ডায়েরীতে লেখা প্রেমের গল্প
.
:- দোস্ত!
:- কি বল?
:- তুই তো মনে হয় তোর মনের মতো মানুষ পেয়ে গেছিস?
:- মানে?
:- সামনে দেখ!
:- কেন কি হয়েছে?
:- তুই দেখ না, সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে থাকিস কেন?
:- ওকে দেখতেছি।
.
সামনে ফিরতেই দেখি একটা মেয়ে, খুবই সুন্দর, স্টালিশও বলতে হবে।
মেয়েটা যত কাছে আসতেছে ততই যেন সুন্দর লাগছে।
.
মেয়েটা একবারে কাছাকাছি এসে গেছে আমি আরমেয়েটার দিকে তাকিয়ে না থেকে আবার মোবাইলে চোখ লুকালাম।
.
:- ভাইয়া এই ঠিকানাটার বাড়িটা কোথায়?
.
আরে মেয়েটা তো রবিনকে জিজ্ঞেস করছে, আমি হা করে তাকিয়ে আছি।
.
:- এই বাড়িটা আপনার কে থাকে? (রবিন)
:- জ্বি আমার ফুফুদের বাড়ি (মেয়েটা)
:- তুই মিথিলা। (রবিন)
.
রবিনের কথা শুনে তো আরও অবাক হলাম।
.
:- হ্যা, কিন্তু আপনি...?
:- আমি তোর ফুফাতো ভাই রবিন।
:- রবিন ভাইয়া...?
:- হুঁ,
:- কেমন আছো তুমি?
:- ভালো... তোকে দেখেছি এতটুকু আর এখন কত বড় হয়ে গেলি।
:- আমি কি সারাজীবন এতটুকু থাকবো নাকি?
:- আচ্ছা চল বাসায় চল...
:- চলো।
:- দোস্ত তুই থাক আমি ওরে বাসায় দিয়ে আসি।
:- ওকে... তাড়াতাড়ি আছিস.
:- যাবো আর আসবো।
.
মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দর, মনে হয় আমার মনের মানুষ পেয়ে গেছি। এসব ভাবতে ভাবতে রবিন এসে গেল।
.
:- ঐ বেটা কি ভাবতেছিস?
:- মেয়েটা তোর মামাতো বোন হয়?
:- হ, এত্ত বড় হলো কবে, এট্টুক দেখেছি আর এখন?
:- তাহলে কাগজটা দেখে চিনলি কেমনে?
:- চিনবো না আমার মামাই একটা, আর তার দুই সন্তান একটা মিথিলা, আরেকজন মিশু।
:- মামাতো ভাই কি তোর থেকে বড়?
:- হ, আমার থেকেও বড়।
:- তোর মামাতো বোন আগে কোথায় ছিলো।
:- ওরা ওদের বাড়িতেই থাক, আমরা গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসছি, ১৪বছর আগে আসছি আজো দেশের বাড়ি যাইনি।
:- ওহ.
:- কিসে পড়ে জানস?
:- অনার্সে পড়ে হয়ত জানি না শিওর, ওরে যখন দেখছি তখন আমি ক্লাস ফোরে ছিলাম। ফেলটেল মাইরা এখনো ভার্সিটিতে পড়ে আছি দেখস না।
:- বুঝলাম, দোস্ত!
:- ক!
:- মিথিলারে!
:- মিথিলারে কি?
:- ভালো লাগছে।
:- ওরে বাদ দে..!
:- ধুর সালা, তোরে আমার সুমুন্দি বানামু।
:- বাদ ওরে আরেকটা খুঁজবো তোর জন্য।
:- রাখ তোর আরেকটা, আরেকটার কথা কইলে তোরে এখানে খাইরালামু না। সত্যি সত্যি বলতেছি খুব ভালো লাগছে। তুই একটু দেখ প্লিজ।
:- ওকে আমি আগে জেনে নিই সিঙ্গেল কিনা তারপর তোরে কমু।
:- তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করিস দোস্ত.
:- ওকে করমু, কিন্তু হয়ে গেলে আমাকে টিট্র দিতে হবে না হলে তো তোরে আমি খাইরালামু।
:- ওকে দিমু নে... এখন চল তোদের বাসায় যাই।
:- এখন গেলে মিথিলা তোরে পাত্তা দিবে না।
:- কেন দিবে না?
:- আরে বেটা সুন্দরী মেয়েরা একটু ভাব নেয় জানিস না।
:- তাহলে!
:- কালকে বিকালে তোকে আমি ফোন করে আসতে বলবো তখন আছিস।
:- ওকে মামা,
:- কল দিস কিন্তু?
:- আরে দিমু বেটা
.
সেদিন শুধু অপেক্ষায় ছিলাম কখন রবিন আমাকে কল দিবে আর আমি ওদের বাড়ি যাব।
অপেক্ষায় সময়টা অনেক দীর্ঘ হঢ বটে কিন্তু এতটা দীর্ঘ হতে পারে মিথিলার প্রেমে না পড়লে বুঝতে পারতাম না।
সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম আর আজকে মোবাইলও ভালো লাগছে না।
দু’চোখে শুধু মিথিলার মুখটা ভেসে আসছে। একদিনে এই অবস্থা হচ্ছে জানি না পরবর্তিতে কি হবে।
মনে হচ্ছে তো মিথিলাকে ছাড়া আমার চলবেই না। ঘুম আবার নির্ঘুম কোনোভাবে রাতটা কাটালাম। কিন্তু অপেক্ষার সময়টা যে যাচ্ছে না।
অতঃপর তিনটার দিকে রবিনের কল আসে...
.
:- ঐ সালা তোর এখন কল দেয়ার সময়, কতক্ষণ হয়ে গেছে।
:- তাড়াতাড়ি আয় বেটা প্যাচাল পারিস না।
:- আসতেছি!
.
রবিনের বাসায় গিয়ে বেলে চাপ দিলাম কিন্তু দরজা খুলতেছে না।
.
:- মিথিলা দেখতো কে আসছে? (রবিন)
:- আচ্ছা। (মিথিলা)
.
OMG মিথিলা দরজা খুলে দিলো...
.
:- রবিন আছে? (আমি)
:- হুম আছে, আপনি? (মিথিলা)
:- আমি রবিনের ফ্রেন্ড, আরিয়ান,
:- ওহ, ভাইয়া তোমার ফ্রেন্ড আসছে।
:- ভেতরে আসতে দে... (রবিন)
:- আসেন, (মিথিলা)
.
ইচ্ছে করতেছে নাচতে... মিথিলা একবারে আমার সামনে আমি আর রবিন একসাথে।
ওরা টিভি দেখতে ছিলো, ওরা দেখে টিভি আমি দেখি মিথিলাকে, কিন্তু আফসোস কিছুক্ষণ পর আমার এমন তাকানো দেখে মিথিলা উঠে চলে গেল।
.
:- ঐ বেটা চলে গেল তো.. (আমি)
:- তুই এভাবে ভেট ভেট করে তাকিয়ে থাকলে যাবে না তো এখানে থেকে তোকে ফ্যাশন সো দেখাবে।।
:- দোস্ত রাগ করতেছিস কেন, ওরে ডাক না।
:- কেন?
:- ধুর বেটা আমি এখানে আসছি কেন? ওর দেখতেই তো আসছি?
:- কিন্তু কি বলে ডাকবো।
:- আমাদের চা দিতে বলবি।
:- তোর মাথা ঠিক আছে? আমাদের বাসায় আসছে বেড়াতে আমি ওরে বলবো চা বানাতে, আর তুই তো চা খাস না তাহলে চায়ের কথা কেমনে কমু।
:- তাও তো কথা।
:- আরে আরিয়ান ভাইয়া কখন আসছো। (আফরিন)
:- এই তো কিছুক্ষণ হলো.
:- তোমরা বসো আমি চা বানিয়ে আনছি..
:- আমি তো চা খাই না, রবিনের জন্য আনো।
:- আচ্ছা আরিয়ান ভাইয়া তুমি চা কেন খাও না, কালো হয়ে যাবে বলে।
:- হা হা, আরে না এমনিতে আমার ভালো লাগে না।
:- তাহলে তোমার জন্য কপি বানিয়ে আনি।
:- ঠিক আছে আনো।
.
:- কি আপু তুমি এখানে কেন বসে আছো...? টিভির রুমে যাও টিভি দেখো। (আফরিন)
:- ধুর, তোমার ভাইয়ার বন্ধুটা হা করে তাকিয়ে থাকে শুধু ভালো লাগে না।
:- ওহ, বুঝচ্ছি আরিয়ান ভাইয়ার তোমাকে লাগছে।
:- আমারে লাগছে মানে..?
:- মানে হচ্ছে.. আরিয়ান ভাইয়া তোমার প্রেমে পড়ছে।
:- বললে হলো, চিনি না জানি না প্রেমে পড়ছে।
:- আচ্ছা চলো, ভাইয়ার জন্য চা আর আরিয়ান ভাইয়ার জন্য কপি বানাই।
:- ওরে তুমি কপি দিবা আর তোমার ভাইরে চা..
:- হুম, আরিয়ান ভাইয়া তো চা খায় না তাই কপি।
:- এসব ছেলেদের স্টাইল দেখে বাঁচি না।
:- আচ্ছা চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে তো,
:- তুমি যাও আমি পারবো না।
:- আরে আসো তো... প্রেমেই তো পড়ছে বিয়ে তো করছে না।
:- ধুর তুমিও না ছাড়বে না।
.
:- ঐ বেটা মিথিলা তো আসে না, আমার তো ভালো লাগে না।(আমি)
:- তুই তো দেখতেছি পুরা মজনু হয়ে গেছিস।
:- তাই তো মনে হচ্ছে।
:- মরবি তুই দিনে এতোটা কয়েকদিনে তো তুই রাস্তায় ঘুরবি।
:- রাস্তায় কেন ঘুরবো?
:- লাইলের প্রেমে পাগল হইয়া তুমি মজনু রাস্তায় ঘুরিবা।
:- কয় কি?।
:- ঠিকই কই।
.
:- তোমার ফোন বাজে (মিথিলা)
:- তুমি কপিতে হালকা চিনি দিও.. (আফরিন)
:- ঠিক আছে?
.
.
:- দিয়েছো? (আফরিন)
:- হুম...
:- ওকে.. চলো।
:- তুমি যাও,,, আমি যাবো না।
:- আরে চলো তো...
.
:- চা এসে গেছে.. এই নাও আরিয়ান ভাইয়ার কপি, আর নাও ভাইয়া তোমার চা। (আফরিন)
:- থ্যাংকইউ... (আমি)
.
কপিটা এমন কেন? মনে হচ্ছে চিনির বদলে লবণ দিয়েছে
.
:- আচ্ছা আফরিন কপিটা কে বানিয়েছে? তুমি! (আমি)
:- হুম, আমি বানিয়েছি, চিনিটা শুধু মিথিলা আপু দিয়েছে, কেন ভালো হয়নি? (আফরিন)
:- না না খুব ভালো হয়েছে? চিনিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে, যার জন্য খেতে পারছি না।
:- আমি বলেছিলাম হালকা দিতে কিন্তু মিথিলা আপু তো...
:- না ঠিক আছে হয়ত শুনতে পায়নি।
.
মিথিলা কেমন আড়চোখ কর তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমাকে আস্ত গিলে ফেলবে।
.
:- ঐ চল যাই।
:- কপিটা পুরা তো খা.. (রবিন)
:- না আর খামু না বেশি মিষ্টি, ডায়াবেটিস হলে মরতে হবে।
:- আমার চা তো খেয়ে নিই।
:- ওকে খা...
:- চল...
:- আয় আমি বাইরে আছি?
.
:- কিরে আমাদের বাসায় থেকে যেতে ইচ্ছে করছে নাকি?
:- রাখ তোর থাকা, কপিতে চায়ের বদলে লবণ দিছে মিথিলা।
:- বলিস কি?
:- মিথ্যা কই নাকি?
:- সমস্যা নাই দোস্ত সবার ভালোবাসা শুরু হয় মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে তোর ভালোবাসা শুরু হবে লবণাক্ত কপি দিয়ে.
:- মজা লস, ল ল তোরই তো সময়।
:- আচ্ছা বাদ দে আর মজা লমু না, কই যাবি বল?
:- কোথাও যামু না, বাসায় গিয়া টিভি দেখবো।
:- আচ্ছা তাহলে পরে কথা হবে।
:- ওকে...!
.
বাড়ি চলে আসলাম, মেয়েটা দুষ্টামি করে কপিতে লবণ দিলো নাকি শত্রুতামি করে কিছুআ বুঝলাম না।
.
:- মিথিলা! (রবিন)
:- বলো ভাইয়া। (মিথিলা)
:- তুই আরিয়ানের কপিতে চিনির বদলে লবণ দিয়েছিলি?
:- না মানে... ভুলে দিয়ে দিছি, কিন্তু উনি তো বললেন কপি খুব মিষ্টি।
:- বলেছে কপিটা আফরিন বানিয়েছে তাই... আফরিনকে লজ্জা দিতে চায়নি।
:- বাহ্ বাহ্... মানুষকে লজ্জা দেন না উনি।
:- আচ্ছা যা...!
:- ঠিক আছে!
.
মিথিলা অাফরিনের রুমে গিয়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করে ফেলতেছে।
.
:- এতো হাসো কেন? (আফরিন)
:- বলছি.. হা হা হা.. তোমার ভাইয়ের বন্ধু আছে না?
:- হুম,
:- ওর কপিতে হা হা হা হা
:- আরে ধ্যাত হাসি থামাও তো!
:- আচ্ছা দাড়াও থামাচ্ছি. হুম। এবার বলি.. ওনার কপিতে আমি চিনির বদলে লবণ দিয়েছিলাম, আর ঐ বেটা বলে কি কপি নাকি অনেক মিষ্টি। হা হা হা
:- আল্লাহ্! তুমি এমনটা করলে, এখন আরিয়ান ভাইয়া আমাকে বাজে ভাববে।
:- আরে শুনো না, এরপর রবিন ভাইয়াকে বলে কি, তুমি লজ্জা পাবে বলে কিছু বলেনি তোমার সামনে।
:- আমি জানি তো উনি খুব ভালো।
:- ইসসস্ খুব ভালো!
:- তো কি? আরিয়ান ভাইয়াকে তুমি তাহলে চিনোই না খুব ভালো।
:- অ্যা খুব ভালো একবারে দোয়া তুলসী পাতা, আর তাই আমার দিকে বেট বেট করে তাকিয়ে থাকে।
:- আরে সেটা তো তোমাকে সামথিং সামথিং বুঝো না।
:- ঝাড়ু দিয়া পিটামু যদি বলে কিছু....
:- তোমায় ভালোবাসে আর তুমি ঝাড়ু দিয়া পিটাবে?
:- তো কি করবো ওরে কি আদর করবো নাকি?
:- তা তো করবেই বিয়ের পর।
:- ওরে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
:- আরিয়ান ভাইয়ার মতো বর পেলে তুমি লাকি হবে।
:- হতে চাই না এমন লাকি?
:- তাহলে রাস্তার একটা পাগলের বউ হও গিয়া।
:- তাই হবো... তবও ওর হবো না।
:- হুঁ
.
আমি তো রীতিমত রবিনকে প্যারা দিয়েই চলেছি, যেভাবেই হোক ও যেন মিথিলার সাথে আমার কথা বলিয়ে দিতে পারে।দিনও যাচ্ছে মিথিলার বাড়ি যাওয়ার কথাও উঠে মাঝে মাঝে কিন্তু আফরিন দেয় না যেতে আর একদিক দিয়ে রবিন হারামী তো আমারে পাত্তাই দিতে চাচ্ছে না। অবশেষে অনেক কষ্টে রাজি করালাম যাতে মিথিলাকে বলে আমার সাথে একটু কথা বলে।
.
:- মিথিলা শুন তো? (রবিন)
:- হুম, বলো (মিথিলা)
:- আমার বন্ধুকে চিনো আরিয়ান!
:- হুম!
:- আফরিন ওর কথা তো তোমায় বলেছে নিশ্চয়,
:- হুম বলেছে! কিন্তু ভাইয়া... (কথা শেষ না হতেই)
:- ফ্রেন্ড হিসেবে আরিয়ানকে আমার থেকে বেশি কেউই চিনে না। দেখতে যেমন সুন্দর স্মার্ট তেমনি অনেক ভদ্রও, ও যদি কোনো মেয়ের দিকে ভালোবাসার নজরে প্রথম তাকিয়ে থাকে আমি সিওর প্রথম তোর দিকেই তাকিয়েছে। তোকে দেখার পর থেকে আমার মাথার পোকা খুলে ফেলেছে শুধু তোকে ভালোবাসে কথাটা বলতে।
ওকে ভালোবাসলে ঠিকবি না, এই গ্যারান্টি দিতে পারি।
আজকে বিকালে ও তোর সাথে আলাদা একটু কথা বলবে কিছু বলার থাকলে ওকে বলিস।
.
:- হ্যালো, (আরিয়ান)
:- আজকে বিকালে আমাদের বাড়ি আসিস।
:- বলেছিস তো?
:- হুম বলেছি, আমার সামনেই আছে।
:- ফোনটা দিবি একটু কথা বলতাম।
:- না, বিকালে এসে বলিস।
:- ওর দোস্ত,,,,
.
তারপর বিকাল বেলায় রেডি হয়েই রবিনদের বাসায় হাজির হলাম।
কলিং বেলে চাপঃ-
.
:- কোথায়? (আমি)
:- ছাদে আছে যা! (রবিন)
:- ওকে, থ্যাংকইউ দোস্ত।
.
নাচতে নাচতে ছাদে উঠলাম, ছাদের এককোণে দাড়িয়ে আছে মিথিলা, অনেক বাতাস মিথিলা বাতাসের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে বাতাসকে অনুভব করছে। আমি ওর একটু কাছে গিয়ে গলা দিয়ে শব্দ করতেই আমার দিকে তাকালো।
মিথিলার মুখে বিষন্নতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম কেমন জানি মুখটা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, তারপরও সব কিছুর মাঝে জিজ্ঞেস করলাম...
.
:- কেমন আছো? (আমি)
:- ভালো!
.
পাল্টা কোনো প্রশ্ন না পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম, একটু পর মিথিলা বললো।
.
:- আমি যখন থাকবো না, তখন আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবেন? (মিথিলা)
.
কথাটা শুনে একটু অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখের কোণে জল রাশির আনাঘোনা দেখা যাচ্ছে। উত্তর দেয়ার আগেই মিথিলা আবার বললো।
.
:- একা থাকার অভ্যাস আছে তো?
.
ওর এমন প্রশ্ন শুনে সত্যি অবাক হচ্ছি অামি।
.
আমার ব্রেন টিউমার, হয়ত বেশিদিন আর বাঁচবো না। যতদিন বাঁচি আমি একাই বাঁচতে চাই, আমার জীবনে কাউকে জায়গা দিয়ে তার জীবনে আধার নামিয়ে দিতে আমি চাই না।
আমি জানি আপনি অনেক ভালো ছেলে, আপনার প্রথম ভালোবাসা আমি, কোনো ছেলে যখন কোনো মেয়েকে প্রথম ভালোবাসে সে তার হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে।
কিন্তু আমার কপালে যে এমন ভালোবাসা নেই। আমি চাইনা আমাকে ভালোবেসে আপনি আমাকে হারানোর পর কষ্ট পান।
আমাকে ভুলে যান প্লিজ।
.
মিথিলা কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেল, বুঝতে পারছিলাম না আমি কি করবো। জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছি আর তারই এমনটা হতে হলো।
.
:- এই আম্মু তুমি কাঁদছো কেন? (আমি)
.
আমার মেয়ে নীলান্তি আমাকে আমার ডায়রীটা দেখিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
.
:- তুমি মাকে এতো ভালোবাসো।
:- তুমি কান্না থামাও, তোমার আম্মর থেকে আমার নীলান্তি আম্মুটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
.
মিথিলার অনিচ্ছা শর্তেও আমি মিথিলাকে বিয়ে করি, বিয়ের পরই অস্ট্রেলিয়াতে ওর ব্রেন টিউমারটার অপারেশন করাই।
সে চায়নি অপারেশন করাতে তাতেও আমি জোর করে বলেছিলাম, ‘‘ভাগ্যের উপর আমি বসে থাকি না, বিনা চিকিৎসায় আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। তখন কষ্টটা আমার বেশি হবে বিনায় চিকিৎসায় আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি, কিন্তু চিকিৎসার পর যদি হারাই তখন হয়ত নিজেকে সান্তনা দিতে পারবো, যুদ্ধ করেও ভালোবাসাকে বাঁচাতে পারিনি’’
.
তখন মিথিলা আর কোনো কিছু বলতে পারেনি। এখন মিথিলা আমাদের নীলান্তি রাজকন্যার আম্মু। আমি হারাইনি আমার ভালোবাসাকে, ভালোবেসেছি নতুন করে মিথিলাকে, সেই সাথে আমাদের রাজকন্যা নীলান্তিকেও।
No comments