কখনো ফিরে এসো না
খুব সাধারন একটা পরিবারের সব থেকে আদরের একটা মেয়ে সে ।
বেশির ভাগ সময়ে বই পড়ে কেটে যায় তার সময়,
প্রচন্ড শান্ত, কারো দিকে চোখ তুলে কথা বলেনা তেমন।
ভীষণ লাজুক ।।
মেয়েটা কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে আসে ।
এরই মধ্যে সবাই খেয়াল করে ক্লাসের একটা মেয়ে খুব চুপচাপ থাকে সারাক্ষণ।
কারো সাথে কথা বলেনা ।
মেয়েটার কে ?
কেনো এমন একা থাকে ??
মেয়েটার নাম “ রুপকথা “
সে দেখতে অসম্ভব সুন্দরী তাই তার বাবা নাম রেখেছে রুপকথা ।
গ্রাম থেকে এসেছে , তাই নিজেকে ওভাবে মেলে ধরতে একটা সংকোচ বোধ হয় ।
চুপচাপ থাকে সারাক্ষন ।
শহরের ঝাজালো পরিবেশ তার একদম পছন্দ না ।
মাঝে মাঝে মনে হয় ফিরে যেতে সেই মায়াভরা গ্রামে।
বাবাকে খুব মিস করে ।
তাঁর মা মারা গেছে অনেক আগেই ,
বাবাই তার মা , বাবাই তার বাবা ।
বাবার কথার অভাধ্য হয়না কখনই।
সে জানে বাবা সব সময় তার ভালোটাই চাইবে ।।
দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েক মাস।
রুপকথার অনেক বন্ধু হয়েছে ।
এর মাঝে একজন আছে , যে কিনা রুপকথাকে একটু অন্য চোখে দেখে ।।
রুপকথা বুঝেও না বোঝার ভান করে ।।
তবু কেনো জানি ছেলেটা রুপকথাকে সব সময় হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করে।
একদম অন্য রকম ছেলেটা ।।
বাবা যেভাবে কেয়ার করে , ঐ ছেলেটার মাঝেও তেমন একটা আভাস পায়।
ছেলেটার নাম রিয়াজুল
ছেলেটা টুংটাং শব্দে গিটার বাজায় ,
আর কবিতা-গল্প লিখে শোনায় বন্ধুদের ।
বন্ধুমহলে সে একজন কবি ।
রুপকথারও বেশ ভাল লাগে তাকে ।
মেয়েরা সাধারণত বাবার মত গুন সম্পূর্ণ ছেলেদের বেশি পছন্দ করে ।।
সেদিন আকাশে ইয়া বড় চাঁদ উঠেছিল,
রুপকথা ফোন করে রিয়াজুলকে-
জ্যোৎস্না রাত তার খুব পছন্দের।
একদিন যেনো তাকে কবিতা শোনায় জ্যোৎস্না রাতে একসাথে বারান্ধায় দাঁড়িয়ে ।
এই বলে লাজুক হাসি।
ছেলেটা বোকা ।
তার হাসি শুনে সেও হাসে কিন্তু কেনো এই হাসি তা তার মাথায় ঢুকলো না ।
এভাবে চলতে থাকে তাদের কয়েক মাস ।
ভালোলাগা আর ভালোবাসার ঠিক মাঝামাঝি সময়টাকে মানুষ কি বলে তা আমার জানা নেই ।
তবে এতটুকু জানি পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র একটা সময় এটা ।
গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে দুজনের অবাধ্য চোখের বিনিময় ।
স্পর্শের খুব কাছাকাছি থেকেও হাত না ধরে ক্লান্তিহীনভাবে হেটে যাওয়া দুজনের ।
নিস্পাপ মুখাটার দিকে তাকিয়ে অজান্তেই হেসে ফেলে দুজন ।
আর যায় হোক এই সময়ের মত ভাল লাগার সময় আর একটাও হয়না ।।
হতে পারেনা ।।
রুপকথা তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রায় প্রতিদিনই বিয়ের জন্য বাড়িতে পাত্রপক্ষের খবর আসে ।
একদিন ভাল একটা ছেলের প্রস্তাব আসে। ছেলেটা সফট্যায়ার ইঞ্জিনিয়ার,
বিজনেসও আছে । বেশ ভাল আর বড় ঘরের ।
ওতটা সচ্ছল ছিল না রুপকথার বাবা তাই বাবা একদিন বিয়েটা ঠিক করেই ফেলে।
এই খবরটা পাওয়ার পর রুপকথার মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল প্রথমবার ।
এই খবরটা পাওয়ার কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছিল এই প্রথমবার।
এই খবরটা পাওয়ার পরই কাউকে নিয়ে অজানা একটা রাজ্যে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল।।
সেদিন থেকে রুপকথা আবার একটা শূন্যতা উপল্ভধি করতে থাকে ।।
কিসের জন্যে এই শূন্যতা সে নিজেও জানেনা ।
কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতেই হবে তাহলে কেনো এমন হচ্ছে !!
কাউকে প্রচন্ডভাবে মিস করছে ।
কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না ।
মানুষের এমন কিছু সময় আসে যখন সে শুধু কষ্টটা উপলব্ধিই করতে পারে , কাউকে বলতে পারেনা ।
এমনকি খুব কাছের কাউকেও না ।।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে পানি এসে পড়েছে রুপকথার ।
এই প্রথম সে উপল্ভধি করে কি জানি একটা হারিয়ে ফেলছে জীবন থেকে ।
সে আবার কাঁদে ।।
ডিসিসন নেয় রিয়াজুলকে সে বলবে ।।
কিন্তু কি বলবে জানেনা ।
বলার মত ভাষা তার জানা নেই ।।
তবে এই প্রথম বুঝতে পারে সে প্রচন্ডভাবে ভালবাসে তাকে ।
ফোনটা হাতে নেয়-
অঝরে কাঁদতে থাকে মেয়েটা-
নাহ ফোন দিতে পারেনি সে ।।
এতো কাছাকাছি আসার পরেও কাউকে ভালবাসার কথা বলতে না পারার আক্ষেপটা রয়েই গেল ।।
কিছু কিছু মানুষের জীবনে এমনটা হয় ।।
কেনো হয় , কিসের জন্যে হয় সে নিজেও জানেনা ।।
পরের দিন কাউকে কিছু না বলেই বাড়িতে চলে যায় ।।
সামনের শুক্রবার তার বিয়ে ।।
ভাবতে অবাক লাগছে , এত দ্রুত এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি ।।
এর মাঝে সে কারো সাথে কন্ট্রাক করেনি ।
বন্ধুরা অনেক বার ফোন দিয়েছে তাও ধরেনি ।
এর মাঝে-
১৫৬ বার মোবাইলে কল এসেছে একটা নাম্বার থেকে ।
হুম নাম্বারটা রিয়াজুল এর ।।
এখনো মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে ।।
যার নাম্বার দেখে এতোদিন মুখে এক চিলতে হাসি এসে যেতো তার ফোন আজ কেনো জানি ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে না ।
তাকে বলার মত কিছু যেন খুজে পাচ্ছেনা রুপকথা আজ ।।
সে জানে বাঘ যেমন তার শিকার খোঁজে তেমনি রিয়াজুলও রুপকথাকে হন্য হয়ে খুঁজছে ।
কিন্তু রুপকথা কেনো জানি চুপ করে আছে ।।
আজকে রুপকথার বিয়ে ।।
নতুন বউ সেজেছে সে ।
এই মুহূর্তে তার পেছনের ফেলে আসা সৃতিগুলো ভীষণ মনে পড়ছে ।।
ভীষণভাবে কষ্ট হচ্ছে ।
দিন শেষে বাসর ঘরে বসে আছে সে-
রুমটা বেশ সুন্দর, অনেক বড়
সাথে দখিনা বারান্ধা আছে ।
জানালা আছে ।
তবু সেটা নিজের ঘর মনে করতে পারছে না রুপকথা ।
দম বন্ধ হয়ে আসছে তার এই ঘরে।
পাঞ্জাবী পরে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো ।
কথা শুরু করলো লোকটা ।
রুপকথার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা ।।
লোকটা কিছুক্ষন একা একা কথা বলতে থাকলো ।
এ ব্যাপারে রুপকথা কোন আগ্রহ দেখালো না ।
লোকটা বলল , চাইলে বারান্দায় গিয়ে দেখতে পারো ।
বাহিরে বড় একটা চাঁদ উঠেছে ।
তোমার ভালো লাগবে হয়তো ।।
রুপকথা জ্যোৎস্না রাত খুব পছন্দ করে ।
লোকটার কাছাকাছি থাকতে একদম ইচ্ছে করছিল না
এই জন্যে রুপকথা রুম থেকে বের হয়ে বারান্ধায় আসে ।
আহ থালার মত চাঁদটা যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
চারিদিকে স্পষ্ট দিনের আলোর মত দেখা যাচ্ছে ।
ঠিক এই দিনে কারো কবিতা শুনতে চেয়েছিল রুপকথা ।
কিন্তু কিছুই হলোনা ।
অনেকক্ষণ পার হলো একা একা দাঁড়িয়ে আছে ।
একটা লোক ঘরে একা একা বসে আছে তার জন্যে তার ছিটে ফোটা চিন্তা নেয় ।
সে চাঁদের জ্যোৎস্নাটা উপভোগ করছে দারুনভাবে ।
অনেক কষ্টের পর এক ফোটা সুখ অনুভব হচ্ছে তখন ।
জোস্নার আলো তার হায়ে এসে লাগছে ।
পরনের লাল বেনারসী ঝিকমিক করছে ।
হঠাৎ সে ভাবে আচ্ছা চাঁদের আলোটা আমাদের ঘরে কেনো যায়না জানালা দিয়ে ।
তাহলে ঘরে বসেই চাঁদের আলো গায়ে মাখতাম ।।
আবার কিছুক্ষন পরে ভাবে -
আচ্ছা উনি বা কেমন মানুষ , একা একা নিজের বউকে রেখে ঘরে কি করে উনি !!
কিছুক্ষণ পরে সে খেয়াল করে নিজের অজান্তেই অপরিচিত ঘরটা তাদের হয়ে হয়ে গেছে ।
একটু আগের অচেনা ঘরটা এখন “আমাদের” ঘর বলে সম্বোধন করছে সে ।
আজব ব্যাপার যার এই বিয়েতে এক ফোটা ইচ্ছে ছিলনা আজ সেই মেয়েই নিজের অজান্তেই নিজেকে কারো বউ হিসাবে সম্বোধনও করে ফেললো ।।
কিছুখন আগেই তো সে মনে মনে এটাই ভাবছিল
“ একা একা নিজের বউকে রেখে ঘরে কি করে উনি “
বাহ একটু আগের অপরিচিত একটা লোক এখন “উনি”
হয়ে গেছে ।
রুপকথাও নিজেকে তার বউ মনে করে একটা নিঃসঙ্গতা ফিল করছে ।
একটু আগের দম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘরটাও এখন “ আমাদের ঘর “ ভাবতে শুরু করেছে ।।
অদ্ভুত এই পরিবর্তনটা কেনো হলো জানা নেই রুপকথার
এমন সময় পেছন থেকে কে জানি এসে আলতো করে জড়িয়ে ধরে তাকে।।
সে বুঝতে পারে ইনি সেই- যার সাথে এখন থেকে জ্যোৎস্না দেখে যাবে অনন্ত কাল ।।
“ কবিতা না শোনাক , সাহস করে পেছন থেকে জড়িয়ে তো ধরবে, অন্তত একা একা আর জ্যোৎস্না দেখতে হবেনা "
" অন্তত আজ থেকে আর ভাবতে হবেনা ওটা শুধু ঐ লোকটার ঘর,
এখন থেকে সেটা " আমাদের ঘর " হয়ে গেছে ।।
আজীবনের জন্যে আমাদের হয়ে গেছে "
বেশির ভাগ সময়ে বই পড়ে কেটে যায় তার সময়,
প্রচন্ড শান্ত, কারো দিকে চোখ তুলে কথা বলেনা তেমন।
ভীষণ লাজুক ।।
মেয়েটা কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে আসে ।
এরই মধ্যে সবাই খেয়াল করে ক্লাসের একটা মেয়ে খুব চুপচাপ থাকে সারাক্ষণ।
কারো সাথে কথা বলেনা ।
মেয়েটার কে ?
কেনো এমন একা থাকে ??
মেয়েটার নাম “ রুপকথা “
সে দেখতে অসম্ভব সুন্দরী তাই তার বাবা নাম রেখেছে রুপকথা ।
গ্রাম থেকে এসেছে , তাই নিজেকে ওভাবে মেলে ধরতে একটা সংকোচ বোধ হয় ।
চুপচাপ থাকে সারাক্ষন ।
শহরের ঝাজালো পরিবেশ তার একদম পছন্দ না ।
মাঝে মাঝে মনে হয় ফিরে যেতে সেই মায়াভরা গ্রামে।
বাবাকে খুব মিস করে ।
তাঁর মা মারা গেছে অনেক আগেই ,
বাবাই তার মা , বাবাই তার বাবা ।
বাবার কথার অভাধ্য হয়না কখনই।
সে জানে বাবা সব সময় তার ভালোটাই চাইবে ।।
দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েক মাস।
রুপকথার অনেক বন্ধু হয়েছে ।
এর মাঝে একজন আছে , যে কিনা রুপকথাকে একটু অন্য চোখে দেখে ।।
রুপকথা বুঝেও না বোঝার ভান করে ।।
তবু কেনো জানি ছেলেটা রুপকথাকে সব সময় হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করে।
একদম অন্য রকম ছেলেটা ।।
বাবা যেভাবে কেয়ার করে , ঐ ছেলেটার মাঝেও তেমন একটা আভাস পায়।
ছেলেটার নাম রিয়াজুল
ছেলেটা টুংটাং শব্দে গিটার বাজায় ,
আর কবিতা-গল্প লিখে শোনায় বন্ধুদের ।
বন্ধুমহলে সে একজন কবি ।
রুপকথারও বেশ ভাল লাগে তাকে ।
মেয়েরা সাধারণত বাবার মত গুন সম্পূর্ণ ছেলেদের বেশি পছন্দ করে ।।
সেদিন আকাশে ইয়া বড় চাঁদ উঠেছিল,
রুপকথা ফোন করে রিয়াজুলকে-
জ্যোৎস্না রাত তার খুব পছন্দের।
একদিন যেনো তাকে কবিতা শোনায় জ্যোৎস্না রাতে একসাথে বারান্ধায় দাঁড়িয়ে ।
এই বলে লাজুক হাসি।
ছেলেটা বোকা ।
তার হাসি শুনে সেও হাসে কিন্তু কেনো এই হাসি তা তার মাথায় ঢুকলো না ।
এভাবে চলতে থাকে তাদের কয়েক মাস ।
ভালোলাগা আর ভালোবাসার ঠিক মাঝামাঝি সময়টাকে মানুষ কি বলে তা আমার জানা নেই ।
তবে এতটুকু জানি পৃথিবীর সব থেকে পবিত্র একটা সময় এটা ।
গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে দুজনের অবাধ্য চোখের বিনিময় ।
স্পর্শের খুব কাছাকাছি থেকেও হাত না ধরে ক্লান্তিহীনভাবে হেটে যাওয়া দুজনের ।
নিস্পাপ মুখাটার দিকে তাকিয়ে অজান্তেই হেসে ফেলে দুজন ।
আর যায় হোক এই সময়ের মত ভাল লাগার সময় আর একটাও হয়না ।।
হতে পারেনা ।।
রুপকথা তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
প্রায় প্রতিদিনই বিয়ের জন্য বাড়িতে পাত্রপক্ষের খবর আসে ।
একদিন ভাল একটা ছেলের প্রস্তাব আসে। ছেলেটা সফট্যায়ার ইঞ্জিনিয়ার,
বিজনেসও আছে । বেশ ভাল আর বড় ঘরের ।
ওতটা সচ্ছল ছিল না রুপকথার বাবা তাই বাবা একদিন বিয়েটা ঠিক করেই ফেলে।
এই খবরটা পাওয়ার পর রুপকথার মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল প্রথমবার ।
এই খবরটা পাওয়ার কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছিল এই প্রথমবার।
এই খবরটা পাওয়ার পরই কাউকে নিয়ে অজানা একটা রাজ্যে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল।।
সেদিন থেকে রুপকথা আবার একটা শূন্যতা উপল্ভধি করতে থাকে ।।
কিসের জন্যে এই শূন্যতা সে নিজেও জানেনা ।
কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতেই হবে তাহলে কেনো এমন হচ্ছে !!
কাউকে প্রচন্ডভাবে মিস করছে ।
কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না ।
মানুষের এমন কিছু সময় আসে যখন সে শুধু কষ্টটা উপলব্ধিই করতে পারে , কাউকে বলতে পারেনা ।
এমনকি খুব কাছের কাউকেও না ।।
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে পানি এসে পড়েছে রুপকথার ।
এই প্রথম সে উপল্ভধি করে কি জানি একটা হারিয়ে ফেলছে জীবন থেকে ।
সে আবার কাঁদে ।।
ডিসিসন নেয় রিয়াজুলকে সে বলবে ।।
কিন্তু কি বলবে জানেনা ।
বলার মত ভাষা তার জানা নেই ।।
তবে এই প্রথম বুঝতে পারে সে প্রচন্ডভাবে ভালবাসে তাকে ।
ফোনটা হাতে নেয়-
অঝরে কাঁদতে থাকে মেয়েটা-
নাহ ফোন দিতে পারেনি সে ।।
এতো কাছাকাছি আসার পরেও কাউকে ভালবাসার কথা বলতে না পারার আক্ষেপটা রয়েই গেল ।।
কিছু কিছু মানুষের জীবনে এমনটা হয় ।।
কেনো হয় , কিসের জন্যে হয় সে নিজেও জানেনা ।।
পরের দিন কাউকে কিছু না বলেই বাড়িতে চলে যায় ।।
সামনের শুক্রবার তার বিয়ে ।।
ভাবতে অবাক লাগছে , এত দ্রুত এমন কিছু হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারেনি ।।
এর মাঝে সে কারো সাথে কন্ট্রাক করেনি ।
বন্ধুরা অনেক বার ফোন দিয়েছে তাও ধরেনি ।
এর মাঝে-
১৫৬ বার মোবাইলে কল এসেছে একটা নাম্বার থেকে ।
হুম নাম্বারটা রিয়াজুল এর ।।
এখনো মোবাইলটা ভাইব্রেট করছে ।।
যার নাম্বার দেখে এতোদিন মুখে এক চিলতে হাসি এসে যেতো তার ফোন আজ কেনো জানি ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে না ।
তাকে বলার মত কিছু যেন খুজে পাচ্ছেনা রুপকথা আজ ।।
সে জানে বাঘ যেমন তার শিকার খোঁজে তেমনি রিয়াজুলও রুপকথাকে হন্য হয়ে খুঁজছে ।
কিন্তু রুপকথা কেনো জানি চুপ করে আছে ।।
আজকে রুপকথার বিয়ে ।।
নতুন বউ সেজেছে সে ।
এই মুহূর্তে তার পেছনের ফেলে আসা সৃতিগুলো ভীষণ মনে পড়ছে ।।
ভীষণভাবে কষ্ট হচ্ছে ।
দিন শেষে বাসর ঘরে বসে আছে সে-
রুমটা বেশ সুন্দর, অনেক বড়
সাথে দখিনা বারান্ধা আছে ।
জানালা আছে ।
তবু সেটা নিজের ঘর মনে করতে পারছে না রুপকথা ।
দম বন্ধ হয়ে আসছে তার এই ঘরে।
পাঞ্জাবী পরে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো ।
কথা শুরু করলো লোকটা ।
রুপকথার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা ।।
লোকটা কিছুক্ষন একা একা কথা বলতে থাকলো ।
এ ব্যাপারে রুপকথা কোন আগ্রহ দেখালো না ।
লোকটা বলল , চাইলে বারান্দায় গিয়ে দেখতে পারো ।
বাহিরে বড় একটা চাঁদ উঠেছে ।
তোমার ভালো লাগবে হয়তো ।।
রুপকথা জ্যোৎস্না রাত খুব পছন্দ করে ।
লোকটার কাছাকাছি থাকতে একদম ইচ্ছে করছিল না
এই জন্যে রুপকথা রুম থেকে বের হয়ে বারান্ধায় আসে ।
আহ থালার মত চাঁদটা যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
চারিদিকে স্পষ্ট দিনের আলোর মত দেখা যাচ্ছে ।
ঠিক এই দিনে কারো কবিতা শুনতে চেয়েছিল রুপকথা ।
কিন্তু কিছুই হলোনা ।
অনেকক্ষণ পার হলো একা একা দাঁড়িয়ে আছে ।
একটা লোক ঘরে একা একা বসে আছে তার জন্যে তার ছিটে ফোটা চিন্তা নেয় ।
সে চাঁদের জ্যোৎস্নাটা উপভোগ করছে দারুনভাবে ।
অনেক কষ্টের পর এক ফোটা সুখ অনুভব হচ্ছে তখন ।
জোস্নার আলো তার হায়ে এসে লাগছে ।
পরনের লাল বেনারসী ঝিকমিক করছে ।
হঠাৎ সে ভাবে আচ্ছা চাঁদের আলোটা আমাদের ঘরে কেনো যায়না জানালা দিয়ে ।
তাহলে ঘরে বসেই চাঁদের আলো গায়ে মাখতাম ।।
আবার কিছুক্ষন পরে ভাবে -
আচ্ছা উনি বা কেমন মানুষ , একা একা নিজের বউকে রেখে ঘরে কি করে উনি !!
কিছুক্ষণ পরে সে খেয়াল করে নিজের অজান্তেই অপরিচিত ঘরটা তাদের হয়ে হয়ে গেছে ।
একটু আগের অচেনা ঘরটা এখন “আমাদের” ঘর বলে সম্বোধন করছে সে ।
আজব ব্যাপার যার এই বিয়েতে এক ফোটা ইচ্ছে ছিলনা আজ সেই মেয়েই নিজের অজান্তেই নিজেকে কারো বউ হিসাবে সম্বোধনও করে ফেললো ।।
কিছুখন আগেই তো সে মনে মনে এটাই ভাবছিল
“ একা একা নিজের বউকে রেখে ঘরে কি করে উনি “
বাহ একটু আগের অপরিচিত একটা লোক এখন “উনি”
হয়ে গেছে ।
রুপকথাও নিজেকে তার বউ মনে করে একটা নিঃসঙ্গতা ফিল করছে ।
একটু আগের দম বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘরটাও এখন “ আমাদের ঘর “ ভাবতে শুরু করেছে ।।
অদ্ভুত এই পরিবর্তনটা কেনো হলো জানা নেই রুপকথার
এমন সময় পেছন থেকে কে জানি এসে আলতো করে জড়িয়ে ধরে তাকে।।
সে বুঝতে পারে ইনি সেই- যার সাথে এখন থেকে জ্যোৎস্না দেখে যাবে অনন্ত কাল ।।
“ কবিতা না শোনাক , সাহস করে পেছন থেকে জড়িয়ে তো ধরবে, অন্তত একা একা আর জ্যোৎস্না দেখতে হবেনা "
" অন্তত আজ থেকে আর ভাবতে হবেনা ওটা শুধু ঐ লোকটার ঘর,
এখন থেকে সেটা " আমাদের ঘর " হয়ে গেছে ।।
আজীবনের জন্যে আমাদের হয়ে গেছে "
No comments