Header Ads

কাছে আসার গল্প

এইচএসসি এক্সামের পর লাইফ নিয়ে অনেক ডিপ্রেসড ছিলাম। কি করবো, কোথায় এডমিট হব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ইচ্ছে ছিল ব্রাক এ পড়বো। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় নি। যাই হোক অন্য একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে এডমিট হলাম। ক্লাস শুরু হবে ১ মাস পর। তাই আবার সিলেটে চলে আসলাম। ফেসবুকে ভার্সিটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটা গ্রুপ খুঁজে পাই। আমাদের ব্যাচ গ্রুপ। দেখেই জয়েন রিকুয়েস্ট পাঠাই। একটু পর একসেপ্ট হয় সেই সাথে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসা শুরু করে। যেহেতু সবাই মেট তাই রিকুয়েস্ট গুলো একসেপ্ট করি। হঠাত করে ইনবক্সে টেক্সট আসে,
- এহেম এহেম।
--জি?
- বায়ো পড়ে ভাল্লাগছে। বাট....
-- থ্যাংকস। বাট?
- একটা কোয়েশ্চেন ছিল।
-- জি বলেন।
- আপনি কি ডায়নামাইট ?
-- কিহ!!!
- ডেঞ্জারাস, তারপর শত হাত দূরে থাকুন এইসব সতর্কবাণী দেয়া তো তাই ভাবলাম আপনি কোনো টাইপের বিষ্ফোরক কিনা!
-- না। I am a good girl.
- সিম্পলি এই কথাটা লিখলেই তো কেউ আর ভয় পায় না। আপনার বায়ো পড়ে তো ভয়ই পাইছিলাম।
-- আমি যেমন তেমনটাই তো লিখছি।
- Now um confused. গুড গার্লরা কিভাবে ডেঞ্জারাস হতে পারে!!
-- পারে। গুড গার্লরাই ডেঞ্জারাস হয়।
- দেখা যাক। আপনি যেহেতু আমার মেট, ৪ বছর তো পরেই আছে।
-- আপনিও ৪৪ ব্যাচ?
- জি। আপনাকে তো গ্রুপেই পাইছি।
এইভাবেই পরিচয়পর্বটা শুরু হয় শুভর সাথে। কিন্তু চ্যাট হত না বললেই চলে। আরো দুইটা মেয়ে ফ্রেন্ড পেয়ে সারাদিন ওদের সাথেই চ্যাট করতাম। দেখতে দেখতে এক মাস কেটে যায়। তারপর আসে ভার্সিটিতে রেজিস্ট্রেশন এর দিন। সিএসই বিল্ডিং এর সামনে প্রথমবারের মতো শুভকে দেখি। দেখে তো পুরো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এইটা শুভ!! এমন দানবের মতো কেন! যাই হোক পরিচিত হলাম সবার সাথে। সবাই মিলে সেম সেকশনে রেজিস্ট্রেশনও করলাম। ক্লাস তখনো পুরোপুরিভাবে স্টার্ট হয় নি। আমরা ভার্সিটিতে যেয়ে লাউঞ্জে, সিরিতে, ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতাম। রাইসা আর আমি মিরপুরে থাকতাম। তাই যাওয়া, আসা একসাথে করতাম আর ভার্সিটিতেও সব সময় একসাথে থাকতাম। এই জন্য ফ্রেন্ডসরা আমাদের লেসবো বলে ক্ষেপাতো। কিছুদিন পর সবাই মিলে টিএসসিতে ঘুরতে যাই। ওইখানে ফাইজলামি করে শুভ আমার হাত ধরে। আমার সময়টা যেন থেমে গিয়েছিল ওই মুহূর্তে। সাথে সাথে নিজেকে সামলে নিয়ে রাইসার সাথে হাটতে লাগলাম। বাসায় এসেও মাথায় শুধু শুভর চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। দানব হলেও শুভ অনেক কিউট। কিছুটা বোকা আর অনেক অনেক ভালো। ভালবেসে ফেলি আমি শুভকে। সারাদিন ক্লাসে বসে শুধু শুভকেই দেখতাম। ক্লাসের কেউ অবশ্য সেটা টের পায় না। এমনকি রাইসাও না। একদিন ভার্সিটি থেকে ফিরেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেই, "নিজের ক্রাশকে পাশে রেখে ম্যাম এর লেকচার ফলো করা অসম্ভব"
স্ট্যাটাস দেখে শুভ নক দে আমাকে,
- কিরে ফইন্নি তোর ক্রাশ কেডা?
-- বলবো না।
- দোস্ত! তুই আমারে বলবি না!!
-- ওরেই বলি নাই এখন।
- বল দোস্ত প্লিজ।
-- না, বাদ দে। ওরে আমি পাবো না কখনো আমি জানি।
- আরে বল। নইলে আমি কালই ক্লাসে যেয়ে ঘোষণা করবো।
-- কি ঘোষণা করবি!!
- আমার বোন একটা ছেলের প্রেমে পরেছে। ছেলেটা আমাদের সেকশনেরই। কে সেই দুর্ভাগা!!
-- আচ্ছা করিস।
শুভ আবার অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করতো। সব সময় ওই মেয়ের কথা বলতো। কিভাবে মেয়েটাকে পটানো যায়। প্রপোজ করলে কি রাজি হবে এই সব আস্ক করতো। কলিজা ছিঁড়ে যাওয়া কষ্টটা তখন খুব ভালভাবে ফিল করতাম। হাসিমুখে বলতাম 'প্রপোজ কর দোস্ত, একসেপ্ট করবে।'
এদিকে ভার্সিটির লাস্ট সেমিস্টারের এক বড় ভাই ইনবক্সে নক দিতেন আমাকে। সিনিয়র বলে ব্লক দিতে পারতাম না। শুভ আর রাইসা জানতো ওই ভাইয়ের কথা। একদিন রাতে ওই বড় ভাই আমাকে আস্ক করেন শুভ আমার বয়ফ্রেন্ড কিনা। খুব ইচ্ছে করছিল হ্যা বলে দেই কিন্তু শুভ জানলে কি ভাববে এই ভেবে বলে দেই সে আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। শুভ অনলাইনে আসলে ওকে বড় ভাইয়ের ব্যাপারে জানাই। ও বলে নেক্সট টাইম আর আস্ক করলে ওকে বয়ফ্রেন্ড পরিচয় দিতে। কিছুটা অবাক হই কিন্তু সেই সাথে অনেক ভালোলাগাও কাজ করে। রাতে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেই। শুভ ফার্স্ট কমেন্ট করে "ট্যাগ মি বেবি" সবাই ভাবে আমরা প্রেম করছি। পরে শুভ কমেন্ট ডিলিট করে দেয়। শুভ ক্লাসে আমাকে জান বলে ডাকতো। জানতাম সেটা ফাইজলামি তবুও বুকের বামপাশটায় এসে বিঁধতো ওর জান ডাকটা। শব-ই-বরাতের আগের দিন সবাই আমাকে উপদেশ দেয় নামাজ পড়ে আমার ক্রাশকে চাইতে। একদিন ভার্সিটির অন্য একটা বড় ভাইকে দেখিয়ে শুভকে বললাম আমার উনাকে ভাললাগে। উদ্দেশ্য ছিল শুভর রিএকশন দেখবো। ও কোন রিএক্টই করলো না। উল্টা চেতানোর বলল, "তোর রুচি এতো খারাপ!!" রাগে, জিদে বাসায় ফিরে ওই ভাইয়াকে নক দিলাম। তার সাথে চ্যাট করতে যেয়ে মেজাজ আরও খারাপ হল। শুভর রাগ এসে তার উপর পড়লো।
শব-ই-বরাতের রাতে নামাযে বসে আল্লাহর কাছে শুভকে চাই। আমি খুব ভালো করেই জানতাম আমি শুভকে পাবো না। এই ব্যাপারটা তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল আমাকে। রাতের পর রাত কাঁদতে কাঁদতে পার হয়ে যেত। বার্গারের অফার দেখে সবাই মিলে একদিন বার্গার খেতে যাই। ওইখানে শুভ আমাকে ধরে কয়েকটা পিক তোলে। উদ্দেশ্য ওই বড় ভাইকে দেখাবে যিনি আমাকে এফবিতে জ্বালাইতেন। বাসায় ফিরে পিকগুলা এফবিতে আপলোড দেই। ওই বড় ভাইসহ ক্লাসের সবাই ভাবে আমরা প্রেম করছি। ইনবক্সে প্রশ্নের তুফান শুরু হয়। শুভ বলে দিছিল নাটক চালায় যেতে সবার সাথে। তাই আমিও কাওকে কিছু বলি না।
আস্তে আস্তে শুভর সাথে ফ্রেন্ডশিপটা ডিপ হতে থাকে। আমি তখনো ক্লাসে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখতাম।
ইতিমধ্যে রমজান মাস চলে আসে। প্রথম রমজানে লাস্ট ক্লাসটা ম্যামকে বলে ক্যানসেল করায় শুভ। সবাই মিলে আড্ডা দেই আর ছবি তুলি। শুভ একটা লাল টি-শার্ট পরে আসছিল ওই দিন। লাল টি-শার্টে শুভকে এত্ত সুন্দর লাগছিল যে আমি আড়চোখে বারবার ওকে দেখছিলাম। ও আমার সাথে পিক তুলতে চায় কিন্তু একা ওর সাথে পিক তুলতে পারিনি। আমরা কিন্তু আমাদের নাটক চালিয়ে যেতে থাকি। বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খিদে ভুলে থাকার জন্য এফবি ঘাটতেছিলাম তখন শুভর টেক্সট,
-একটা কথা বলবো।
--বল।
-আমার তোকে ভাললাগে।
--কিহ!!!
-হ্যা।
-- আচ্ছা ইফতারের পর কথা বলবো। আযান হয়ে যাবে।
আমি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একই সাথে ভাললাগা আবার ভয়ও কাজ করছিল। শুভ ফাইজলামি করছে নাতো! কোনমতে ইফতার করে, নামায পড়ে পাগলের মতো এফবিতে আসলাম। এসে দেখি শুভ এফবিতেই আছে। ভয়ে ভয়ে নক দিলাম,
-- তুই কি ফাইজলামি করতেছিস?? সত্যি করে বল তাহলে আমিও তোকে বলবো আমার ক্রাশ এর নাম।
- আমার সত্যিই তোকে ভাললাগে। আর শুন আমার সামনাসামনি বলার সাহস হয়নি। এই জন্যই ফোন দিছিলাম।
-- কখন?
- দুপুরে। তুই ধরস নাই।
-- সাইলেন্ট ছিল। আচ্ছা শুন, আমার ক্রাশের নাম শুভ।
- কোন শুভ?
-- বলদ তুই।
- মিথ্যে বলতেছিস তুই। আমি কিভাবে তোর ক্রাশ হব!!
-- জানি না। বাট আমার তোকে ভাল্লাগে। সারাদিন আমি তোকেই দেখি।
- তুই তো আমার পাশেও বসিস না। দেখিস কিভাবে!!
-- দূরে বসলেও আমি তোকেই দেখি।
- আচ্ছা আমি বলি আমার তোকে ভালো লাগে কেন।
-- কেন?
- কারণ তুই অন্যদের থেকে আলাদা। আর একমাত্র তুইই আমাকে বুঝিস। আর আমার যা মনে হয় এরকম আর কাওকে পাবো না। তুই দেখছিসও আমি সবসময় তোর সাথে থাকি কারণ আমার ভাল্লাগে। বাট তোর ক্ষেত্রে আমি কেন? আমার চেয়ে অনেক বেটার ছেলে আছে ক্লাসে।
-- জানি না কেন বাট আমার তোকেই ভাল্লাগে।
- আচ্ছা যা বিশ্বাস করলাম।
এভাবেই শুরু হয় আমাদের ভালবাসার গল্প। সারাদিন একসাথে ক্লাস, বাসায় ফিরে চ্যাটিং, রাতে ফোনে প্রেম। ভালোবাসাময় দিনগুলো কাটতে লাগলো। ক্লাস আমি কিছুই বুঝি না যতক্ষণ না শুভ বুঝিয়ে দেয়। পাগলের মতো ভালবাসে শুভ আমাকে। দিন দিন আমাকে নিয়ে ওর পাগলামি শুধু বাড়ছে। পারলে আমাকে সারাদিন বাসায় আটকে রাখে যাতে কেউ দেখতে না পারে। মা-বাবার মতো আমাকে আগলে রাখে সবকিছু থেকে। যতক্ষণ বাসার বাইরে থাকি শুভ ছায়ার মতো আমার সাথে সাথে থাকে। জীবনে করা কোন ভালো কাজের জন্য শুভকে পেয়েছি। মরার আগে পর্যন্ত কিছুতেই হারাতে চাই না ওকে।

No comments

Powered by Blogger.