Header Ads

তোমাকে আর ভুলতে পারলাম না

.
✍রাইটারঃ অভিমানী জ্যাকপট (Tushar Apr)
.
.
---জান কি করো...?? (হৃদয়)
---লুডুস খাই আর মুভি দেখি। (নীলাঞ্জনা)
---উলি বাবা...!!
আর কি করতেছো....??
---হয়তো তোমার কথা ভাবছি...
---এই কি ভাবছো...?? প্লিজ প্লিজ প্লিজ
বলো না আমাকে....!!
---বলবো না হি... হি...
---তুমি কি করো??
---শপিংমলে একটা মেয়েকে ফলো করতেছি।
---কিহ্??? কি বললা তুমি??
---বললাম একটা মেয়েকে ফলো করতেছি।
---এই খাড়াও আমি আইতাছি। তোমার এত্তো বড় সাহস কে দিছে অন্য মেয়ের দিকে তাকানোর।
---কেনো তুমি আমার কে??
---ওহ্ আমি তোমার কে?? আচ্ছা ফোন রাখতেছি!! বাই...
---আরে দাড়াও দাড়াও কই যাও..!! আমি তো জাস্ট ফান করতেছি।
---এই আমার সাথে তুমি কথা বলবা না। যাও তুমি ওই মেয়ের কাছে যাও। বাই... (কাঁদতে কাঁদতে)
---জান I Am Really Sorry!! আমি তো জাস্ট ফান করতেছি। plz জান কেঁদো না plz plz.
---আমি কাঁদবো!! আমি কাঁদলে তোমার কি??
---আমার-ই তো সব। আর আমি তো কোনো শপিংমলে যায় নি!! এই দেখো আমি ম্যাচে পড়তেছি। আর শপিংমলে যাওয়ার মতো টাকা কি আমার আছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের শুধু বুকভড়া স্বপ্ন আছে!!
---এই সিনেমার ডাইলোক বাদ দাও তো!! তুমি পড়তেছো তার একটা সেলফি দাও...
---wait... দিতেছি!! (ছবি পাঠানোর পর)
---Good Boy. এই ভাবে পড়বা ঠিক রাত ১২টা পর্যন্ত।
---ok. bye...
---Bye....
.
এতোক্ষণ কথা হচ্ছিলো হৃদয় আর নীলাঞ্জনার। ওরা একই বর্ষের স্টুডেন্ট। হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। হৃদয় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর নীলাঞ্জনা শহরের বিশিষ্ট্য কোটিপতির একমাত্র আদরের দুলালী। তবে নীলাঞ্জনা তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে হৃদয়কে আর হৃদয়ও নীলাঞ্জনাকে।
ছোট ছোট রাগ, অভিমান, ভালোবাসা আর খুনসুটি তাদের দৈনিন্দন জীবনের রুটিন।
.
পরদিন সকালে.....
.
কিরিং... কিরিং... কিরিং...
---হ্যা..লো...
---বাবু তুমি এখনো ঘুম থেকে ওঠো নাই??
---না আসলে...
---কিহ্?? এখনো উঠো নাই?? এখন কয়টা বাজে? তার মানে এখনো খাওয়া-দাওয়া-ও করো নাই?? দাড়াও আমি আইতাছি...
---না মানে...
---ওও বুঝতে পেরেছি!! আচ্ছা তুমি এমন কেনো?? নিজের কষ্টটা সব সময় বুকের ভিতর চেপে রাখো কেনো?? তুমি অনন্ত আমাকে বলতে পারতা। তোমার কাছে টাকা নাই তাই তুমি ক্ষুধা পেটে ধরে ঘুমাইতেছে। এই ভাবে আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবা। উঠো বলতেছি উঠো...
আমি টাকা পাঠাইতেছি। নাস্তা করে লক্ষি ছেলের মতো পড়তে বসো। আর ম্যাচ ভাড়া আমি শোধ করে দিয়েছি।
---হৃদয় কাঁদতেছে আর কিছুই বলতে পারতেছে না!!
---এই বাবু তুমি কাঁদতেছো কেনো?? প্লিজ বাবু কেঁদো না নইলে আমিও কিন্তু কাঁদবো!!
বিকালে ঘুড়তে যাবো...
.
আজ নীলাঞ্জনার জন্মদিন।
বিকালে পার্কে.....
.
---জান...
---বলো বাবু...
---চোখ বন্ধ করো..
---কেনো??
---আহ্ করতে বলতেছি করো নাহ্
---আচ্ছা বাব্বা আচ্ছা....
(নীলাঞ্জনার গলায় একটা সোনার হার পড়িয়ে দিলো হৃদয়)
---এবার চোখ খুলো..
---ওয়াও এ্যাতো সুন্দর হার। আমার খুব পছন্দ হইছে।
---ফুটপাত থেকে নেওয়া।
নীলাঞ্জনা হৃদয়ের মুখ চিপে ধরে..
---চুপ!!! এইটা আমার কাছে কোটি টাকার হীরের হারের থেকেও অনেক মুল্যবান। কারন আমার বাবু দিছে। আচ্ছা তুমি টাকা পাইলা কই??
---আমার সেই গিটার টা বিক্রি করে দিছি।
---কি বললা?? আমার জন্মদিনে তোমার থেকে কিছু চেয়েছি। আর ওই গিটারটা না তোমার খুব প্রিয় ছিলো!! বিক্রি করলা কেন?
---প্রিয় ছিলো কিন্তু আমার জানের থেকে বেশি প্রিয় না!! জব পেলে আবার একটা কিইনা নিবো। আমার জানের জন্মদিনে আমি কিছু দিবো না তা তুমি ভাবলা কি করে।
.
এভাবেই চলতে থাকে তাদের স্বপ্নের ভালোবাসা।
.
৫দিন পর....
.
---হ্যালো বাবু একটু ক্যাম্পাসে আসবা। খুব দরকার তোমাকে।
---wait ৫ মি. আইতাছি...
---কি বলো এতো জরুরী তলব...
চলো কোথাও বসা যাক......
.
---কি জান তোমার মন খারাপ কেনো??
---আচ্ছা বাবু যদি কোনো কারনে তুমি আমাকে না পাও....
---চুপ!!!! পৃথিবীর বিনিময়ে হলেও আমি তোমাকে হারাতে পারবো না
---আমার বিয়ে ঠিক করেছে বাবা কোটিপতি এক ব্যবসায়ীর সাথে।
---কি বলো..
---চলো আজ বিয়া করবো আমরা।
---আজই?
---হ্যাঁ এখনই
.
অতপর তাদের বিয়ে হয়ে গেলো। যেহেতু হৃদয় মুসলমান আর নীলাঞ্জনা হিন্দু তবুও সম্পূর্ণ মুসলমান রীতি অনুসারে তাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
.
---এখন আমরা কই যাবো বাবু (নীলাঞ্জনা)
---আমার খালাতো ভাইয়ের বাসায়।
---ওকে চলো....
.
হৃদয় ভাইয়ের বাসায় ঢুকেই বিশেষ কারনে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। হৃদয়ের বাসা থেকে লোক আসলো।
.
এই দিকে বিয়ের বিষয়ে হৃদয়ের পরিবার থেকে স্বেচ্ছায় মেনে নিলেও মেনে নিতে পারেন নি নীলাঞ্জনার বাবা কোটিপতি সু্বাস চন্দ্র। তবে ধর্মে হিন্দু হওয়ায় কোনো চাপ সৃষ্টি করলো না। সবাই জানে নীলাঞ্জনা ভারতে তার মামার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। এই দিকে হাসপাতালে...
.
---হৃদয়ের কি অবস্থা ডাক্তার সাহেব (হৃদয়ের খালাতো ভাই+নীলাঞ্জনা)
---আমার চ্যাম্বারে আসুন... (ডাক্তার)
---কি হইছে ডাক্তার (হৃদয়ের খালাতো ভাই+নীলাঞ্জনা)
---হৃদয়ের তো কঠিন রোগ হইছে!! যেইটা আগে থেকে ধরা পরে নাই!!
ওর হার্ড চেঞ্জ করা লাগবে এবং তা ১২ ঘন্টার মধ্যে।
---কত খরচ হতে পারে?
---তাও ৩০ লক্ষ মতো এবং সেইটা ভারতে নিয়ে করাতে হবে। সব ব্যবস্থা হাসপাতাল করবে আপনারা দ্রুত টাকার ব্যবস্থা করেন।
---এ্যাতো টাকা এখন কই পাইবো। চিন্তায় সবাই অস্থির।
---আপনারা বাংলাদের বিভিন্ন মিডিয়াতে সাহায্যের আবেদন করতে পারেন। এতে কেউ না কেউ অবশ্যই হাত বাড়িয়ে দিবে।
.
পরদিন সকালে....
.
"মেধাবী ছাত্র হৃদয়কে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন" প্রথম আলোয় বিজ্ঞাপণ টি দেখেই নীলাঞ্জনার বাবা হাসপাতালে ছুটে আসেন। অতপর সে চিকিৎসার সব টাকা দিতে রাজি হলো তবে একটা শর্তে...
হৃদয়কে ডিভোর্স দিতে হবে নীলাঞ্জনার এবং তার বাবার পছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ে করতে হবে। প্রথমে রাজি না হলেও হৃদয়কে বাঁচানোর আর কোনো উপায় না পেয়ে তার বাবার শর্তে রাজি হয়ে গেলো নীলাঞ্জনা।
.
এই দিকে বিয়ে চলছে অন্য দিকে হৃদয়কে ভারতে অপারেশন চলছে।
.
১০ দিন পর...
হৃদয় এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। দেশে ফিরেই জানতে বাকি রইলো না এই করুন কাহিনী।
এর পর নীলাঞ্জনার সাথে হৃদয় যোগাযোগ করতে চাইলেও আর পারে না। ফোন অফ। তাই হৃদয় তার সেলফোনটা ভেঙে ফেলে। তবে নীলাঞ্জনা তার বিবাহীত স্বামীকে গ্রহণ করতে পারেনি। তার মনে শুধু হৃদয়ই। স্বামীর বাড়িতে সে সব সময় মন মরা হয়ে থাকে। গোপনে নীলাঞ্জনা হৃদয়কে অনেক খুজে কিন্তু আর পাই না। ফোনও বন্ধ। হৃদয়ের পরিবার থেকে খোজাখুজি করা হলেও হৃদয়কে আর কোথাও পাওয়া যায় নি। এর পর থেকে হৃদয় কে আর কোথাও দেখা যায় নি....
.
২ বছর পর......
.
নীলাঞ্জনাকে হারানোর পর আর হৃদয় নিজেকে স্থীর রাখতে পারেনি! নীলাঞ্জনাকে হৃদয় ভুলতে চেয়েছিল। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ভোলা সম্ভব হয় নি! এরপর কতোগুলো বিভূষ্যত্ব বেদনাভড়া রাত, কতোগুলো ঝড়, কতোগুলো, কাঠ পোড়া রোদ, কতো গুলো বৃষ্টি ওর মাথার উপর থেকে গেছে। কতো গুলো দুঃখ বিলাসী দিন সে কুড়ে কুড়ে পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু নীলাঞ্জনাকে ভুলার তার সাহস, ক্ষমাতা কোনোটাই হয় নি। অতঃপর নির্মম নিয়তি হৃদয়কে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। অসাম্য সুখ, সীমাহীন যন্ত্রণা আর নীলাঞ্জনাকে নিয়ে ভাবণা তার মস্তিস্কের স্বাভাবিক গতিপথকে পাল্টে দেয়। নীলাঞ্জনাকে হারিয়ে হৃদয় একদিন গুরুত্বর পাগল হয়ে যায়। আর আজ....
.
এদিকে বিয়ের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নীলাঞ্জনার মন খারাপ দেখে নীলাঞ্জনার স্বামী নীলাঞ্জনাকে নিয়ে ঘুরতে যায় পার্কে। দুরে দেখা যায় অনেক মানুষের ভিড়। কাছে যেতেই....
বুঝতে আর বাকি রইলো না এইটা হৃদয়ের নিথর দেহ। আজ হৃদয় চলে গেলো না ফেরার দেশে। তাকে নিয়ে কাঁদার মতো কেউ নাই! কেউ না....!! তবে নীলাঞ্জনা তার স্বামীকে উপেক্ষা করে হৃদয়কে বুকে নিয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে।
.
[কিছু বাস্তবতা এমনই হয়। হয়তো এবার গল্পটা একটু বড় হইলো তবে ভালো লাগলে কমেন্টে জানাইতে ভুলবেন না]

No comments

Powered by Blogger.