ছুটির ফাঁকে
অফিসের ছুটিতে একা একা বেড়াতে আসছি
কক্সবাজার।সারাদিন ছুটাছুটি আর বালুতে
হেটে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলাম।চারপাশে
শত শত সম্পত্তি।কোনগুলো বৈধ আর কোনগুলো
অবৈধ তা বুঝার উপায় নেই।হটাৎ করেই
থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টের পকেট কেপে
উঠলো আমার শরীরটাকে নিয়েই।কি
জিনিসরে বাব্বা এক থাপ্পড়ে মানুষ শরীর
কাপাতে পারেনা আর একটা ফোন কলই পুরো
বডি ভাইব্রেটের সাহায্যে নাচাইয়া দেয়।
পকেট হাতিয়ে ফোনটা বের করে ডিসপ্লের
দিকে তাকাতেই চোখ চাঙ্গে।
- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতাহু খালাম্মা।
- ওলাইকুমুসসালাম।তুই কোথায়? শুনলাম
আমাদের আশেপাশেই আছিস।
,
কক্সবাজারের আশেপাশেই যে উনি থাকেন
সেটা আগে থেকেই জানতাম।আপন খালা।
তবুও তার বাসায় উঠতে মন চায়নি বলে
এসেছি যে সেটা জানাইনি।তবুও কিভাবে
জানলো কে জানে!
,
- হ্যা এইতো কক্সবাজারেই আছি।
- তো হোটেলে উঠেছিস নাকি?
- হ্যা।তাছাড়া আর কোথায় উঠবো?(খোঁচা
দেয়া আমার ছোটবেলার অভ্যাস)
- আমরা কি মরে গেছিরে?আনগো হথা কি
মনে হরে ন?
খাইছেরে হেতি শুরু করিছে।
- আসলে দুইতিনদিনের জন্য আসছিতো।
আপনাদের ওইখানে গেলে মাসখানেক না
থাকলে রাগ করবেন তাই যাইনি।
- তুই এখনই বাসায় আস আমার।তোকে দিয়ে
কাজ আছে।আমি জানি তুই পারবি কাজটা
করতে।
নিজেকে অনেক বড় হতে লাগলো।কোন
সিনিয়র আমার এইরকম প্রশংসা করছে যেন
আমি প্রেসিডেন্ট এখন কোন আসামীকে
মৃত্যুদণ্ড থেকে ছাড়া দেবার জন্যে আমি
ছাড়া আর কেও নাই।
- তো কি কাজ?
- ফোনে বলবো নাকি তুই আসার পর?
- আচ্ছা আসতেছি।কোথায় আসবো?
,
অতঃপর খালাম্মা একটা ঠিকানা দিয়ে বলল
অইখানে আসতে।তারপর উনি নিজেই আমাকে
রিসিভ করবে।কি আর করার? ব্যাগ গুছিয়ে
দৌড় সেখানের উদ্দেশ্যে।সেখানে যাওয়ার
আধাঘন্টা পর খালাম্মা এসে হাজির।
খালাম্মা তার একছেলে আর স্বামীর সাথে
এখানেই থাকে।বয়স পঁয়তাল্লিশ এর মত।
মাথার চুল অনেকটাই পেকে গেছে।যদিও
আজকাল পাকা চুলকে কেও বুড়ি বা বুড়া
হবার লক্ষণ বলেনা। যেমনটা আগে চশ্মা পড়া
ছেলে বা মেয়েদের দেখলে কানা বা কানি
বলতো।এখন তাদের জাতীয় ক্রাশ বলা হয়।
চশ্মা পড়িনা বলেই হয়তো আজও কারো ক্রাশ
হতে পারলামনা।যাই হোক খালার ফ্যামিলি
স্টাটাস অনেক ভাল বললেও ভুল হবে।রিচ
ফ্যামিলি।খালু বিরাট ব্যবসায়ী।অনেকবার
আমায় কাজ করার জন্যে ডেকেছেন।কিন্তু
আমি যাইনি।কারণ আমার যেটা ভালো লাগে
সেটা আমি নিজেই করি কারো এডভাইস
নেইনা।খালা গাড়ীতে আমায় সব খুলে বলল।
আসার সময় উনার পার্সোনাল প্রাইভেট
কারটা নিয়ে এসেছিলো।মাত্র দুইমিনিটেই
বাসায় পৌছে গেলাম।আর এই দুই মিনিটেই
উনি আমায় মেইন সমস্যার সারসংক্ষেপ বলে
দিলেন।কাহিনীটা এই যে।উনার ছেলে
আরিফ এইবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।গত
কয়েকদিনে বেশ কয়বার আত্বহত্যা করার
চেষ্টা করতে চেয়েছে।কিন্তু কেনো তা
জানতে চাইলে বলল যে সে খুনী আর তার মত
খুনীর এই পৃথিবীতে থাকার অধিকার নেই।
কিন্তু সে কাকে আর কেন খুন করছে সে
বিষয়ে কাওকেই কিছু বলছেনা।আর আমার
কাজ এইটা বের করা।বাসায় গাড়ী
পার্কিংয়ের সময় আমি খালাম্মাকে বললাম
আমি পাচঁমিনিট পর আসছি আপনি যান।
খালাম্মা রুমের নাম্বারটা বলেই চলে
গেলো।আমি ড্রাইভার চাচাকে দিয়ে বিশটা
অফসেট পেপার কিনিয়ে আনালাম।আমি
নিজেই যাইতাম তবুও অচেনা জায়গা তাই
বাইরে পা রাখিনি।কলমটা বের করে বিশটা
অফসেট পেপার প্রায় ৫০টা টুকরা করলাম।
প্রতি টুকরায় লিখলাম দুইদিন পর আমার
ছোটভাই আরিফের জন্য মিলাদ ও দোয়ার
আয়োজন করা হয়েছে আপনারা সকলেই
উপস্থিত থাকবেন কামনা করছি।সাথে
খালাম্মার ফ্ল্যাটের নাম্বারটাও দিয়ে
দিলাম।সিড়ি দিয়ে উঠার সময় সকলের
দরজার নিচে দিয়ে কাগজটা ঢুকিয়ে দিলাম।
যেইভাবে হকাররা পত্রিকা দেয়।ধীরে ধীরে
অবশেষে যেই দরজার গেলাম সেখানে
মালকিন যে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে তা
খেয়াল করিনি।মালকিনের শাড়িটাও চিনা
চিনা লাগছে।আরেহ এটাতো খালাম্মা।
কানটা টেনে উপরে তুললেন।
- উরেএএএএএ লাগছেতো।
- হারামজাদা তোকে এইসব উলটাপালটা
কাজের জন্য ডেকে আনছি।
- উল্টাপাল্টা কোথায়?ঠিকিতো করছি।
- তোর ঠিকের কপালে পিছা এখনি ব্যাগ
গুছিয়ে বের হ আবার।
- আরেহ আচ্ছা যাবো যাবো আগে আরিফের
সাথে একবার দেখাতো করে নেই।
- আচ্ছা।তোরে যেইটার জন্যে এনেছি সেটা
পারলে কর।কিন্তু সাবধান কোন মজা
করবিনা এইসব নিয়ে।একমাত্র ছেলে আমার।
,
খালার স্বর নিমিষেই নিচু হয়ে গেলো।আমি
বুঝলাম উনার মনের অবস্থা।রুমের ভিতর
যেয়ে দেখলাম খুব সুন্দরভাবেই রুমটাকে
সাজানো হয়েছে।অতঃপর আমাকে একটা
রুমের দিকে ইশারা দিয়ে হাতে একটা চাবি
ধরিয়ে দিলো।বুঝলাম কাহিনীর আরো
কিছুটা।একমাত্র ছেলে কোন পর্যায়ের
পাগলামী করলে একজন বাবা মা তাদের
ছেলেকে তালাবন্ধ করে রুমে আটকে রাখে।
ভিতরে যেয়ে হয়তো শিকল পড়ানো
অবস্থায়ও দেখতে পারি আরিফকে।কারণ
স্বাভাবিক একজন মানুষকে ভিতরে আটকে
রাখবে আর সে দরজা ধাক্কাবেনা এটা কোন
কথা!আমি সিরিয়াস ভাবে বিষয়টা নেয়ার
জন্যে মুখটা গোমড়া করে সামনে এগুচ্ছি।
কিন্তু হাসি থামেনা আমার।আসলে
ছোটবেলায় এইসব নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম।
এখন ধীরে ধীরে বড় হয়েছি আর সবই সহজ
মনে হয়।অহরহ দেখেছি।তাই কোন ইফেক্ট
পড়েনা ইমোশনের উপরে।তবুও আমার ভাই বলে
কথা।বিষয়টা বাকি সব কিছুর থেকে
আলাদাভাবে নেয়াই উত্তম।গতবছরই সর্বশেষ
দেখা হয়েছিলো আমার মেসে গিয়েছিলো
আমার সাথে দেখা করতে।একরাত থেকেও
ছিলো।সেই একটা রাত আমার কান ফাটিয়ে
দিয়েছিলো।সারারাত গার্লফ্রেন্ডের সাথে
কি মধুর ফোনালাপ।কেন যে অইদিন ওরে
মনের কথাটা মেয়েটাকে খুলে বলতে
বলেছিলাম।নয়তো অন্ততপক্ষে অইদিন আমি
ওর প্রেম কাহিনী হ্যাপি বিগিনিং এর
ফোনালাপ থেকে রেহাই পেতাম।
,
দরজা খুলা মাত্রই দেখলাম ঘরটাই ডিমলাইট
বাদে সব নিভানো।ঘরের এক কোণায় একটা
ছেলে পায়ের সাথে মাথা গুজে বসে আছে।
আমি লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। চারপাশের
অবস্থা দেখে আমি হতবাক।চারপাশে ব্লাক
সাইনপেন দিয়ে অসাধারণ ভাবে লেখা যে,
"আই এম এ মার্ডারার। আমি একজন খুনী"।এত
সুন্দর করে লেখার জন্যে এই মহান
ব্যাক্তিকে আজও কেও পুরস্কৃত করলোনা
ভেবে আফসুস হলো।যাই হোক মহান ব্যক্তি
ওরফে আমার ব্রাদার আমার দিকে ঝাপসা
চোখে তাকালো।অনেকক্ষণ অন্ধকারে
থাকায় আর আলোর স্পর্শ হঠাৎ পাওয়ায়
সবকিছু ভালভাবে দেখতে পারছেনা।
- শিশির ভাইয়া নাহ?
আমি অবাক হলাম অনেকটা।এত তাড়াতাড়ি
আমায় চিনার কথা নাহ।লাস্টটাইম যখন আমায়
দেখেছিলো তখন মুখ দাড়ি বোজাই ছিলো।
এখন ক্লিন।
- কে শিশির? হু ইজ শিশির?
- আপনি শিশির না তো এখানে কেনো?দূরে
যান।আমি একজন খুনী।আমার কাছে আসবেন
নাহ।
,
কথাটা বলেই আমায় ভালভাবে পর্যবেক্ষণ
না করে মাথাটা নিচু করে ফেলল।
,
- আরেহ ভাই আমিও তোর মত খুনী।আয় বুক
মিলাই।
- খুনী মানে?(মাথা উপরে তুলল)
- হ্যারে আমিও তোর মত সেম কাজ করেছি।
- সত্যি বলছো?
- হ্যা।আর আমারে তুমি বলা লাগবোনা।"তুই"
বলবি দুজনইতো সেম কাজ করছি।দুইজনই বন্ধু।
- আচ্ছা।তো তুই এখানে কেনো?
- আরেহ আন্টি বলল তুইও খুন করেছিস আমার
মত।আমি মেন্টাল হসপিটাল থেকে পালিয়ে
আসছিলাম এইখানে।পথেই উনি যেন কিভাবে
ধরে ফেলল।পুলিশের লোক বলে এইখানে ধরে
নিয়ে আসছে।
- ধুর।মজা নিচ্ছিস।তুই কাকে খুন করেছিস?
- আমারটা আমি পরে বলবো।আগে তোরটা
শুনি।তুই বল।
- কাওকে বলবিনা প্রমিজ কর।
- আচ্ছা প্রমিজ।
মনে মনে ভাবলাম পাগল হইলেও মাথার বুদ্ধি
এখনো ঠিক আছে।
- আমি আমার নিজের ছেলেকে খুন করেছি।
- হোয়াট? (যেন কেও আমাকে আসমান থেকে
জমিনের উদ্দেশ্যে ফেলল।)
- অবাক হলি কেনরে?তুই কি তোর ছেলেকে
খুন করিসনাই?
- না মানে,আরেহ আমিতো আমার ছেলে বউ
দুটোকে একসাথেই মেরে ফেলেছি।
- শালা তুইতো আমার থেকেও বড় খুনী।
হাহাহা
- এখন আগে বলো।
- আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম।
তোর মতই।নাম নাদিয়া।লাস্ট ইয়ার শিশির
ভাইয়ার কথাতেই আর বুদ্ধিতেই ওরে প্রপোজ
করি আর ইন এ রিলেশনশিপ এও যাই।
- এই শিশিরটা কে?
- কিছু বলবোনা উনার সম্পর্কে আমার
কাজিন। হুধা এইটা জেনে রাখ যে বুদ্ধিমান
বোকা।
- মানে?
- মানে উনি সবকিছু বুদ্ধি দিয়া করে কিন্তু
কাওকে আপন ভাবতে পারেনা দুনিয়ার।
- ওহ বুঝছি।আগেরটা ক।
নিজের সম্পর্কে প্রশংসা শুনতে কেমন জানি
লাগে তাই চুপ করালাম।নয়তো আমার
সম্পর্কে ওর ধারণা জানা দুইমিনিটের
ব্যাপার ছিলো।
- ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের ভালবাসার
মুহুর্তগুলো।কিন্তু একসময় ও আমায় একটু একটু
ইগনোর করতে লাগলো। কিছু বন্ধুরা কু
পরামর্শ দিলো যে ফিজিক্যাল রিলেশন করে
ফেলতে।তাহলে নাকি ও আর আমায় কখনো
ছাড়তে পারবেনা।আমি ওর প্রতি খুব উইক
ছিলাম।তাই ওকে হারানোর ভয়টা হৃদয়টাকে
চিরচির করে কাপিয়ে তুলতো।আসলে তখন ওর
এক্সেম ছিলো।তাই বেশি সময় দিতোনা।
কিন্তু আমি সেটা বুঝতেই চাইনি।অবশেষে
বন্ধুদের থেকে নানা বুদ্ধি নিয়ে সব করে
ফেলি আমি।যদিও ও রাজি ছিলোনা।
একধরনের জোরের উপরেই সব হয়ে যায়।
(আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আর আস্তে বললাম
"হায়রে বন্ধু")
এরপর থেকে আমি আর কিছু খেয়াল করিনাই
বা কোন মেডিকেল প্রাইভেসিও নেইনাই।
তখন মনটা আনন্দে ফুরদুরে ছিলো।দুজনে
কাটানো সেই দিনটার কথা খেয়াল করলেই
ভাল লাগতো।একেবারের জন্য পেয়ে গেছি
মেয়েটাকে।কোন নিরাপদ কনসেপ্ট নেইনি
আমরা সেদিন কোন এক কারণে।ডাক্তারের
দোকানে যাইতেও লজ্জা লাগতো।আর
বন্ধুদের বললে তারা আজ নাহোক কাল এটা
এর ওর কাছে ছড়াবে বলে।
- যাক একটা ভাল কাজ করেছিস। আমিতো
সবাইকে জানিয়ে দিছিলাম।
- নিশ্চয়ই এখন সেটা সবাই জানে তাইনা?
- হ্যা।এখন আগে বল।
- প্রায় কয়েকমাস যাওয়ার পর হঠাৎ নাদিয়া
আমার সাথে থাকাকালেই জ্ঞান হারিয়ে
ফেলল।আমি সাথে সাথেই রিক্সায় করে
মেডিকেলে নিয়ে যাই।ডাক্তার এসে আমায়
জিজ্ঞেস করে যে ও বিবাহিত কিনা!আমি
নিজেকে তখন প্রায়ই বলতাম সবার কাছে যে
আমি নাদিয়ার স্বামী।সেহেতু তখন ডাক্তার
জিজ্ঞেসের কারণে আমিও তাকে বললাম
যে আমার বউ ও।ডাক্তার কিছুক্ষণ আমার
দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন যে ওয়েল
ডান।আপনি বাবা হতে চলেছেন।আমি সেই
মুহুর্তে যে কি অবস্থায় ছিলাম তা বুঝানো
দুষ্কর।আমি কোনমতে নিজেকে আড়াল করে
সেখান থেকে নাদিয়াকে নিয়ে চলে
আসলাম।আমার ভুলের জন্যেই আজ এই অবস্থা।
এখন কি হবে? আমার ফ্যামিলিতো ওকে এই
অবস্থায় কিছুতেই এক্সছেপ্ট করবেনা।তাহলে
কি হবে? তখন আমার মাথায় এতটুকু জ্ঞান
ছিলোনা যে নাদিয়ার গর্ভে আমারই বাচ্চা।
তাকে দুনিয়াতে আনতেই হবে।তখন আমি
ভেবেছি যে নাদিয়ার গর্ভের বাচ্চাটিকে
দুনিয়ায় আসতে দেয়া যাবেনা। তাহলে
আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।দুইজন
সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা।নাদিয়াক
ে এবোরেশন করাতে বললাম।সে কিছুতেই
রাজি নাহ।অবশেষে যখন বললাম এবোরেশন
না করালে এই বাচ্চার দায়িত্ব শুধু তুমিই
নিবে। আমি কিছু করতে পারবোনা।সেদিন
নাদিয়া আমাকে অন্যভাবে দেখেছিলো
আমি তা বুঝিনাই।নাদিয়া শুধু এতটুকু
বলেছিলো যে বাচ্চা হয়তো দুনিয়াতে
আসতে পারবেনা।আর এই বাচ্চা আমার কাছ
থেকে দূরে সরে যাওয়া মাত্রই তোমাকেও
জীবন থেকে মুছে ফেলবো।মনে রেখো।
নাদিয়া সেদিন এইকথা বলে চলে
গিয়েছিলো। আমার সাথে যেয়েই এবোরেশন
করায়।এরপরেরদিন থেকে নাদিয়া আর আমার
ফোন উঠায়নি।ওর বাসায় গেলে জানতে
পারি ও অন্যকোথাও চলে গিয়েছে।ওর ফোন
অন।কিন্তু আমার অথবা কোন আননাউন
নাম্বার রিসিভ করেনা।আমি অনেক ক্ষমা
চাইছি।
- হুহহহ
টেবিলল্যাম্পের পাশেই একগ্লাস পানি
রাখা ছিলো।দীর্ঘশ্বাস নেয়া আরিফের
দিকে বাড়িয়ে দিলাম।চোখ বেয়ে পানি
পড়ছে।চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।মুখে
দাড়িগোঁফ এ চেনাই যাচ্ছেনা।
- এখন আমি শুধু এতটুকু জানি আমি আমার
নিজের বাচ্চাকে খুন করেছি সাথে একটা
মেয়ের সারাজীবনের স্বপ্নকেও।আমার কোন
অধিকার নেই পৃথিবীতে বাঁচার।
- তো অনুশোচনাটা কখন হলো?
- নাদিয়া চলে যাবার দুইদিন পরেই বাসার
সবুজ ভাইয়াকে তার প্রথম ছেলে সন্তানকে
বাচানোর জন্যে যে কত কষ্ট করছে তা
নিজের চোখে দেখার পরপরই আমি সুইসাইড
করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আম্মুর জন্য
পারিনাই।
- আরেহ ছাদ ছিলোনা?ছাদ থেকে লাগ দিবি
কিছুক্ষণের জন্য মনে হবে তুই সুপারম্যান।
গাড়ীর সামনে যেয়ে দাড়াবি নিজেকে
বীরপুরুষ মনে হবে।
- আমার মত কাপুরুষ আর কেও নেই।আমি আমার
নিজের সন্তানকে নিজে খুন করেছি।
,
কথাটা বলেই দেয়ালে মাথা বারি দিতে
লাগলো প্রচন্ড জোরে।
- থাম থাম।তোর লাইফে নাদিয়া ফিরে
আসলে তুই হ্যাপি?
- এইটা অসম্ভব ইয়ার।
- হাহাহাহাহাহা
- তুই হাসছিস?আমার শোন তোর কাহিনীটা
বল।শুনি।
- আচ্ছা পরে বলব।একটা কাজ করে নেই।
তারপর বলি।
- তোর আবার কি কাজ?খুন করবি আবার
কাওকে?
- হুম।নোংরা মনুষ্যত্বকে।
- মানে?
- পরে বুঝামু।নাদিয়ার নাম্বার কোনটা?
- নাম্বার দিয়ে কি হবে?
- অনেক কিছুই।
ওর স্মার্টফোনটা আমার হাতে দিলো।কল
লগে যেতেই দেখলাম একটা নাম্বারেই
সবচেয়ে বেশি ফোন দেয়া।নামও নাদিয়া
দেয়া।সেইটা টুকে নিলাম নিজের
স্মার্টফোনে।তারপর রুমের চারপাশের
কারুকার্যের কিছু অসাধারণ ছবি ক্যামেরা
দিয়ে তুলে একটা বিশাল মেসেজ লিখে
নাদিয়ার নাম্বারে পাঠাই উইথ পিক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনে রিং বাজলো যে
মেসেজ সেন্ট।ডেলিভারি রিপোর্ট আরকি।
আরিফ শুধু চেয়ে রইলো।আধাপাগল লাগছে
আরিফকে।
অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে ডাইরেক্ট ফোন দিলো
নাদিয়া।আমার আগে কেও যদি এইরকম ভাবে
আরিফের সাথে মিশতো তাহলে আমার আগে
সেই কাজটি করতে পারতো।চোর ঈমানদার
লোককে কিছু বলেনা।চোর চোরকেই সব বলে।
আমি ফোনটা নিয়ে রুমের বাইরে গেলাম।
নাদিয়ার সাথে কথা বলার পর যা বুঝলাম
মেয়েটা অনেক হার্ট হইছে।আর সে আরিফের
লাইফে আসতে চায়না।অবশেষে দীর্ঘ
একঘন্টা ফোনালাপ সাথে কান্নাকাটি
শোনার পর সব ঠিক হলো।আরিফকে যেয়ে শুধু
বললাম যে নাদিয়া আসতেছে।এখনো এই
অবস্থায় থাকবি?নাকি ফ্রেশ হবি পাগলা?
আরিফের চোখ জলে টলমল।অতঃপর
খালাম্মাকে যেয়ে বললাম ছেলে বিয়ে
করতে চাইছিলো আর আপনারা তাকে এখন
দিবেন নাহ সেজন্যই এমনটা।খালাম্মা
বুঝছিলো আমি কথাগুলো মশকরা করে বলছি।
প্রায় আধাঘন্টা পর নাদিয়া আর তার
ফ্যামিলি মেম্বাররা বাসায় হাজির।একে
অন্যকে দোষারোপ করার শেষে নাদিয়া
প্রায় পঁচিশ বার কানে ধরে উঠবস করায়
আরিফকে।সবার মনে একটু একটু ক্ষোভ
থাকলেও তা এখন সয়ে নেয়া ছাড়া উপায়
নেই।
অতঃপর হঠাৎ আরিফ আমায় বলল,
- ভাই আপনি আসলে কে?
- বুদ্ধিমান বোকা।
- মানে?
- বুঝা লাগবেনা।থিংক করতে থাকো আমি
আসছি।
- এই কোথায় যাস তুই?তোর কোথাও যাওয়া
লাগবেনা।তুই এখানেই থাকবি এদের বিয়ের
আগ পর্যন্ত।
- খালা সম্ভব নাহ।এইমাত্র অফিস থেকে
ফোন এসেছে।কালই জয়েন করতে হবে।
কাজের চাপ অনেক।
- কাজ কর্ম বাদ দে।তোর ভাইয়ের বিয়ে না
হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবিনা।
সবাই খালার কথায় সায় দিলেও আমি যেতে
বাধ্য।আমি কখনো উপকারের বিনিময়ে কিছু
নেইনা।কাজ শেষ নাও গো।অতএব আরিফ
আমাকে চিনামাত্রই জড়িয়ে ধরল।আর
নিজেকে বোকা মনে করে লজ্জা পেলো।
আমি চলে আসলাম তাদের সবার কথার
মাঝেই।ব্যাগের কাপড়চোপড় ব্যাগেই আছে।
সবাই খুব ব্যাস্ত।নাহলে হয়তো খাল
ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বলে দিতো আমায়
এগিয়ে দিয়ে আসতে।আমি ড্রাইভারকে
নিজে বললেও ড্রাইভার চাচা না করবেনা।
তবুও দরকার কি? একটা রিক্সায় চড়ে নিজের
গন্তব্যের পথে হাটা দিলাম।ফ্রেশ লাগছে
খুব। আধাপাগলের সাথে আরেকটু থাকলে
হয়তো ভালো লাগতো।হয়তো নিজেও
আধাপাগল হয়ে যেতাম।
কক্সবাজার।সারাদিন ছুটাছুটি আর বালুতে
হেটে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলাম।চারপাশে
শত শত সম্পত্তি।কোনগুলো বৈধ আর কোনগুলো
অবৈধ তা বুঝার উপায় নেই।হটাৎ করেই
থ্রিকোয়ার্টার প্যান্টের পকেট কেপে
উঠলো আমার শরীরটাকে নিয়েই।কি
জিনিসরে বাব্বা এক থাপ্পড়ে মানুষ শরীর
কাপাতে পারেনা আর একটা ফোন কলই পুরো
বডি ভাইব্রেটের সাহায্যে নাচাইয়া দেয়।
পকেট হাতিয়ে ফোনটা বের করে ডিসপ্লের
দিকে তাকাতেই চোখ চাঙ্গে।
- আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতাহু খালাম্মা।
- ওলাইকুমুসসালাম।তুই কোথায়? শুনলাম
আমাদের আশেপাশেই আছিস।
,
কক্সবাজারের আশেপাশেই যে উনি থাকেন
সেটা আগে থেকেই জানতাম।আপন খালা।
তবুও তার বাসায় উঠতে মন চায়নি বলে
এসেছি যে সেটা জানাইনি।তবুও কিভাবে
জানলো কে জানে!
,
- হ্যা এইতো কক্সবাজারেই আছি।
- তো হোটেলে উঠেছিস নাকি?
- হ্যা।তাছাড়া আর কোথায় উঠবো?(খোঁচা
দেয়া আমার ছোটবেলার অভ্যাস)
- আমরা কি মরে গেছিরে?আনগো হথা কি
মনে হরে ন?
খাইছেরে হেতি শুরু করিছে।
- আসলে দুইতিনদিনের জন্য আসছিতো।
আপনাদের ওইখানে গেলে মাসখানেক না
থাকলে রাগ করবেন তাই যাইনি।
- তুই এখনই বাসায় আস আমার।তোকে দিয়ে
কাজ আছে।আমি জানি তুই পারবি কাজটা
করতে।
নিজেকে অনেক বড় হতে লাগলো।কোন
সিনিয়র আমার এইরকম প্রশংসা করছে যেন
আমি প্রেসিডেন্ট এখন কোন আসামীকে
মৃত্যুদণ্ড থেকে ছাড়া দেবার জন্যে আমি
ছাড়া আর কেও নাই।
- তো কি কাজ?
- ফোনে বলবো নাকি তুই আসার পর?
- আচ্ছা আসতেছি।কোথায় আসবো?
,
অতঃপর খালাম্মা একটা ঠিকানা দিয়ে বলল
অইখানে আসতে।তারপর উনি নিজেই আমাকে
রিসিভ করবে।কি আর করার? ব্যাগ গুছিয়ে
দৌড় সেখানের উদ্দেশ্যে।সেখানে যাওয়ার
আধাঘন্টা পর খালাম্মা এসে হাজির।
খালাম্মা তার একছেলে আর স্বামীর সাথে
এখানেই থাকে।বয়স পঁয়তাল্লিশ এর মত।
মাথার চুল অনেকটাই পেকে গেছে।যদিও
আজকাল পাকা চুলকে কেও বুড়ি বা বুড়া
হবার লক্ষণ বলেনা। যেমনটা আগে চশ্মা পড়া
ছেলে বা মেয়েদের দেখলে কানা বা কানি
বলতো।এখন তাদের জাতীয় ক্রাশ বলা হয়।
চশ্মা পড়িনা বলেই হয়তো আজও কারো ক্রাশ
হতে পারলামনা।যাই হোক খালার ফ্যামিলি
স্টাটাস অনেক ভাল বললেও ভুল হবে।রিচ
ফ্যামিলি।খালু বিরাট ব্যবসায়ী।অনেকবার
আমায় কাজ করার জন্যে ডেকেছেন।কিন্তু
আমি যাইনি।কারণ আমার যেটা ভালো লাগে
সেটা আমি নিজেই করি কারো এডভাইস
নেইনা।খালা গাড়ীতে আমায় সব খুলে বলল।
আসার সময় উনার পার্সোনাল প্রাইভেট
কারটা নিয়ে এসেছিলো।মাত্র দুইমিনিটেই
বাসায় পৌছে গেলাম।আর এই দুই মিনিটেই
উনি আমায় মেইন সমস্যার সারসংক্ষেপ বলে
দিলেন।কাহিনীটা এই যে।উনার ছেলে
আরিফ এইবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।গত
কয়েকদিনে বেশ কয়বার আত্বহত্যা করার
চেষ্টা করতে চেয়েছে।কিন্তু কেনো তা
জানতে চাইলে বলল যে সে খুনী আর তার মত
খুনীর এই পৃথিবীতে থাকার অধিকার নেই।
কিন্তু সে কাকে আর কেন খুন করছে সে
বিষয়ে কাওকেই কিছু বলছেনা।আর আমার
কাজ এইটা বের করা।বাসায় গাড়ী
পার্কিংয়ের সময় আমি খালাম্মাকে বললাম
আমি পাচঁমিনিট পর আসছি আপনি যান।
খালাম্মা রুমের নাম্বারটা বলেই চলে
গেলো।আমি ড্রাইভার চাচাকে দিয়ে বিশটা
অফসেট পেপার কিনিয়ে আনালাম।আমি
নিজেই যাইতাম তবুও অচেনা জায়গা তাই
বাইরে পা রাখিনি।কলমটা বের করে বিশটা
অফসেট পেপার প্রায় ৫০টা টুকরা করলাম।
প্রতি টুকরায় লিখলাম দুইদিন পর আমার
ছোটভাই আরিফের জন্য মিলাদ ও দোয়ার
আয়োজন করা হয়েছে আপনারা সকলেই
উপস্থিত থাকবেন কামনা করছি।সাথে
খালাম্মার ফ্ল্যাটের নাম্বারটাও দিয়ে
দিলাম।সিড়ি দিয়ে উঠার সময় সকলের
দরজার নিচে দিয়ে কাগজটা ঢুকিয়ে দিলাম।
যেইভাবে হকাররা পত্রিকা দেয়।ধীরে ধীরে
অবশেষে যেই দরজার গেলাম সেখানে
মালকিন যে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে তা
খেয়াল করিনি।মালকিনের শাড়িটাও চিনা
চিনা লাগছে।আরেহ এটাতো খালাম্মা।
কানটা টেনে উপরে তুললেন।
- উরেএএএএএ লাগছেতো।
- হারামজাদা তোকে এইসব উলটাপালটা
কাজের জন্য ডেকে আনছি।
- উল্টাপাল্টা কোথায়?ঠিকিতো করছি।
- তোর ঠিকের কপালে পিছা এখনি ব্যাগ
গুছিয়ে বের হ আবার।
- আরেহ আচ্ছা যাবো যাবো আগে আরিফের
সাথে একবার দেখাতো করে নেই।
- আচ্ছা।তোরে যেইটার জন্যে এনেছি সেটা
পারলে কর।কিন্তু সাবধান কোন মজা
করবিনা এইসব নিয়ে।একমাত্র ছেলে আমার।
,
খালার স্বর নিমিষেই নিচু হয়ে গেলো।আমি
বুঝলাম উনার মনের অবস্থা।রুমের ভিতর
যেয়ে দেখলাম খুব সুন্দরভাবেই রুমটাকে
সাজানো হয়েছে।অতঃপর আমাকে একটা
রুমের দিকে ইশারা দিয়ে হাতে একটা চাবি
ধরিয়ে দিলো।বুঝলাম কাহিনীর আরো
কিছুটা।একমাত্র ছেলে কোন পর্যায়ের
পাগলামী করলে একজন বাবা মা তাদের
ছেলেকে তালাবন্ধ করে রুমে আটকে রাখে।
ভিতরে যেয়ে হয়তো শিকল পড়ানো
অবস্থায়ও দেখতে পারি আরিফকে।কারণ
স্বাভাবিক একজন মানুষকে ভিতরে আটকে
রাখবে আর সে দরজা ধাক্কাবেনা এটা কোন
কথা!আমি সিরিয়াস ভাবে বিষয়টা নেয়ার
জন্যে মুখটা গোমড়া করে সামনে এগুচ্ছি।
কিন্তু হাসি থামেনা আমার।আসলে
ছোটবেলায় এইসব নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম।
এখন ধীরে ধীরে বড় হয়েছি আর সবই সহজ
মনে হয়।অহরহ দেখেছি।তাই কোন ইফেক্ট
পড়েনা ইমোশনের উপরে।তবুও আমার ভাই বলে
কথা।বিষয়টা বাকি সব কিছুর থেকে
আলাদাভাবে নেয়াই উত্তম।গতবছরই সর্বশেষ
দেখা হয়েছিলো আমার মেসে গিয়েছিলো
আমার সাথে দেখা করতে।একরাত থেকেও
ছিলো।সেই একটা রাত আমার কান ফাটিয়ে
দিয়েছিলো।সারারাত গার্লফ্রেন্ডের সাথে
কি মধুর ফোনালাপ।কেন যে অইদিন ওরে
মনের কথাটা মেয়েটাকে খুলে বলতে
বলেছিলাম।নয়তো অন্ততপক্ষে অইদিন আমি
ওর প্রেম কাহিনী হ্যাপি বিগিনিং এর
ফোনালাপ থেকে রেহাই পেতাম।
,
দরজা খুলা মাত্রই দেখলাম ঘরটাই ডিমলাইট
বাদে সব নিভানো।ঘরের এক কোণায় একটা
ছেলে পায়ের সাথে মাথা গুজে বসে আছে।
আমি লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। চারপাশের
অবস্থা দেখে আমি হতবাক।চারপাশে ব্লাক
সাইনপেন দিয়ে অসাধারণ ভাবে লেখা যে,
"আই এম এ মার্ডারার। আমি একজন খুনী"।এত
সুন্দর করে লেখার জন্যে এই মহান
ব্যাক্তিকে আজও কেও পুরস্কৃত করলোনা
ভেবে আফসুস হলো।যাই হোক মহান ব্যক্তি
ওরফে আমার ব্রাদার আমার দিকে ঝাপসা
চোখে তাকালো।অনেকক্ষণ অন্ধকারে
থাকায় আর আলোর স্পর্শ হঠাৎ পাওয়ায়
সবকিছু ভালভাবে দেখতে পারছেনা।
- শিশির ভাইয়া নাহ?
আমি অবাক হলাম অনেকটা।এত তাড়াতাড়ি
আমায় চিনার কথা নাহ।লাস্টটাইম যখন আমায়
দেখেছিলো তখন মুখ দাড়ি বোজাই ছিলো।
এখন ক্লিন।
- কে শিশির? হু ইজ শিশির?
- আপনি শিশির না তো এখানে কেনো?দূরে
যান।আমি একজন খুনী।আমার কাছে আসবেন
নাহ।
,
কথাটা বলেই আমায় ভালভাবে পর্যবেক্ষণ
না করে মাথাটা নিচু করে ফেলল।
,
- আরেহ ভাই আমিও তোর মত খুনী।আয় বুক
মিলাই।
- খুনী মানে?(মাথা উপরে তুলল)
- হ্যারে আমিও তোর মত সেম কাজ করেছি।
- সত্যি বলছো?
- হ্যা।আর আমারে তুমি বলা লাগবোনা।"তুই"
বলবি দুজনইতো সেম কাজ করছি।দুইজনই বন্ধু।
- আচ্ছা।তো তুই এখানে কেনো?
- আরেহ আন্টি বলল তুইও খুন করেছিস আমার
মত।আমি মেন্টাল হসপিটাল থেকে পালিয়ে
আসছিলাম এইখানে।পথেই উনি যেন কিভাবে
ধরে ফেলল।পুলিশের লোক বলে এইখানে ধরে
নিয়ে আসছে।
- ধুর।মজা নিচ্ছিস।তুই কাকে খুন করেছিস?
- আমারটা আমি পরে বলবো।আগে তোরটা
শুনি।তুই বল।
- কাওকে বলবিনা প্রমিজ কর।
- আচ্ছা প্রমিজ।
মনে মনে ভাবলাম পাগল হইলেও মাথার বুদ্ধি
এখনো ঠিক আছে।
- আমি আমার নিজের ছেলেকে খুন করেছি।
- হোয়াট? (যেন কেও আমাকে আসমান থেকে
জমিনের উদ্দেশ্যে ফেলল।)
- অবাক হলি কেনরে?তুই কি তোর ছেলেকে
খুন করিসনাই?
- না মানে,আরেহ আমিতো আমার ছেলে বউ
দুটোকে একসাথেই মেরে ফেলেছি।
- শালা তুইতো আমার থেকেও বড় খুনী।
হাহাহা
- এখন আগে বলো।
- আমি একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম।
তোর মতই।নাম নাদিয়া।লাস্ট ইয়ার শিশির
ভাইয়ার কথাতেই আর বুদ্ধিতেই ওরে প্রপোজ
করি আর ইন এ রিলেশনশিপ এও যাই।
- এই শিশিরটা কে?
- কিছু বলবোনা উনার সম্পর্কে আমার
কাজিন। হুধা এইটা জেনে রাখ যে বুদ্ধিমান
বোকা।
- মানে?
- মানে উনি সবকিছু বুদ্ধি দিয়া করে কিন্তু
কাওকে আপন ভাবতে পারেনা দুনিয়ার।
- ওহ বুঝছি।আগেরটা ক।
নিজের সম্পর্কে প্রশংসা শুনতে কেমন জানি
লাগে তাই চুপ করালাম।নয়তো আমার
সম্পর্কে ওর ধারণা জানা দুইমিনিটের
ব্যাপার ছিলো।
- ভালোই যাচ্ছিলো আমাদের ভালবাসার
মুহুর্তগুলো।কিন্তু একসময় ও আমায় একটু একটু
ইগনোর করতে লাগলো। কিছু বন্ধুরা কু
পরামর্শ দিলো যে ফিজিক্যাল রিলেশন করে
ফেলতে।তাহলে নাকি ও আর আমায় কখনো
ছাড়তে পারবেনা।আমি ওর প্রতি খুব উইক
ছিলাম।তাই ওকে হারানোর ভয়টা হৃদয়টাকে
চিরচির করে কাপিয়ে তুলতো।আসলে তখন ওর
এক্সেম ছিলো।তাই বেশি সময় দিতোনা।
কিন্তু আমি সেটা বুঝতেই চাইনি।অবশেষে
বন্ধুদের থেকে নানা বুদ্ধি নিয়ে সব করে
ফেলি আমি।যদিও ও রাজি ছিলোনা।
একধরনের জোরের উপরেই সব হয়ে যায়।
(আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আর আস্তে বললাম
"হায়রে বন্ধু")
এরপর থেকে আমি আর কিছু খেয়াল করিনাই
বা কোন মেডিকেল প্রাইভেসিও নেইনাই।
তখন মনটা আনন্দে ফুরদুরে ছিলো।দুজনে
কাটানো সেই দিনটার কথা খেয়াল করলেই
ভাল লাগতো।একেবারের জন্য পেয়ে গেছি
মেয়েটাকে।কোন নিরাপদ কনসেপ্ট নেইনি
আমরা সেদিন কোন এক কারণে।ডাক্তারের
দোকানে যাইতেও লজ্জা লাগতো।আর
বন্ধুদের বললে তারা আজ নাহোক কাল এটা
এর ওর কাছে ছড়াবে বলে।
- যাক একটা ভাল কাজ করেছিস। আমিতো
সবাইকে জানিয়ে দিছিলাম।
- নিশ্চয়ই এখন সেটা সবাই জানে তাইনা?
- হ্যা।এখন আগে বল।
- প্রায় কয়েকমাস যাওয়ার পর হঠাৎ নাদিয়া
আমার সাথে থাকাকালেই জ্ঞান হারিয়ে
ফেলল।আমি সাথে সাথেই রিক্সায় করে
মেডিকেলে নিয়ে যাই।ডাক্তার এসে আমায়
জিজ্ঞেস করে যে ও বিবাহিত কিনা!আমি
নিজেকে তখন প্রায়ই বলতাম সবার কাছে যে
আমি নাদিয়ার স্বামী।সেহেতু তখন ডাক্তার
জিজ্ঞেসের কারণে আমিও তাকে বললাম
যে আমার বউ ও।ডাক্তার কিছুক্ষণ আমার
দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন যে ওয়েল
ডান।আপনি বাবা হতে চলেছেন।আমি সেই
মুহুর্তে যে কি অবস্থায় ছিলাম তা বুঝানো
দুষ্কর।আমি কোনমতে নিজেকে আড়াল করে
সেখান থেকে নাদিয়াকে নিয়ে চলে
আসলাম।আমার ভুলের জন্যেই আজ এই অবস্থা।
এখন কি হবে? আমার ফ্যামিলিতো ওকে এই
অবস্থায় কিছুতেই এক্সছেপ্ট করবেনা।তাহলে
কি হবে? তখন আমার মাথায় এতটুকু জ্ঞান
ছিলোনা যে নাদিয়ার গর্ভে আমারই বাচ্চা।
তাকে দুনিয়াতে আনতেই হবে।তখন আমি
ভেবেছি যে নাদিয়ার গর্ভের বাচ্চাটিকে
দুনিয়ায় আসতে দেয়া যাবেনা। তাহলে
আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।দুইজন
সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা।নাদিয়াক
ে এবোরেশন করাতে বললাম।সে কিছুতেই
রাজি নাহ।অবশেষে যখন বললাম এবোরেশন
না করালে এই বাচ্চার দায়িত্ব শুধু তুমিই
নিবে। আমি কিছু করতে পারবোনা।সেদিন
নাদিয়া আমাকে অন্যভাবে দেখেছিলো
আমি তা বুঝিনাই।নাদিয়া শুধু এতটুকু
বলেছিলো যে বাচ্চা হয়তো দুনিয়াতে
আসতে পারবেনা।আর এই বাচ্চা আমার কাছ
থেকে দূরে সরে যাওয়া মাত্রই তোমাকেও
জীবন থেকে মুছে ফেলবো।মনে রেখো।
নাদিয়া সেদিন এইকথা বলে চলে
গিয়েছিলো। আমার সাথে যেয়েই এবোরেশন
করায়।এরপরেরদিন থেকে নাদিয়া আর আমার
ফোন উঠায়নি।ওর বাসায় গেলে জানতে
পারি ও অন্যকোথাও চলে গিয়েছে।ওর ফোন
অন।কিন্তু আমার অথবা কোন আননাউন
নাম্বার রিসিভ করেনা।আমি অনেক ক্ষমা
চাইছি।
- হুহহহ
টেবিলল্যাম্পের পাশেই একগ্লাস পানি
রাখা ছিলো।দীর্ঘশ্বাস নেয়া আরিফের
দিকে বাড়িয়ে দিলাম।চোখ বেয়ে পানি
পড়ছে।চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।মুখে
দাড়িগোঁফ এ চেনাই যাচ্ছেনা।
- এখন আমি শুধু এতটুকু জানি আমি আমার
নিজের বাচ্চাকে খুন করেছি সাথে একটা
মেয়ের সারাজীবনের স্বপ্নকেও।আমার কোন
অধিকার নেই পৃথিবীতে বাঁচার।
- তো অনুশোচনাটা কখন হলো?
- নাদিয়া চলে যাবার দুইদিন পরেই বাসার
সবুজ ভাইয়াকে তার প্রথম ছেলে সন্তানকে
বাচানোর জন্যে যে কত কষ্ট করছে তা
নিজের চোখে দেখার পরপরই আমি সুইসাইড
করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আম্মুর জন্য
পারিনাই।
- আরেহ ছাদ ছিলোনা?ছাদ থেকে লাগ দিবি
কিছুক্ষণের জন্য মনে হবে তুই সুপারম্যান।
গাড়ীর সামনে যেয়ে দাড়াবি নিজেকে
বীরপুরুষ মনে হবে।
- আমার মত কাপুরুষ আর কেও নেই।আমি আমার
নিজের সন্তানকে নিজে খুন করেছি।
,
কথাটা বলেই দেয়ালে মাথা বারি দিতে
লাগলো প্রচন্ড জোরে।
- থাম থাম।তোর লাইফে নাদিয়া ফিরে
আসলে তুই হ্যাপি?
- এইটা অসম্ভব ইয়ার।
- হাহাহাহাহাহা
- তুই হাসছিস?আমার শোন তোর কাহিনীটা
বল।শুনি।
- আচ্ছা পরে বলব।একটা কাজ করে নেই।
তারপর বলি।
- তোর আবার কি কাজ?খুন করবি আবার
কাওকে?
- হুম।নোংরা মনুষ্যত্বকে।
- মানে?
- পরে বুঝামু।নাদিয়ার নাম্বার কোনটা?
- নাম্বার দিয়ে কি হবে?
- অনেক কিছুই।
ওর স্মার্টফোনটা আমার হাতে দিলো।কল
লগে যেতেই দেখলাম একটা নাম্বারেই
সবচেয়ে বেশি ফোন দেয়া।নামও নাদিয়া
দেয়া।সেইটা টুকে নিলাম নিজের
স্মার্টফোনে।তারপর রুমের চারপাশের
কারুকার্যের কিছু অসাধারণ ছবি ক্যামেরা
দিয়ে তুলে একটা বিশাল মেসেজ লিখে
নাদিয়ার নাম্বারে পাঠাই উইথ পিক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনে রিং বাজলো যে
মেসেজ সেন্ট।ডেলিভারি রিপোর্ট আরকি।
আরিফ শুধু চেয়ে রইলো।আধাপাগল লাগছে
আরিফকে।
অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে ডাইরেক্ট ফোন দিলো
নাদিয়া।আমার আগে কেও যদি এইরকম ভাবে
আরিফের সাথে মিশতো তাহলে আমার আগে
সেই কাজটি করতে পারতো।চোর ঈমানদার
লোককে কিছু বলেনা।চোর চোরকেই সব বলে।
আমি ফোনটা নিয়ে রুমের বাইরে গেলাম।
নাদিয়ার সাথে কথা বলার পর যা বুঝলাম
মেয়েটা অনেক হার্ট হইছে।আর সে আরিফের
লাইফে আসতে চায়না।অবশেষে দীর্ঘ
একঘন্টা ফোনালাপ সাথে কান্নাকাটি
শোনার পর সব ঠিক হলো।আরিফকে যেয়ে শুধু
বললাম যে নাদিয়া আসতেছে।এখনো এই
অবস্থায় থাকবি?নাকি ফ্রেশ হবি পাগলা?
আরিফের চোখ জলে টলমল।অতঃপর
খালাম্মাকে যেয়ে বললাম ছেলে বিয়ে
করতে চাইছিলো আর আপনারা তাকে এখন
দিবেন নাহ সেজন্যই এমনটা।খালাম্মা
বুঝছিলো আমি কথাগুলো মশকরা করে বলছি।
প্রায় আধাঘন্টা পর নাদিয়া আর তার
ফ্যামিলি মেম্বাররা বাসায় হাজির।একে
অন্যকে দোষারোপ করার শেষে নাদিয়া
প্রায় পঁচিশ বার কানে ধরে উঠবস করায়
আরিফকে।সবার মনে একটু একটু ক্ষোভ
থাকলেও তা এখন সয়ে নেয়া ছাড়া উপায়
নেই।
অতঃপর হঠাৎ আরিফ আমায় বলল,
- ভাই আপনি আসলে কে?
- বুদ্ধিমান বোকা।
- মানে?
- বুঝা লাগবেনা।থিংক করতে থাকো আমি
আসছি।
- এই কোথায় যাস তুই?তোর কোথাও যাওয়া
লাগবেনা।তুই এখানেই থাকবি এদের বিয়ের
আগ পর্যন্ত।
- খালা সম্ভব নাহ।এইমাত্র অফিস থেকে
ফোন এসেছে।কালই জয়েন করতে হবে।
কাজের চাপ অনেক।
- কাজ কর্ম বাদ দে।তোর ভাইয়ের বিয়ে না
হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবিনা।
সবাই খালার কথায় সায় দিলেও আমি যেতে
বাধ্য।আমি কখনো উপকারের বিনিময়ে কিছু
নেইনা।কাজ শেষ নাও গো।অতএব আরিফ
আমাকে চিনামাত্রই জড়িয়ে ধরল।আর
নিজেকে বোকা মনে করে লজ্জা পেলো।
আমি চলে আসলাম তাদের সবার কথার
মাঝেই।ব্যাগের কাপড়চোপড় ব্যাগেই আছে।
সবাই খুব ব্যাস্ত।নাহলে হয়তো খাল
ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে বলে দিতো আমায়
এগিয়ে দিয়ে আসতে।আমি ড্রাইভারকে
নিজে বললেও ড্রাইভার চাচা না করবেনা।
তবুও দরকার কি? একটা রিক্সায় চড়ে নিজের
গন্তব্যের পথে হাটা দিলাম।ফ্রেশ লাগছে
খুব। আধাপাগলের সাথে আরেকটু থাকলে
হয়তো ভালো লাগতো।হয়তো নিজেও
আধাপাগল হয়ে যেতাম।
No comments