ফাটা স্ক্রিনে ফাটা ভালোবাসা
আজকের বৃষ্টিটা সেইরকম, বেশ ঠান্ডা হাওয়া লাগছে তাই না শৈলী ?
- হুম পড়তে ইচ্ছে করছে না
- তাহলে ঘুমাও
- তাও ইচ্ছে করছে না
- তাহলে কি করা যায় ?
- এইসময় ফ্যাকাল্টির সামনে একসাথে গল্প করতে পারলে কিন্তু বেশ জমতো, সাথে তোমার কোন মামা জানি রং চা বিক্রি করে উনার চা খেলে বেশ জমতো ।
- ওহ, তবে এখন রাত, তাছাড়া ঝড়ো বৃষ্টি বের হওয়া যাবে না
- এমনেতেই বললাম আর কি । তো তুমি কি করো, পড়ালেখা নাই ?
- আমারো ইচ্ছে করছে না ।
- তাহলে এইবার শুনি তোমার কি করতে ইচ্ছে করছে ?
.. এইভাবে গভীর প্রণয়ে মগ্ন তারা দুজন । হাতে গ্লাস নিয়ে পনি খেতে খেতে অন্তরের বাবা রুমে উঁকি দিলো । রুমের দরজা থেকে উঁকি দিলে বেশ মনে হচ্ছিলো অন্তর মনদিয়ে পড়াশুনা করছে । এই দেখে অন্তরের বাবার মনে একটু স্বস্তি জাগলো । দারুণ এক স্বস্তি নিয়েই অন্তরের বাবা মাথা হাত বুলিয়ে দিতে গেলো, পড়ার টেবিলের সামনে গিয়েই স্বস্তিটা এক চরম অস্বস্তিতে পরিণত হলো । কারণ অন্তর বই খুলেছে নামে মাত্র দেখানোর জন্য কিন্তু সে বেশ দিব্যি দিয়েই বইয়ের পাশে রাখা মোবাইল গুতাচ্ছিলো । সে খেয়াল করছে না যে তার বাবা পিছনে দাড়িয়ে আছে, করবেই বা কি করে, প্রেম যে এমনি মানে না কোন বাধা । সে তখনো গভীর প্রণয়ে মগ্ন । হঠাৎই অন্তরের মনে হলো বইয়ের উপর একটা বড় ছায়া সে পিছনে ঘুরা মাত্রই, অন্তরের বাবা হাতে থাকা গ্লাসের পানি অন্তরের মুখে ছুড়ে দিলো । তারপর চট্টগ্রামের অঞ্চলিক ভাষায় কিছু শ্রুতিমধুর বাক্য বললো
- তুই কিরদ্দে জানোয়ার, অবুক অবুক অবুক পিছা মার । আয় তো ঠাইজ্জি তুই পড়র, ইয়া ন কত সুন্দর, ইতে মোবাইল গুতার আর গুতার ।। তোরে মোবাইলে আদ্দান খাই ফেলাইয়ি । ইভা রাখিনে কি হইবো । ( তুমি কি করছো জানোয়ার, Shame on you । আমি ভেবেছি তুমি পড়ছ কিন্তু তুমি তো মোবাইল গুতাচ্ছো । তোমাকে এই মোবাইলেই শেষ করতেসে। এটা রেখে কি হবে )
.. এই কথা বলার সাথে সাথে অন্তরের মোবাইলের আর আস্ত রাখলো না । মোবাইলটাকে Floor এর মধ্যে জোড়ে আছাড় দিলো । এইদিক দিয়ে শৈলী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে অন্তরের রিপ্লাইয়ের জন্য । রিপ্লাই পাচ্ছিলো না দেখে শৈলী আবার টাইপ করলো
- ঐ কোথায় তুমি ?
- no reply
-কি হলো answer দিচ্ছো না যে ?
- no reply
- ঐ অন্তর সমস্যা কি ?
.. এইভাবে শৈলী একটার পর একটা ম্যাসেজ দিতে থাকে আর অন্তরের ম্যাসেঞ্জার টুং টুং বাজতে থাকে । এই দেখে অন্তরের বাবা বললো
- উমা ইভা আইজু, টুং টাং গরের, ন ভাংগে ( কি ব্যাপার, এটা তো এখনো সচল, ভাংগে নাই)
এইবার অন্তর বললো
- বাবা, ভুল হয়ে গেছে আর করবো না ।
- আজিয়ে তুন মোবাইল পড়ার সয়ত আরতুন থায়িবো, পড়া হইবো তারপর লবি ( পড়ার সময় মোবাইল আমার কাছে থাকবে, পড়া শেষ হবে তারপর নিবা)
.. এইবলে অন্তরের বাবা মোবাইলটা নিয়ে রুম ছেড়ে চলে গেলো । সেদিন আর চ্যাট হলো না । পরেরদিন মোবাইলটা হাতে নিলো অন্তর দেখলো স্কিন ফেটে গেছে কিন্তু mobile টা এখনো active, ডেটাও active । ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ভাংগা ছোড়া মোবাইলটা সেদিন আর নিলো না। কিছুসময় পর ভার্সিটির ফ্যাকাল্টির সামনে মনমরা হয়ে বসে ছিলো অন্তর । শৈলী সামনে এসে গম্ভীর হয়ে দাড়িয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর
- কালকে রাতে রিপ্লাই দাও নি কেনো ?\
- ( আমতা আমতা করে) নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম ছিলো, তুমুল বৃষ্টি বুজোয় তো নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব ।
- উহু, তুমি মিথ্যে বলছো । আমি দেখেছি তুমি active, online এ ছিলা
... অন্তর মনে মনে বললো "এই বাবাটা যে কি, আছাড় মারসে তাও ঠিক মতো মারে নাই, না ঠিকই মেরেছে স্কিন ফেটেছে কিন্তু ব্যাটারি খুলে নি, বাবার কোন দোষ নেয় সবই ভাগ্য )
- ঐ অন্তর, কি ভাবছো ? কথা কানে যায় না।
- হুম বলো
- তুমি কালকে রাতে অনলাইনে কি করতেছিলা ? আমি এত্তোবার ম্যাসেজ দিসি একটা রিপ্লাইও দাও নি ?
- আসলে বাবা..
- হইসে আর আংকেলকে এইখানে টেনে আনবা না, তুমি এর আগেও আংকেলের নামে মিথ্যে কথা বলে পাড় পেয়ে গেছো আর না । মোবাইলটা দাও তোমার, আমি দেখি কালকে রাতে তুমি কি করেছো, কার কার সাথে চ্যাট করেছো
- মোবাইল আজকে আনি নাই । তুমি বিশ্বাস করো বাবা মোবাইল আছাড় মারসে
- প্রমাণ কি ? তুমি সব সময় মিথ্যে বলো । ভেবেছো কি এইসব বললে সিমপ্যাথি পাবা ?
- আজব তো, আমি সত্যিই বলছি
- থাক প্রমাণ সহ উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলবা না
.. এই বলে শৈলী একটু হাটা দিলো । অন্তর মনমরা হয়ে ফ্যাকাল্টির সামনে থাকা টং এর মামাকে বললো
- মামা, একটা বেনসন দেন তো ? না না, বেনসন লাইট ।
.. শৈলীর কানে কথাটা গেলো, সে আবার অন্তরের সামনে গিয়ে বললো
- কি বললে তুমি ?
- রং চা দিতে বলসি
- তুমি আবার মিথ্যা বলছ ?
.. তখনই টং এর মামা এসে অন্তরের হাতে বেনসন আর লাইটার দিলো, শৈলী অন্তরের রাগান্বিত হয়ে দিকে তাকিয়ে থাকলো । অন্তর তখন টং এর মামাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- এই মামা তোমাকে রং চা দিতে বলসি, তুমি এইসব অখাদ্য কেনো দাও, শরীরের ক্ষতি করে জানো না ।
.. তারপর শৈলী, অন্তরের হাত থেকে সিগেরেট নিয়ে বললো
- হা করো
- কেনো ?
- হা করতে বলসি কিনা
... হা করতেই শৈলী সিগেরেট টা অন্তরের মুখে ডুকিয়ে দিলো, তারপর লাইটার নিয়ে সিগেরেট ধরিয়ে আর বললো
- খা তুই, মর, আমার সামনে আর আসবি না খবরদার
- ছি ছি, আমি এইসব এখাদ্য খাই না
- চুপ, একদম চুপ । বসে থাক এখানে, একদম আমার পিছে পিছে আসবি না ।
.. এইবলে শৈলী জায়গা ত্যাগ করলো । অন্তরও সিগেরেটটা ফেলে শৈলীর পিছু নিলো, কিছুদূর গিয়ে অন্তর
- ( কান ধরে) সরি
- সামনে থেকে সর
- বললাম তো সরি
- উফ গড, অসহ্য
- আমি তো ইচ্ছা করেই সিগেরেট দিতে বলেছি যাতে তুমি শুনো
- কেনো ?
- তুমি তো চলেই যাচ্ছিলে, তাই তোমাকে ফিরানোর জন্য । আমি তো জানি তুমি আমার হাতে সিগেরেট খাওয়া পছন্দ করো না ।
- ( কিঞ্চিত হেসে, চুল গুলো টেনে) বেশি দুষ্ট হয়েছো
- অভিমান কমেছে তাহলে ?
- নাহ, তুমি আগে সত্যি করে বলো তো কালকে রাতে আমাকে রিপ্লাই না দিয়ে কি করেছো ? কোন মেয়ের সাথে কথা বললে আমার কোনো আপত্তি নেয়
- আমি সত্যিই বলছি, আমার বাবা...
- আবার আংকেল কে দোষারপ করছো ?
.. এইবার অন্তর কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর কিছুক্ষণ মনে মনে হাসলো, এই দেখে শৈলী বললো
- কি হয়েছে হাসছো যে
- তুমি প্রমাণ চাও, তাই না ?
- হুম, তারপর বিশ্বাস করবো যে তুমি সত্যি বলছো
- আচ্ছা একটা কথা বলোতো, তুমি কি রাতে পড়ার সময় দরজা খুলে চ্যাট করো নাকি দরজা বন্ধ করে চ্যাট করো ?
- কেনো দরজা বন্ধ করে
- কেউ কিছু বলে না
- হুম, মা মাঝে মাঝে knock করে, আর কি করছি জিজ্ঞেস করে
- আমাকে ভালবাসো তো ?
- হুম খুব
- তাহলে ভালবাসার একটা পরীক্ষা হয়ে যাক, তুমি আজকে থেকে দরজা খুলে পড়তে পড়তে আমার সাথে চ্যাট করবে । I hope কিছুদিনের মধ্যেই তুমি প্রমাণ পেয়ে যাবে যে আমি সত্যিই বলছি ।
- আচ্ছা, দেখবো তো কতো সত্যি ।
... এইভাবেই দরজা খুলে শৈলী পড়ার সময় চ্যাট করতে শুরু করলো । প্রথম কয়েকদিন শৈলীর মা দেখেও কিছু বললো না । কিন্তু কয়েকদিন এইভাবে দেখার পর শৈলীর মাও রেগে গিয়ে মোবাইল floor এ আছাড় দিলো, সেদিনও খুব বৃষ্টি পড়ছিলো । সেদিন আর চ্যাট করা হলো না । তারপরের দিন ভার্সিটিতে অন্তর
- শৈলী, কালকে রাতে হঠাৎ কি হলো, ৮ টার পর আর রিপ্লাই দিলে না, তুমি তো আগে এমন করতে না
- বৃষ্টি পড়ছিলো, আবাহাওয়া খারাপ, বুজোয় তো নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব
- হতেই পারে না, তোমাকে আমি কালকে ৮টার পড়েও active দেখসি
- আসলে মা...
- উহু, এখানে মা-বাবা কথা কেনো
- please, বিশ্বাস করো মা মোবাইল আছাড় দিসিলো
- ( হাসতে হাসতে) এইবার বিশ্বাস হলো তো
-( মুচকি হেসে, মাথা নাড়িয়ে ) আর লজ্জা দিও না , আমার স্কিন ভেংগে গেছে
.. এইবার অন্তর তার মোবাইল বের করে বললো
- আমার মোবাইলেরও স্কিন ফাটা, আজকে থেকে আমরা ফাটা স্কিনেই প্রেম করবো, চলবে নাকি ?
- উম, লিখা পড়তে আর টাইপ কষ্ট হবে তবে ব্যাপার না । কিন্তু কি করবো আমার অন্তর তো একটাই ।
- সত্যি ?
- হুম, আচ্ছা আমি তোমাকে অনেক জ্বালায় তাই না ?
- সেটা আর নতুন কি ?
- কি বললা ?
- বলতেসি তোমার এইসব জ্বালানি গুলো না আমার অনেক ভালো লাগে ।
- ওহ তাই, But you know, I Love u so much
-হুম, জানি তো, I Love u too.. সেটা ফাটা স্কিনে হোক আর যেখানেই হোক
.. তারপর শৈলী অন্তরের চুল টেনে দিয়ে বললো দুষ্ট একটা..... "
...
লিখাঃ দিবাকর বড়ুয়া শুভ
- হুম পড়তে ইচ্ছে করছে না
- তাহলে ঘুমাও
- তাও ইচ্ছে করছে না
- তাহলে কি করা যায় ?
- এইসময় ফ্যাকাল্টির সামনে একসাথে গল্প করতে পারলে কিন্তু বেশ জমতো, সাথে তোমার কোন মামা জানি রং চা বিক্রি করে উনার চা খেলে বেশ জমতো ।
- ওহ, তবে এখন রাত, তাছাড়া ঝড়ো বৃষ্টি বের হওয়া যাবে না
- এমনেতেই বললাম আর কি । তো তুমি কি করো, পড়ালেখা নাই ?
- আমারো ইচ্ছে করছে না ।
- তাহলে এইবার শুনি তোমার কি করতে ইচ্ছে করছে ?
.. এইভাবে গভীর প্রণয়ে মগ্ন তারা দুজন । হাতে গ্লাস নিয়ে পনি খেতে খেতে অন্তরের বাবা রুমে উঁকি দিলো । রুমের দরজা থেকে উঁকি দিলে বেশ মনে হচ্ছিলো অন্তর মনদিয়ে পড়াশুনা করছে । এই দেখে অন্তরের বাবার মনে একটু স্বস্তি জাগলো । দারুণ এক স্বস্তি নিয়েই অন্তরের বাবা মাথা হাত বুলিয়ে দিতে গেলো, পড়ার টেবিলের সামনে গিয়েই স্বস্তিটা এক চরম অস্বস্তিতে পরিণত হলো । কারণ অন্তর বই খুলেছে নামে মাত্র দেখানোর জন্য কিন্তু সে বেশ দিব্যি দিয়েই বইয়ের পাশে রাখা মোবাইল গুতাচ্ছিলো । সে খেয়াল করছে না যে তার বাবা পিছনে দাড়িয়ে আছে, করবেই বা কি করে, প্রেম যে এমনি মানে না কোন বাধা । সে তখনো গভীর প্রণয়ে মগ্ন । হঠাৎই অন্তরের মনে হলো বইয়ের উপর একটা বড় ছায়া সে পিছনে ঘুরা মাত্রই, অন্তরের বাবা হাতে থাকা গ্লাসের পানি অন্তরের মুখে ছুড়ে দিলো । তারপর চট্টগ্রামের অঞ্চলিক ভাষায় কিছু শ্রুতিমধুর বাক্য বললো
- তুই কিরদ্দে জানোয়ার, অবুক অবুক অবুক পিছা মার । আয় তো ঠাইজ্জি তুই পড়র, ইয়া ন কত সুন্দর, ইতে মোবাইল গুতার আর গুতার ।। তোরে মোবাইলে আদ্দান খাই ফেলাইয়ি । ইভা রাখিনে কি হইবো । ( তুমি কি করছো জানোয়ার, Shame on you । আমি ভেবেছি তুমি পড়ছ কিন্তু তুমি তো মোবাইল গুতাচ্ছো । তোমাকে এই মোবাইলেই শেষ করতেসে। এটা রেখে কি হবে )
.. এই কথা বলার সাথে সাথে অন্তরের মোবাইলের আর আস্ত রাখলো না । মোবাইলটাকে Floor এর মধ্যে জোড়ে আছাড় দিলো । এইদিক দিয়ে শৈলী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে অন্তরের রিপ্লাইয়ের জন্য । রিপ্লাই পাচ্ছিলো না দেখে শৈলী আবার টাইপ করলো
- ঐ কোথায় তুমি ?
- no reply
-কি হলো answer দিচ্ছো না যে ?
- no reply
- ঐ অন্তর সমস্যা কি ?
.. এইভাবে শৈলী একটার পর একটা ম্যাসেজ দিতে থাকে আর অন্তরের ম্যাসেঞ্জার টুং টুং বাজতে থাকে । এই দেখে অন্তরের বাবা বললো
- উমা ইভা আইজু, টুং টাং গরের, ন ভাংগে ( কি ব্যাপার, এটা তো এখনো সচল, ভাংগে নাই)
এইবার অন্তর বললো
- বাবা, ভুল হয়ে গেছে আর করবো না ।
- আজিয়ে তুন মোবাইল পড়ার সয়ত আরতুন থায়িবো, পড়া হইবো তারপর লবি ( পড়ার সময় মোবাইল আমার কাছে থাকবে, পড়া শেষ হবে তারপর নিবা)
.. এইবলে অন্তরের বাবা মোবাইলটা নিয়ে রুম ছেড়ে চলে গেলো । সেদিন আর চ্যাট হলো না । পরেরদিন মোবাইলটা হাতে নিলো অন্তর দেখলো স্কিন ফেটে গেছে কিন্তু mobile টা এখনো active, ডেটাও active । ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ভাংগা ছোড়া মোবাইলটা সেদিন আর নিলো না। কিছুসময় পর ভার্সিটির ফ্যাকাল্টির সামনে মনমরা হয়ে বসে ছিলো অন্তর । শৈলী সামনে এসে গম্ভীর হয়ে দাড়িয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর
- কালকে রাতে রিপ্লাই দাও নি কেনো ?\
- ( আমতা আমতা করে) নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম ছিলো, তুমুল বৃষ্টি বুজোয় তো নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব ।
- উহু, তুমি মিথ্যে বলছো । আমি দেখেছি তুমি active, online এ ছিলা
... অন্তর মনে মনে বললো "এই বাবাটা যে কি, আছাড় মারসে তাও ঠিক মতো মারে নাই, না ঠিকই মেরেছে স্কিন ফেটেছে কিন্তু ব্যাটারি খুলে নি, বাবার কোন দোষ নেয় সবই ভাগ্য )
- ঐ অন্তর, কি ভাবছো ? কথা কানে যায় না।
- হুম বলো
- তুমি কালকে রাতে অনলাইনে কি করতেছিলা ? আমি এত্তোবার ম্যাসেজ দিসি একটা রিপ্লাইও দাও নি ?
- আসলে বাবা..
- হইসে আর আংকেলকে এইখানে টেনে আনবা না, তুমি এর আগেও আংকেলের নামে মিথ্যে কথা বলে পাড় পেয়ে গেছো আর না । মোবাইলটা দাও তোমার, আমি দেখি কালকে রাতে তুমি কি করেছো, কার কার সাথে চ্যাট করেছো
- মোবাইল আজকে আনি নাই । তুমি বিশ্বাস করো বাবা মোবাইল আছাড় মারসে
- প্রমাণ কি ? তুমি সব সময় মিথ্যে বলো । ভেবেছো কি এইসব বললে সিমপ্যাথি পাবা ?
- আজব তো, আমি সত্যিই বলছি
- থাক প্রমাণ সহ উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলবা না
.. এই বলে শৈলী একটু হাটা দিলো । অন্তর মনমরা হয়ে ফ্যাকাল্টির সামনে থাকা টং এর মামাকে বললো
- মামা, একটা বেনসন দেন তো ? না না, বেনসন লাইট ।
.. শৈলীর কানে কথাটা গেলো, সে আবার অন্তরের সামনে গিয়ে বললো
- কি বললে তুমি ?
- রং চা দিতে বলসি
- তুমি আবার মিথ্যা বলছ ?
.. তখনই টং এর মামা এসে অন্তরের হাতে বেনসন আর লাইটার দিলো, শৈলী অন্তরের রাগান্বিত হয়ে দিকে তাকিয়ে থাকলো । অন্তর তখন টং এর মামাকে উদ্দেশ্য করে বললো
- এই মামা তোমাকে রং চা দিতে বলসি, তুমি এইসব অখাদ্য কেনো দাও, শরীরের ক্ষতি করে জানো না ।
.. তারপর শৈলী, অন্তরের হাত থেকে সিগেরেট নিয়ে বললো
- হা করো
- কেনো ?
- হা করতে বলসি কিনা
... হা করতেই শৈলী সিগেরেট টা অন্তরের মুখে ডুকিয়ে দিলো, তারপর লাইটার নিয়ে সিগেরেট ধরিয়ে আর বললো
- খা তুই, মর, আমার সামনে আর আসবি না খবরদার
- ছি ছি, আমি এইসব এখাদ্য খাই না
- চুপ, একদম চুপ । বসে থাক এখানে, একদম আমার পিছে পিছে আসবি না ।
.. এইবলে শৈলী জায়গা ত্যাগ করলো । অন্তরও সিগেরেটটা ফেলে শৈলীর পিছু নিলো, কিছুদূর গিয়ে অন্তর
- ( কান ধরে) সরি
- সামনে থেকে সর
- বললাম তো সরি
- উফ গড, অসহ্য
- আমি তো ইচ্ছা করেই সিগেরেট দিতে বলেছি যাতে তুমি শুনো
- কেনো ?
- তুমি তো চলেই যাচ্ছিলে, তাই তোমাকে ফিরানোর জন্য । আমি তো জানি তুমি আমার হাতে সিগেরেট খাওয়া পছন্দ করো না ।
- ( কিঞ্চিত হেসে, চুল গুলো টেনে) বেশি দুষ্ট হয়েছো
- অভিমান কমেছে তাহলে ?
- নাহ, তুমি আগে সত্যি করে বলো তো কালকে রাতে আমাকে রিপ্লাই না দিয়ে কি করেছো ? কোন মেয়ের সাথে কথা বললে আমার কোনো আপত্তি নেয়
- আমি সত্যিই বলছি, আমার বাবা...
- আবার আংকেল কে দোষারপ করছো ?
.. এইবার অন্তর কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর কিছুক্ষণ মনে মনে হাসলো, এই দেখে শৈলী বললো
- কি হয়েছে হাসছো যে
- তুমি প্রমাণ চাও, তাই না ?
- হুম, তারপর বিশ্বাস করবো যে তুমি সত্যি বলছো
- আচ্ছা একটা কথা বলোতো, তুমি কি রাতে পড়ার সময় দরজা খুলে চ্যাট করো নাকি দরজা বন্ধ করে চ্যাট করো ?
- কেনো দরজা বন্ধ করে
- কেউ কিছু বলে না
- হুম, মা মাঝে মাঝে knock করে, আর কি করছি জিজ্ঞেস করে
- আমাকে ভালবাসো তো ?
- হুম খুব
- তাহলে ভালবাসার একটা পরীক্ষা হয়ে যাক, তুমি আজকে থেকে দরজা খুলে পড়তে পড়তে আমার সাথে চ্যাট করবে । I hope কিছুদিনের মধ্যেই তুমি প্রমাণ পেয়ে যাবে যে আমি সত্যিই বলছি ।
- আচ্ছা, দেখবো তো কতো সত্যি ।
... এইভাবেই দরজা খুলে শৈলী পড়ার সময় চ্যাট করতে শুরু করলো । প্রথম কয়েকদিন শৈলীর মা দেখেও কিছু বললো না । কিন্তু কয়েকদিন এইভাবে দেখার পর শৈলীর মাও রেগে গিয়ে মোবাইল floor এ আছাড় দিলো, সেদিনও খুব বৃষ্টি পড়ছিলো । সেদিন আর চ্যাট করা হলো না । তারপরের দিন ভার্সিটিতে অন্তর
- শৈলী, কালকে রাতে হঠাৎ কি হলো, ৮ টার পর আর রিপ্লাই দিলে না, তুমি তো আগে এমন করতে না
- বৃষ্টি পড়ছিলো, আবাহাওয়া খারাপ, বুজোয় তো নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব
- হতেই পারে না, তোমাকে আমি কালকে ৮টার পড়েও active দেখসি
- আসলে মা...
- উহু, এখানে মা-বাবা কথা কেনো
- please, বিশ্বাস করো মা মোবাইল আছাড় দিসিলো
- ( হাসতে হাসতে) এইবার বিশ্বাস হলো তো
-( মুচকি হেসে, মাথা নাড়িয়ে ) আর লজ্জা দিও না , আমার স্কিন ভেংগে গেছে
.. এইবার অন্তর তার মোবাইল বের করে বললো
- আমার মোবাইলেরও স্কিন ফাটা, আজকে থেকে আমরা ফাটা স্কিনেই প্রেম করবো, চলবে নাকি ?
- উম, লিখা পড়তে আর টাইপ কষ্ট হবে তবে ব্যাপার না । কিন্তু কি করবো আমার অন্তর তো একটাই ।
- সত্যি ?
- হুম, আচ্ছা আমি তোমাকে অনেক জ্বালায় তাই না ?
- সেটা আর নতুন কি ?
- কি বললা ?
- বলতেসি তোমার এইসব জ্বালানি গুলো না আমার অনেক ভালো লাগে ।
- ওহ তাই, But you know, I Love u so much
-হুম, জানি তো, I Love u too.. সেটা ফাটা স্কিনে হোক আর যেখানেই হোক
.. তারপর শৈলী অন্তরের চুল টেনে দিয়ে বললো দুষ্ট একটা..... "
...
লিখাঃ দিবাকর বড়ুয়া শুভ
No comments