের জিএফের নাম কি?
-- আগের জিএফ মানে, আপনাকেই তো প্রথম ভালো করে দেখলাম, কোনো মেয়ের দিকে কোনোদিন ভালো করে দেখেনি।
-- মেয়েদের আপনি খারাপ দৃষ্টিতে দেখতেন?
-- না না, মানে কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকাইনি। অনেক ছেলে আছে না মেয়েদের দিকে তাকিয়েই থাকে।
-- ওহ, তো আপনি আমাদের ক্লাসে কি করছিলেন?
-- পড়ছিলাম।
-- তাই বলে আমাদের ক্লাসে।
-- আপনাদের ক্লাসে না তো আমি আমাদের ক্লাসেই বসে বসে পড়ছিলাম।
-- মিথ্যে বলেন কেন?
-- সত্যি……ওহ সিট ক্লাসে তো স্যার চলে গেছে। আমি কোনোদিনও ক্লাস মিস করিনি।
-- আজকে একদিন না করলে কিছু হবে না, এখানে দাড়ান।
-- জ্বি।
-- আমরা একসাথে পড়ি একি ডিপার্টমেন্টে আর আপনি আমাকে কোনোদিন দেখেন নাই, লাইব্রেরীতেই প্রথম।
-- হুম লাইব্রেরীতেই প্রথম, আমি ক্লাসে কোনোদিকে তাকাই না।
-- ওহ.
.
তারপর থেকে তাদের পথ চলা শুরু।
.
নীল নীলান্তিদের বাসার সামনে আসে।
-- এতক্ষণ লাগে তোমার আসতে? আমি একঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি। (নীলান্তি)
-- কি একঘন্টা? ২০মিনিট লাগে আমার তোমাদের বাসায় আসতে।
-- হুম, কিন্তু আমায় একঘন্টা ধরে দাড় করিয়ে রাখছো, সরি বলো।
-- কেন?
-- সরি বলো, নাহলে আমি যাবো না।
-- ওকে বলছি, সরি।
-- হয়নি সুন্দর করে বলো।
-- সরি আবার সুন্দর করে কিভাবে বলে?
-- বলে, তুমি বলো।
-- ওকে বলতেছি, আপনাকে একঘন্টা দাড় করিয়ে রাখার জন্য আমি সরি।
-- গুড বয়, চলো।
-- হুম
.
দু’জন মিলে পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে চুপচাপ, চারদিক অনেকটা নিরব হয়ে আছে, তেমন কোনো শব্দ নেই।
এজন্য নীলের খুব ভালো লাগছিলো।
.
-- আজকের প্রকৃতিটা অনেক নিরব নিরব তাই না।(নীল)
-- হুম,
-- ভালো লাগছে না তোমার?
-- লাগছে তো?
-- প্রকৃতির সাথে তো তুমিও নিরব হয়ে আছো।
-- তুমি এমনিতে এক লাইন বেশি বুঝো।
-- কি?
-- কি না তুমি বেশি বুঝো।
-- ওকে....?
.
নীল কোনো কথা ছাড়া চুপচাপ বসে আছে, আর বিকেল বেলার হালকা বাতাস অনুভব করছে।
নীলান্তিও চুপ ছিলো কিন্তু কিছুক্ষণ থাকার পর আর ভালো লাগছে না।
.
-- জেগে আছো নাকি ঘুমিয়ে গেছো (নীলান্তি)
-- …?(নীল চুপ)
-- এই তুিম তাকিয়ে তাকিয়ে ঘুমাও নাকি?
-- …?(নীল এখনো চুপ)
-- রেগে আছো?
-- …? (তাও চুপ)
-- নীল এবার কিন্তু আমি রেগে যাবো কথা বলছো না কেন?
-- বেশি বুঝি তো, তাই কম বুঝার চেষ্টা করছি।
-- তুমি রেগে আছো। আমি তো মজা করেছি।
-- হুম।
-- হুম কি? রাগ করো না। (নীলের কাধে মাথা রেখে হাতটা জড়িয়ে ধরে বললো )
-- তুমিও না.
-- কি আমি?
-- মিষ্টি পাগলি আমার।
-- আর তুমি কি জানো?
-- কি?
-- তিতা পাগল আমি। হি হি হি।
-- কি?
-- হুম।
-- আমি তিতা?
-- টেষ্ট করে দেখতে হবে, মনে হচ্ছে তো তিতা, শুধু রাগ করো।
-- কখন রাগ করলাম?
-- সব সময়ই তো করো।
-- কচু করি?
-- কচু না তো রাগ করো।
-- তোমায় বলছে, আমি কখনো রাগ করি না।
-- ওকে করো না, ঝগড়ার তালে আছো বুঝচ্ছি।
-- কি?
-- সব সময় এতো কি কি করো কেন?
-- উফ্ তোমায় নিয়েও আর পারি না, চলো একটু হাটি।
-- না তোমার কাধে মাথা রাখতে ভালো লাগছে।
-- আর রাখতে হবে না চলো।
-- তুমি আমাকে ভালো থাকতে দেখলে তা সহ্য হয় না তাই না।
-- আমি আবার কি করলাম?
-- এই যে কাধে মাথা রাখলাম, এটা সহ্য হচ্ছে না। হাটি চলো হাটি চলো করছো।
-- ওকে রাখো, সারাজীবন রাখবে তো?
-- যতদিন দেহে প্রাণ আছে ততদিন রাখবো তারপর আর রাখবো না।
-- চুপ, আর বলতে হবে না।
তোমার কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরছে। এখানেই থামো, প্রাণ টান বলতে হবে না।
-- হি হি, ওকে … আমার তিতা পাগল।
.
এভাবেই চলতে থাকলো মিষ্টি পাগলির আর তিতা পাগলের ছোট্ট ছোট্ট খুঁনসুটিময় ভালোবাসা।
.
.
(সমাপ্ত)

No comments

Powered by Blogger.